![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনেকেরই হয়তো মনে প্রশ্ন আছে, রাসূলুল্লাহ (স) এর জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন কোনটি ? আম্মাজান আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদীস থেকে জানা যায়, সেটা হলো তায়েফের দিন। তবে আমাদের আজকে আলোচ্য ঘটনাটা তায়েফের ঠিক পরপর ঘটা।
তায়েফ থেকে নির্যাতিত ও প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাসূলুল্লাহ (স) নিদারুণ কষ্টে ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি তায়েফের উপকণ্ঠে এক আঙ্গুর বাগানে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেন। সেই ছায়ায় তিনি এক অসাধারণ দুয়া করেন যা সীরাত গ্রন্থে এসেছে। ঘটনাক্রমে, সেই বাগানের মালিক ছিলো মক্কার দুই লোক, উতবা আর শাইবা। তারা যখন দেখলো, রাসূলুল্লাহ (স) কি নিদারুণ অত্যাচার সহ্য করেছেন, তাদের অন্তরে কিছুটা দয়ার উদ্রেক হলো। তারা তাদের এক দাসকে বললো, উনার জন্য কিছু আঙ্গুর নিয়ে যেতে। সেই দাসের নাম ছিলো আদ্দাস।
রাসূলুল্লাহ (স) খাবার গ্রহণ করলেন। খাওয়ার শুরুতে তিনি বললেন, "বিসমিল্লাহ"।
আদ্দাস আশ্চর্য হয়ে বলে, "আল্লাহর শপথ, এ অঞ্চলের লোকেরা তো এভাবে কথা বলে না।"
রাসূলুল্লাহ (স) জিজ্ঞাসা করলেন, তাহলে তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ হে আদ্দাস ? আর তোমার ধর্ম কি ?
আদ্দাস উত্তর দিলো, নিনেভাহ, আমি একজন খ্রিস্টান।
রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, ওহ, ইউনুস ইবনে মাত্তার শহর ! তিনি তো অনেক ভালো মানুষ ছিলেন।
এতে আদ্দাস আশ্চর্য হয়ে যায়, আপনি কিভাবে জানলেন তার কথা ?
রাসূলুল্লাহ (স) উত্তর দিলেন, তিনি আমার ভাই, তিনি একজন নবী ছিলেন, আর আমিও একজন নবী।
আদ্দাস ঈমান আনে, সে আবগাপ্লুত হয়ে রাসূলুল্লাহ (স) এর মাথায়, হাতে ও পায়ে চুমু খায়। কিন্তু এ ঘটনা দেখে ফেলে উতবা আর শাইবা। হাজার হোক, তারা তো মক্কার লোক আর মক্কায় রাসূলুল্লাহ (স) আর তার মেসেজের ব্যপারে যা শত্রভাবাপন্নতা ছিলো, তা উতবা আর শাইবার মধ্যেও ছিলো। কুরাইশের এলিটক্লাস বলে কথা। তারা ঘটনা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় , রেগেও যায়।
আদ্দাস ফেরত আসলে তারা বলে, তোরে কি এই কাজ করতে পাঠাইছি? তুই তারে হাতে পায়ে চুমু খেয়ে সম্মান দেখাইলি, এতো আস্পর্ধা তোর ?
আদ্দাসের উত্তর, তিনি সর্বোত্তম ব্যক্তি, তিনি এমনসব কথা বলেছেন, যেগুলা একজন নবী ছাড়া কারও পক্ষে জানা সম্ভব না।
উতবা আর শাইবা রেগে বলে, এসবে কান দিবি না। তোর ব্রেইনওয়াশ হয়া যাবে। তুই খ্রিস্টান, সেটাই থাক। তোর ধর্ম এর ধর্মের থেকে উত্তম।
এই সেই আদ্দাসই, সম্ভবত প্রথম ইরাকী মুসলিম। যেখানে বাড়ির কাছের সব মানুষ প্রত্যাখ্যান করলো, সেখানে দূরদেশের মানুষ তাকে সম্মান করলো। শুধু তাই না, এই সফরে আরও একটি ঘটনা ঘটে ।
নাখলাহ নামক জায়গায় রাসূলুল্লাহ (স) তাহাজ্জুদ পড়তে উঠলেন। তাহাজ্জুদে তিনি যখন কুরআন পাঠ করছিলেন, তখন সেখান দিয়ে উড়তে থাকা একটা জ্বিনেদের দল সেটা শুনতে পায়। যতক্ষণ রাসূলুল্লাহ (স) তিলাওয়াত করলেন, তারা শুনলো এবং নিজেদের গোত্রের কাছে গিয়ে দাওয়াত দিতে থাকে। অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (স) এটা জানতেন না। বরং পরবর্তীতে কুরআনে এ ঘটনা প্রকাশিত হয়।
এখানে আমার টেক হলো, ইসলাম পূর্ব যুগে শয়তানদের দলেরা কিন্তু আকাশে গিয়ে ফেরেশতাদের কথা শোনার চেষ্টা করতো, যেগুলোর সাথে লামছাম মিশায়ে তারা গণকদের কানে ঢেলে দিতো। কিন্তু যখন কুরআন নাযিল হবে, তখন এই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয় আর কোন শয়তান ফেরেশতাদের কথা শোনার চেষ্টা করলে তাদের উপর আক্রমণ করা হয়। হয়তো তাদের মধ্যে একটা কানাঘূষা ছিলো যে, হঠাত করে এ অবস্থা কেন? আমার মনে হয়না কেউ তাদের কাছে গিয়ে ঘোষণা করেছে যে, এখন একজন নবী আসবেন, কুরআন আসবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এই নাখলার ঘটনায় সম্ভবত জ্বিন সমাজে কুরআনের সম্বন্ধে প্রথম ভালোরকম সংবাদ পৌছায়, এবং পরবর্তীতে জ্বিনেদের কিছু ডেলিগেশন এসে ইসলাম গ্রহণ করে আর নিজেদের গোত্রের কাছে গিয়ে প্রচার করতে থাকে।
উপরে যে দুয়ার কথা এসেছে, সেটা অসাধারণ সুন্দর এক দুয়া। বিভিন্ন লেকচারে শুনেছিলেম, এই দুয়ার চেইন খুব সবল না, কিন্তু দুয়ার মর্ম আর বাচনভঙ্গি দেখলে কারও মনে সন্দেহ জাগে না যে এরকম দুয়া রাসূলুল্লাহ (স) এর কাছ থেকেই আসা সম্ভব।
" ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার কাছেই আমার দুর্বলতা, আমার সামর্থ্যের অভাব এবং মানুষের কাছে আমার তুচ্ছতার অভিযোগ করছি।
ইয়া আরহামার রাহিমীন! আপনি তো দুর্বলদের রব, এবং আপনিই আমার রব।
আপনি আমাকে কার কাছে ছেড়ে দেবেন? এমন কোন দূরবর্তী মানুষের কাছে, যে কিনা আমার প্রতি শত্রুতা পোষণ করে, নাকি এমন শত্রুর কাছে, যাকে আপনি আমার উপর ক্ষমতাশীল করেছেন?
যদি আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট না হন, তবে আমি এর পরোয়া করি না। আপনার দয়া আমার জন্য খুবই প্রয়োজন।
আমি আপনার আরশের নূরের আশ্রয় চাই, যার দ্বারা সকল অন্ধকার দূর হয় এবং এই দুনিয়া ও পরকালের সকল ব্যাপার সঠিকভাবে নির্ধারিত হয়, আমি আপনার অসন্তুষ্টি ও রাগ থেকে পানাহ চাই।
আমি আপনার সন্তুষ্টি কামনা করি যতক্ষণ না আপনি সন্তুষ্ট হও।
আপনি ছাড়া কোনো শক্তি বা সামর্থ্য নেই। "
এখানে এই জাহেলের চোখে যা পড়েছে, তা হলো দুয়া করার আদব। এই মাত্র তিনি তায়েফ থেকে জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন পার করে আসলেন, রক্ত হয়তো এখনও পড়ছে, হয়তো ক্ষতগুলো ব্যথায় দপদপ করছে, হয়তো আঘাতের জায়গাগুলোতে কালশীটে পড়ে গেছে। অথচ তিনি আল্লাহকে বললেন না, আল্লাহ, আপনি তো জানতেন, আমারে তো বলতেও পারতেন যে এই অবস্থা হবে, আমি আরও দুইটা মানুষ বেশি নিয়ে যাইতা্ম ? আপনি তো মানুষের মন পরিবর্তন করতে পারেন। ওরা যখন আমাকে মারতে মারতে মাইলের পর মেইল দৌড়ায়ে বের করে দিলো, আপনি তো কিছু করলেন না। আজকাল ফিলিস্তিন ইস্যুতে আমাদের অনেক আবেগী মুমিন যেমন বলে , আল্লাহর সাহায্য আসেনা কেন, আমাদের মাইরা ফেললে পরে আসবে ? আসলে আমাদের আদব কায়দা বোধ আজকের দুনিয়ায় অনেক কম। সবাই সমান শ্লোগানকে সামনে নিয়ে অনেক সময় বাপের সাথেও খারাপ আচরণ করি, নিজের বন্ধুকে বাপ মায়ের থেকে বেশি সম্মান দেই। যেই বাপ মা নিজেদের সব সাধ আহ্লাদ ত্যাগ করে আমাদের সব দিচ্ছেন চোখেন সামনে, সেখানে আল্লাহ পাকের প্রতি ভালো আদব কোত্থেকে আসবে। আমাদের এনটাইটেলমেন্ট অনেক বেশি হয়ে গেছে। এটা কমা দরকার। আমরা ড্যাডিস প্রিন্স -প্রিন্সেস নই। আমরা দুনিয়ার মানুষ, দুনিয়া যেভাবে কাজ করে তার ঝড় ঝপটা আমাদের উপর আসবেই। এর জন্য আল্লাহ পাকের প্রতি বেয়াদবি করাটা গ্রহণযোগ্য নয়। নি:সন্দেহে রাসূলুল্লাহ (স) এর সাথে আল্লাহর সম্পর্ক সবচেয়ে কাছের ছিলো, আর এর পরেও তিনি এভাবে আদবের সাথে সুন্দর করে দুয়া করলেন। তিনি আল্লাহকে বললেন না, আপনি আমারে দুর্বল করছেন, তো আমি আর কি করমু? বরং তিনি নিজের দুর্বলতাকে দোষ দিলেন। আর তার উদ্দেশ্য কি ? উদ্দেশ্য হলো, ইয়া রব, আমি দুর্বল, যা যেভাবে করা উচিত অনেক সময় করতে পারি না । ইয়া রব, আপনি আমার উপর রাগ করবেন না। আমাকে আশ্রয় দিন। আপনি দুনিয়াতে আমার জন্য যা কিছু রাখছেন, আমি সন্তুষ্ট, কিন্তু আমাকে আশ্রয় দেন, আমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।
আল্লাহর সন্তুষ্টিই রাসূলুল্লাহ (স) এর দুয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য, যা আমাদেরও আদর্শ।
ঘটনাগুলো আর দুয়াটা ইবনে হিশামের সংকলিত সীরাত থেকে নেওয়া হয়েছে। মূল লেখা ছিলো ইবনে ইসহাকের, সেখান থেকে অনেক মানুষ সংকলন করেছেন, কিন্তু ইবনে ইসহাকে অরিজিনাল কাজটি আর আমাদের মাঝে নেই। বরং তার থেকে যারা সংকলন করেছেন, সেগুলোই আজও আমাদের সীরাত পাঠের মূল পাথেয়।
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৫৭
সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত বলেছেন: রাসূলুল্লাহ (স) এর স্ত্রীদের উপাধি হলো, উম্মুল মুমিনীন, বাংলা অর্থ বিশ্বাসীদের মাতা। সেক্ষেত্রে হ্যাঁ, আয়েশা (রা) এর স্থান আমার কাছে মায়ের মতনই।
২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:২০
আহরণ বলেছেন: তায়েফে নবীকে গনধোলাই দেয়া হয়েছে, ........... সত্যি নাকি @ ভাইয়া?
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:৪০
সৌর কলঙ্কে পর্যবসিত বলেছেন: আপনার শব্দচয়ন বা আপনি একটা মর্যাদাপূর্ণ উত্তর পাওয়ার জন্য যোগ্য নয়।
৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৯:২২
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো কিছু লিখুন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:০৯
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আয়েশা আপনার আ্ম্মাজান?