![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিটি জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য বোঝার ক্ষমতা মানুষের নেই ,যদি কোনো মানুষের থেকে থাকে তবে সে মহামানব নয়ত মহাবেকুব ।
১.
জানালার মঁরচে ধরা গ্রিলের ফাঁক গলে ভোরের আলোর চিকন একটা রেখা এসে পড়ল মুখে । কপালে গভির চিন্তার ভাঁজ । নির্ঘুম চোখ দুটো লাল হয়ে আছে বিশ্রামের অভাবে । কখন যে সময় গড়িয়ে রাত ভোর হয়ে গেছে সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই । গম্ভির মুখে খাটের কোনার দিকে একবার তাকালো রাশেদ । ঐ তো ব্যাগটা দেখা যাচ্ছে , গোছানোই আছে । গতকাল রাত থেকে কম করে হলেও চারবার গুছিয়েছে আবার পরক্ষনেই মত পাল্টেছে ।
জীবনে বহু ঝামেলায় পড়েছে রাশেদ , অনেক বিপদ গেছে তার উপর দিয়ে কিন্তু বিগত ১০ বছরের যান্ত্রিক জীবনে কখনো এরকম অবস্থার সম্মুখীন হতে হয় নি তাকে । এরকমটা যে হবে তা তো চায় নি সে কখনও , কিন্তু কিসের থেকে কিভাবে যে হঠাত্ করেই এসবের মাঝে জড়িয়ে গেল রাশেদ বুঝে উঠার আগেই পেরিয়ে গেল অনেকটা সময় । পরিস্থিতি তাকে এমন এক প্রান্তে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যেখান থেকে পিছু হটলে পরিবেশ তাকে ছুড়ে ফেলে দেবে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে , বেঁধে ফেলবে সময়ের বেড়াজালে , আর পিছনে না তাকিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া মানেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে আলিঙ্গন করা । যেখানে সম্ভাবনার দাঁড়িপাল্লায় প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তির পাল্লাটাই ভারি । অনেক ভেবে শেষ পর্যন্ত হার মানল রাশেদ , ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বের হয়ে পড়ল চিরচেনা তবুও অচেনা হয়ে যাওয়া পুরনো সেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে . . . . . . . .।
২.
মেহেরপুর জেলার গাংনি উপজেলার ছোট্ট একটা গ্রাম । তুলনামূলক গরীব শ্রেণীর লোকের বসবাস হলেও বলতে গেলে অভাব তেমন একটা নেই কারোর ঘরে । এখানে দিনের বেলা সবাই কৃষক , প্রচুর পরিশ্রম করে ফসল ফলায় পুরো ক্ষেত জুড়ে । আর বিকেলের পরে কেউ মুদি দোকান চালায় , কেউ মুচি , কেউ মাঠের সবজি নিয়ে পাশের গ্রামে যায় বেঁচতে আবার কেউবা বাড়ি বসে বসে ঝুড়ি বোনে । দুপুর বেলা ছোট ছেলে মেয়েরা মাথায় করে মায়ের পাঠানো ছোট্ট একটা মাটির মালসায় খাবার নিয়ে আসে বাপের জন্যে । গাছতলায় বসে বাড়ি থেকে মালসায় করে পাঠানো সেই ভাত ; ডাল আর কাঁচামরিচ দিয়ে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে তারা । কখনও বা পরম মমতায় গালে তুলে ভাত খাইয়ে দেয় পাশে বসে থাকা ছেলে বা মেয়েকে । সে দৃশ্য বড়ই অপরূপ , যে কোনো শিল্পীর শিল্পকেও হার মানায় সে দৃশ্য ।
এই গ্রামেরই ছেলে রাশেদ । ছোটবেলাতেই মাকে হারায় , তার বাবা রহমত শেখ মায়ের অভাব পূরন করতে আবার বিয়ে করে ঘরে আনে পাশের গ্রামের এক মেয়েকে । সত্ মায়ের সংসারে বড় হলেও কখনও সে কথা বুঝতে দেয়নি তাকে তার মা । কিন্তু রাশেদ কখনোই মেনে নিতে পারেনি তার মাকে । ১১ বছর বয়সে হঠাত্ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় রাশেদ ।
খুলনার এক দূর সম্পর্কের চাচার বাসায় আশ্রয় নেয় । তার পরের ঘটনাগুলো অনেকটা গল্পের মতই । চাচা তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেও পড়াশোনায় মন বসাতে পারেনি রাশেদ । তার বয়স যখন ১৫ , আবার ঢাকায় পালিয়ে যায় রাশেদ । ঢাকায় এসে অনেক ঘুরাঘুরি করে এক চায়ের দোকানে কাজ নেয় । এখান থেকে পরিচয় হয় সোহেল নামের এক ছেলের সাথে । সকালে চায়ের দোকানে কাজ করত আর বিকালে প্লাস্টিকের বোতল , লোহা ইত্যাদি টোকায়ে বেড়াত । ৩ বছর পর গার্মেন্টসে চাকরি পায় রাশেদ আর সোহেল দুজনই । ভালই চলছিল রাশেদের । কোনো পিছুটান নেই , রাতে দেরি করে ফিরলে কৈফিয়ত দেয়ার ও কেউ নেই । অন্তঃত দুবেলা পেটপুরে খাওয়ার আর মাথা গোঁজার ঠাই তো আছে ।
''টিকিট , টিকিট , ঐ মিয়া কই যাইবেন ? টিকিট দেন ।'' কন্টাকটারের ডাকে অতীত থেকে বাস্তবে ফিরে আসল রাশেদ ।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.