নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত (সৌকপ)

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত

আমি আসলে কেউ নই ।

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

"শিহরণ"

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৫৫

ভার্সিটি বন্ধ হয়ে গেছে আজ। সিভিল বিল্ডিং এর ছাদে বসে হাওয়া খাচ্ছিল কিশোর। প্রায় পৌনে পাঁচটা বাজে। নেমে আসা উচিত। কেননা পাঁচটার সময় গার্ডদের সব দরজা জানালায় তালা লাগাবার কথা। যদি ছাদ চেক না করে তালা লাগিয়ে দেয়, তো শেষ।

ছাদ থেকে নেমে এল সে। ক্যাম্পাসটা খা খা করছে। কেউ নেই। সব দুপুরেই হাওয়া হয়ে গেছে। টানা তিনমাস পর ছুটি পেলে এমন তো হবেই। ঠিক তখনই লোকগুলোকে দেখতে পেল কিশোর। আগেও তার এলাকায় দেখেছে সে। একটা জীপ, আর পাচ-ছজন লোক। তাদের মুখে নিজের নামটা বার দুয়েক শুনল সে। তাকে খুঁজতেই এসেছে তারা। কি যেন এক ভয়াল অনুভূতি তার গায়ে কাঁটা দিতে থাকে। উল্টো ঘুরে পালিয়ে যাবার কথা ভেবেই পেছনে ঘুরলো সে, দেখলো আরও একজন ইতিমধ্যেই তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, আর মুখে এক বিকট হাসি। এতদিন কল্পনায় সে নানা ভাবে হিরো সাজার চেষ্টা করতো কিশোর । ভাবতো , যদি আমার উপর কেউ এভাবে আক্রমন করে, আমি ওভাবে কাউন্টার করবো, ইত্যাদি ইত্যাদি। সব কল্পনা কাজে লাগিয়ে সে দৌড় দিলো, কিন্তু হলো না। দৌড়ের মধ্যে শার্প টার্ন নিতে গিয়ে ছিটকে পড়লো সে। নিমেষেই লোকগুলো এসে ধরে ফেললো তাকে। নানা ভাবে ছাড়া পেতে চেষ্টা করছিল সে, তবুও এতগুলো হাতের সাথে পেরে উঠলো না।

তাকে ধরে দাঁড়িয়ে আছে লোকগুলো। কিন্তু আশেপাশে সাহায্য করার কেউ নেই। যদি শুধু ক্যাম্পাসটা ফাকা না হতো, হয়তো ফ্রেন্ডগুলো এগিয়ে আসতো। হয়তো জীবন বাজি রেখে লড়তো। কিন্তু আজ কেউ নেই।

“দেখো ছেলে, কেউ নড়াচড়া করো না। তোমার কোন ক্ষতি করার ইচ্ছে আমাদের নেই। কেবল তোমার আব্বা যদি আমাদের সবুর ভাইয়ের পাওনা টাকাটা ঠিকঠাক মতন দিয়ে দিত, তাহলে আজ তোমাকে এ ফ্যাসাদে পড়তে হতো না। ” এক স্বাস্থ্যবান লোক এগিয়ে এসে বললো কথাগুলো। বোঝা গেল সে-ই এই গ্রুপের প্রধান পান্ডা।
“আমার কি কোন ভয় নেই তাহলে?”
“নাহ। হয়তো কয়দিন আমাদের সাথে থাকতে হতে পারে। আর কোন ভয় নেই। ততদিনে চাপ দিয়ে তোমার বাবার কাছ থেকে টাকা গুলো আদায় করে ফেলবো আমরা।”
কোনদিকে কোন উপায় নেই দেখে তাদের কথা মেনে নিলো কিশোর।
“শোন, এতজন এভাবে থাকলে সমস্যা। তোরা চলে যাক। ওকে আমি একাই হ্যান্ডেল করতে পারবো। তোরা ক্যাম্পাসে ছড়িএ যা, ঘোরাফেরা করতে থাক। দরকার হলে ডাকব। ”
তার কথা মেনে চলে গেল সবাই।
“হ্যা খোকা। তুমিতো ভালো ছেলে । আর আমাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই একটা রফা হয়ে গেছে। তুমি চুপ থাকবে, বদলে আমরা তোমার কোন ক্ষতি করবো না। শুধু আমাদের কাছে থাকতে হবে। রাজি তো?”
নীরবে ঘাড় কাত করে সায় দিলো কিশোর।
“তাহলে চলো, আশেপাশে এমন একটা জায়গা বলো যেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটু আরাম করে বসা যাবে। ” বলেই কিশোরের একাবারে ধার ঘেষে দাঁড়ালো লোকটা। একটা হত জ্যাকেটের পকেটে। নিজের পেটের একপাশে ভারী কিচুর স্পর্শ অনুভব করলো কিশোর। বুঝতে পারলো, পকেটে মেশিন আছে।

“মোড়ের দিকের একটা বিল্ডিঙে ছাদ খোলা থাকে। ওখানে সাধারণত কেউ যায় না। আমি মাঝে মধ্যেই ছাদে বসে বাতাস খাই। ওখানে যাওয়া যেতে পারে।”
“এই তো, ভালো ছেলে, একটা ছোটখাটো বোতল খাবার ইচ্ছা আছে। তোমাকেও কয়েক ঢোক দেব ভাবছি। পেটে পড়লে আরাম পাবে ।”
কিশোরকে একরকম ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যাচ্ছিল লোকটা। ভয়ে কিশোরের পা কাঁপছিল। তাতে চলার গতিটা খানিক টলমলে দেখাচ্ছিল। গেট থেকে বের হতে মুখে একটু আশার আলো ফুটে উঠলো। কেননা গেটের বাইরে শহীদ মিনারের বেদীতে বসে আছে রিজওয়ানা। একসময় কিশোরেরই ছাত্রী ছিলো। মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো কিশোরের। কিছু কি বুঝতে পারবে রিজওয়ানা? সাহায্য কি আনতে পারবে? চলার সময় বাঁ হাতটা পেছনে দিয়ে হাতে কিছু ভঙ্গি করতে লাগলো কিশোর , ভাবলো, কিছু হয়েতো ধরতে পারবে সে। কিন্তু একটু মোলায়েম হাসির বদলে সে রিজওয়ানা আর কিছুই বুঝতে পারলো না।

মিনিট দুয়েক চলার পরই সেই বিল্ডিং। সরকারী কোয়ার্টার মনে হয়। তবে এতে ছাদে ওঠার সিড়ি , সাথে একটা চিলে কোঠাও আছে।
নানান কথা বলতে লাগলো কিশোর। মনে এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা, যদি তার সাথে ভালো সম্পর্ক হয়ে তাকে ছেড়ে দেয় লোকটা... কিন্তু লোকটা কেবল হাঁহু করেই উত্তর দিতে লাগলো।

ছাদের গেটের সাথেই চিলেকোঠা। আজ সেখানে ঢুকে চমকে উঠলো ওরা দুজনেই। একটা মেয়ে বসে আছে। কিশোর আরো আশ্চর্য হলো, কেননা মেয়েটা ওদেরই ক্লাসের। নাম রূপা।
রূপা কাঁদছিল একটু আগেও। হয়তো গত দুই-এক সেকেন্ডের মধ্যে চোখের পানি মুছেছে। কন্ঠে তা এখনো বোঝা যাচ্ছে।
“আরে, কিশোর যে। তা এখানে কি মনে করে?”
“এইতো আঙ্কেল ঘুরতে এসেছিলো। তাই তাকে নিয়ে একটু বাতাস খেতে আসলাম। আমি তো এখানে প্রায়ই বসি। আগে তো কখনো তোমাকে দেখিনি। ”
“আমরা এখানে নতুন উঠেছি। দুই সপ্তাহ হলো।”
“ওহ। আমরা একটু বসলে সমস্যা হবে?”
“নাহ। বসো।”
রূপার সামনে ছিলো আরো দুটো চেয়ার। রূপারটা সহ তিনটা চেয়ার রাখা ছিল ত্রিভুজাকার। একটা চেয়ার দেখতে অনেকটা সোফার মতোন, ভারী গদি দেয়া আছে। লোকটা তাতেই বসলো। অন্যতায় কিশোর।
“কিশোর, শুনেছ? কাল রাতের বাস অ্যাকসিডেন্টের কথা? ফার্মগেটে। প্রায় ২১ জন মারা গেছে।”
“কাল রাতে ? আমরা ট্যুর থেকে আসার দিন, মানে ১৪ তারিখেও তো মনে হয় একটা হয়েছে। কি হচ্ছে যে দেশটার।”

পকেট থেকে আইডি কার্ডটা বের করলো কিশোর। একটা কার্ডফোনও বলা চলে। ক্রেডিট কার্ডের মতন চ্যাপ্টা। দূর থেকে যেন কার্ড বলেই মনে হয়। শুধু নেটে অ্যাক্সেস করা যায়। চ্যাপ্টা বানানোর জন্য স্পিকার, মাইক্রোফোন কিছুই নেই এতে। শুধু পুরোটা জুড়ে একটা ডিসপ্লে। আর পেছনে দিকটায় আইডি কার্ডটা লাগানো আছে।
হাতে নিয়েই ফেসবুকে ঢুকে গেল সে। কিন্তু আশ্চর্য হলো, লোকটা তাকে দেখেও ফোনটা নিচ্ছেনা কেন? কপাল ভালো হলে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়ে বসে থাকবে। যতটা সময় লাগে সাহায্য আসতে। কিন্তু কি ভেবে যেন পাঠালো না। কারন লোকটা এই ম্যাসেজ দেখলে কি না কি করে বসে, পকেটে তো মেশি আছে ওর।

হঠাতই হাত থেকে ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে গেল লোকটা। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে কিশোরের দিকে তাকালো সে। কিশোর বলে উঠলো, “দেখেন, আমি কোন ম্যাসেজ, পোস্ট কিছুই করিনি। প্লিজ, দেখেন একবার।”

লোকটা দেখলো। কিছুটা শান্ত হলো। কার্ডটা খুললো ফোন থেকে। তার পর ফোনটাকে একহাতে মুচড়ে একদিকে ফেলে দিলো। এবার কার্ডটা হাতে নিয়ে বাঁকিয়ে ফেলতে গেলে তার হাত থেকে ছোঁ মেরে কার্ডটা নিয়ে নিজের চেয়ারে চলে এলো কিশোর।
“আপনি আমার আইডি কার্ড ভাংছেন কেন? এটা আমার পরে কাজে লাগবে না?”
লোকটার মুখটা নরম। মুখে হাসি নেই। চোখের দৃষ্টি মোলায়েম। মাথা নাড়লো সে। অর্থাৎ এ কার্ড আর কখনো কাজে লাগবে না কিশোরের।
যা বোঝার বুঝতে পারলো কিশোর। মুখ থেকে ভয়ের রেশটাও চলে গেল তার। এখন কেবলই হিমশীতল এক কিশোর বিরাজ করছে সেই রুমে।

বাঁ দিকে তাকিয়ে দেখলো রূপার চোখে ভয়। গত ত্রিশ সেকেন্ড ধরে যা কথাবার্তা হলো, সব শুনেছে সে। এবং সম্ভবত সবটাই বুঝেছে। তার দিকে তাকিয়ে থেকেই আইডি কার্ডটা নিজের হাতে দলা মোচড়া করে ফেললো। ছূরে ফেললো রূপার পায়ের কাছে।

“উম, গিফট?” বললো কিশোর। হাত পা কাপছে রূপার। কাঁপা কাঁপা হাতে সে তুলে নিলো কার্ডটা। আস্তে আস্তে উঠলো। তীব্র আতঙ্ক তার চোখেমুখে। আস্তে আস্তে সে যাতে লাগলো দরজাটার দিকে। কাঁদছে, আওয়াজ না করে। ঘর থেকে বেরিয়ে গেল রূপা। হয়তো রূপাই শেষ পরিচিত মুখ যা দেখলো কিশোর। হয়তো এর পর আর কোন পরিচিত মুখ দেখবে না সে।

সামনের লোকটা উঠলো। আস্তে করে উঠে চিলেকোঠার দরজার কাছে গেল। “তোমার assist ভালো লাগলো।” বলেই দরোজাটা ভেজিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল লোকটা। কড়া নাড়ার শব্দ। সম্ভবত তালা লাগাচ্ছে।

হঠাতই সবগুলো ইন্দ্রিয় সতর্ক হয়ে উঠলো কিশোরের। কোথায় গেল লোকটা?? রূপার কিছু হবে না তো?? রূপা সব দেখে ফেলেছে, সব শুনেছে , সব বুঝেছে । তাকে তো বেরিয়ে যেতে দেবার কথা না। কিন্তু রূপা বেরোবার সময় কিছুই বলেনি লোকটা। তাহলে কি সে আগে রূপাকেই.........

এক লাফে দরজার কাছে এল কিশোর। হ্যাচকা টান মেরে নিজেই পেছনে পড়ে গেল। দরজায় তালা ছিলো না। তারপর একেক লাফে চার-পাচ সিঁড়ি করে লাফিয়ে নামতে লাগলো সে, রূপাকে বাচাতে হবে। ওর তো মরার কথা না......

তিন চারটে তলা নামার পর দেখাগেলো, রূপা তখনো যেন হিস্টিরিয়াগ্রস্থ রোগীর মতন কাঁপছে। সর্বশিক্তি দিয়ে নামার চেষ্টা করে যাচ্ছে , কিন্তু পা টলমল করছে মাতালের মতন। আর দু লাফে সেখানে পৌঁছেই রূপাকে দুহাতে ধরে ফেললো কিশোর। সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল রূপাও। বোঝা গেলো কতয়া শক্তি সে ব্যয় করছিল নামার জন্য। সামান্য একটু ধাক্কাও আর তার মন নিতে পারেনি।

কিন্তু সেই লোকটিকে কোথাও দেখা গেল না।

বিঃদ্রঃ ইহাও আমার একখানা স্বপ্ন ছিল। কিশোর, রিজওয়ানা, রূপা সবাই ছিল আমারই পরিচিত মুখ, শুধু সেই লোকটি ছাড়া।
স্বাস্থ্য আরেকটু কম হলেই তাকে দেখতে বাকের ভাইয়ের মতন লাগত।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:০৬

বিজন রয় বলেছেন: এই ব্লগে আপনার ৪ বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছা।

ভাল থাকুন।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:১০

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত বলেছেন: ধন্যবাদ। আমি নিজেও ব্যপারটা খেয়াল করিনি। :-)

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:১৩

বিজন রয় বলেছেন: গল্পটি পড়লাম।
++++

৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শেষটা ঠিক বুঝতে পারলাম না!

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত বলেছেন: এটা আসলে গল্প না। স্বপ্নে দেখলাম তো.

২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:১৯

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত বলেছেন: আমি নিজেও বুঝি নাই। কেননা সিঁড়ি ছাড়া তো যাবার কোন পথ ছিল না। কিন্তু সে সিঁড়িতে ছিল না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.