![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের সাফল্য ও উন্নয়নঃ
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং নয়মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে ১৯৭১ খ্রি. ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করে শাসন ক্ষমতা গ্রহণ করলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় পাকিস্তান সরকারের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যখন তাঁর প্রিয় স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন।
বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার তাদের অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালিত করেছিলেন, দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমত; পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন এবং দ্বিতীয়ত; উন্নয়ন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন সুখী, সমৃদ্ধ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্য ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়-অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শুরু করেন দ্বিতীয় বিপ্লব ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’র সংগ্রাম।
১. স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু সরকার একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত রাষ্ট্রের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। সরকারের হাতে তেমন কোন দেশীয় ও বৈদেশিক মুদ্রা ছিল না।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল ভীষণ নাজুক। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শেখ মুজিবের বিপুল পরিচিতি এ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে পুনর্গঠনে বিরাট ভূমিকা রাখে। বিদেশী রাষ্ট্র ও দাতা সংস্থাসমূহ অকৃপণ হাতে বিভিন্ন দ্রব্য সামগ্রী প্রেরন করতে থাকে।
২. সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের ৩ কোটি ছিন্নমূল মানুষ, দেড় কোটি অগ্নিদগ্ধ ঘরবাড়ি, ১ কোটি শরণার্থীর প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন সমস্যা, শূন্য খাদ্য গুদাম, অনাবাদি জমি, অচল বন্দর, ডুবন্ত নৌযান, যোগাযোগ পরিবহন এবং অভ্যন্তরীণ নৌ ও সমুদ্র বন্দরের অচলাবস্থা, ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধজনিত কারণে তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি, স্বাধীনতা-বিরোধীদের অন্তর্ঘাত ও নাশকতামূলক তৎপরতায় বিপর্যস্ত জনজীবন এমন চরম বিরূপ ও সংকটাকুল পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার যে সফলতা দেখিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে তা বিরাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
৩. বিভিন্ন দেশ ও সাহায্য সংস্থা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থা জরিপ করে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল যে, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে খাদ্যাভাবে ২ কোটি লোক মৃত্যুবরণ করবে। বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ৪ কোটি ৭৫ লাখ মণ খাদ্যসামগ্রী বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে বিতরণ করে অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু ঠেকাতে সমর্থ হয়েছিলেন; বঙ্গবন্ধুর সময়োচিত পদক্ষেপে এই ভয়াবহ সংকট মোকাবিলা বিশ্ববাসীকে অভিভূত করেছিল।
৪.মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ধবংস হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু সরকার অতি দ্রুত ভারতসহ বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে বিধ্বস্ত ও ধবংস প্রাপ্ত রাস্তাঘাট, সেতু,কালভার্টও বিমান বন্দর পুনরায় নির্মাণ করেন। রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সাহায্যে চট্টগ্রাম নৌবন্দরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনি করতিক পুতে রাখা মাইন অপসারন করে এ বন্দরটি পুনপ্রতিষ্ঠা করেন।
৫.সম্পূর্ণরূপে দেউলিয়া ও প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত ব্যাংক, বীমা ও ৫৮০টি শিল্প ইউনিট জাতীয়করণ ও উৎপাদনক্ষম করে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং ঘোড়াশাল সার কারখানা, আশুগঞ্জ কমপ্লেক্সের প্রাথমিক কাজ ও অন্যান্য নতুন নতুন শিল্প কল-কারখানা গড়ে তোলার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
৬. ‘জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস’ ঘোষণা করে মাত্র ৯ মাসের মধ্যে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। বিশ্বের ইতিহাসে যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত।
৭.তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় সৈন্যদের ফেরত পাঠানো, পাকিস্তানে আটক প্রায় ৪ লাখ বাঙালিকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসিত করা,
৭ লাখ পাকিস্তানিকে ফেরত পাঠানো, মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ফিরিয়ে নেওয়া, মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদ পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের দায়িত্ব গ্রহণ, চিকিৎসার জন্য পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেশ প্রেরণ, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ও নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন, প্রতি থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, ৮.দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় ও হাসপাতাল নির্মাণ, ১১ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন, ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগসহ স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
৯. সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীসহ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জাতীয় মর্যাদায় পুনর্গঠন, সামরিক একাডেমি স্থাপন, পুলিশ, বিডিআর, আনসার ও বেসামরিক প্রশাসনের অবকাঠামো গড়ে তোলা,
১০.প্রতিবেশী দেশের সাথে সীমান্ত ও ফারাক্কার পানি চুক্তি, জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ ও ১৪০টি দেশের স্বীকৃতি লাভের ন্যায় কারিসম্যাটিক সফলতা অর্জন, বাংলার জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম ভালোবাসা ও অপরিসীম ত্যাগের মানসিকতার ফলে সম্ভব হয়েছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার রক্তাক্ত ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শূন্য হাতে একটি সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যে সফলতা অর্জন করেছিল তা বিস্ময়কর ব্যাপার।
১১.বঙ্গবন্ধু সরকার ১০ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান প্রনয়ন করে সারা বিশ্বকে অবাক করে দিয়েছিল যেখানে পাকিস্তান ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতার পর ৯ বছর পরেও তা করতে পারেনি।
১২.শেখ মুজিব সরকার শিক্ষা সংস্কারের জন্য ড. কুদরত-ই-হুদার নেতৃত্বে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ‘কালা কানুন’ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্ত শাসন প্রদান করেন যার সুফল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও ভোগ করছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, ১৯৭২-৭৫ সালে বাংলাদেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল গড়ে ৫ শতাংশ। বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে এ সময়ে আয় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ৭ শতাংশ। মদ, জুয়া, হাউজি, ঘোড়দৌড়সহ সব ইসলামবিরোধী কর্মকা- কার্যকরভাবে নিষিদ্ধকরণ, ইসলামী ফাউন্ডেশন গঠন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা, পবিত্র হজব্রত পালনে সরকারি অনুদান প্রদান, ইসলামি সম্মেলন সংস্থার সদস্যপদ লাভ ইত্যাদি ছিল উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
শান্তির স্বপক্ষে বলিষ্ঠ ও দৃঢ় পদক্ষেপ কার্যকর করার অভিযাত্রায় বিশ্ব শান্তি পরিষদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সর্বোচ্চ খেতাব ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত করে সারাদেশবাসীকে মহিমান্বিত করেছিল।
সুতরাং সন্দেহাতীতভাবে, যুদ্ধ পরবর্তী দেশ গঠনে মুজিব সরকারের সাফল্য ছিল অভাবনীয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন তার মত মহান ও অবিসংবাদিত নেতা ব্যতীত কখনো সম্ভবপর ছিল না। বঙ্গবন্ধুর শাসনামল সল্পকালীন হলেও সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এবং বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে শেখ মুজিবের অবদান ছিল অপরিসীম।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে স্বাধীনতা-প্রগতি-মানবতাবিরোধী ও প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকচক্র রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে এবং মার্শাল ল’ জারি করে।
©somewhere in net ltd.