নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিনিলাম আপনারেআঘাতে আঘাতেবেদনায় বেদনায়;সত্য যে কঠিন,কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,সে কখনো করে না বঞ্চনা।

সত্যের সারথি সাদেক

সত্য যে বড় কঠিন, কঠিনেরে বাসিলাম ভালো, যে কখনো করেনা বঞ্চনা !

সত্যের সারথি সাদেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্ষা ও কদমফুল!

২৪ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:০৩


জাহিদুল ইসলাম:
ফুলটির নাম ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, মেঘাগমপ্রিয়, পুলকি, সর্ষপ, প্রাবৃষ্য, কর্ণপূরক, ললনাপ্রিয়, সুরভি, সিন্ধুপুষ্প, বৃত্তপুষ্প। কি চিনতে পারছেন? এগুলোই শেষ নয়; আরও নাম আছে তার। তবে প্রচলিত আরেকটি নাম হলো নীপ।উপরোক্ত নাম গুলো লিখেছেন উদ্ভিদবিজ্ঞানী নওয়াজেশ আহমেদের ‘বাংলার বনফুল’ গ্রন্থে কদমের নাম।

রবীবাবু কদমফুল নিয়ে অসংখ্য গান কবিতা লিখেছেন। তিনি লিখেছেন ‘কদম্বেরই কানন ঘেরি আষাঢ় মেঘের ছায়া খেলে’। লিখেছেন ‘ব্যথিয়া উঠে নীপের বন পুলক ভরা ফুলে’। ‘এসো নীপবনে ছায়াবীথিতলে...’। কদমের আরেকটি নাম নীপ।

আষাঢ়ের দিনলিপি দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলার বর্ষাকাল। আষাঢ়ের দিনগুলো নিয়ে আসে বাংলায় এক অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বৈচিত্রতা। বাংলার কবিরা আষাঢ়ের বর্ষা আর এর নানা অনুষঙ্গ নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য গল্প, কবিতা। ‘আষাঢ়ে বাদল নামে নদী ভরো ভরো’। প্রকৃতিতে যখন নদী ভরো ভরো অবস্থা তখন ফোটে বষার কদম ফুল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৯ সালের বর্ষার কোন একদিনে রচনার করেন ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসছি শ্রাবনের গান’। এই গানটি শোনেননি এমন বাঙ্গালি পাওয়া বোধকরি দুষ্কর।
এ কদমফুল নারী প্রেম কতটা তীব্র হতে পারে বাংলা সাহিত্যে তার বহু নিদর্শন রয়েছে। সেই প্রাচীনযুগ, রাধা কৃষ্ণের প্রেমেও রয়েছে কদম ফুলের কথা। ‘নির্জন যমুনার কূলে, বসিয়া কদম্ব ডালে/ বাজায় বাঁশি বন্ধু শ্যামরায়’। সেই বাঁশির সুরে রাধার মন ব্যাকুল। কৃষ্ণও রাধার প্রেমে বিকুলি। মধ্যযুগের পুরো বৈষ্ণব সাহিত্য রাধা-কৃষ্ণের
বিরহ বেদনা মোহিত হয়ে আছে কদমের সুরভিতে। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন- যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো,/ চলে এসো এক বরষায়.../ যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী/ কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি/ ...কদমগুচ্ছ খোঁপায় জড়ায়ে দিয়ে/ জলভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে/ তুমি চলে এসো, চলে এসো এক বরষায়...।
কদম নামটি সংস্কৃত কদম্বের অপভ্রংশ। এর অর্থ ‘যা বিরহীকে দুঃখী করে’। কদমফুলের নজরকাড়া সৌন্দর্য এবং এর সৌরভ যুগে যুগে বাঙালিকে মুগ্ধ করেছে। এই ফুল পথিককে উদাস করে। কদমফুলের ঘ্রাণ তীব্র নয়। তবে চারপাশ মদির করে রাখতে পারে। বড় নস্টালজিক সেই ঘ্রাণ। যে কাউকেই মোহময় করে তুলতে পারে।

প্রিয় জনের হাত থেকে কদম ফুল নেওয়ার মৌতাত যেন এ জীবনে কিছুতেই কাটতে চায় না। জীবন ভারি অদ্ভুত। এর তল খুঁজে পাওয়া যায় না। কত কঠিন ও জটিল সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তবুও মনটাকে আটকে রাখতে পারা যায় না। যা হাতের নাগালের মধ্যে নেই, যা চাইলেও পাওয়া যায় না, তার জন্য মন কেমন কেমন করে। যা আছে অনুভবে, যা আছে স্মৃতিতে, যা আছে দূরে, সেটাই কেন যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে।
কদম আমাদের নিজস্ব গাছ। তবে ভারতের উষ্ণ অঞ্চল, চীন ও মালয় এর আদি নিবাস। কদম রিউবাসি পরিবারে সদস্য নাম এ্যান্থোসেপাস ইনডিকাস। দ্বিজেন শর্মা তার ‘শ্যামলী নিসর্গ’ বইয়ে কদমকে বলেছেন, ‘বর্ণে গন্ধে সৌন্দর্যে কদম এ দেশের রূপসী তরুর অন্যতম।’ গাছ দীর্ঘাকৃতির। ডালপালা বিস্তৃত। মাটির সাথে সমান্তরাল। পাতা বেশ বড় বড়। ডিম্বাকৃতির। গাঢ় সবুজ। বড় বড় সবুজ পাতার ফাঁকে একেকটি কদমফুল ঝুলে থাকে। মূল বলটা হলুদ সোনালি রঙের। উপরিভাগে রয়েছে সাদা রঙের একটা প্রলেপ।
বলে রাখা ভালো, আমরা যে গোল আকারের কদম ফুল দেখি সেটি কিন্তু একটিমাত্র ফুল নয়। অজ¯্র ফুলের সমারোহ। এর ভেতরের মাংসলপিন্ড থেকে হলুদ রঙের নলাকৃতির হাজার হাজার ফুল বেরিয়ে এসে বলটাকে স্পঞ্জ বানিয়ে রাখে। বর্ষাকালেই মূলত ফুল ফোটে। তবে জৈষ্ঠ্যের শেষ দিকে অনেক গাছে ফুল ফোটা শুরু হয়।
ঢাকা শহরে কদম পাওয়া বেশ দুষ্কর। রমনা উদ্যানের পূর্ব পাশে, শিল্পকলা একাডেমীর পাশের রাস্তার ধারে কিংবা বকশীবাজার এলাকায় চলতে গেলে এখন বৃষ্টিভেজা হাওয়ায় কদমের সৌরভ নাকে ঝাপটা দিতে পারে। তবে বর্ষা কি শীত, ষড়ঋতুতে একটি বিশালাকার কদম অবশ্য নাগরিক দৃষ্টিতে পড়বে জাতীয় ঈদগাহের সামনের পথের মোড়ে। শিল্পী নিতুন কুন্ডু ফুটিয়েছেন এই কদম ধাতব ভাস্কর্যে।
##
লেখক
জাহিদুল ইসলাম
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
১৩:২৫, ২২ জুন, ২০১৯, প্রেসক্লাব।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১২:১২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর । কদমফুল ।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:১২

সত্যের সারথি সাদেক বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ২৪ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১:২৩

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: কদমফুল নিয়ে লিখা আর্টিকেল পড়ে মুগ্ধ হলাম।

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:১২

সত্যের সারথি সাদেক বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ

৩| ২৪ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ কদম ফুল খুব পছন্দ করতেন।

৪| ২৪ শে জুন, ২০১৯ দুপুর ২:৫১

আহা রুবন বলেছেন: কদম ফুলের গন্ধ কেমন যেন নেশা ধরায়।

৫| ২৪ শে জুন, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৪

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: অসাধারন!

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:১৫

সত্যের সারথি সাদেক বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.