নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য সব সময় জনপ্রিয় হয় না, জনপ্রিয়ও সব সময় সত্য নয়।

পৃথিবীর বুকের ফুলফল লতাগুল্মে যার চোখ নেই, সেই শুধু আকাশের চন্দ্র এবং নক্ষত্রের গল্প করে।

স্প্লিকনট অয়ন

বলা হয় তুমি যদি এক জীবনের পেন্সিল হয়ে দু-এক পাতা লিখে দিতে না পার তবে ইরেজার হয়েই থেকে দুঃখ-কষ্ট গুলো মুছে দিয়ো। আমি বলি আমার ইরেজার হতে কেমন জানি ভয় হয়। ইরেজার হতে গিয়ে মায়ায় জড়ানোর ভয়। এক জীবনে কিছু মায়ার সম্পর্কে জরিয়ে দু-এক পাতা লিখে ফেলেছিলাম নিজের জীবনের খাতায়। আমি এখন সেইসব মোছায় ব্যাস্ত। আমি বরং আমার নিজের ইরেজার হয়েই থাকি।

স্প্লিকনট অয়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সপ্তর্ষীমন্ডলের তারা

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৭

।১।



টেইলর সুইফট এর নতুন একটা মিউজিক ভিডিও বের হয়েছে। খবর পাওয়া মাত্র ইউটিউব থেকে ডাউনলোড মারলাম। বসে বসে দেখতেছি সেটাই। এই নিয়ে মনে হয় টানা ১৬ বার চলতেছে ভিডিওটা। অবাক বিস্ময়ে আমি ভাবতেছি বিধাতা এই মাইয়াটারে কি দিয়ে বানাইছে। কমলার কোয়ার মত ঠোঁট দুটা নাড়িয়ে কি সুন্দর করেই না গান গাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে ভাবনার অতল সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছি। টেইলর সুইফট এর সাথে লেকের পাড়ে বসে আছি। হাতে হাত, চোখে চোখ, ঠোঁটে লাজুক হাসি। আমাদের দুজনের মধ্যে শুধু একটাই জিনিস। একটা বাদামের ঠোঙ্গা। একটা বাদামের খোসা ছাড়িয়ে কেবলই টেইলর সুইফট জানটার মুখে খাইয়ে দিতে যাবো। তখনই…



কর্কষ শব্দে বেরসিক ফোনটা বেজে উঠলো। ঠাস করে কেটে দিলাম ফোনটা। ভাবনায় কিঞ্চিত বাঁধা। ব্যাপার না। প্রেম করতে গেলে বাঁধা তো আসবেই। আবার মনঃসংযোগ করতে গেলাম চোখটা বন্ধ করে। আবার বেজে উঠলো ফোনটা। গেল মেজাজটা খিঁচড়ে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ফোনটা করেছে আমার এক ফ্রেন্ড। শুধু ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। নক্ষত্র। যারপরনাই বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করলাম।

--অই হালা, প্রব্লেম কি তোর? অ-টাইমে ফোন দিতেছস ক্যান?

--দোস্ত হ্যালো।

--প্যান প্যান করিস না হালা।

--মামা কি করিস রে?

--টেইলর সুইফট এর লগে বাদাম খাই। তরেও এক ঠোঙ্গা কিনে দিমুনে। অহন ফোন রাখ। ভিলেন-গিরি করিস না।

--মামা বাসায় আয় না একটু। কথা আছে।

--পারুম না হালা। কইলাম না ডেটিংয়ে আছি?

--দূর ব্যাটা। রাখ তোর ডেটিং।

--ডেটিং রাখতে পারুম না। ফোন রাখতেছি। বাই।

--অই!!!

--কি ব্যটা বল তাড়াতাড়ি…আমার জান আমার লাইগ্যা বাদাম লইয়া বইয়া রইছে।

নক্ষত্র কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললো…

--আমার বিয়ে……

--কনগ্রাটস! আমারও বিয়ে। টেইলর সুইফট এর লগে। তোর কার লগে?

--দোস্ত সিরিয়াসলি বলতেছি। আমার বিয়ে…

--তোর কি মনে হইতেছে আমি জোক করতেছি? আমিও ড্যাম সিরিয়াস। বিয়া আমি করুমই।

--দোস্ত প্লিজ ফান রাখ। আমার কাল বিয়ে। খুব টেনশনে আছি। তুই বাসায় আয় একটু।

আমি এবার একটু নড়েচড়ে বসলাম।

--অই ব্যাটা কারে স্বপ্নে দেখছস? এহন উল্টাপাল্টা বকতাছস।

--না রে দোস্ত। বাসায় আয় তুই। সব বলতেছি।





আমি বিস্ময়ে আকাশ থেকে পড়বো নাকি নিউটনের আপেল থিওরি ভুল প্রমান করে পাতাল থেকে আসমানে উড়াল দিব বুঝতে পারলাম না। সবে মাত্র ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষের শেষ দিক চলতেছে। এখনই বিয়ে??? যাই হোক…

আপাতত নক্ষত্রের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম।

গিয়ে যা কাহিনী শুনলাম তার সারসংক্ষেপ অনেকটা এরকম…

নক্ষত্রের বাবা আর মেয়েটির বাবা ছিলেন ছোটবেলা থেকে অনেক ভাল বন্ধু। তারা ঠিক করে রেখেছিলেন নিজেদের ছেলেমেয়ের মধ্যে বিয়ে দেবেন। যাতে করে দোস্তিটা দীর্ঘস্থায়ী হয়। কিন্তু হঠাৎ মেয়েটির বাবা আকস্মিকভাবে মারা যান বছরখানেক আগে। বাবার পুরণ করতে না পারা ইচ্ছাটা তাই পুরন করা হচ্ছে। অনেকটা সিনেমার কাহিণীর মতোই। কিন্তু বাস্তবে অনেক মর্মস্পর্শী। শুধু একটা জিনিস বুঝলাম না…

এত তাড়াতাড়ির কি আছে?

বিয়ের ব্যাপারটা শুধু পাত্র-পাত্রী, পাত্রীর মা এবং পাত্রের বাবা-মা জানেন। বোনাস হিসেবে আমি জানি। পাত্রীর কোন বান্ধবীও হয়তো জেনে থাকবে। বিয়েটা পড়িয়ে রাখা হলো। আনুষ্ঠানিকতা হবে ছেলে ইস্টাবলিস্ট হবার পর। বেচারা নক্ষত্রের কথা ভেবে আমার মন খারাপ হতে লাগলো। রাস্তায় আমার সাথে আর পাখি দেখতে পারবে না। ঐদিকে আবার পাত্রীর মা আল্টিমেটাম দিয়ে রেখেছেন যে ইস্টাবলিস্ট হবার আগে মেয়ের দিকে তাকালে চোখ উপড়ে ফেলা হবে…

নক্ষত্রের বাবা মা ও সম্মতি জানিয়েছেন প্রস্তাবে।





বিয়ের পরদিন আমার বাসায় এলো ও। দরজা খুলে দেখি মুখ আমশি করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি বললাম…

--কি চাই?

--কি চাই মানে? সর…ভিতরে ঢুকি।

--এক্সকিউজ মি স্যার। ব্যাচেলরস অনলি।

--দোস্ত জ্বালাইস না প্লিজ। ভিতরে ঢুকতে দে। জরুরী কথা আছে।

দিলাম ঢুকতে। রুমে ঢুকে একটা সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে বললাম

--হ মামা কও কি কইবা।

--দোস্ত মোবাইল নাম্বারটা ম্যানেজ করে দে না যে কোন ভাবে…

--মানে? কার মোবাইল নাম্বার?

--অত্রির।

--মানে? অত্রি কে?

--অত্রি……আমার বউ।





।২।



অত্রি।

আমাদের গল্পের নায়িকা। এই নায়িকাকে বর্ননা করার সামর্থ আমার নাই। অধিকার ও নাই। তারপরও একটু অনধিকার চর্চা করি।

অত্রি যেন উপন্যাস থেকে উঠে আসা কোন চরিত্র। কিছু কিছু চেহারা আছে অসহ্য সুন্দর। তাকাইলে চোখ নামিয়ে নিতে হয়। নিতান্ত বেহায়া ছাড়া কেউ তাকিয়ে থাকতে পারেনা। আর কিছু চেহারা আছে যাদের দিকে একবার তাকালে আর চোখ নামিয়ে নেওয়া যায় না। অত্রি দ্বিতীয় শ্রেণীভুক্ত। সদা হাস্যোজ্জল একটি মেয়ে। উচ্ছল,প্রাণচঞ্চল,দুষ্টু।

সারাদিন এই আম্মুর সাথে খুনসুটি। এই আব্বুর কাছে আহ্লাদ। সব মিলিয়ে অত্রি সেই মেয়ে যে একটি পরিবারকে সারাদিন মাতিয়ে রাখে।

আব্বুর মৃত্যুর পর স্বাভাবিকভাবেই প্রাণচঞ্চলতাটা হঠাৎ কমে যায়। সে যায়গাটা দখল করে দায়িত্ববোধ, সহনশীলতা এবং আরো কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা ঠিক তার বয়সের মেয়ের জন্য নয়।

অত্রি এমন একটি মেয়ে যাকে যে কোন ছেলে পেতে চাইবে। এমন হাই-প্রোফাইল একটি মেয়েকে পেল নক্ষত্রের মত ছাগল কিসিমের ছেলে। অবশ্য এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। রবার্ট প্যাটিনসন কে ভাগিয়ে দিয়ে ক্রিশ্চেন স্টুয়ারট কে নিজের করে নেওয়ার যে সুপ্ত বাসনা আমার মনে ছিল তা নক্ষত্রকে দেখে আরো পাকাপোক্ত হলো।





এতক্ষন যা শুনলেন তা দু বছর আগের কাহিনী। বালক বালিকা তখন কেবলি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী যুবক-যুবতী হয়েছে। অর্থাৎ বিয়ের বয়স কেবলি হয়েছে। এর মাঝে নক্ষত্র অনেক চেষ্টা করেছে অত্রির সাথে যোগাযোগ করতে।পারেনি।একসময় অত্রি,নক্ষত্র দুজনি তাদের পড়ালেখা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।দুজন দুজায়গায় চলে যায়।অত্রিকে একবার দেখার আশাও নিভে যায় নক্ষত্রের জন্য।এখন সরাসরি চলে আসি বর্তমানে।





।৩।



নক্ষত্র এখন চতুর্থ বর্ষে। কিছুদিন পরেই ভার্সিটি ছাড়বে। একমাস পর শেষ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা আর অত্রি মেডিকেলে পড়ছে। প্রথম বর্ষ। তাদের সম্পর্কের অগ্রগতি আপাতদৃষ্টিতে হতাশাব্যাঞ্জক।

যদিও নক্ষত্রের মনের আঙ্গিনায় সেই বিয়ের দিন থেকে একটি মেয়েরই অবাধ বিচরন। অত্রি। অন্য কোন মেয়ের দিকে সে চোখ তুলেও তাকায় না কখনো। কিন্তু অত্রির মনের আঙ্গিনায় মনে হয় নক্ষত্রের জন্য নো এন্ট্রি। অবশ্য অত্রিকে দোষ দেই না। নিজের মনের আঙ্গিনায় কেউ একটা ছাগল কে এন্ট্রি দিবে এটা আশা করা যায়না।





ছাত্রজীবনের শেষ ছুটিতে এসেছে নক্ষত্র। ছুটি ১৪ দিন। অত্রিও এসেছে। কাকতালীয় ভাবে তার ছুটিও ১৪ দিন। নক্ষত্র বাসায় এসেই শুনলো অত্রি এসেছে। ব্যাস। ছুটলো অত্রির বাসা অভিমুখে। গিয়ে বাসার সামনে দাঁড়ালো। ছোট্ট দোতলা বাসা। অত্রির রুমের জানালাটার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। একটু অত্রির দেখা পাবার আশায়।

বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলো না। পরীটার দেখা মিললো। রুমের ভিতর পায়চারি করছে। একবার এদিকে যায়, একবার ওদিকে যায়।জানালা দিয়ে শুধু এক ঝলক দেখা যায়। রাতের ঝড়ের সময় সময় যখন বিদ্যুত চমকায় পৃথিবী এক মুহুর্তের জন্য আলোকিত হয়ে উঠে। কিন্তু সে সৌন্দর্য্য উপভোগ করার আগেই চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়। মনে বারবার একটা অতৃপ্তি রেখে যায়। নক্ষত্রের কাছে ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম লাগছে। উপায় নেই। তাই বিদ্যুতের এক ঝলক আলোই সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো।

কিন্তু বেশ কিছুক্ষন হয়ে গেল বিদ্যুতের ঝলকানি দেখা যাচ্ছেনা। নক্ষত্র পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর করে উচু হয়ে দেখার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও দেখা মিললো না। ব্যার্থ মনোরথে সে কেবলই প্রস্থান পথের দিকে ধাবিত হতে যাবে। অম্নি পিছন থেকে রিনঝিন কণ্ঠস্বর বেজে উঠলো,

--এই ছেলে,এইদিকে শুনো।

উলটো ঘুরে নক্ষত্রের পা বরফের মতো জমে গেল। পরীটা মেইনগেটে দাঁড়িয়ে আছে। তাকেই কি ডাকছে?

--কি হলো? শুনো এইদিকে…

--আ-আ-আ-মি?...

নক্ষত্র কোনমতে তোতলাতে তোতলাতে বললো।

--না, তোমার পাশের জন।

নক্ষত্র আশেপাশে তাকালো। মিটার বিশেকের মধ্যে আর কাউকে দেখতে পেল না। আবার পরীটার দিকে তাকালো।

অত্রি এবার বললো,

--হ্যাঁ ছাগল, তোমারেই ডাকতেছি। এইদিকে আসো।

নক্ষত্র মাথা নিচু করে কম্পিত পায়ে এগিয়ে গেল।

--কি চাই?......অত্রি জিজ্ঞাসা করলো।

--কি-কি-কি-ছু……না।

--কিছুনা মানে? আমার জানালার দিকে তাকায় ছিলা কেন?

--ন-না…মা-আ-নে এমনি।

--এমনি মানে? ফাইজলামি করো?

নক্ষত্র অপরাধীর মত মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

--ছুটি কবে হইছে তোমার? বাসায় আসছো কবে? অত্রি জিজ্ঞাসা করল।

--আ-আ-আজ-ক-কে।

--হুম…কিছু বলবা?

--ক-ক-কই নাতো।

--তাহলে দাঁড়ায় আছো কেন? ভাগো।

--আ-আ-চ্ছা…বলে উলটো ঘুরে হনহন করে হেটে চলে গেল।

অত্রিও বাসায় ঢু্কল। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মুখ বিকৃত করে বিড়বিড় করে বলল,

''শালা তোতলার সাথে বিয়ে দিছে আমার।''





।৪।



পরেরদিন একই সময়ে একই ভাবে নক্ষত্রকে আবার দেখা গেল অত্রির বাসার নীচে। অত্রি ঘন্টাখানেক ধরে আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে লক্ষ্য করলো। ছেলেটা পুরো সময় ধরে কেমন যেন ছটফট করছে। অত্রি আজকেও নীচে নেমে এসে ডাক দিল ওকে।

--তুমি আজকেও আসছো……

--হুমম…মাথা নীচু করে বলল নক্ষত্র।

--কেন আসছো? মানা করছি না?

নক্ষত্র চুপ দাঁড়িয়ে রইল।

--আম্মু দেখলে কি হবে মনে আছে তো? চোখ তুলে নিবে কিন্তু।

নক্ষত্র চুপ। মাথা নীচ।

--কি চুপ কেন? কিছু বলবা?

নক্ষত্র তারপরও চুপ।

--কিছু না বললে যাও।

নক্ষত্র ঠাই দাঁড়িয়ে রইল।

--ঠিক আছে। তুমি চারপায়ে ছাগলের মতো দাঁড়িয়ে থাকো। আমিই যাই।

বলে অত্রি কেবলই উলটা ঘুরেছে। হঠাৎ শুনল,

--আমি তোমাকে ভালবাসি।

চট করে ফিরে তাকালো অত্রি। দেখলো ছাগল টা কথাটা বলেই প্রাণপনে তার বাড়ির পানে দৌড়াচ্ছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল সেদিকে। সিঁড়ি দিয়ে উঠে যাবার সময় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বলে উঠল,

''মোবাইল নাম্বারটা নিতে হয় ছাগলটা এইটাও জানে না।''



সেদিন সন্ধ্যায় নক্ষত্রের মেসেজ পেলাম ফোনে। ''ইয়েস মামা, কইসি।''





।৫।



পরের দু দিন নক্ষত্রকে আর ঐ বাসার নীচে দেখা গেল না। আর না পেরে অবশেষে অত্রিই নক্ষত্রের নাম্বার ম্যানেজ করে ফোন দিল ওকে। ফোন কনভার্সেশনটা আমি বাদ দিছি। কারন সেটা এখানে দিলে আপনারা আমাকেই ধিক্কার দিবেন।

বলবেন…“এমন একটা ছাগলের বেস্টফ্রেন্ড তুই। তুই নিজেও একটা ছাগল”(:P)

যা হোক…ফোন করে অত্রি নক্ষত্রকে তার বাসার সামনে ডাকলো। নক্ষত্র গেল। গিয়ে অত্রির সামনে মাথা নিচু করে দাড়ালো।

--ঐ ছাগল ঐ। প্রপোজ করছো…তোমার উত্তর লাগবে না?

নক্ষত্র স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।

--কি? কথা বলতে পারতেছ না?

আস্তে আস্তে হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়লো নক্ষত্র।

--তাহলে গত-দুদিন আসিস নাই কেন গাধা? -অত্রি হিসহিস করে বলল।

নক্ষত্র দেখল অবস্থা বেগতিক। তুমি থেকে তুই-তোকারিতে ডিমোশান…ছাগল থেকে গাধা। তাই মুখ খুলল।

--ইয়ে মানে…ভয় পাইছিলাম। -মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল নক্ষত্র।

--তুই ভয়ই পাইতে থাক। ছাগল। -বলে গটগট করে উপরে উঠে গেল অত্রি। উঠতে উঠতে রাগে ফুসতে ফুসতে আপন মনে বলল,

''বীর-হেক্টরের লগে বিয়ে দিছে আমার।''



রাত্রে নক্ষত্রের মোবাইলে অত্রির মেসেজ এল। ''কাল সকাল ঠিক সাড়ে দশটায় আমার বাসার সামনে এসে অপেক্ষা করবা।''





।৬।



পরদিন সাড়ে দশটা বাজার ৫ মিনিট আগেই অত্রির বাসার সামনে গিইয়ে হাজির হলো। পৌনে এগারটায় অত্রি নামল।

অত্রিকে দেখে নক্ষত্রের হার্টবিট প্রায় থেমে গেল। একি মানবী???? নাকি অন্য কিছু???? সদ্য স্নান করা ভেজা ভেজা চুল। স্নিগ্ধ ত্বক। পিঙ্ক সালোয়ার কামিজ পরেছে। নক্ষত্র হা করে তাকিয়ে রইলো।

--ছাগলের মত হা করে তাকিয়ে রইছো কেন? রিকশা ডাকো একটা। -ভ্রু নাচিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল অত্রি।

নক্ষত্রের ছাগলের মত হা আরো বড় হয়ে গাধার হা এর মত হয়ে গেল। উপায় না দেখে অত্রিই একটা রিক্সা ডাকল।

--উঠো।

--কোথায় যাবা?

--জাহান্নামে।



এই মেয়ের সাথে নক্ষত্র জাহান্নামে যেতেও রাজি। তাই মাথা নেড়ে রিক্সায় উঠে পড়ল চুপচাপ।

জাহান্নামের কথা বলে নক্ষত্রকে সেদিন জান্নাতের প্রশান্তি দিল অত্রি। নক্ষত্রকে নিয়ে মার্কেট ঘুরল। অনেক খুটিনাটি জিনিস দামাদামি করলো। যদিও কিছুই কিনল না। মেয়েদের স্বভাব মনে হয় দামাদামি করা। অত্রি যেটাই দেখে বাচ্চাদের মত ছুটে সেটার কাছে চলে যায়। নক্ষত্রকে দুটা গল্পের বই আর একটা টি-শার্ট গিফট করল। দুপুরে লাঞ্চ করতে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো দুজন। সারাটা দিন অত্রি অনেক কথা বলল নক্ষত্রের সাথে। যেন অনেকদিন কোন কথা বলেনি। ক্লাসমেটদের গল্প, কলেজের গল্প, কোন কোন ভাইয়া আর ক্লাসমেট তার সাথে লাইন মারার চেষ্টা করে সেসব গল্প। নক্ষত্র শুধু শুনল। চোখ বড়বড় করে অত্রি শুধু বলে যায়। নক্ষত্র অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে শুধু আর শুনে যায়।





বিকালে তারা গিয়ে একটা পার্কে বসে। সারাদিন কথা বলে অত্রি মনে হয় ক্লান্ত হয়ে গেছে। চুপচাপ বসে আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে, দু হাত দুপাশে রেখে হাতের উপর ভর করে। গোধুলি আলোয় তাকে কেমন যেন দেবী দেবী লাগছে। অপার্থিব একটা পরিবেশ। নক্ষত্র অত্রির হাতটার দিকে তাকায়। খুব ইচ্ছা করে বাচ্চাদের মত ছোট হাতটা ধরতে। শেষ পর্যন্ত আর ধরা হয়ে উঠেনা। উঠে পড়ে তারা। অত্রিকে রিক্সায় করে বাসায় পৌছে দেয়। বাসার সামনে নেমে কিছুক্ষন দাঁড়ায় দুজন। নক্ষত্রের সাহস একদিনে অনেকখানি বেড়ে গেছে। সে অত্রির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। অত্রি কেন যেন আজ একটু লজ্জা পায়। নক্ষত্রের চোখের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়।নিরবতা ভাঙ্গে নক্ষত্র।

--একটা কথা বলি?

--বলো ও ও…আহ্লাদ করে সুর করে বলে অত্রি।

নক্ষত্র একটা ছোট্ট বিরতি দিয়ে বলে…

--তুমি অনেক সুন্দর।

হঠাৎ করেই চুড়ান্ত ধরনের লজ্জা পেয়ে গেল অত্রি। লজ্জায় দুই গাল, নাক সব লালচে হয়ে গেল। সে কয়েক মুহুর্ত মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ মুখ তুলে ফিক করে একটা দুষ্টামি হাসি দিয়ে জিভ বের করে নক্ষত্রকে ভেংচি কেটে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায়। দাড়িয়ে থাকা নক্ষত্রের হার্ট দু একটা বিট মিস করে।





।৭।



পরের কয়েকদিন স্বপ্নের মত কাটে দুজনের। প্রতিটা দিনই পৃথিবীকে নতুন লাগে। আস্তে আস্তে ছুটি শেষ হয়ে আসে। নক্ষত্র আজ চলে যাবে। ব্যাগ প্যাকিং করা শেষ। দুপুরে বাস।



সকালে অত্রির ফোন আসে। অত্রির বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় নক্ষত্র। অত্রি নীচে এসে কোন কথা না বলে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় ছাদে। চিলেকোঠার পাশে ছায়ায় দাঁড়ায় দুজন।

নক্ষত্র খেয়াল করলো অত্রির চোখের নিচে কালি পড়েছে। রাতে ঘুমায়নি বোঝা যায়। কিছুক্ষন চুপ করে থাকে দুজনেই। দীর্ঘশ্বাস গোপন করার প্রতিযোগিতা চলে দুজনের মধ্যে। অবশেষে নিরবতা ভাঙ্গে অত্রি।

--পরীক্ষা কবে থেকে?

--২৭ তারিখ।

--ভালোমতো পরীক্ষা দিবা।

--হুম।

--হুম কি? ভাল রেজাল্ট করে একটা ভাল জব ৩ মাসের মধ্যে যদি না পাইছো…ডিভোর্স পেপার রেডি রাইখো।...চোখ বড় বড় করে বলে অত্রি।

নক্ষত্র হেসে দেয়।

--ফান করতেছি না। আমি সিরিয়াস। -অত্রি বলে।

--জ্বি ম্যাডাম। বুঝেছি।

--গুড। আর দিনেরবেলা ঘুমাবা না। সারাদিন পড়বা আর রাত্রে ঘুমাবা। রাত জাগবা না।

--ঠিক আছে।

--আর তোমার ফেভারিট কালার কি হলুদ নাকি? সব ড্রেস এরকম হলুদ হলুদ কেন?

--হলের পানিতে আয়রন। ওয়াশ করলে হলুদ হয়ে যায়।

--থাক। শিখাইতে হবেনা আর আমাকে। পারোনা কাঁচতে সেটা স্বীকার করো। বাসায় নিয়ে আসবা নেক্সট টাইম থেকে।

--আচ্ছা।

একটা টিফিন ক্যারিয়ার বের করলো অত্রি। নক্ষত্রের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল।

--রাতে গিয়ে কোথায় খাবা না খাবা ঠিক নাই। খাবার নিয়ে যাও। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিবা…গরমে নষ্ট হয়ে যাবে।

--আচ্ছা -মাথা নাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে নেয় নক্ষত্র।

--শুনো…আমি রাধছি কিন্তু, খেয়ে কেমন হইছে ফোনে জানাবা।

--ওকে…মুচকি হেসে বলে নক্ষত্র।

--হেসো না…খারাপ হইছে বললে ঘুষি মেরে নাক ভেঙ্গে দিব কিন্তু…চোখ বড় বড় করে ছোট্ট হাতের মুঠি পাকিয়ে বলে অত্রি।

হেসে ফেলে নক্ষত্র। এভাবে কিছুক্ষন যায়। একসময় বলার আর কিছু থাকেনা দুজনের কাছে। অত্রির মন খারাপ হচ্ছে অনেক। কান্না পাচ্ছে। অনেক শক্ত মেয়ে সে। কান্নাটা কোনমতে চেপে বলল…

--ঠিক আছে যাও…দেরি হয়ে যাচ্ছে।

নক্ষত্র বোকার মত মাথা নাড়ে। উল্টো ঘুরতে গিয়েও থেমে যায়। পিছন থেকে হঠাৎ একটা স্নিগ্ধ লাল গোলাপ বের করে অত্রির দিকে বাড়িয়ে ধরে।

অত্রি আর পারেনা। নক্ষত্রকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেদে ওঠে। কান্নাজড়িত অস্পষ্ট কন্ঠে কিছু একটা বলে…যার কোন অর্থ নেই…আহ্লাদের ভাষা।

অনেক রোমান্টিক কিছু বলা যেত। নক্ষত্রের মাথায় কিছুই আসলো না। সে শুধু অত্রিকে দুই বাহুর মধ্যে শক্ত করে চেপে ধরে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলল-

“আমার বউ”

নক্ষত্রের বাহুবন্ধনে অত্রির শরীর কেপে কেপে উঠে। চোখে নামে শ্রাবনের বর্ষন।





কোন একটা মুভিতে একটা কথা শুনেছিলাম।“Wife Must Love Her Husband. Just A Right Moment Is Enough To Sprout Love. You Must Wait For The Moment. That’s The Wonder Of Marriage.”

সপ্তর্ষীমন্ডলের মাঝখানের তারাটির নাম অত্রি। আমি অবশেষে বুঝতে পারি কেন আল্লাহ অত্রির মত মেয়েকে নক্ষত্রের মতো একটা ছাগলের সাথে এক সুতায় বাঁধলেন।

নক্ষত্র আর অত্রিরা যে একই আকাশে থাকে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫

রহস্যময় শিশির বলেছেন: :-B

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.