![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বলা হয় তুমি যদি এক জীবনের পেন্সিল হয়ে দু-এক পাতা লিখে দিতে না পার তবে ইরেজার হয়েই থেকে দুঃখ-কষ্ট গুলো মুছে দিয়ো। আমি বলি আমার ইরেজার হতে কেমন জানি ভয় হয়। ইরেজার হতে গিয়ে মায়ায় জড়ানোর ভয়। এক জীবনে কিছু মায়ার সম্পর্কে জরিয়ে দু-এক পাতা লিখে ফেলেছিলাম নিজের জীবনের খাতায়। আমি এখন সেইসব মোছায় ব্যাস্ত। আমি বরং আমার নিজের ইরেজার হয়েই থাকি।
লেখাটি গত ২/১২/২০১৩ তারিখে ভোর ৩.৩০ এ লিখেছিলাম
গতকাল রাতে ২ টার দিকে ব্যাডমিন্টন খেলে বাসায় আসার আগে দুলাল ভাইয়ের দোকানে যখন চা খাচ্ছিলাম, তখন এক বন্ধুর সাথে দেখা। সঙ্গত কারনে আমার
বন্ধুর নামটি উল্লেখ করব না। আমার বন্ধুটি এখন সিনেমা হলে কম্পিউটার সেকশানে চাকরি করে।
(নিন্মের কথোপকথনসমুহ আমরা যেভাবে বলেছি সেভাবেই উল্লেখিত, দয়া করে কেউ সাধু-চলিত ভাষার মিশ্রণ খুজবেন না)
কথা প্রসঙ্গে আমার বন্ধুটি বলে উঠল, ”কালকে হলে আয় তোরা। আইসা একটা বাংলা ছবি দেখে যা।”
আমি কইলাম, ”হঠাৎ কইরা তোর আমাগোরে হলে নিয়া ছবি দেখানোর শখ হইল ক্যান?”
সে কইল, ”নতুন একটা ছবি আইসে। নাম ভালবাসা জিন্দাবাদ। ছবিটা খুব সুন্দর। দেইখা মজা পাবি।”
আমার পাশে আরেক বন্ধু কাউসার বলে উঠলো, “চল কালকে যাই। অনেকদিন হইসে হলে গিয়া ছবি দেখিনা।”
আমরা সেখানে টোটাল ৪ জন ছিলাম। আমি, শিহাব, কাউসার এবং আমার মিতা অয়ন। সবাই কইল যাওয়া যায়।
(যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমাদের স্কুলের পাশেই একটা সিনেমা হল ছিল। বিডিআর হল। স্কুল পালাইয়া হলে যাইতাম ছায়াছবি দেখতে। ২০০৪-০৫ এর কথা।)
অয়ন জিগাইলো, “কোন টাইমে যাবি তোরা?”
বন্ধুটি বলল, “দুপুরে আয়। ৩ টার শো।”
অয়ন গাইগুই করে বলল, “৩ টার সময় ক্যামনে কি?”
আমি কইলাম, “ক্যান, কি সমস্যা?”
অয়ন কইল, “৩ টার সময় বাইর হইলে ঘুম আসবে”
উল্লেখ্য অয়ন রাত ৯ টার আগে আড্ডা দিতে বের হয় না। দিনে বের হলে নাকি কালো হয়ে যাবে। আর আমার তো ঘুমই ভাঙে দুপুরবেলা(সকালে ঘুমাই কিনা)।
যাইহোক, অয়নরে কাউসার রাজি করাইলো। এরপর বন্ধুটিকে কনফার্ম করে আমরা যে যার বাসায় চলে গেলাম।
সকালে সাড়ে ১১ টায় কাউসার আর শিহাব আমার বাসায় এসে আমার ঘুমের ১৩ টা বাজাইয়া দিলো। কতক্ষন আমার বাসায় থাইকা ওরা কাজে চইলা গেলো আর
আমি আবার ঘুমাইয়া পড়লাম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়ায় উঠে ঘড়ির দিকে তাকাইয়া দেখি ২.১৫।
লাফ দিয়া উঠলাম। তাড়াতাড়ি গোসল সেরে অয়নরে কল দিলাম।
অয়ন তো আর কল ধরেনা। মেজাজ গেল বিগড়াইয়া। কতক্ষন পর আড়াইটায় অয়ন কল দিল।
কল রিসিভ কইরা জিগাইলাম, “কিরে যাবি না?”
হে কয়, “তোরা যাবি? আমি তো ভাবসি যাবি না।”
আমি কইলাম, “মামা এত্ত কাহিনি বুঝিনা, যামু কইসি তো যামুই। তুই তাড়াতাড়ি ভাত খাইয়া বাইর হ।”
অয়ন সম্মতি দিয়া কল কাইটা দিলো।
এর ভিতরে কাউয়া তো কয়েকটা মিসকল মাইরা দিসে আর শিহাব কল করতাসে।
শিহাবরে কইলাম, “অয়ন আইতাসে। তুই বাইর হ আর কাউয়ারে কল দিয়া বাইর হইতে ক। আমি ভাত খাইয়া লই।”
যাইহোক, ৩ টায় সবাই একত্রিত হইলাম। তাড়াতাড়ি দুইটা রিকশাযোগে গন্তব্যের দিকে যাত্রা করলাম আর বন্ধুরে কল দিয়া কইলাম, “আমরা আইতাসি মামা।
ভালো দেইখা ৪ টা সিট রাখ।”
গন্তব্যস্থলে পৌছাইয়া দেখি বন্ধু দাঁড়াইয়া আছে। রিকশাভাড়া দিয়া হলের দিকে গেলাম। হলে ঢুকার পথে শিহাবরে এক পোলা ডাক দিলো। তাকাইয়া দেখে হের ছোট
ভাইয়ের বন্ধু। শুরুতেই ঘাপলা।
যাইহোক হলে ঢুকার আগে বন্ধু কইলো, “তোগো লাইগা এখনও ছবি চালাই নাই। তাড়াতাড়ি চল।”
হলের ভিতরে ঢুইকা পাশাপাশি ৪ টা সিটে বসলাম আমরা। কিছুক্ষন পরই ছায়াছবি শুরু হলো।
শুরুতেই দেখি ছায়াছবির বিজ্ঞাপন। “আসিতেসে! আসিতেসে! রাজু চৌধুরী পরিচালিত, তিতাস কথাচিত্র পরিবেশিত, অত্যাধুনিক রেড ক্যামেরায় নির্মিত ডিজিটাল
প্রেমের ছায়াছবি, ইঞ্চি ইঞ্চি প্রেম। ছায়াছবির নামের জায়গায় লেখা ” ” প্রেম।
অয়ন কইল, “শুরুতেই বাজে জোকস।”
আমি কইলাম, “গুরু, সবে তো শুরু। পুরা ৩ ঘন্টাতেই তোমার জন্য জোকস আর জোকস অপেক্ষা করিতেসে”
অবশেষে ছায়াছবি আরম্ভ হইল।
(এখন আমি ছায়াছবির কাহিনি বর্ণনা করিব। এবং মাঝে মাঝে আমার অনুভুতিসমুহ থাকিবে)
শুরুতেই দেখি নায়ক আরেফিন শুভ এক মেয়ের হাত ধরে দৌড়াচ্ছে আর পিছনে একদল লোক হাতে লাঠিসোঠা নিয়া দৌড়াচ্ছে। এই মেয়ে কিন্তু নায়িকা না। নায়ক
দৌড়ে নায়কের বাড়িতে আসলো। এসে পড়ল তার বাপের সামনে। কিছুক্ষন জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা গেলো এই মেয়ের জামাই নায়কের বন্ধু। সে এই মেয়েকে উঠিয়ে
এনেছে কারন তার বন্ধুটির সাথে বাজি হয়েছিল যদি সে বন্ধুর বউকে বিয়ের আসর হতে উঠিয়ে আনতে পারে তাহলে বন্ধুটি তাকে তার আইফোন ৫ গিফট করবে।
বুঝলাম বাংলা ছায়াছবিও আজকাল পুরোদস্তুর ডিজিটাল হয়ে গেছে।
এরপর নায়কের বাবা তাকে ঘর হতে বেরিয়ে যেতে বলায় নায়ক তার বাবার সাথে রাগ করে ঢাকায় তার বড় বোনের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিল।
নায়কের দুলাভাই জনাব কাদের তার একমাত্র ছেলেকে রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন, “বলত বাবা এটা কে।”
ছেলে উত্তর দিলো, “রবি দাদু”
আবার কাজী নজরুলের ছবি দেখিয়ে একই প্রশ্ন করলো।
ছেলে বললো, “নজরুল নানু”
এবার ঈশ্বরচন্দ্রের ছবি দেখানোতে ছেলে উত্তর দিলো, “এটা তো সাগর আঙ্কেল”
নড়েচড়ে বসলাম আমি, আর কি কি জানি শুনতে হয়।
এরপর সেই গতানুগতিক ধারায় নায়ক নায়িকার দেখা। অতঃপর প্রেম। নায়িকার বাবার ভিলেনগিরি। মাঝে আবার একটু মজা পেলাম নায়িকার বাবা জনাব সাদেক
বাচ্চু সাহেবের পালিত গুন্ডা দলের সর্দারের নাম শুনে। তার নাম হলো “পদ্মলোচন”, কিন্তু সে চোখে দেখে না। বাংলা বাগধারা মনে পড়ে গেল।
“কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন”।
আজকাল বাংলা বাগধারার সঠিক ব্যাবহার হচ্ছে দেখে গর্বে আমার বুকের ছাতি ইঞ্চি ইঞ্চি করে কয়েক ইঞ্চি বেড়ে গেল।
অবশেষে ছবির ক্লাইম্যাক্স এসে উপস্থিত। আমরা ততক্ষনে আর বসে থাকার অবস্থায় নাই। ক্লাইম্যাক্সে নায়িকার বাবা নায়ককে বলছেন, “এখন বুঝবে না, সন্তানদের
নিয়ে বাবাদের কত চিন্তা। যেদিন বাবা হবে, সেদিন বুঝবে।” উত্তরে নায়ক বলে, “আগে বাবা হওয়ার সুযোগটা তো করে দিবেন।”
দেশ থেকে কি লাজ-লজ্জা, আদব-লেহাজ সব উঠে গেছে নাকি? তারপর বহুল প্রতিক্ষিত সেই ক্ষন আসলো। ছবি শেষ।
অতঃপর আমরা সবাই নিজ নিজ ঘরে ফিরিয়া আসিলাম।
এই ছবি দেখে আমার প্রতিক্রিয়া মিশ্র ধরনের।
ভালো দিকসমূহঃ
*বাংলা ছবির অশ্লীলতা এখন অনেক কমেছে।
*এফডিসির বাইরেই এখন পুরো ছবির শুটিং হয়।
*ক্যামেরার মান উন্নত হয়েছে।
*দর্শনীয় স্থান সমূহের পূর্ণ ব্যাবহার।
খারাপ দিকসমুহঃ
*ইন্ডিয়ান ছবির নকল প্রচুর পরিমানে পরিলক্ষিত।
*চিত্রনাট্য গতানুগতিক ধারার।
*নাচের দিক দিয়ে এখনও অনেক পিছিয়ে।
*ফাইটিং দৃশ্যগুলোর বাজে অবস্থা।
আশা করি আমাদের পরিচালকগণ বাজে দিকসমূহের উন্নতি সাধনের পাশাপাশি ভালো দিকগুলো বজায় রেখে আরও ভালো করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। আমাদের
ঢালিউড একদিন অনেক উন্নত হবে এবং পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা সকলেই হল বা সিনেপ্লেক্সে বাংলা ছবি দেখতে যাবো।
চিন্তা করছি বন্ধুদের নিয়ে আগামী সপ্তাহে ” ” প্রেম ছবিটি দেখে আসব।
বিঃদ্রঃ এটি একান্তই ব্যাক্তিগত একটি মতামত। বাংলা ছবিকে কোনভাবে হেয় করার কোন চেষ্টা বা ইচ্ছে আমার নেই।
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:৩৩
স্প্লিকনট অয়ন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাদের উৎসাহই আমার প্রেরনা।
২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩২
এন ইউ এমিল বলেছেন: ভালই লাগলো
লেখা ডাবল হইছে মনে হয়
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫৪
স্প্লিকনট অয়ন বলেছেন: এডিট করতে গিয়ে ভুলে মিস্টেক হইয়া গেসে
৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৪৩
ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন:
দেহা দরকার!
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫৪
স্প্লিকনট অয়ন বলেছেন: দেখতে পারেন। পয়সা উসুল মজা পাবেন। পারলে সাথে কোন আতেল বন্ধু নিয়ে যাইয়েন।
৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:১১
মোঃ আনারুল ইসলাম বলেছেন: ভালই লাগলো। আপনার লেখার হাত জব্বর।
২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫৫
স্প্লিকনট অয়ন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:৫৬
জনৈক রুয়েটিয়ানের ব্লগ বলেছেন: আপনার লেখার হাত খুব সুন্দর আর সাবলীল। পড়তে ভালো লাগে। যুক্তিগুলাও ভালো।
পোস্টে ভালো লাগা থাকল।