নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্র কবিতায় ‘শীত’

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৫

কবিতার ভাষায় সংজ্ঞায়িত করা যায় পৃথিবীর সকল রং ও ভাবকে। কবিতায় ফুটে উঠে জীবনের আবেগ। তাই কবিরা যেখানেই গিয়েছেন ও যে পরিবেশেই থেকেছেন, কবিতার মধ্য দিয়ে করেছেন আপন মনের ভাব বিনিময়। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। সকল ঋতুকেই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর কবিতায়।

বছর ঘুরে আমাদের কাছে আবারো এলো ‘পৌষ’ আর ‘মাঘ’। ষড়ঋতুর এ বাংলায় মূলত পৌষ আর মাঘ নিয়েই শীতকাল। আবহমান কাল থেকেই বাংলায় শীত আসে এদেশের শ্রমজীবী মানষের জন্য নানা ভোগান্তি নিয়ে। এজন্যই বলা হয়ে থাকে ‘কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ।’ আরামপ্রিয়দের জন্য এ মাসটি আরামের হলেও বাংলার কর্মজীবী মানুষের জন্য সর্বনাশ বটে। এছাড়া সে সময় প্রকৃতি চলে আসে শুষ্কতা। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অনেক কবিতায় শীতের বর্ণনা দিয়েছেন। তুলে ধরেছেন শীতের সময়ের প্রকৃতি। বিদেশে থাকলে এদেশের শীতকে ভীষণভাবে অনুভব করেছেন। ইচ্ছা পোষণ করেছেন যাতে আরেকটি বারের জন্য হলেও তিনি শীতের আবহ পান।

শীতকাল কিভাবে আরম্ভ হয় তা কবি দেখিয়েছেন তাঁর ‘দুই দিন’ কবিতায়। কবি দুদিনের জন্য বিদেশে গিয়ে এদেশের শীতকে উপলব্ধি করেছেন খুব ভালো করেই ।আমরা যারা গ্রাম ছেড়ে শহরের এসে শীত কাটাই তাদের অব্যক্ত কথা গুলিই যেনো কবি তার এই কবিতায তুলে ধরেছেন মনের মাধুরি মিশিয়ে। কবি লিখেছেন:

‘আরম্ভিছে শীতকাল, পড়িছে নীহার-জাল,
শীর্ণ বৃক্ষশাখা যত ফুলপত্রহীন;
মৃতপ্রায় পৃথিবীর মুখের উপরে
বিষাদে প্রকৃতিমাতা শুভ্র বাষ্পজালে গাঁথা
কুজ্ঝটি-বসনখানি দেছেন টানিয়া;
পশ্চিমে গিয়েছে রবি, স্তব্ধ সন্ধ্যাবেলা,
বিদেশে আসিনু শ্রান্ত পথিক একেলা।’

কবি তার ‘শীত’ নামের আরেকটি কবিতায় শীতকালের প্রকৃতির কথা তুলে ধরেছেন সুন্দর উপমা ছলে। সে সময় পাখি গান করে না, ফুল ফটে না, গাছের নতুন কিশলয় আর মাথা তুলে না কিন্তু কেন এরুপ বিরূপ আচরণ? এর উত্তরে কবি বলেছেন শীতের আগমনের কথা । তিনি লিখেছেন:

‘পাখি বলে, আমি চলিলাম,
ফুল বলে, আমি ফুটিব না;
মলয় কহিয়া গেল শুধু,
বনে বনে আমি ছুটিব না।
কিশলয় মাথাটি না তুলে
মরিয়া পড়িয়া গেল ঝরি,
সায়াহ্ন ধূমল-ঘন বাস
টানি দিল মুখের উপরি।’

এতো গেল প্রকৃতির কথা। শীতে শিশুদের ঘুমপাড়ানি কথা নিয়ে রবী ঠাকুর লিখেছেন:

‘কন্‌কনে শীত তাই
চাই তার দস্তানা;
বাজার ঘুরিয়ে দেখে,
জিনিসটা সস্তা না।
কম দামে কিনে মোজা
বাড়ি ফিরে গেল সোজা—
কিছুতে ঢোকে না হাতে,
তাই শেষে পস্তানা।

কবি তার চিত্রবিচিত্র কাব্য গ্রন্থের ‘শীত’ কবিতায় শীতকে দেখেছেন দিনের শ্রান্তি হিসেবে। দিন শেষে যখন ধেনু (গাভী) গোঠে (গোয়ালে) ফিরে আসলেই আমরা বুঝি দিনের শেষ হতে চলেছে। এমনি করে শীতকেও কবি দিনের শ্রান্তি হিসেবে দেখেছেন। কবিতায় কবি লিখেছেন:

শ্রান্ত হয়েছে দিন,
আলো হয়ে এল ক্ষীণ,
কালো ছায়া পড়ে দিঘি-জলে।
শীত-হাওয়া জেগে ওঠে,
ধেনু ফিরে যায় গোঠে,
বকগুলো কোথা উড়ে চলে।’

কবি আরেক জায়গায় বর্ণনা দিয়েছেন কিভাবে শীত তার মনেকে নিয়ে সারাক্ষণ খেলা করে। শিরীষের পাতাগুলো যখন ঝরে পরে তখনই মূলত কবি তার মনে এক ধরনের আকুলতা খুঁজে পান। কবি লিখেছেন:

এই-যে শীতের আলো শিহরিছে বনে,
শিরীষের পাতাগুলি ঝরিছে পবনে—
তোমার আমার মন
খেলিতেছে সারাক্ষণ
এই ছায়া-অলোকের আকুল কম্পনে,
এই শীত-মধ্যাহ্নের মর্মরিত বনে।

কবি বেড়াতে গেছেন ‘বুয়েনাস এয়ারস’। সেখান থেকে তিনি কামনা করেছেন, যে শীথ যখন চলে যাবে তখন ফাল্গুন আসবে। আমাদের ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিবে। তখন ফুলে ফুলে সাজানো চরণ মুলে করি প্রিয়া আঁচল বিছিয়ে একলা মনে থাকবে। এজন্য কবি লিখেছেন:

‘শীর্ণ শীতের লতা
আমার মনের কথা
হিমের রাতে লুকিয়ে রাখে
নগ্ন শাখার ফাঁকে ফাঁকে,
ফাল্গুনেতে ফিরিয়ে দেবে ফুলে
তোমার চরণমূলে
যেথায় তুমি, প্রিয়ে,
একলা বসে আপন মনে
আঁচল মাথায় দিয়ে।’

শীত আমাদের মাঝে এসেছে আবার সে চলে যাবে। কিন্তু কি দিযে যাবে। এটা ভেবে যখন আমরা আকুল তখন কবি আমোদের বসন্তের আগমনী বার্তা শুনিয়ে বললেন, এ কেমন বিদায় সেখানে বসন্ত সবাইকে হাসাবে। তাই শীতের বিদায় নিয়ে কবি তার ‘শীতের বিদায়’ কবিতায় লিখেছেন:

‘শীত চলে যায়, ফিরে ফিরে চায়,
মনে মনে ভাবে এ কেমন বিদায়।
হাসির জ্বালায় কাঁদিয়ে পালায়,
ফুল-ঘায় হার মানে।

শুকনো পাতা তার সঙ্গে উড়ে যায়,
উত্তরে বাতাস করে হায় হায়,
আপাদমস্তক ঢেকে কুয়াশায়
শীত গেল কোন্‌খানে।

লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.