নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত (সৌকপ)

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত

আমি আসলে কেউ নই ।

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

Night of Fountains 1: Fontana de Trevi

০৬ ই নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:২০

টিকেট পাবার আশায় রোমান ফোরামের আশপাশের চিপা গলি ঘুপচি দিয়ে ঘুরঘুর করছিলাম। মধ্য দুপুরের সূর্য মাথার উপর গনগনে আগুন ছড়াচ্ছে। আশপাশ দিয়ে বুড়োবুড়ি ছাতা মাথায় দলে দলে ঘুরছে, আর সব গ্রুপের সামনে একজন করে নেতা, হাতে একটা ক্লিপবোর্ড, আর তাতে নানান ম্যাপ, ডায়াগ্রাম আঁকা। যত বাজে ছাত্রই হই, ডায়াগ্রাম , ম্যাপ দেখলে একটু মন উশখুশ করে আরকি। চোখ সোজা রেখে কান বাড়িয়ে দিলাম, দেখি তো, জ্ঞানী গাইড কি বলে??

যে কথাটা কানে আসলো তা হলো, “রোমকে পানির জন্য কখনো কষ্ট করতে হয়নি। রোমে সব সময়ই পানির প্রাচুর্য ছিলো।” আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হয়, যে শহরের মধ্য দিয়ে এতো বড় টাইবার নদী বয়ে গেছে, তার আবার পানির অভাব থাকে কি করে? তবে কেঁচো খুড়তে গেলে সাপ বের না হয়ে বের হয়ে আসবে রোমান অ্যাকুইডাক্ট গুলোর কথা, যেগুলো কিনা প্রাচীন রোমে বিশুদ্ধ খাবার পানি সাপ্লাই দিতো। আজও দেয়।

প্যানথিওনের কথা বলেছিলাম, মনে আছে? তার সামনেই যে ছিলো ওবেলিস্কওয়ালা ফোয়ারা?? তার পানির উৎসও কিন্তু এমনই এক অ্যাকুইডাক্ট। এভাবেই এই প্রাচীন অ্যাকুইডাক্টগুলো শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা ফন্টানা (ফাউন্টেন) গুলোতে পানির প্রবাহ বজায় রাখছে।

রোমের সবচেয়ে বিখ্যাত ফন্টানা তথা ফোয়ারার কথা বলতে গেলেই বলতে হবে ত্রেভী ফাউন্টেনের কথা। বলা হয়, কেউ যদি ত্রেভীতে কয়েন ছুড়ে মারে, সে আবার রোমে ফিরে আসবে। এ জন্যই হয়তো প্রতিদিন হাজারে হাজারে দর্শনার্থী গিয়ে ভিড় করেন ত্রেভীতে।

আমি কিন্তু সেজন্যে যাইনি। যাবার আগে ত্রেভীর ছবিও ভালো করে দেখে যাইনি । সারাদিন কষ্ট পাবার পর দুপুর তিনটেয় হোটেলে পৌছে গোসল দিয়ে দিলাম এক ঘুম। কয়েকঘন্টা যাবার পর প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঘুম ভাঙ্গে। ভাবলাম, বের হবো, কি হব না। সময় কম, নষ্ট করার কোন মানে হয় না। কেননা, পরদিন শুধু ভ্যাটীকানটাই আছে লিস্টে হুদাই আরও জিনিসপত্র যোগ করে দুপুরের ট্রেন মিস করার কোন ইচ্ছে নেই। তাই নানা রকম ক্যালকুলেশন মাথায় নিয়ে বের হয়ে পড়লাম হোটেল থেকে। ম্যাপ দেখে হাটা শুরু করলাম ত্রেভীর উদ্দেশ্যে। কেননা, ধারেকাছে শুধু এটাই ছিলো।

আমার হোটেলটা ছিলো রোমা টার্মিনি স্টেশনের খুব কাছেই। আর এই জায়গাটা মোটামুটি রাত আটটার সময়ই দেখলাম নিস্তব্ধ। আমি ভাবি, কি ব্যপার, এই সময় তো মানুষজন এতো কমে যাবার কথা না। কিন্তু যতই পশ্চিমে যাচ্ছি, লোক ততই বাড়ছে। দুপুরে খাঁখাঁ করা রেস্টুরেন্টগুলো দেখলাম লোকে পরিপূর্ণ। টেবিল খালি নেই বলতেই চলে। ক্যাফে আর পাবগুলোর ভেতরে তিল ধারণ করার জায়গা নেই। টার্মিনির নিস্তব্ধতা দেখে কিছুটা বিমর্ষ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এতো মানুষজন দেখে নিজেকে আবার চাঙ্গা মনে হলো। এভাবেই গলি ঘুপচিতে ম্যাপ ধরে হাঁটতে হাঁটতে পৌছে গেলাম ত্রেভী ফাউন্টেনে।



আসবার আগে মনে হচ্ছিলো, হয়তো বিশাল কোন পিয়াতজ্জার পাশে হবে হয়তো। কিন্তু গিয়ে চারপাশে দালানকোঠা দিয়ে ঘেরা ছোট্ট এক চত্বরের মধ্যে তার সমস্ত অলংকার গায়ে জড়িয়ে বসে আছে ত্রেভী ফাউন্টেন।

অর্ধ বৃত্তাকার ফোয়ারাটি রাস্তার লেভেল থেকে কিছুটা নিচে। আর তাতে করে নামবার পথে দু তিনটে ধাপ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। শয়ে শয়ে লোক তাতে বসে আছে, কথা বলছে, কপোত কপোতীরা খুনসুটি করছে, ছবি তুলছে……… আর ফোয়ারার পানির খেলা দেখছে। যারা বসবার জায়গা পায়নি, তারা রেলিং এ ঢেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে সময় কাটাচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আমি নেমে গেলাম একেবারে নিচের ধাপে। একটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে বসে গেলাম মার্বেলের তৈরি শেষ ধাপটাতে, দেখতে লাগলাম সবকিছু।



প্রথমেই যে জিনিসটা একেবারে সবার নজর একবারে কেড়ে নেয় তা হলো, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি। প্রতি ১৫-২০ মিনিটে একটা করে জাস্ট ম্যারিড কাপল আসবে, দাঁড়িয়ে ছবি তুলবে । সে কতো নানান রকম পোজ, আর নানান রকম ড্রেস। সবার ছবি তুলে রাখলে একটা ছোট খাট এনসাইক্লোপিডিয়া বানায়ে ফেলা যেতো। আমার ইন্সটিঙ্কট মনে হয় এইসব ব্যপারে একটু ভালো। কেননা ফাউন্টেনের বাঁপাশের যে জায়গাটায় আমি বসেছিলাম, সব নয়া দম্পতি এসে দেখি সেই সাইডটাতেই ছবি তোলে। কেউ অন্যপাশে যায় না। ছবি তোলা শেষ হলে সবাই প্রথামতন কয়েন ছুঁড়ে মারে, সবাই ফিরে আসতে চায়। জীবনানন্দ রোমান হলে কি লিখতেন, তা বুঝতে কল্পনা শক্তি খুব একটা শক্তিশালী হতে হয় না ।

এক কাপল (নয়া দম্পতি না) নামলো হাত ধরাধরি করে, পিছে পিছে এক দোস্ত । আমি ভাবলাম, এ আর এমন কি, এখন দোস্ত কাপলের ছবি তুলে দেবে, ফটাফট চলে যাবে, এইতো। কিন্তু কাপল পিক তুললো ১/২ টা , আর দুই দোস্ত মহিলাকে দিয়ে নানা পোজে মনে হয় ডজনখানেক ছবি তুললো অনেকক্ষণ ধরে। মনে হলো, এরা ব্রোমান্সের স্বর্ণশিখরে আছেন, গিয়ে স্যালুট দিয়ে আসি। আর সাথে স্মরণ করলাম সেই সমস্ত প্রাগৈতিহাসিক দোস্তদের, যারা বিয়ের পরে বউ/জামাইকে ছাড়া আর কাউকেই চেনে না, দোস্তদের পর করে দেয়। কেউ কেউ তো আবার বিয়ে ঠিক হওয়ার সাথে সাথেই ভুলে যায়। আমার বেশিরভাগ দোস্তরা অবশ্য এই পাপ থেকে মুক্ত…… কিন্তু………

আরেক কাপল নামলো, সাথে নামলো মহিলার বান্ধবী/বোন । এরা কোন পোজই ঠিক করতে পারে না। এইরকম হলে হয়া? নাহ, ভাল্লাগে না, চলো ওইরকম করি। কয়েক মিনিট ধরে তারা গভীর আলোচনা করে পোজ ঠিক করলো। এই কয়েক মিনিট সময় ফটোগ্রাফার বান্ধবী আমার পাশে বসা। বেচারীকে মনে হয় আরও কয়েক জায়গায় ঘুরিয়ে এখানে এনেছে, দেখতে হতাশ…… হতাশ চোখে একটা মুচকি মোলায়েম হাসি দিলো, যেন বলছে, “দেখুন না মশায়, কি যে যন্ত্রণা । এদের নিয়ে আর পারি না।“ এতো মোলায়েম সুন্দর হাসি ফিল্মের পর্দায় প্রচুর দেখি, কিন্তু বাস্তবে এর আগে দেখেছি কিনা, ঠিক মনে পড়ে না। আমি হাসিটা ফেরত দিতে গেলাম, কিন্তু মনে পড়ে গেলো, সুন্দরীদের দেখে আমি হাসি না, শাস্ত্রে নিষেধ, হার্টের ব্যামো হয়। তাই হাসি ফেরত দেবার প্রবল ইচ্ছেটা চেপে পাথর হয়ে সামনে তাকিয়ে রইলাম। কিছুক্ষন পর বান্ধবী চলে গেলো…… আর ওই কাপল?? সে কোন জাহান্নামে গেছে, তার খোঁজ আর রাখিনি।

মাঝে মধ্যে দুই একজন প্রবল উদ্যমী ব্যক্তিত্ব নামে ছবি তুললে, ফোয়ারার মার্বেল দেয়ালে পা তুলে কিংবা বসে ছবি তুলতে যায়, ঠিক তখনই চারপাশ থকে এ বেজে ওঠে কয়েকটা হুইসেল। পাহারা আছে বৈকি………

ইতিহাস বলে, এই ফোয়ারার পানি আসে যে অ্যাকুইডাক্ট থেকে, Aqua Virgo, সেটা অনেক পুরনো। ১৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন রোমে পানি দিতো। তবে আজকের যে জাঁকজমক , তা কিন্তু খুব বেশি আগের না। ১৬২৯ এ বার্ণিণিকে দায়িত্ব দেন তৎকালীন পোপ। কিন্তু পোপ Urban VIII মারা গেলে তা আর এগোয়নি। পরেন ১৭৩২ এ পোপ Clement XII এর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয় আজকের এই ত্রেভী ফাউন্টেন। বেশ কিছু সংস্কার কার্যও হয়েছে, আর তাই আজকে রোমের সৌন্দর্য বাড়াচ্ছে , আর সাথে আমাদের সবার চোখ জুড়াচ্ছে Fontana de Trevi

রোমে যতটুকুই ঘুরেছি, এই জায়গার মতন স্বস্তি আর কোথাও লাগেনি। হোটেলে নিজের বিছানাতেও না। একলা একলা বসে কোন আওয়াজ না করে, শুধু চোখ মেলে রেখেই ঘন্টা দুয়েক কাটিয়ে দেয়া যায় এখানে, আর দিয়েছিও । তবে মনে হলো, দিনের চেয়ে রাতেই হয়তো বেশি সুন্দর লাগে ফাউন্টেনটিকে । নেট ঘেটে কিছু ছবি দেখলাম। ভর দুপুরে যখন সূর্যের আলো এসে পড়ে তখন হয়তো আসা যায়, কিন্তু আসলেও রাতে আরও একবার আসতে ভলবেন না।
কেননা, বারে বারে ফিরে আসা যায় এখানে……

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২১ ভোর ৬:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:



লোকজনকে কাজে আসতে যেতে দেখলেন?

০৬ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:০৮

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত বলেছেন: ঠিক কাজে না, ওই রাতের বেলা বেশি লোক কাজে যাওয়া আসা করে না সাধারণত। যারা ছিলো প্রায় সবাই দর্শনার্থী। আমি যে ঘন্টা দুয়েক চুপচাপ বসে ছিলাম, তারাই যাওয়া আসা করছিলো।

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



রোমের লোকজন কাজকর্ম শুরু করেছে?

০৬ ই নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৫৯

সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত বলেছেন: আমি তো পথে পথে ঘুরেছি। তবে যা বোঝা গেছে, মনে হয় কাজ কর্ম শুরু হয়ে গেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.