নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সকালের স্নিগ্ধ আভায় কচিখালিকে

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৪

আমরা এসেছি ৫ দিনের ‘সুন্দরবন স্টাডি’ তে। এর প্রথম দিন আমরা যখন কচিখালিতে পৌছালাম তখন সূর্য সবে মাত্র কিরণ দেয়া শুরু করেছে। মার্চ মাসের সকাল! সূর্যের বেশ তেজ। আমরা দুটি দলে বিভক্ত হয়ে মূল লঞ্চ থেকে কচিখালিতে নেমেছি। নেমেই বুঝতে পারলাম রাস্তা সুবিধার না। যেতে যেতে হাটু পর্যন্ত কাদাঁয় ডুবে যাচ্ছিল পা। এরপরেও আমরা লাইন ধরে চলছি কচিখালি জেটির দিকে। কচিখালি জেটি পেরিয়ে উপরে উঠলে প্রথমেই বন কার্যালয়। এখান থেকে সোজা দক্ষিণে চলে গেছে ছন বন। মাঝে মিঠা জলের পুকুর। পরবর্তী দল না আসা পর্যন্ত আমরা কচিখালি রেস্ট হাউজের পাশের পুকুরে হাত পা ধুয়ে নিলাম। ছন বনটির শেষ সীমানা ঠেকেছে গিয়েছে সমুদ্র সৈকতে। বনের পশ্চিম পাশটায় ঘন জঙ্গল। কচিখালী জেটির উত্তর পাশে নদীর চরে দেখা মিলল বন মোরগের দল। তাছাড়া এখানে আরো দেখা মিলল হরিণ, শূকর, বানর ইত্যাদি। এখান থেকে সামান্য উত্তরে ছোট্ট একটি খাল বনের বুক চিরে সোজা পশ্চিমে চলে গেছে। একটু ভেতরের দিকে এ খালের জল। জানা গেল, সারা বছরই টলটলে স্বচ্ছ থাকে। নানা রকম পাখিও দেখা মেলে এখানে। এ খাল থেকে বেরিয়ে কিছুটা উত্তরে নদীর চরে শীতের সময় নাকি দেখা যায় লোনা জলের কুমির।
দ্বিতীয় দলটি আসতে খুব বেশি সময় লাগল না। আমরা সারিবদ্ধ হয়ে হাটতে লাগলাম ছনবনের ভিতর দিয়ে। আমাদের দেখে হরিনেরা ছুটে গেল একটু গভীর বনে। আমাদের গাইড ওবায়দুল হক ও জসিম উদ্দীন আমদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন আর গাইড ডলার মাহমুদ প্রয়োজনীয় তথ্য দিচ্ছিলেন। এসব তথ্যের মধ্যে কোনোটি বা আমাদের শরীরে শিহরণ ধরিয়ে দিচ্ছিল।
যাই হোক প্রকৃতি কত সুন্দর সাজে সেজেছে এখানে চোখে না দেখলে বোঝানো সম্ভব নয়। এখানে যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের মন-মানসিকতা কোমল, প্রকৃতির মতোই। পর্যটকরা তাদের সুন্দর ব্যবহারে অভিভূত। তেমনি সদালাপী প্রকৃতিপ্রেমী কচিখালী অভয়ারণ্যের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব সুলতান মাহমুদ টিটুর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, কচিখালি অভয়ারণ্যের আয়তন ১৪,৭৩৪ হেক্টর। পূর্ব-দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, উত্তর-পশ্চিমে ঘন বন। বনের মধ্যে সুন্দরী, কেওড়া, গেওয়া বৃক্ষে সমৃদ্ধ। বনের মধ্যে চিত্রা হরিণ, শূকর, বানর, বন মোরগসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সাপ, গুই, বাঘ এবং পাশে বয়ে যাওয়া কচিখালি নদী ও খালে রয়েছে কুমির। বনের মধ্যে চিত্রা হরিণের ছড়াছড়ি। বাঘ নাকি দিনের দুটি সময়ে বেশি শিকার করে থাকে। সকাল ৯টায় একবার এবং বিকাল ৪টায়। কচিখালিতে সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক গোলাম হাবিব নিজে বারো একর জায়গার ওপর নারিকেল বাগান সৃজন করেছিলেন। সত্যিই বিরল মহানুভবতার পরিচয়। সারিবদ্ধভাবে তালগাছও রয়েছে প্রচুর। সব মিলিয়ে কচিখালী অনিন্দ্য সুন্দর। কিন্তু এত সুন্দরের মাঝেও রয়েছে দুঃখ। তীব্র পানীয় জলের অভাব। বন কর্মকর্তা, কর্মচারী পর্যটক, কোস্টগার্ড, জেলে বাওয়ালি এবং বনের পশু-প্রাণীর জন্য পানি পানের কষ্ট। মিঠা পানির দুটি পুকুর আছে কিন্তু অপরিষ্কার। এজন্য তারা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে পান করে থাকেন। এছাড়া সোলার এর মাধ্যমেও পানি বিশুদ্ধ করে পান করা হয়।
সুন্দরবন স্টাডিতে এসে প্রথম হরিণ দেখলাম এই কচিখালিতে। বেশ বড় হরিণের ঝাঁক। কচিখালি মংলা থেকে প্রায় ১০০কিঃমিঃদুরে অবস্থিত। এটি কটকার পাশাপাশি একটি অন্যতম আকর্ষনীয় স্থান। পথের পাশে ঘন অরণ্য মধ্যে দেখা যায় বাঘ, হরিণ, শুকর, বানর, বিষধর সাপ ইত্যাদি। এ স্থানে চলতে গেলে সাধারনতঃ একটু ভয় ভয় মনে হবে, কিন্তু দুঃসাহসী পর্যটকদের জন্য খুব মনোমুগ্ধকর্ও আকর্ষনীয়। এখানে এসে দেখা মিলল সুন্দর বনের মৌচাকের। পাশেই কোষ্ট গার্ডের রশিদুল ইসলাম কি যেনো খুজঁছিলেন জানতে চাইলাম কি খুঁেঁজন সহজ উত্তর দিলেন বাঘের পদচিহ্ন। বিষয়টিতে বেশ কৌতুহল প্রকাশ করলে তিনি জানালেন আমরা প্রায়ই এ পথে চলাচল করি। কিন্তু কয়েকদিন আগে এখানে একটি হরিণ কে বাঘ তারা করেছিল। তাই বাঘের পায়েরচিহ্ন খুঁজতেছি। যদি বেশি পাই তবে এ পথে চলাচল নিরাপদ হবে না। এখানে বাঘের আনাগোনা বেশি। কটিখালি হলো শরণখোলা রেঞ্জের অধীন।

যেভাবে যাবে ও যেখানে থাকবেন:
ঢাকা থেকে খুলনা বাসে বা ট্রেনে যেতে পারেন। এরপর খুলনা কিংবা মংলা থেকে নৌপথে সুন্দরবনের গহিন অরণ্যে প্রবেশ করা যায়। মংলার অদূরেই ঢাইনমারীতে রয়েছে বন বিভাগের কার্যালয়। সেখান থেকে সুন্দরবনে প্রবেশের আনুষঙ্গিকতা সারতে হয়। পর্যটকদের জনপ্রতি ৫০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ৭০০ টাকা এবং ছোট ও বড় লঞ্চের জন্য আলাদা আলাদা ফি দিতে হয়। পর্যটকদের সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরা থাকলে অতিরিক্ত একশ’ টাকা বন বিভাগকে দিতে হয়। প্যাকেজ ট্যুরে গেলে এসব ঝামেলা পর্যটকদের পোহাতে হয় না। ট্যুরিজম লিমিটেডের লোকজনই আনুষঙ্গিকতা সেরে নেয়। ট্যুরজম কর্তৃপক্ষকে শুধু নির্ধারিত তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পরিশোধ করলেই তিন রাত দু’দিন সুন্দরবনে ভ্রমণ ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে তারা। আর সরকারিভাবে যেতে চাইলে আছে কটকা ও কচিখালী গেস্ট হাউস। কচিখালী গেস্ট হাউসে থাকা যায় ৬ জন। এসব রেস্ট হাউসের ভাড়া ৩ হাজার টাকা করে। গেস্ট হাউস দেখাশোনার জন্য একজন বনকর্মী রয়েছেন। এসব গেস্ট হাউস ভাড়া নিতে হয় বাগেরহাটের ডিএফওর কাছ থেকে।


(লেখক: শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ওয়ারী, ঢাকা)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.