নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাকতাড়ুয়া

স্পাউট রক

প্রতিটি জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্য বোঝার ক্ষমতা মানুষের নেই ,যদি কোনো মানুষের থেকে থাকে তবে সে মহামানব নয়ত মহাবেকুব ।

স্পাউট রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেরা - ২য় পর্ব

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২৫

৩.

সকাল ৮ টা ।

গম্ভীর মুখে চেয়ারে বসে আছেন মোঃপুর থানার ওসি মোজাম্মেল হক । হাতে ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের পাঠানো ওয়ারেন্ট । সামনে বসে থাকা ইন্সপেকটর ইমতিয়াজের দিকে তাকালেন ওসি । ভাবলেশহীন ভাবে বসে আছে ছেলেটা নির্দেশের অপেক্ষায় । বুদ্ধিদীপ্ত চোঁখ দেখে বোঝা যায় নির্দেশ পাওয়ামাত্র তা পালন করতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করবে না ছেলেটা ।

>'পড়েছ এটা ?'

ইমতিয়াজের দিকে কাগজটা বাড়িয়ে ধরলেন মোজাম্মেল হক ।

'>জ্বী স্যার । পড়েছি ।'

>'তোমার কি মনে হয় ইমতিয়াজ ? এই ডিসিশান কি পারফেক্ট ? হায়ার অথরিটির কি আরেকটু চিন্তা ভাবনার দরকার ছিল না ? হুট করে একটা সিদ্ধান্ত নিলেই কি হয় । একটা দুইটা মানুষের ব্যাপার তো না , কত মানুষের ব্যাপার বুঝতে পারছ ইমতিয়াজ ?'

ডিবি ব্রাঞ্চের এমন সিদ্ধান্তে কিছুটা স্তম্ভিত হয়ে দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়লেন মোজাম্মেল হক ।

>'কিছু করার নেই স্যার , উপরের নির্দেশ মানতেই হবে । দেশের জনগনের সেবক আমরা , দেশের স্বার্থে যে কোন আদেশ তো পালন করতেই হবে স্যার ।'

শীতল কন্ঠে ইমতিয়াজ উত্তর দিল ।

>কিছুটা রেগে গেলেন মোজাম্মেল হক - 'স্বার্থ ? তুমি কি স্বার্থের কথা বললে ইমতিয়াজ ? তুমি কি বলতে চাচ্ছ যে এক অংশের স্বার্থের জন্য অন্য অংশ বীলিন হয়ে যাক ?'

>'আমি তা বলছিনা স্যার । কিন্তু নির্দেশ অমান্য করার ক্ষমতা আমাদের নেই স্যার । আপনি অর্ডার দিন ।'

আগের চেয়ে আরো ঠান্ডা গলায় ইমতিয়াজ জবাব দিল ।

>'বেশ তবে তাই হোক । যত ফোর্স লাগে সাথে নিয়ে নাও , পারলে প্রতিটি টিমের সাথে একজন করে বোম্ব এক্সপার্ট নিয়ে নিও । এখন থেকেই প্রতিটি মেস আর হোস্টেল সার্চ শুরু করে দাও , আর ব্যাচেলরদের এক সপ্তাহের মধ্যেই বাসা খালি করে নির্বাচন পর্যন্ত ঢাকা ত্যাগ করার নোটিশ দিয়ে দাও । আর বাড়িওয়ালেদেরকেও ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলে দাও ।'

>'ওকে স্যার ।' নির্দেশ পেয়ে বের হয়ে গেল ইন্সপেকটর ইমতিয়াজ ।



চেয়ারে হেলান দিয়ে ছাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন মোজাম্মেল হক । তার কেন যেন মনে হচ্ছে যেটা ঘটতে চলেছে তার পরিনাম হয়ত অনেক খারাপ হবে । মনের অজান্তেই একটা দীর্ঘঃশ্বাস গোপন করলেন মোজাম্মেল হক ।



৪.

গ্রামে পা দিতেই পরিবর্তনটা চোখে পড়ল রাশেদের । গ্রামটা আর আগের মত নেই । গত ১৪ বছরে অনেক কিছু পাল্টেছে । মাটির সেই রাস্তা এখন শহুরে হাওয়ার ছোয়া পেয়ে ইট বিছানো রাস্তায় পরিণত হয়েছে । গ্রামে ঢোকার মুখেই বকুল চাচার সেই খড় ঘেরা চায়ের দোকান এখন চাটাইয়ের বেড়া আর টিনের চালের দোকানে রূপান্তরিত হয়েছে । বাড়ি যাওয়ার পথে আশে পাশের ঘর গুলো এখন আগের চেয়ে আরো ভালো আর মজবুত হয়েছে । গ্রামের মানুষগুলো ও আগের চেয়ে আরো স্বচ্ছল হয়েছে বলে মনে হল রাশেদের কাছে । নিজের বাড়ির কাছাকাছি আসতেই মাথাটা কেমন যেন ঘুরে উঠল রাশেদের । বুঝতে পারছে , এতদিন পর বাড়ি ফেরায় আবেগ তাকে দুর্বল করে দিচ্ছে । ঐতো তাদের দোচালা বাড়িটা দেখা যাচ্ছে । বাড়িটা সেই আগের মতই আছে । শুধু পুরাতন টিনগুলোর যায়গায় স্থান করে নিয়েছে নতুন টিন , সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে । সেই কঞ্চির বেড়া দেওয়া গেট , গেটের সামনে বেঁকে যাওয়া পেঁয়ারা গাছ , দোল খাওয়ার জন্য গাছের সাথে ঝোলানো মোটা দঁড়ি , গাছের পাশে গরু বাধার বাঁশের খুঁটি , গরুর খাওয়ার দেওয়ার চাঁড়ি সব আগের মতই আছে । ঐতো বাড়ির মাটি লেপা বারান্দায় পাটি বিছিয়ে বসে আছে রহমত শেখ । ফসল কাটার কাস্তেটা ধার দিচ্ছেন আর একটুখানি পর পর হাত দিয়ে ধার পরীক্ষা করছেন । চুলে পাক ধরে গেছে এতদিনে , শরীরটাও বুড়িয়ে গেছে । বাপকে দেখেই রাশেদের চোখ ভিজে উঠল । মাকে আশে পাশে কোথাও দেখতে পেল না রাশেদ । হয়ত রান্নাঘরে , রান্নায় ব্যাস্ত ।

বাড়িতে নতুন মানুষের আগমন টের পেয়ে মুখ তুলে তাকালেন রহমত শেখ , ততক্ষনে কাছাকাছি চলে এসেছে রাশেদ । এতদিন পর দেখেও নিজের ছেলেকে চিনতে এতটুকু ভুল হলনা তার । বাবার চোঁখ তার সন্তানকে চিনতে কখনোই ভুল করতে পারে না ।

কান্না ধরে রাখতে পারলেন না রহমত শেখ । কোনোমতে বারান্দা থেকে নেমে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে নিতে দৌড়িয়ে আসতে লাগলেন রাশেদের দিকে . . . . . . ।



(চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫০

স্রাবনের রাত বলেছেন: ভাল লাগল

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৩২

স্পাউট রক বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.