![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি বাংলা সাহিত্যের কেউ নই।সৃস্টির চিরায়ত নিয়ম অনুসারে জীবন চালাতে হয।আমি অতি সাধারন ভাবে এই জীবন নামে সীমাহীন সাগরকে পাড়ি দেওয়ার প্রত্যয়ে হাল ধরেছি।কেউ জীবনকে চিনে অতি অল্প বয়সে আমিও তাদের একজন।তবে আমি আমার জীবনেকে সম্পূর্ন রূপে লেখায় ফুটিয়ে তুলতে পারিনি।যদি মহান আল্লাহর অশেষ তায়ালার কৃপায় এবং এই ব্লগের সকল গুণী লেখকেদের সহযোগিতায় আমার লেখার মাধ্যমে পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে পারলে আমি বিশ্বাস করি আমার মত অনেক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিতরা জীবনের দিশা খুঁজে পাবে।
ডাস্টবিনের মেয়ে আদুরী (একটি প্রামাণ্য রচনা)
ডা:সোহেল
ঘটনাটি গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালের।বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন ডিওএইচএস বারিধারার বেড়িবাঁধ এলাকার এক ময়লার ডাস্টবিনের ময়লার স্তুপ থেকে প্রায়মৃত অবস্থায় একটি মেয়েকে উদ্ধার করে ক্যান্টনমেন্ট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মান্নান। ।মেয়েটির বয়স আনুমানিক ১২ বছর। উদ্ধারের পর কঙ্কালসার আদুরীর স্থান হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৪ নং ওর্য়াডে।পরে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা মহানগর পুলিশ উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশনের সহায়তায় তাকে ২৬ সেপ্টেম্বর রোজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।
আদুরীর পরিচয় খুজঁতে গিয়ে জানা যায় আদুরীর বাড়ি বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার বাউফলের জৈনকাঠি গ্রামে। তিন বছর আগে বাবা আব্দুল খালেক মারা যাওয়ার পর নয় সন্তান নিয়ে গ্রামেই থাকছিলেন তার মা সাফিয়া (৬০)। সাফিয়া বেগম বলেন, তার নয় ছেলেমেয়ে। অভাবের সংসার স্বামী নেই। তাই আদুরীকে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রাজধানীর পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের সাগুফতা কল্যাণ সমিতির সুলতানা প্যালেসের ২৯/১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় সাইফুল ইসলাম মাসুদ ও নওরীন জাহান নদী দম্পতির বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে দেই।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অনুসন্ধানে আদুরীকে নির্যাতনের যে ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে তা থেকে জানা যায়, আদুরীকে গৃহকর্তী নওরীন জাহান নদীর স্বামী সাইফুলের দূর সর্ম্পকের এক ভগ্নীপতি দুবছর আগে গ্রাম থেকে সাইফুলের বাসায় কাজ করতে দিয়েছিলেন। এই দুবছর ধরেই নদী আদুরীকে না খাইয়ে রাখাসহ বীভৎস সব শারীরিক নির্যাতন করতো।আদুরী বলে- নদী আমাকে মারতো। আমারে খাইতে দিত না। না খাইয়া থাকতাম। না খাইতে খাইতে শরীরে বল পাইতাম না।কাজ করতে না পারলে গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছেকা দিত ।গরম খুন্তিঁ দিয়ে পিটাত।এভাবে দিনের পর দিন গৃহকর্মী আদুরীর উপর চলত গৃহকর্তী নদীর নির্যাতন।অবশেষে ২৩ সেপ্টেম্বর নির্যাতনের এক পর্যায়ে আদুরী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে মৃত ভেবে ফেলে দেওয়া হয় ময়লার ডাস্টবিনে।সেই ডাস্টবিন থেকে উদ্ধারের পর ছোট্ট মেয়েটিকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তখন অনেকেই আঁতকে উঠেছেন- বলেছেন হায় হায় এ তো দেখি ‘জীবন্ত কঙ্কাল’। নির্মম!আদুরির ছোট ভাই পান্নাও তার আদুরিনী বোনের সেই ‘কঙ্কাল’ দেখে ভয়ে কেঁদে ফেলেছিল।
অন্য সব জাতীয় ও সামাজিক দূর্যোগের মত আদুরীকে নিয়েও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের এক অনন্য ভূমিকা আমরা দেখতে পাই ।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান। আদুরীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তার , অধ্যাপক ও সিনিয়র র্নাস নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেন । শুরু হয় তার চিকিৎসা প্রত্রিয়ার মিশন ।কিছু দিন চিকিৎসার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান নিজে মেয়েটিকে দেখতে ওসিসি তে যান এবং ফিরে এসে এক ব্রিফিং এ বলেন, "মেয়েটিকে আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি । তার শরীরের ক্ষতগুলো এখনো শুকায়নি। এছাড়াও তার শারীরিক দূর্বলতার কারণে সে কথা বলতে পারছে না। তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে একটু ভালো হলেও এখনো পর্যন্ত তাকে শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।"পরিচালক মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং মেডিকেল টিমের নিবিঢ় পর্রিচযার ফলে আদুরী আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে।চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে আদুরীর মা সাফিয়া বেগম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আদুরীর পাশেই থাকছেন সবসময়। গৃহকর্ত্রীর নির্মম নির্যাতনের শিকার শিশু আদুরী দীর্ঘ ৪০ দিন চিকিৎসা শেষে যখন আদুরী পরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠে তখন তার চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিকেল টিমের সকল চিকিৎসক ও র্নাসদের মুখে আন্দদের হাসি ফুটে ওঠে।শুরু হয় আদুরীকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া। হস্তান্তর উপলক্ষ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক মহোদয় বলেন আদুরী যখন হাসপাতালে এসেছিল তখন দাঁড়াতে পারত না। এখন সে হাঁটতে পারে, দাঁড়াতে পরে। এটা দেখে আমার খুবই ভালো লাগছে।এ সময় হাসপাতালের পক্ষ থেকে আদুরীকে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে বিভিন্ন রকম খেলনা, জামাকাপড় কিনে দেন।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মুশফিকুর রহমান, আদুরীর চিকিৎসা বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম মোস্তাক হোসেন তুহিন (সার্জারি বিভাগ), অধ্যাপক রাজিউল হক (নিউরো সার্জারি), ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) পরিচালক ডা. বিলকিস বেগম, অধ্যাপক চৌধুরী মো. আলী (চর্ম বিভাগ), অন্যান্য বিভাগের পরিচালকসহ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
উদ্ধারের পর আদুরীকে নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের এক অসাধারন ভূমিকা আমরা দেখতে পাই ।গত ২৩ সেপ্টেম্বর রোববার বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে ডিওএইচএস বারিধারার একটি ডাস্টবিনের কাছ থেকে প্রায়মৃত অবস্থায় আদুরীকে উদ্ধার করে ক্যান্টনমেন্ট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মান্নান। পরে পুলিশি উদ্যেগে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।সেখানে চলতে থাকে তার চিকিৎসা।ওই দিন পল্লবীর নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হয় আদুরীর গৃহকর্তী নওরীন জাহান নদী । নদীর স্বামী সাইফুল ইসলাম মাসুদ পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার পল্লবী থানায় গৃহকর্তী নদী, তার স্বামী সাইফুল ইসলাম মাসুদ, মাসুদের দুলাভাই চুন্নু মীর ও তাদের আত্মীয় রনিসহ চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত নদীকে শুক্রবার সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠায়। আদালত শুনানি শেষে নদীর তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তারপর রিমান্ডে পুলিশ নদীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে ।জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত জেদী প্রকৃতির। নদীর স্বামী সাইফুল ইসলাম এমএলএম ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু এই ব্যবসায়ে লোকসান হওয়ার পর থেকেই সাইফুলের সাথে তার ঝামেলা শুরু হয়।নদীর খারাপ ব্যবহারের কারনে স্বামী সাইফুল বাসা ছেড়ে চলে যান।পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আদুরিকে নির্যাতনের সব কথা স্বীকার করেন গৃহকর্তী নদী।রিমান্ড শেষে পুলিশ তার স্বীকাররোক্তি মূলক জবানবন্দি গ্রহনের জন্য আদালতে প্রেরণ করেন।পুলিশের পক্ষ থেকে আদুরীকে নিযার্তনের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশের এক কর্তা। নিযার্তনকারীর সঠিক বিচার হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন পুলিশের এই কর্তা।এদিকে এক মাসের বেশি সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার পরে আদুরী ছাড়া পান। পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের অতিরিক্ত কমিশনার ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আদুরীকে পুলিশ সেন্টারে নিয়ে আসা হয়।সেখানে নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী আদুরীকে পাঁচটি রিকশা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এছাড়া এক পুলিশ কর্মকর্তার প্রবাসী আত্মীয়ের সহায়তার অর্থও তাকে দেয়া হয়েছে।সপ্তাহের রোজ সোমবারের শুভাগত সকালটি যেন আদুরীকে নতুন ভাবে ফিরে পাওয়ার উৎসব।সেদিন বেলা ঠিক ১১টায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে এ সহায়তা দেয়া হয়।পরে সংবাদ সম্মেলনে মহানগর পুলিশের কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেন, “আদুরীর পরিবারকে আমরা পাঁচটি রিকশা দিয়েছি। এগুলো থেকে যে ভাড়া আসবে তাতে আদুরীর ভাতের কষ্ট দূর হবে। সে লেখাপড়াও করতে পারবে।”পাঁচটি রিকশা ছাড়াও আদুরির মা সাফিয়া বেগমের হাতে ৭৬ হাজার টাকা তুলে দেন পুলিশ কমিশনার।তিনি জানান, পুলিশের এক অতিরিক্ত কমিশনারের কানাডা প্রবাসী ভাই এই টাকা আদুরীর জন্য পাঠিয়েছেন।আদুরীর পরিবারকে কিছু জমি কিনে দেয়ারও আশ্বাস দেন পুলিশ কমিশনার।সংবাদ সম্মেলনে আদুরী ও তার মা উপস্থিত ছিলেন।আদুরীর মা সাফিয়া বেগম বলেন, রিকশাগুলো তার ছেলে সোহেল, জহির ও সোহাগকে দিবেন। তারা এগুলো চালিয়ে নিজেদের রোজগারের পাশাপাশি ভাড়ার টাকা তাকে দিবে।পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় রিকশাগুলো পটুয়াখালীর পুলিশ সুপারের মাধ্যমে সদর উপজেলার জৈনকাঠি গ্রামে আদুরির বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে। আদুরীর মা বলেন, "নদী ম্যাডাম, তাঁর বড় মেয়ে এবং তাঁর স্বামী আমার মেয়েকে মারধোর করত। চুন থেকে পান খসলেই তাঁরা বেলুন খুন্তি ও আয়রণ দিয়ে আমার মেয়েকে নির্যাতন করত। তবে কে বা কারা আদুরীকে ডাস্টবিনে ফেলে গেছে তা আমি জানি না। আমার মেয়ে এতই দূর্বল ছিল যে তার কথা স্পষ্ট বোঝার কোন উপায় ছিল না ।" সাংবাদিকদের সামনে আদুরীর মা সাফিয়া বেগম বলেন, অনেক পরিবারের ছোট ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন লোকের বাসাবাড়িতে কাজ করে। তাদের অবস্থা যাতে আদুরীর মতো না হয়।যারা আদুরীকে নির্যাতন করেছে তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা অনেক কিছু অজর্ন করেছি,কিন্তু নৈতিকতার দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। বর্তমানে পারিবারিক সহিংসতা ও বর্বরতায় এ দেশবাসী অতি মাত্রায় অতিষ্ঠ বিক্ষুব্ধ, ও হতবাক। সাম্প্রতিক সময়ে যেসব নৃশংসতা ও বর্বরতা গৃহকর্মীদের উপরে ঘটেছে, এর দায় আমরা কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না।
অসমাপ্ত
©somewhere in net ltd.