নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত (সৌকপ)

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত

আমি আসলে কেউ নই ।

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

Northern Germany trip (Bremen, Hamburg, Lubeck and a bit more)

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:১৫

abo-upgrade কে হালাল করতে জর্মনদেশের নানান শহর ঘুরে বেড়িয়েছি দিন দশেক ধরে। তারই শেষ পর্ব ছিলো উত্তর দিক। তিনটে দিন কাটিয়েছি হামবুর্গ, ব্রেমেন , লুইবেকের মতন শহরগুলোতে।

হামবুর্গের পরিবেশ আর দশটা শহরের মতন নয়। কোলাহল, হইহট্টায় ভরা। কেমন যেন একটা গ্লোবাল ভিলেজ টাইপ ভাইব। বিকেল সন্ধ্যায় রাটহাউজের সামনের চত্ত্বরে, ক্যানালের ধারে যুবা-বুড়াদের মেলা বসে। টং এর দোকান থাকলে রবীন্দ্র সরোবরের আড্ডা বলে নিমেষেই চালিয়ে দেয়া যেতো হয়তো। মামুন ভাইয়ের মাথার উপর দিয়ে ফালাফালিও ঐ চত্বরেই করা। সপ্তাহের তিন চার দিন হামবুর্গের নানান জায়গায় বাজার বসে। দেশি ভাষায় বাজারের বদলে হাট বলাটাই যেন বেশি সঠিক শোনায়।


ইচ্ছে ছিলো সবগুলো হাট দেখার, কিন্তু তার মধ্যে শুধু Isemarkt টাই দেখতে পেয়েছি, শুক্রবার বসে সেটা। হামবুর্গের পুরনো Isestrasse তে স্ট্রাসেনবাহ্ন এর রেলের তলায় বসে এই বাজার। লম্বা রাস্তা জুড়ে দোকানের পর দোকান। মাংস, চীজ, মশলা, কিছু সীফুড, লোকাল জর্মন খাবার, কাপড় চোপর, সবজি, ফল, কি নেই সেখানে…… প্রতি রোববার ভোরে হামবুর্গ-আল্টোনা এলাকায় বসে মাছের বাজার। শরীর ব্যথা আর ক্লান্তির কারণে দেখতে যেতে পারিনি। কারো সুযোগ হলে অবশ্যই যাবেন।



আমরা ছিলাম হামবুর্গের প্রধান রেলস্টেশনের ঠিক পেছনেই জেনারেটর হোস্টেলে। booking .com থেকে বুকিং দিয়ে গেছিলাম। প্রায় ১৫ ইউরো করে পড়েছে দিন প্রতি। হামবুর্গ হিসেবে মানানসইই মনে হয়েছে। অন্য কোথাও আরও কম খরছে পেলেও আমার সাজেশন থাকবে স্টেশনের আশেপাশে থাকার জন্য। বিশেষ করে যদি আমার মতন হামবুর্গকে মেইন হাব ধরে আশেপাশের এলাকাও ঘোরার ইচ্ছে করে। বিশ্বাস করুন, আট দশ ঘন্টা ঘুরে এসে তারপর হাউপ্ট বাহ্নহফে নেমে আর আবার হোটেলে যেতে ইচ্ছে করবে না। আমি সাজেস্ট করবো আগেই বুক করে যাবার জন্য। কেননা গিয়ে বুকিং করার চেষ্টা করলে ২৪-৩৬ ইউরো পর্যন্ত গুণতে হতে পারে। সাজানো গোছানো হোস্টেল , কিন্তু রান্নাঘরের সুবিধা নেই। হোটেলের আশেপাশে অসংখ্য তুর্কি দোকান। খাবার নিয়ে কষ্ট হবার কথা নয়, হালাল খাবার খুঁজলেও ।

যে কোন শহরকে চেনার জন্য, বিশেষ করে যদি জার্মান/ইউরোপীয় শহর হয়, আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক বলে, অন্তত একটা শুক্রবার রাত যেন সেই শহরে কাটানো হয়। শুক্রবার রাত যেন চাঁদরাত। শয়ে শয়ে মানুষ ঘুরতে খেতেবের হয়। সে সময় কোন একটা রেস্টুরেন্টে বসুন, খাবার নিন, চিবুতে থাকুন, পারলে কফি নিয়ে বসুন, দেখুন কারা আসে, কারা যায়, কারা হাসে, কারা কাঁদে। এরাই কিন্তু এই শরটির প্রাণ, এর শিরার রক্ত।

হামবুর্গে আমরা বসেছিলাম Schabi's Fischimbiss দোকানটিতে। রেটিং যেমন অসাধারণ রকমের ভাল, তেমনি তাদের খাবার। ফিস অ্যান্ড চিপস নিয়েছিলাম, আর কিছুই না। কিন্তু তাই যেন অমৃতের মতন লাগল। আসলে, দু বছর ধরে ফ্রোজেন মাছ খেতে খেতে এখন ফ্রেশ মাছ খেলে ভালো লাগবেই।

ব্রেমেনে দিনটা গেছে পুরো মেঘলা। কিন্তু সেদিন সকাল থেকেই সারা ব্রেমেন জুড়ে যেন শুধু স্কুলের বাচ্চা কাচ্চাই দেখেছি। দল বেধে আল্ট-মার্কট প্লাতস (পুরনো বাজার চত্বর) এ ঘুরে বেড়াচ্ছে , স্কুলের চত্বরে ফুটবল খেলছে। এই অসাধারণতার চাপে ব্রেমেনের অন্যান্য অসাধারণতা খুব বেশি চোখে ঠাহর করে উঠতে পারিনি। আরেকটু হলেই আমাদের শাওমি রাহমান বাচ্চাদের সাথে ফুটবল খেলতে নেমে যাচ্ছিল। আমরা তখন তর্কে লেগে গেলাম, বাচ্চারা কি বুঝতে পারবে যে, ও একটা মাস্টার্স স্টুডেন্ট, নাকি পারবে না……… শেষ মুহুর্তে শাওমির মনে হলো যে, ধূরো, ফুটবল খেলে কি লাভ, তাই আর খেলা হলো না। আমাদের তর্কের কোন শেষ ফলাফলও এলো না। মেঘলা দিন হলেও ব্রেমেনে পর্‍্যটক ছিলো অনেক। আর, পোর্ট সিটি যে, তাও বোঝা গেছে কিছু কিছু। ব্রেমেনের Teerhof রাস্তাটা অসাধারণ লাগলো। লাল লাল বিল্ডিং এর সারি সব।


ব্রেমেন যাবার আগেই ব্রেমেনের উপকথা, The Town musicians of Bremen টা পড়েছিলাম। আল্ট মার্কটপ্লাতসের ওখানেই চোখে পড়লো সেই গল্পের আদলে তৈরি করা ভাস্কর্যটি। সবাই দেখলাম গাধার পা ধরে ছবি তুলছে। এই অংশটার মর্ম উদ্ঘাটন করতে পারলাম না। তাতে কি? গড্ডালিকা প্রবাহে দিলাম ভাসিয়ে…

লুইবেক শহরটায় পেয়েছিলাম পুরো রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। আল্টস্টাড (পুরনো শহর) অংশটা অসাধারণ সুন্দর । Hanceatic ব্যবসায়ী সংঘের সদস্য বলে বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী অনেক শহরের সাথেই যোগাযোগ ছিলো লুইবেকের। ইম্পেরিয়াল ফ্রী সিটি। কোন স্টেটের সদস্য না, বরং সরাসরি হোলি রোমান এম্পায়ারের সম্রাটের নিকট রিপোর্ট করতো। রোমান রোমান একটা ভাইব ছিলো বলেই বোধহয় শহরের প্রধান ফটকের গায়ে রোমান SPQR এর আদলে লেখা SPQL -Senatus Populusque Lubecensis (Senate and People of Luebeck, Germany).



বোনাস ছিলো শ্লেজভিগের ভাইকিং জাদুঘর আর সেন্ট পিটার অর্ডিং এর সমুদ্র সৈকত। ভাইকিং জাদুঘরে সেখানে উদ্ধারকৃত প্রাচীন ভাইকিং শহরের অনেক নিদর্শন দেখলাম। জর্মনদেশের এই অংশটা উনবিংশ শতাব্দীর আগে ডেনমার্কের অধীনে ছিলো। জাদুঘরে ইংরেজি , জর্মনের পাশাপাশি তাই ছিলো ড্যানিশ ভাষায় ইন্সট্রাকশন। কিভাবে তারা ধাতুর কাজ করতো, কিভাবে কাচের কাজ করতো, তাদের বর্ণমালা, স্মৃতিফলকের লেখা দেখে রোমাঞ্চিত হতেই হয়। পরে যখন দেখলাম এই ব্যাটারাই নাকি আক্রমণ করে আখেনের বিখ্যাত রাজপ্রাসাদ জ্বালিয়ে দিয়েছিলো, রাগের চোটে দুবার ছ্যা-ছ্যা বলে বেড়িয়ে আসলাম।

ভাইকিং দের জীবনযাত্রার আদলে তৈরি করা হয়েছে একটা ভাইকিং গ্রাম, তাদের কাজকর্ম, পোশাক আশাকের লাইভ ডেমন্সট্রেশন হচ্ছে সেখানে, শুধু পুতুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা নয়, সবই কিন্তু লাইফ সাইজ।আমাদেরই মধ্যে কেউ একজন এক ভাইকিং রমণীর প্রেমে পড়ে তার সাথে ফটোবন্ধনে আবদ্ধ হলেন, কিন্তু কে সেই মহাজন??


সেন্ট পিটার অর্ডিং এর সৈকতটাও পশ্চিম মুখী। সূর্য ডোবার সময় তাই কক্সবাজারের ফীল পাওয়া যায়। কিন্তু অনেক বেশি পরিষ্কার। সৈকতের সৌন্দর্য তো আসলে আমার ক্ষুদ্র ক্ষমতা দিয়ে বোঝানো সম্ভব না। তাই চেষ্টাও করবো না। তবে আকাশের রংটা মনে হলো যেন কক্সবাজারের তুলনায় একটু বেশি রঙ্গিন। নীল, আবীরে মেশানো। আমাদের যা ডাস্ট আর লাইট পল্যুশন, এই রঙের খেলা আশা করাটা কেবল স্বপ্নেই সম্ভব।


সৈকতে গিয়ে যেন একেক জনের মনের বাচ্চা গুলো বের হয়ে এলো। জুনায়েদ সৈকতে সীগাল তাড়া করতে লেগে গেলো, জিয়া ভাই লাগলো শেল সংগ্রহ করতে। মামুন ভাই কানে ফোন লাগিয়ে বিজনেসের আলাপ করতে করতে জুনায়েদের সাথে তেড়ে এলো আমাকে বালির বল দিয়ে বালুকাত করার জন্য। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে বেচে গেছি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবেই।

সৈকতের সমান্তরালে রাস্তা , আর সেই রাস্তায় অসংখ্য দোকান। লোকে গিজগিজ করছে। আমার সুগন্ধা বীচে যাবার রাস্তার কথা মনে পড়ে গেলো। রাস্তার দুপাশে হোটেল, আইসক্রিমের দোকান , আরও কত কি। বীচটাকে আমি গুগল ম্যাপে জুম করে খুঁজে খুঁজে বের করেছিলাম। এটা যে এই লেভেলের ট্যুরিস্ট স্পট , তা বুঝিনি। এখানেও খাওয়া দাওয়া হয়েছে। এখানে যে দোকানে বসেছিলাম তার নাম Fisch und Meer . 9.5 থেকে 9.9 ইউরো এর মধ্যে চারটে ডিশ ছিলো। প্রতিটা অর্ডার করলাম, সবাই মিলে ভাগযোগ করে খাওয়া। বেকড স্যামনের ডিশটাই সবার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে।

হাসিমুখে ট্রিপে যাওয়া অনেক সহজ, কিন্তু হাসিমুকে ফেরত আসাটা অনেক কঠিন। বিশেষত যখন ২/৩ দিন বা তাঁর লম্বা ট্যুর হয়, এর সাথে তাঁর কিছু খুটখাট লেগে যাওয়াটাই বরং স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের ৫ জনের মধ্যে খুটখাট লাগা তো পরের কথা, হাসি যেন বন্ধ হয়নি এক বারের জন্যও। হামবুর্গে তৃতীয় দিনে বাশার ব্রো এর সাথে একত্রিত হয়ে লুইবেকে শেষ সময় গুলো কাটালাম। মানুষ দুজন বেড়ে যাওয়ায় শেষ দিন আনন্দ যেন বেড়ে গেছিল চারগুণ। ব্রো হাইফাই মোবাইল নিয়ে যাওয়ায় শেষ দিনে ভালো কিছু ছবি পাওয়া গেছে।

আমার ধৃষ্টতা , সে আর বলার নয়। গোপাল ভাঁড় মার্কা ভুড়ি নিয়ে আমি গায়ে সাঁটা কালো টিশার্ট আর ঢোলা কালো পাজামা পরে ঘুরে বেড়িয়েছি । কখনো বা আবার গলায় টিনের চশমা ঝুলিয়ে, কখনো চোখে দিয়ে। চুল আঁটসাঁট করে বেঁধে, আমাকে যে আসলে কিসের মতন দেখা গেছে তাঁর কোন সংজ্ঞা আমার কাছে নেই। ঠিক একই বেশ নিয়ে আমি দক্ষিণেও ঘুরে বেড়িয়েছি। দক্ষিণে দু একজন মানুষ আড়চোখে তাকালেও উত্তরে তাঁর বালাইও দেখিনি।



আসলেই জার্মানির উত্তর অন্য সব জায়গা থেকে আলাদা। ওভাবে বললে দক্ষিণ ও আলাদা, পশ্চিমও আলাদা। এই aboupgrade এর সুবাদে এখানে ওখানে ঘুরে তার একটা আঁচ পাওয়া গেছে। কিন্তু এটা তাই, আঁচ মাত্র। দু হপ্তার মধ্যে এতো ঘুরে আঁচের চেয়ে বেশি গভীর কোন অভিজ্ঞতা হয়নি। কিন্তু তাতেই কতো না স্মৃতি, তাতেই কতো হাসি, কতো গল্প…… এই বা কম কিসে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.