নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত (সৌকপ)

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত

আমি আসলে কেউ নই ।

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিশোর কল্পলোকেই ভাল থাকে

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:১৭

এক অচেনা সুর বেজে উঠলো সবুজের সাগরে ।
আসলে এটা একটা মোবাইলের রিংটোন । বাগানের মধ্যে হ্যামক ঝুলিয়ে ঘুমুচ্ছিল কিশোর। কিন্তু কার না কার কি দরকার পড়েছে, গুরুত্বপূর্ণও হতে পারে, এই ভেবে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা তুলে নিলো।

ওপাশ থেকে কেউ একজন , খুব তাড়িত কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠলো , "হ্যালো !! কিম্ভূত রম্ভূত ভাই বলছেন ?"
নিশ্চয়ই খুব বিপদেই আছে। এটা রাগের চেঁচানো হলে আর যাই হোক, ভাই বলে সম্বোধন করতো না। কাজেই কথা বলা যায় , এই ভেবে একটু নিশ্চিন্ত হলও কিশোর।
ও! বলাই হয়নি। কিম্ভূত রম্ভূত কিশোরের একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্টের নাম।
ধীর ভাবে বলছে কিশোর "হ্যাঁ , বলছি। "
"ভাই, আপনার নাম্বারটা একটা ব্লাড ডোনেট গ্রুপে পেয়েছি। "
"ও আচ্ছা! তাই নাকি? তা কার রক্ত লাগছে ? "
"ভাই, আমার বড় বোনের । বাবু হবে তো । কাল ভোরে অপারেশনের ডেট দিয়েছে। আপনি কি রক্ত দিতে পারবেন ভাই ? "
"একটু অপেক্ষা করুন । " বলেই ছোট নোটবুকটা বের করলো কিশোর । তারিখগুলো চেক করলো ।
তারপর "হ্যাঁ ভাই। আমার লাস্ট রক্তদানের পর পাঁচ মাস হয়ে গেছে। কাজেই আমি দিতে পারব ইন শা আল্লাহ। "
"যাক ভাই বাঁচালেন । আসলে A- কোথাও পাচ্ছিলামই না। আমারও ভার্সিটি বন্ধ নইলে ভার্সিটিতে বন্ধুদের কাছে খুঁজতে পারতাম। সবাই এখন বাড়ী গেছে। আর আপনি আমাকে তুমি করেই বলবেন।"
"তাই নাকি? তা নাম কি তোমার? কোন ভার্সিটিতে আছো তুমি ? "
"ভাইয়া , আমি তাওফীক, বুয়েটে আছি । "
"বাহ! তাহলে তো বলতে হবে তুমি বেশ জিনিয়াস লোক। যাই হোক, রক্ত কখন আর কোথায় লাগবে ? "
"ভাইয়া, ছয়টার দিকে । সোহরাওয়ার্দীতে । "
"আচ্ছা, আমি সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে পৌঁছে তোমাকে কল দেব ইন শা আল্লাহ।

কলটা কেটে দিল কিশোর। বুয়েটের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। অনেক দিন ধরে ব্যাচের কারও সাথে যোগাযোগ নেই। স্মৃতিগুলো যা থাকার আছে মনের মধ্যে। যে ডায়রিটাতে সব লেখা ছিল, তা তো খুইয়েছে অনেকদিন আগেই। কি যে মনে করে রমার কাছে পাঠিয়েছিলো ডায়রিটা , বুঝতেই পারছে না। ঝোঁকের বশে মানুষ কত কি যে করে ফেলে । আচ্ছা , রমা কি পড়েছিল ডায়রিটা ? কখনও কি আমার কথা মনে পড়ে ? সে আজ তিন চার বছর হয়ে গেল। হয়তো আমার নাম মনে পড়লেই ওর মনটা ঘিন ঘিন করে ওঠে । কিংবা প্রচণ্ড রাগে বিষিয়ে যায় ওর মন। কিন্তু এর চেয়ে ভাল কিছু আর আশা করতে পারছে না কিশোর।

হ্যামকটা থেকে নামার সময় একরকম পড়েই গেল সে। তাকাল চারিদিকে। তার বাগান। রমার ইনসিডেন্টটার পরই কক্সবাজার থেকে ফিরে বাসা পাল্টায় সে । কেনো যেন কোন মানুষকেই আশে পাশে দেখতে ভাল লাগছিলো না তার। একটু একাকীত্ব চাইছিল সে । তাই বাবা মা কোয়ার্টারে থাকলেও সে এসে মিরপুর-১ এর দিকে একটা বাড়ীর চিলেকোঠাটা ভাড়া নেয়। বাড়ীওয়ালা বই পড়ুয়া । কিশোরও পড়ে । কিশোরকে তাই পছন্দ করে ফেলেছিলেন । আদর করেন নিজের ছোট ভাইয়ের মতনই। পুরো ছাদের অধিকার দিয়ে দিলেন কিশোরকে। আর কিশোর চান্সটা পেয়েই বাগান করতে লেগে গেল। তারই ফল আজকের সবুজ সাগর। ওর নিজের হাতে গড়া বাগান । আজ সকাল সকাল শুয়ে পড়ার ইচ্ছা তার। যেহেতু প্রায় ৫ টার দিকে উঠতে হবে , আর ঘুমানোর চান্স হবে না কালও দিনে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কেনও যেন ঘুম আসছে না। কি যেন খুঁতখুঁত করছে। সেভাবেই পেড়িয়ে গেল সারা রাত আজ অনেক দিন পর।

ভোর পাঁচটা । হাসপাতালের গেটে এসে দাঁড়ালো কিশোর ।

"হ্যালো, তাওফিক ?"
"জ্বি, কিম্ভূত ভাইয়া ? কোথায় আপনি? "
"আমি তো মেইন গেটের সামনে। পুরো কালো ড্রেস পরে দাঁড়িয়ে আছি, র‍্যাবের মতন, দেখলেই চিনবে। "
" ভাইয়া, আমি আসছি, ২-৩ মিনিটের মধ্যে। "

কিছুক্ষণ পর হাল্কা দাড়ি মুখে , ফতুয়া আর জিন্স পরা একটা ছেলেকে আসতে দেখা গেল।
এসেই হ্যান্ডশেক করে হাঁপাতে লাগলো .
"আরে বাবা, আমি তো সময় নিয়েই এসেছি । এভাবে ছুটে এসেছ কেন? " বলল কিশোর ।
"না ভাইয়া, আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন এতক্ষণ, এটা ভালো লাগলো না আমার কাছে। "
"ওরে বাবা! তুমি তো এ যুগে না এসে সেই মুনি ঋষিদের আমলে এলে ভাল করতে , গুরুকে সঠিক সম্মান দিতে জানতে । আমিও বাঁদর , আমার গলায় মুক্তোর মালা কেন ? "
"কি যে বলেন না ভাইয়া। "
"থাক থাক, তোমার ভক্তি পরে নেব। আগে চল ব্লাডটা দিয়ে আসি। অপারেশনের কতক্ষণ বাকি ? "
"ভাইয়া, আরও ঘন্টা দেড়েক আছে। চলেন। "
আগে এমন বিপদে অনেক পড়েছে । ব্লাড গ্রুপের ডকুমেন্ট না থাকলে ব্লাড আবার টেস্ট করায় ওরা। তাই সব সময় আইডি কার্ড টা মনে করে নিয়ে যায় রক্ত দেবার সময়। এবার তাই কোন ঝামেলা হল না। এক ব্যাগ ব্লাড দিয়ে বেড়িয়ে এলো কিশোর। দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল তাওফিক।
"ভাইয়া, আম্মু আপনার সাথে একটু কথা বলবে। "
"কোথায় আন্টি ? "
পেছন থেকে "এইতো বাবা , তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছি। তা তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে এখন ? কিছু খাও ? "
"না আন্টি , কিছুই খাবো না আমি। আপনারা এখন ব্যস্ত আছেন । সুখবরটা দিয়েন, একদিন বাসায় এসে খেয়ে যাবো। "

"বাবা, তুমি জানো না, কতটা চিন্তায় ছিলাম। রাতে যখন তাওফিক বলল যে রক্ত পেয়েছে তখন কি যে ভাল লাগছিলো । তা বাবা, তোমার নামটাও কিন্তু শুনলাম না এখনও। "
"আন্টি, আমি কিশোর শাহিন। আমাকে শাহিন বলেই ডাকবেন । তা আনটি, আমি এখন আসি, আর সুখবরটা অবশ্যই জানাবেন কিন্তু। চিন্তা করবেন না। ইন শা আল্লাহ, সুখবরই আসবে। "
"দুয়া করো বাবা ।"
"আন্টি, আমার জন্যও করবেন। "
বলেই হুটহাট করে দৌড় লাগাল। কেনো যেন খুব সুখের সময়গুলোতে অপ্রস্তুত হয়ে থাকে কিশোর। তাই আর খুশির মুহূর্ত দেখার আগেই পালাতে চায় সে ।

ঘণ্টা তিনেক পর তাওফিকের নাম্বার থেকে ফোন। কলটা দেখেই দোয়া দরূদ পড়তে শুরু করলো কিশোর। না জানই কি খবর আসে ।
"হ্যালো, বলছি। তাওফিক, কি অবস্থা ?"
ওপাশ থেকে আবার চিৎকার। তবে এবারেরটা আনন্দের । ছেলেটা মনে হয় চিৎকার ছাড়া কথা বলতে পারে না।
"আমি মামা হয়েছি, ভাইয়া। আমার ভাগ্নী হয়েছে। আপনার দাওয়াত। কবে আসবেন বাসায় ? "
"অনেক খুশি হলাম। তা তুমিই ঠিক কর কবে আসা যায় । "
"ভাইয়া, আপনি সামনের শনিবার আসেন। আপুও বাসায় চলে আসবে, তখন বাবুকেও দেখে যেতে পারবেন . "
"তোমার আপু তোমাদের বাসায় আসবে ? তার হাজবেন্ডের বাসায় যাবে না? "
"ওহ! ভাইয়া তো USA তে থাকে। চার বছর আগে আপুর বিয়ের পর পরই চলে যায় স্কলারশিপ পেয়ে। পিএইচডি করে ওখানেই আছে। এবছর এসেছিল একবার ২ মাস থেকে চলে গেছে। "
"ও , তা যাই হোক, আমার জন্য কিন্তু অল্প রান্না করলে হবে না। বেশি বেশি করতে হবে। "
"ভাইয়া, নো টেনশন, যা খেতে যান, তাই হবে । "
"ওকে, তাহলে শনিবার দেখা হবে, ভাল থাক। "

ডায়রিটা খুলে লেখতে শুরু করলো ।

২৯/০৭/২০১৮
"আজ অনেক বড় একটা সুসংবাদ পেলাম। এ পৃথিবীতে এক নতুন অতিথি এসেছে। কিন্তু এ পৃথিবী যে অনেক কঠিন। নতুন কুঁড়িগুলো কি সেই ভার সইতে পারবে ? "


এটুকু লিখেই রেখে দিল সে। আগের মতন আর বেশি বেশি লেখে না সে। অল্প অল্প। মনের হেঁয়ালিগুলোকে অ্যালবামে সাজানোর এক প্রচেষ্টা ।

৪-৫ টা দিন ভালভাবে যাবার পর আসে শনিবার। আগেই ঠিকানা দিয়ে দিয়েছিল তাওফিক। ঠিকানা খুঁজে খুঁজে শ্যামলীতে অদের বাসায় হাজির হলো সে। কলিং বেল চাপতেই, দরজা খুলে দেয় তাওফিক।

"ভাইয়া, এলেন তাহলে, আমি অনেক খুশি হলাম। "
"তুমি আমাকে খেতে ডাকবে আর আমি আসব না ? আমার টাইমলাইনে এতদিন ঘুরে এই চিনলা আমাকে ? "
"না তা ঠিক না। তবে আপনি এসেছেন তাই অনেক বড়। নইলে এত রান্না আমার একা শেষ করতে হতো। আপনার জন্য বসে আছি। "
"কিন্তু নব্য অতিথি কোথায় ? "
"আপু তো ওকে নিয়ে ওর রুমে আছে। আপনি বসুন আমি দেখে আসছি । আগে আমরা খেয়ে নেই। তারপর বাবুকে দেখতে যাব। "
"Fine by me. "
এক জম্পেশ খাওয়া হলো তাওফিকদের বাসায় । "অনেক রান্না " কে আন্টি আসলে লিটারেলি নিয়েছেন। যত পদ, তত পরিমাণ।
"কিহে ভায়া, এক সপ্তাহের খাবার তো বন্ধ করে দিলে। এত ভাল রান্না আমি আগে খুব কমই খেয়েছি । আন্টি কোথায় ? ডাকো, মাঝে মধ্যেই খাওয়ার পারমিশনটা নিয়ে যেতে হবে না ? "
"ভাইয়া, আম্মু তো একটু খালার বাসায় গেছে। এখন নেই। আম্মু আসলে আমি আপনার সাথে কথা বলিয়ে দেব। আপু মনে হয় এখন জেগেই আছে , একটু দাঁড়ান দেখে আসি। "
বলেই পাশের রুমে ছুট লাগাল ছেলেটা। "আমিও তো একও সময় এমনই ছিলাম। " মনে মনে ভাবল কিশোর ।

"ভাইয়া, আসেন । "
পাশের রুমে এলো কিশোর। সুন্দর গোছানো ঘর। এ ঘরে যে একজন মহিলা সদ্য প্রসূত বাচ্চাকে নিয়ে থাকে তা বোঝাই যায় না। বিছানয় একজন মহিলা শুয়ে আছেন ওদিকে ঘুরে।
"আপু, শাহিন ভাইয়া এসেছেন। "
"কে ? তোর সেই কিম্ভূত vaia ? " মোলায়েম কণ্ঠ যেন মখমলের মতন, কিন্তু ঘাম জমছে কিশোরের মুখে । এই গলা, এ তো.......................
ততক্ষণে এদিকে ফিরেছেন সেই মহিলা। হাতে এক ফুটফুটে বাবু। কিন্তু এই নতুন মুখটি কিশোরকে কোন আশ্বাস দিতে পারলোনা , কারণ পুরনো মুখটির সাথে জড়িয়ে আছে অনেক হতাশার স্মৃতি ।
সেই মখমলকন্ঠীও কিন্তু হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।
কোমল কণ্ঠে বলল কিশোর, "ভালো আছো , রমা ? '

মন্তব্য ১ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩২

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত বলেছেন: ডায়রি কথন এর পরের অংশ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.