![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইন্টার ১ম বর্ষের রেজাল্ট প্রকাশিত হল কলেজের।সবাই শিট দেখে নিজের বা বন্ধুরটা মিলিয়ে নিচ্ছে।বেশ ভালো করেনি কেউই।অনেকেই রেজাল্ট নিয়ে নাখোশ।কেউ কেউ এই রেজাল্ট বাসায় কিভাবে দেখাবে দেখাবে তা নিয়ে মহাচিন্তায় চিন্তিত।কেউ আব্বুর বয়ান বা যার কাছে থাকে তার বিরটা বয়েনের আশঙ্কায় বিশাল ভাবে আশঙ্কিত।।অরিন তাদের মধ্যে একজন।নিজের রেজাল্ট নিয়ে বেশ হতাশ।খুব খারাপ করেছে তা না।মানে নিজের অবস্থান থেকে অনড়।কিন্তু তাদের মধ্যেও অনেকে খুশি।।আদিত্য তো খুশিতে প্রায় লাফাচ্ছে।ডাক নাম আদি।বিভিন্ন জনে বিভিন্ন নামে ডাকে।যে যা ডাকে তাতেই খুশি।তার বক্তব্য”যদি কেউ ফ্রীতে সামান্য নাম বিকৃত করে ডাকার মধ্যে মজা পায় তাহলে তার কাউকে খুশি রাখার জন্য সেই মজাটুকু দান করা কর্তব্য”।খুশিতে দন্তপাটি কেলিয়ে একাকার করে ফেলছে সে সাথে তার কিসিমের কিছু পাব্লিক।আগের টার্ম থেকে .৪ বেশি পেয়েছে সে।প্রায় ৬০০ বাচ্চাজে টপকে আগে উঠে এসেছে।
কলেজটির একটি অদ্ভুত নিয়ম।তিন মাস পরপর টার্ম আর প্রতি টার্ম পর সেকশন চেঞ্জ।এবারো সেই রীতির বাহিরে কেউ যায় নি।
সেকশন পরিবর্তনের পর আদি নতুন ক্লাসে এসে হাজির।মনটা কিঞ্চিত খারাপ।প্রায় চার মাসের পুরোনো ক্লাস্মেটদের অন্য ক্লাসে ফেলে স্বার্থপরের মত এখানে চলে এসেছে।তবে কিছু আগের পরিচিত স্টুডেন্টও আছে।আবার বসার ডেক্স ফিক্সড করা।তাও আবার মেয়েদের পাশে সামনের দিক থেকে ২য় সারিতে।যাই হোক সব মিলিয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়ে দিনযাপনের সিদ্ধান্ত নিল আদি।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে ক্লাসে ঢুকল অরিন।আবার সেই পুরোনো সেকশন।তবে কিছুটা পরিবর্তন আসছে স্টুডেন্টদের মধ্যে।কেউ কেউ নতুন মনে হচ্ছে।সাত পাচ ভেবে এক চোট পুরো ক্লাসটা দেখে নেয় সে।পুরো উদ্ভট লাগছে।যে যেমন পারছে গল্প করছে,হাসছে,লাফালাফি করছে।মনে হছে বিয়ে বাড়ি।এসব ভালো লাগেনা অরিনের।কারো সাথে পরিচিত হওয়া,বা নিজের পরিচয় ব্যক্ত করা বা পটর পটর করা।বিরক্তিগুলো ঝেড়ে দিতে জানালার দিকে বিষদৃষ্টি নিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অরিন।
খুব সাধারনের মধ্যে হাসি তামাশায় মত্ত আদি আর তার বন্ধুরা।বিভিন্ন সেকশন থেকে অতিথি হিসেবে তার সেকশনে এসেছে তারা।বিভিন্ন উদ্দেশ্যে।কেউ বা বন্ধুর টানে আবার কেউ বা মেয়ে দেখতে।আদিই কথা বলছে আর ক্লাসের এক তৃতীয়াংশ জুড়ে থাকা মেয়েদের অংশটা দেখে নিচ্ছে আড় চোখে।কাউকেই তেমন ভালো লাগছে না তেমন।দুই একজন আছে সেলেব্রেটি আর ভালো নেই তেমন।সেলেব্রেটিরা আবার হাই রেপুটেটেড যা আদির ভাললাগে না।শুধু দেখছে একটা মেয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।আদি তেমন গুরুত্ব না দিয়ে একরাশ হতাশা বন্ধুদের কাছে প্রকাশ করল যে ক্লাসে তেমন ভাল মেয়ে নাই।যা হয় আর কি বয়ঃসন্ধি কালে।আবার আদি নারী বিরোধিও অনেক ক্ষেত্রে।তবে যাই হোক আদি কিন্তু দেখতে তেমন ভাল না।লম্বায় কম,চোখ মনে হয় মারিয়ানা ট্রেঞ্জে ঢুকে গেছে আর তার উপ্রে আকাশী কালো রঙের ফ্রেম সাথে স্যামলা গায়ের রঙ।চেহারা নাকি চাইল্ডিশ(কোনো নারী দ্বারা সার্টিফাইড)।
তো দুই তিন ক্লাস হয়ে গেছে নতুন সেকশনে।আদি মেয়েদের দিকে তাকায় না।টিফিনব্রেকের সময় ডেক্স টানতে গিয়ে মেয়েদের সাইড চখ পড়ে থ বনে যায়।পুরা ভুত এফ এম এর রাসেল ভাই ফিলিংস।তবে ব্যাপারটা তত সিরিয়াস না।সেই চুল দিয়ে ঢাকা মেয়েটিই এত সুন্দর যে তা কে জানত।পুরাই টাস্কি।কিছুক্ষন হাবার মত তাকায়া থাকে।আবার নিজেকে সামলিয়ে নেয়।খুব কম মেয়েই অদৃশ্যভাবে তাকে এত শক দিতে পেরেছে।এর আগে অবশ্য অনেক খেয়েছে শক তবে তা আচার আচরন ও পোশাক আশাকের ওশ্লীল ভঙ্গীমায়।তবে এটা কলেজ ড্রেসের সাবলীল অবস্তায়।পিওর ভাবেই টাস্কি।মেয়েদের সাথে ভিতুর ডিম হওয়ায় কথা বলারো সাহস হয় না শুধু বন্ধুদের সাথে বলে”ও আমার,ও আমার” টাইপের ডায়ালগ।কিন্তু কথা বলার চেষ্টা করলেই তাপে যেমন মোম গলে যায় তেমনি ভয়ে আদিও চুপসে যায়।এর মধ্যে ক্লাসের সামনে এসে অনেকে অরিনের দিকে তকিয়ে থাকে।টাঙ্কি মারার চেষ্টা করে।বাট তার ডোন্ট কেয়ার।আদি বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্র থেকে খবর পেল মেয়ে নাকি ভালনা,তার বয় ফ্রেন্ড আছে,ভাব নাকি খুব বেশি।আদি বেশ কনফিউসড।কি করবে।আগাবে?না আগাবে না।বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিল সে।পাশের ক্লাসে একটা ছেলে অরিনকে পছন্দ।ও এসে প্রতিদিন আদির কাছ থেকে অদিনের খবর নেয়।ছেলেটির নাম ফরহাদ।দেখতে শুনতে ভালই।আদি বুদ্ধি করেছে,অওকে দিয়েই এক্সপেরিমেন্ট করাবে মেয়েটা কেমন।এর মধ্যে তার ফেসবুক আইডিও পেয়ে গেল আদি।ছবি দেখে বুঝল মেয়ে অনেক মডার্ন আর অনেক স্টাইলিশ।আল্ট্রা স্মার্ট বলা হয় যাকে।যাই হোক হাজারো আশায় বুক বেধে রিকুটা সেন্ড করে দিল।আশা যে এক্সেপ্ট করলেই আস্তে আস্তে ভালো বন্ডিং হয়ে যাবে।বাকিটা ট্রিক্স।আইডিটা পেয়ে এক্সপেরিমেন্টের ডেট পিছালো।ফরহাদকে রাখল উদ্ধৃত্ত হিসেবে।কাজ না হলে তাকে এপ্লাই।প্রতিন ফেবুতে ঢুকে দেখে যে এক্সপ্টেড হয়েছে কিনা।নাহ এখনো ঝুলে আছে।আর প্রো পিক কভার পিক ঠিক আছে সো ফেবুতে আসেনি।আর ক্লাসে তো অনবরত তাকিয়ে থাকা আছে।কেমন যেন একটা মায়া ওর এত নেগিটিভ থাকা সত্ত্বেও এসে পড়ে।আসলেই কেমন যেন।তবে সে সিউর যে সে মায়ার বাধনে আটকা পড়েছে।
কয়েকদিন পর ফেবুতে ঢুকে দেখল যে অরিন ঠিকই ফেবুতে এসেছিল আর তার রিকুটা ডিলেট করে দিয়েছে।অরিনের মনোযোগ আকর্ষনের জন্য আবার রিকু পাঠায় আদি।দুই দিন পর আদি আর সার্চ দিয়ে অরিনের আইডি পায় না।অন্য আইডিগুলো দিয়ে এনালাইসিস ক্করে দেখে অরিন তাকে ব্লক দিয়েছে।জিদ চেপে যায় মাথায়।শুধু শুধু ব্লক দেয়ার কি মানে।অকারনে ব্লক দেয়া মানে আদির কাছে ফেসবুকে জুতা মারার সমান।নেগেটিভ অনেক কিছু মাথাইয় আসল আদির।কিন্তু মায়ার কারনে আর কিছু করে উঠতে পারেনি।ভালবাসার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়েই চিতল মাছের মত মনটা তড়পাতে থাকল।এবার শেষ এক্সেরিমেন্ট ফরহাদ।ওকে দিয়েই করাতে হবে।ফরহাদ ক্লাসে আসায় ওকে ব্রেইন শার্প করে দিল এমন ভাবে যেন ফরহাদের প্রেম হয়েই যাবে।নিজের কথা চিন্তা করে এক আঙ্গুলে খাড়া সে।ছুটির পর অরিন্স্যারের বাসায় পড়তে যাওয়ার সময় ফরহাদ অরিনের পিছি পিছে গিয়া ডাকলঃ
-এক্সকিউজ মি।
অরিন হাটছে কোনো দিক না তাকিয়ে।আবার ফরহাদ
-এক্সকিউজ মি আপু।
-আমাকে?(ভ্রু কুঁচকে)
-জ্বী,আপ্নাকে।
-হ্যাঁ,কিছু বলবেন?
-আচ্ছা আপনার নামটা জানতে পারি?
-নাম জেনে কি হবে?
-না জানতাম আর কি।জানে না মানুষ,মানুষকে চেনার জন্য।
-আমার কাছে আপনার কোনো দরকার নেই,আর আপনার কাছে আমার।দরকার হলে নিজে বলে আসব।–-কোনো ভাবেই বলা যায় না।ধরেন আমি আপনার ফ্রেন্ড হতে চাই।
-আমি যাকে তাকে রাস্তা থেকে ধরে ফ্রেন্ড বানাই না।সবাইকে আমি ফ্রেন্ড বানাই না।
ফরহাদ বেশ ভাল ঘরের ছেলে তাই কথাটা আত্মসম্মনাএ বাধল।কথা বাড়িয়ে চলে আসল।সবই আদিকে বলল সে,আর দীর্ঘশ্বাসের সাথে ফরহাদ অরিনকে কার্বন ডাই অক্সাইডের বাঝে বিলুপ্ত করে চলে গেল।এবার আদি নিজেই সিদ্ধান্ত নিল সে স্বয়ং যাবে।কারন পরাজয়ে ডরে না বীর।কিন্তু লাভ হয় নি।একটু কথা বাড়াতে গিয়ে বেশ ভালভাবে হেনস্তা হয়েছে আদি।অন্য যে কাউকে বললে সে হয় মেয়েকে মারত নয় তার ভাব মাটিতে মিশিয়ে দিত বা চেষ্টা করত।কিন্তু এই ঘটনা অরিন,আদি আর সামনে থাকা দুটো গরু ছাড়া আর কেউ জানে না।তাই ফ্ল্যাশ হওয়ার ভয় কম।তারপর থেকে আর আদি ওই মেয়ের দিকে হাত বাড়ায় নি।ফেসবুক থেকে ব্লক,সামনাসামনি ইন্ডাইরেক্ট চপেটাগাত,আর কি করবে সে।আদিরও তো সম্মান আছে।তাই কোনো রিঅ্যাকশান না নিয়েও চুপ করে অরিনকে দেখত।বাতাসে ওড়া চুল,হাসি সব আগের মত করেই উপভোগ করত।কিন্তু জানে ওকে পাবে না।তো যতদিন চোখের সামনে আছে ততদিন দেখাই ভালো।
এর মধ্যে কলেজের তৃতীয় পরীক্ষা আর সেকশন চেঞ্জের তালে অরিন আদি আলাদা হয়ে যায়।উল্লেখ্য অরিনের প্রধানত তার চেহারা সুন্দর ও তার পশ্চাতে অনেক ছেলেদের ঘোরাঘুরি তার মগডাল সমান ভাব আকাশ সমান করে দিয়েছে।
সপ্তাহে তিনদিন অরিন যখন প্রাইভেটে যেত ছুটির পর আদি দূরে থেকে তাকিয়ে তাকে দেখত আর কিন্তু ভুলেও সামনে যেত না সেই হেনস্তার ভয়ে।
একদিন দাঁড়িয়ে দারিয়ে সিগারেট ফুকছে আর অপেক্ষা করছে অরিনের আগমনের।বটতলায় বসে অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে আদি।আবার আদির বাসায় যাওয়ার ডিরেক্ট বাস ও এসে গেছে।এর মধ্যে অরিনেরও আগমন।অরিন হেটে যাচ্ছে।বাসটা রাস্তার মধ্যে দাঁড়ানো আর আদি তাড়াতাড়ি বাসে উঠে সামনের জানালা খুলে সেখানটায় বসে অরিনকে দেখছে।অনেক স্টুডেন্টের ভীড় থাকায় অনেক গাড়ি যাওয়ার সাইড পাচ্ছিল না।তখন একটা প্রেইভেট কার তাড়াহুড়ো করে বাসের বামে থাকা ছোট্ট যায়গা দিয়ে টান দেয়।আর অরিন হাটছে।আকস্মাক গাড়িটি ডানে মড় নিতে গিয়ে অরিনকে পেছন থেকে ঢাক্কা দেয়।তবে বেশি জোড়ে না কিন্তু পাশে দেয়াল থাকায় জোরে গিয়ে বাড় লাগে দেয়ালে।মুহুর্তেই ঘটে গেল ঘটনাটা।রেশ কাটতে না কাটতেই আদি লাফিয়ে পড়ে বাস থেকে ঘটনাস্থলে।মুখ অনেকটা থেতলে গিয়েছে।অনেক নায়ক এসে জমা হয়ে বিভিন্ন অ্যাডভাইস দিচ্ছে।কিন্তু কেউ উঠাচ্ছে না।আদি এম্নিই ভিতু তার উপর নিজের ভালবাসার মানুষের এই অবস্থা দেখে হতবিহবল।সোজা জন সম্মুখে নিজের জামা খুলে হাজারো নায়কদের মাঝে সেই ভিতু ছেলেটিই এগিয়ে গিয়ে হা করে থাকা ফাটা মাথা বেধে দিল।ব্যাগটা এক বন্ধুর কাছে দিয়ে আর একজনের সাহায্যে রক্তাত্ত অরিনকে নিয়ে সি এন জিতে উঠল।পেছন থেকে শুধু শুনছিল বিভিন্ন জনের কানাঘুষা।“এহহ নায়ক,বা কেউ বলে “ভাব”।এরকম।পাত্তা না দিয়ে ছোট্ট সি এন জি নিয়ে সামনের একটু বেসরকারি হাসপাতালে গেল।পিছনের সি এন জিতে অরিনের কিছু বন্ধুরাও এসেছে।হাই ফাই বেসরকারি মেডিকেলের এমার্জেন্সিতে ঢুকাতেই গার্ড বাধা দেয়।
-কি হইছে?
-এক্সিডেন্ট।
-পুলিশি কেস।স্যারের লগে কথা কইয়া ঢুকান।
পেছনে কলেজের কয়েকটা ছেলে চিল্লাচ্ছে আর হাতের উপর অরিনের নিথর দেহ।এর মধ্যে রেজিস্টার এসে জানায় রোগীর অবস্থা ভালো না।তারা রিস্ক নিতে পারবে না।আদি বলদ হলেও বুঝে গেছে।শুধু একবার বিষদৃষ্টিতে তাকিয়ে সি এন জি নিয়ে সোজা সরকারি হাসপাতালে।অরিনকে তার বাচাতেই হবে।
হঠাৎ আদির হাতের উপর বসেই একবার চোখ খোলে অরিন।একটু ঝাকুনি দেয় তার শরীরে।মাথায় শুধু আদির আকাশী নীল রঙের শার্ট বাধা।ইমার্জেন্সিতে ঢুকিয়েই শার্ট খুলে সাথে সাথে ব্যান্ডেজ আর বেডে স্থানান্তর করে ডাক্তার।কপাল ভালো সাথে সাথে ডাক্তার পাওয়া গিয়েছিল।রোগী রেজিস্ট্রি করে আদির নাম আর সই দিয়ে।প্রায় ২০জন ছাত্রছাত্রী এসেছে হাসপ[আতালে।সেন্ডু গেঞ্জির উওপর রক্তমাখা শার্টটা পড়ে নেয় আদি।ওর সারা শরীরে অরিনের ভাবযুক্ত রক্ত।ডাক্কতার অরিনকে দেখছে আর কম্পাইউন্দার ব্যান্ডেজ করছে।হুঁশ নেই অরিনের।ডাক্তার বলেছে রক্ত লাগবে ইমার্জেন্সি এক ব্যাগ।ও পজেটিভ।কিন্তু স্টকে রক্তও নাই।অদ্ভুতভাবে আদির রক্তের সাথে গ্রুপ মিলে গেল অরিনের।আদিই সিদ্ধান্ত নেয়.২০ দিন আগেই এক আত্মীয়কে এক ব্যাগ রক্ত দিয়েছে সে।মনে ভয় অনেক।নিজের কিছু হবে না তো।কিন্তু অরিনের চোখের দিকে তাকাতেই দেখছে পানি পড়ছে শুকানো রক্ত বেয়ে আর লোকটা ব্যান্ডেজ করছে।ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা সত্তেও রক্ত দেয় আদি।সকাল থেকে কিছু খায়নি।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে অরিনের বেডের পাশে।খুব খারাপ লাগছে তার।অনেক দেরিতে খবর পেয়ে অরিনের মা আর ভাই ছুটে আসে।মেয়ের চেহার দেখে বেশ মর্মাহত তারা।আদি ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে একই অবস্থায়।কান্নাভেজা কন্ঠে বেশ কিছুক্ষন কথা বললেন অরিনের মা ওর সাথে।অরিনের অনেক ক্লোজ বন্ধুরা ছিল।সবাই চলে গেছে।আদিকেও যেতে বলেছে কিন্তু সে যেতে নারাজ।অরিনের জ্ঞান না ফিরে আসা পর্যন্ত সে যাবে না।রক্ত দেয়ার পর অনেক দুর্বল হয়েপড়েছিল।কিন্তু কি ভেবে হাসপাতালের সকল দৌড়াদৌড়ি আদি একাই করেছে।রাতের দিকে জ্ঞান ফেরে অরিনের।গাল,কপাল সব যায়গায় ব্যান্ডেজ।অরিনের অনেকাত্মীয় পরিবার পরিজন এসেছে।সবার কাছে আদির পরিচয় বন্ধু হিসেবে।
অরিন কথা বলেনি তখন।আদি অরিনের মিটিমিটি চোখে তাকানো দেখে খুশিতে কেদে দিয়াছে।ও ভাবেনি যে অরিন বাঁচবে।কারন সব ও সামনে থেকে কোলের উপর রেখে পর্যবেক্ষন করেছে।
যাই হোক প্রথম কয়েকদিন হস্পিটালে এসে দূর থেকে দেখে যেত আদি।কয়েকদিন ধরে আসেনা।আসলে টানা রক্ত দেয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে।আর সাথে সাথে পরিপূরক তেমন কিছু পায়নি।প্রায় ১০-১৫ দিন বিছানায় পড়ে ছিল আদিত্য।একটু সুস্থ হয়ে একবার হসপিটালে গেল।না ভালই আছে অরিন।ওর অনেক বন্ধুরা এসেছে।দুর থেকে দেখে চলে যাচ্ছিল তখন একটা মেয়ে ডাক দিল আদিকে বেডের পাশে যাবার জন্য।সাত পাঁচ না ভেবে পুরোনো কথা ঝেরে ফেলে দিয়ে আবার হয়ত নতুন কোনো অপমানের আসঙ্কা নিয়ে বেডের কাছে গেল আদি।
-কেমন আছেন?পেইন কমেছে?
-হ্যা?আপ্নি?
-আমি সবসময় ভালো থাকি।বলে মুচকি হাসি দিল আদি
অরিনের চেহারার দিকে তাকাতে পারছে না।অনেক দাগ হয়ে গেছে।
-তা ক্লাস চলে কেমন।প্রিপারেশান?
-আগের মতই।
ঠায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আদি।কারন অরিনই ওকে মুখ দেখাতে না করছিলো।
-চিঠিটা কি আপনি লিখেছিলেন?না কাউকে দিয়ে লিখিয়েছেন?
-কোন চিঠি?কোথায়।
-আপনার পকেটে ছিল।নুসরাত কিভাবে যেন পেয়েছে।
-কোন নুসরাত?ঐ চিড়িয়া?
-হুম।আপ্নার সাথে প্রথমে পড়ত।
-হ্যাঁ।আবোল তাবোল লিখেছিলাম।বাদ দেন ভালো থাকেন।আর দুটো সাবজেক্টের এসাইন্মেন্ট ছিল বাকি আপনার।সাবমিট করে দিয়েছি।শুধু সই দিয়ে দিয়েন।
অরিন চুপ।
-আচ্ছা আসি।আর আজ সামনেই চকলেটটা দিয়ে গেলাম।সরি বেশি কিছু আনতে পারিনি।
-আরে না।আর সেদিনের কথা গুলোর জন্য সরি।আমি এমনই।
সত্যি কথা বলবেন একটা?
-বলেন।
-আপনি তো ভালবাসতেন নাকি আমাকে?এখন এই চেহারা দেখে অভক্তি লাগে না?কি বিশ্রী।
-(একটু হাসি দিয়ে)।দেখেন অরিন,চেহারাটা আপনার প্রথমে আকৃষ্ট করেছিল সত্য কিন্তু বেশিদুর এগোয় নি,কিন্তু অদৃশ্যমান চেহারাটা যে আমার ব্লাডের সাথে গাঁথা সেটা তো চেঞ্জ সম্ভব না।তা আপনার বি এফ কই?
-একদিন এসে দেখে গিয়েছিল।আর আসেনি।উপযোগীতা ফুরিয়ে গেছে হয়ত।আসলে ছেলেরা এমনই।
-তা সত্য।তবে ছেলে খুজতে ভুল করেছেন।সোনা না ধরে সোনার আড়ালের পিতল ধরেছেন।স্বাভাবিক।
-আপনি কি নিজেকে সোনা দাবি করছেন?
-উহু।সোনা না।কাদা।তবে ১০০% খাঁটি।
-আমার এখনকার চেহারা দেখে তো আর আপনার প্রেম উথলে উঠবে না।
-আপনার এক্সিডেন্ট থেকে আজ পর্যন্ত সব কিছু জেনে নিয়েন।আসি।আর ভালবাসতে পেরেই আমি খুশি,আর আপনার এই কথা আর হাসিমুখ দেখেই আমি খুশি।এগুলোকে দেখলেই আমার চলবে।এর বেশি দরকার নাই।যদি শাকচুন্নি হয়েও হাতে আলতো ছোঁয়াও দেননা দেখবেন ছাড়াতে পারবেন না।আমি আবার আঠার থেকেও ভয়ানক।
-ভালবাসি,খুব সম্ভবত।
-কাকে?
-সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে।বিয়া করবেন?বয়স তো হয়ে গেছে।সরকার নির্ধারন করে দিল।ছেলে আঠারো আর মেয়ে ষোল।
-সম্ভব না।
-কেন?
-রক্তের গ্রুপ এক।বাচ্চা পঙ্গু হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
-সেটা আমি মানিয়ে নিব।
-তাইলে একটা সাদা হাতি পোষার রিস্ক নেয়াই যায়,যেহেতু কমার্সে পড়ি।ঝুঁকি তো নিতেই হবে।....................................................................
©somewhere in net ltd.