নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন হলো এক কাপ গরম চা আর একটি জ্বলন্ত সিগারেটের মতো। গরম চা এক সময় জুড়িয়ে যাবে, সিগারেটের তামাকও পুড়ে শেষ হয়ে যাবে।

পয়গম্বর

The woods are lovely, dark and deep, But I have promises to keep, And miles to go before I sleep, And miles to go before I sleep.---Robert Frost

পয়গম্বর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদৃশ্য সম্পর্ক

১৩ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১৯





গার্ডিনার এক্সপ্রেস হাইওয়ে ধরে আমাদের হোণ্ডা অ্যাকিউরা গাড়িটা এগিয়ে চলেছে। উদ্দেশ্য ডাউনটাউন টরন্টো। ড্রাইভিং সিট-এ সুজানা, আমার ল্যাটিন-আমেরিকান বান্ধবী, আর তার পাশে আমি। সকালের মিষ্টি রোদটা বেশ ভালোই লাগছে।





সুজানা মন দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। দু’জনেই চুপচাপ বসে আছি। এমন সময় চিন্তা করলাম এভাবে চুপচাপ বসে না থেকে গান ছাড়লে কেমন হয়? সুজানাকে কথাটা বলতেই সে জানালো, প্রতি সোমবার সকাল ৮.৩০ এ রেডিওতে ৯৬.৪ এফ.এম-এ ভালো একটা প্রোগ্রাম হয়। আজকেতো সোমবার। ওই প্রোগ্রামটা হচ্ছে কিনা দেখতো?!





রেডিও অন করতেই অনুষ্ঠান পরিচালকদের কণ্ঠ শোনা গেল। পরিচালকদের বলতে একজনের পুরুষ কণ্ঠ, অন্যজন মহিলার। সুজানা বললো, এইটা সেই লাইভ প্রোগ্রাম যেখানে কানাডার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন তাদের ব্যাক্তিগত সব মজার অনুভূতি লাইভ শেয়ার করে। নিয়মটা হচ্ছে, যারা তাদের নিজস্ব অনুভূতি শেয়ার করতে চায়, তারা এই রেডিও-র অ্যাড্রেসে মেইল করবে। এবং পরবর্তীতে রেডিও-র অনুষ্ঠান পরিচালক অগণিত মেইল থেকে র‌্যান্ডম কিছু মানুষের মেইলকে সিলেক্ট করে তাদেরকে সরাসরি ফোন করে ব্যক্তিগত অনুভূতি জানতে চাইবে।



খুব ভালো সময়েই রেডিওটা অন করেছি। কেবলই শুরু হলো প্রোগ্রামটা। বাকপটু অনুষ্ঠান পরিচালক পুরুষ কণ্ঠ জানালেন, অনেক অনেক মেইল পেয়েছেন তিনি যার মাঝ থেকে আজ শুরুতেই হ্যামিলটন শহরের এক যুবক, জর্জকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। যেই কথা, সেই কাজ। সরাসরি ফোন চলে গেল জর্জের কাছে।



জর্জ ফোন রিসিভ করতেই রেডিও অনুষ্ঠানের মহিলা কণ্ঠ তাকে জানালেন যে, তার মেইলকে সিলেক্ট করা হয়েছে আজ। অতএব, জর্জ এখন তার ব্যাক্তিগত অনুভূতি সবার সাথে চাইলে ফোনে শেয়ার করতে পারেন এবং তার কথাগুলো অন-এয়ারে সব শ্রোতা শুনতে পাবেন।



রেডিওতে জর্জের কণ্ঠ শুনতে পেলাম। বেশ বিষন্ন। জর্জ তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা শুরু করলো।



২০০৭ সালে লিণ্ডার সাথে জর্জের পরিচয়। অনেকটা নাটকীয় ভাবেই পরিচয়টা হয় তাদের। প্রথম বয়ফ্রেণ্ড মাইকেলের সাথে ছাড়াছাড়ি হবার পর লিণ্ডার মানসিক অবস্থা বেশ বিপর্যস্ত ছিল। একদিন সে সাবওয়ে ট্রেনের নিচে পড়ে আত্মহত্যারও সিদ্ধান্ত নেয়। ঠিক যে মুহূর্তে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিতে যাবে, ওমনি পেছন থেকে জর্জ তাকে জাপটে ধরে বাঁচিয়ে ফেলে। সেই প্রথম তাদের পরিচয়, কাছাকাছি আসা এবং তারপর প্রণয়। এরপর এতগুলো বছর তারা সুখে-দু:খে একসাথে পার করেছে।





পরিচয়ের পরের বছরই তাদের ঘর আলো করে ইসাবেল এলো। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে জর্জ যদিও বার বার তাগাদা দিয়েছে বিয়ের। কিন্তু লিণ্ডার কথা হলো, লিভ-টু-গেদারে ভালোই তো দিন কাটছে, বিয়ের কি দরকার!





জর্জ আর এ বিষয়টি নিয়ে লিণ্ডাকে বেশি জোর করেনি। ভালোই কাটছিল তাদের সুখের সংসার। কোনদিন কোনকিছুর অভাবতো সে লিণ্ডাকে বোধ করতে দেয়নি কখনও। হ্যামিলটনের এই বাড়িতে তারা সুখেই আছে। মাস দুয়েক আগে লিণ্ডার পছন্দের দামী গাড়িটাও সে কিনে দিল।



কিন্তু ইদানিং জর্জ লক্ষ্য করেছে, তার প্রতি লিণ্ডার আগের সেই আগ্রহ আর নেই। কেমন যেন রুক্ষ মেজাজ হয়ে গিয়েছে। জর্জকে দেখলেই কর্কশ কণ্ঠে কথা বলে, কাজ থেকে রাত করে বাড়ি ফেরে, হয়তো কোনদিন ফেরেওনা। এই যেমন কিছুদিন আগেও জর্জকে না বলেই হঠাৎ করেই সে গায়েব। পরে ফোনে জানালো কয়েকদিনের জন্যে মন্ট্রিয়ালে এসেছে চেঞ্জে। অথচ এই লিণ্ডাই গত ছয় বছরে জর্জকে ছেড়ে কোথাও একা যাওয়াতো দূরের কথা, একটা রাত-ও একা কাটায়নি। লিণ্ডার এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন জর্জ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেনা।



এ পর্যন্ত শোনার পর রেডিও অনুষ্ঠানের পুরুষ কণ্ঠ সেল ফোনে জর্জকে বললো, একটু দাঁড়াও, লিণ্ডার সেল ফোনের নম্বরটা আমাকে কাইণ্ডলি টেক্সট করো আর আমি এই অনুষ্ঠান অন-এয়ারে থাকা অবস্থাতেই লিণ্ডাকে ফোন করে তার সাথে কথা বলতে চাই; তুমিও ফোনেই আমাদের কথা শুনতে পারবে, কিন্তু অনুরোধ রইলো, তুমি কোন কথা বলবেনা, যা বলার আমি-ই লিণ্ডার সাথে বলতে চাই।



জর্জের থেকে ফোন নম্বর নিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালক পুরুষ কণ্ঠ সেই নম্বরে ফোন করলো। ওপাশ থেকে এক নারী কণ্ঠের আওয়াজ জানালো যে, তিনিই লিণ্ডা বলছেন।



পুরুষ কণ্ঠ: হ্যালো লিণ্ডা? কেমন আছ আজ?



লিণ্ডা: হ্যাঁ, খুব একটা খারাপ না। কিন্তু জানতে পারি তুমি কে বলছো?



পুরুষ কণ্ঠ: অবশ্যই, আমি রেডিও অনুষ্ঠান ৯৬.৪ থেকে বলছি। তোমাকে একটা সুসংবাদ দেবার জন্যেই ফোনটা করা।



লিণ্ডা: ওহ! কতদিন কোন সুসংবাদ পাইনা! বলো বলো, কি ভালো খবর অপেক্ষা করছে আমার জন্যে?!



পুরুষ কণ্ঠ: ওয়েল, আগামী ফ্রাইডে নাইটে টরন্টোর ম্যারিয়ট হোটেলে ডিনার করার জন্যে তোমাকে আমরা মনোনীত করেছি।



লিণ্ডা: (বিস্মিত হয়ে) আমাকে!? কানাডায় কি মানুষের অভাব পড়েছে? এ্যাত মানুষ থাকতে আমি কেন?



পুরুষ কণ্ঠ: লিণ্ডা, তুমি হয়তো জানো, আমাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা নিয়মিত কাউকে না কাউকে সারপ্রাইজ দিয়ে থাকি। এবার তোমার নামটি আমরা মনোনীত করেছি এবং তোমার উপস্থিতি কামনা করছি।



লিণ্ডা: ওহ! আচ্ছা, ইয়ে মানে, ঠিক আছে। আসবো।



পুরুষ কণ্ঠ: ওয়েল, তুমি চাইলে সাথে করে আর একজনকে নিয়ে আসতে পারবে। সেক্ষেত্রে কাকে আনতে চাও তুমি?



লিণ্ডা: সত্যি বলছো? ওহ্ মাইগড, তুমি অনেক ভালো! (একটু চিন্তা করে) ওয়েল, সেক্ষেত্রে আমি আমার ছোট্ট মেয়ে ইসাবেলকে নিয়ে আসতে চাই।



পুরুষ কণ্ঠ: না, মানে আমি বোঝাতে চেয়েছি, তুমি তোমার মেল-পার্টনারকে নিয়ে আসতে পারবে।



লিণ্ডা: (উচ্ছ্বসিত স্বরে) ওহ্! ফ্রাইডে নাইটে ও ফ্রি আছে কিনা তা তো বলতে পারছিনা, এজন্যেই ইসাবেলকে নিয়ে আসতে চেয়েছি। আর ও ফ্রি থাকলেতো শুধু ওকে নিয়েই আসতাম।



পুরুষ কণ্ঠ: ওয়েল, তুমি কাইণ্ডলি দ্রুত আমাকে কনফার্ম করো তোমার পার্টনার আসবে কিনা, সিট রিজার্ভেশনের একটা ব্যাপার আছে। বাই দ্য ওয়ে, আমি কি তার নামটা জানতে পারি?



লিণ্ডা: অবশ্যই, ও ইসাবেলের বাবা, মাইকেল, মাইকেল ডগলাস।



গল্পটি কানাডার টরন্টো থেকে প্রকাশিত 'সাপ্তাহিক আজকাল' পত্রিকার ৮ আগস্ট, ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১৭

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :P :P :P :P

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩৪

পয়গম্বর বলেছেন: :-B

২| ১৩ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৮

মুসাফির... বলেছেন: আহ্ হা রে ... যেই লাউ সেই কদু... বেচারা জর্জ .. ওর জন্য দু:খ হয়।

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩৬

পয়গম্বর বলেছেন: যে ঘটনাটা লিখেছি, সেটি সত্যি, যদিও ঘটনার পাত্রপাত্রির নামগুলো পরিবর্তিত। দীর্ঘ ৬ টি বছর ধরে জর্জ জানে, ইসাবেল তার আর লিণ্ডার মেয়ে। অথচ...

৩| ১৩ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩১

অশান্ত পৃথিবী বলেছেন: :-P :-P :-P B:-) B:-) B:-)

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩৭

পয়গম্বর বলেছেন: :-B

৪| ১৩ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮

অহন_৮০ বলেছেন: :( :( :( আমারা ওদের থেকে অনেক ভালো আছি

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩৯

পয়গম্বর বলেছেন: মানুষ নামের প্রাণীগুলোর সম্পর্কের মাঝে অনেক বেশি বৈচিত্র্য

৫| ১৩ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৯

ঘাসফুল বলেছেন: শেষে এসে এত বড় থ্যাতা খামু ভাবতেও পারি নাই...

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪২

পয়গম্বর বলেছেন: লিণ্ডা যখন উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো, " অবশ্যই, ও ইসাবেলের বাবা, মাইকেল, মাইকেল ডগলাস" ঠিক তার পরপরেই অনুষ্ঠান পরিচালক তাকে বাই বলে ফোনটা রেখে দিলেন। এবং তারপর জর্জের কান্না শুনে মনটা আসলেই খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

৬| ১৩ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫১

রুপ।ই বলেছেন: হাহা হা হা হা...........

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪২

পয়গম্বর বলেছেন: :-B

৭| ১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৪৯

মুনসী১৬১২ বলেছেন: :-& :-& :-& :P :P :P =p~ =p~

১৩ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪৩

পয়গম্বর বলেছেন: মুনসী ভাই কেমন আছেন? অনেকদিন কোন খোঁজ-খবর নেই!

৮| ১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪

আহমেদ সাব্বির পল্লব বলেছেন: :(

১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৮:৩৩

পয়গম্বর বলেছেন: B:-)

৯| ২৬ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০৭

নাসের০১৯ বলেছেন: আহা সেই পুরোনো পরকিয়ার গল্প। কে জানে ইসাবেলা সত্যই ডগলাসের মেয়ে কিনা? এর পরে কি লিনডা সে প্রগ্রামে গিয়েছিলো?

২৭ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৫১

পয়গম্বর বলেছেন: লিণ্ডা সেই প্রোগ্রামে গিয়েছিল কিনা, সেটা আর জানা হয়নি। :|

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.