নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রাবণ আহমেদ (নিরব)\nট্রেইনার অব \"উই আর স্টুডেন্টস\" ঢাকা।

শ্রাবণ আহমেদ

শ্রাবণ আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন জীবন

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:১৮

নতুন জীবন
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
রিমুকে একটা ছেলের সাথে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকতে দেখলাম। পকেট থেকে ফোন বের করে রাকিবকে কল করলাম। সে রিসিভ করে বললো, হ্যাঁ শ্রাবণ বল।
আমি বললাম, তোর বোনকে একটা ছেলের সাথে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকতে দেখলাম।
- ও আচ্ছা।
- ও আচ্ছা মানে?
- ফোন রাখ ব্যস্ত আছি।
- ফোন রাখবো মানে কি হ্যাঁ? রিমু তোর বোন না? আজ যদি একটা ভুল করে বসে সে, তাহলে কার ক্ষতি হবে? তোরই তো হবে।

রাকিব কল কেটে দিলো। তার বোন একটা ছেলের সাথে নিষিদ্ধ একটা স্থানে ঢুকছে, অথচ তার মধ্যে কোনো রিয়েকশনই নেই। আমি আবার কল করলাম। সে কল কেটে দিল। পরেরবার কল করতেই দেখলাম নাম্বার বন্ধ।
.
আমি রুবেলকে নিয়ে চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এসেছিলাম। ছেলেটা আজ বাদে কাল মালদ্বীপ চলে যাবে। তাই আমাকে বললো, দোস্ত আমাকে চিড়িয়াখানাটা ঘুরিয়ে দেখাবি?
আমি আর না করতে পারিনি। আবার কবে দেখা হবে তার সাথে, সে খবর উপরওয়ালাই ভাল জানেন। বললাম, চল। ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।
.
রুবেলকে বললাম, দোস্ত বিকেলে চিড়িয়াখানায় ঢুকবো। এখন বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঢুকি চল।
সে বললো, বোটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যে কী আছে? বাঘ ভাল্লুক কিছু আছে নাকি?
আমি কিঞ্চিৎ হেসে বললাম, আরে না। সেখানকার পরিবেশটা বেশ চমৎকার, মনোমুগ্ধকর। তাই সবাই সেখানে ঘুরতে যায়।
- তাহলে চল।

দুইজনের জন্য দুইটা টিকিট নিয়ে অতি দ্রুত ভেতরে ঢুকলাম। দেখলাম, রিমু আর ঐ ছেলেটি সোজাসুজি হেঁটে চলেছে।

আমি রুবেলকে বললাম, এখানে তুই যত মানুষজন দেখবি। তার মধ্যে প্রায় আশি ভাগই প্রেমিক-প্রেমিকা।
সে এদিক ওদিকে চেয়ে বললো, তাইতো?
- হ্যাঁ। চল ঐ দিকটাতে যাই।

রুবেলকে নিয়ে রিমুর পিছু নিলাম। রিমুর সাথে থাকা ছেলেটির চালচলনে তাকে বেশ চঞ্চল এবং চতুর টাইপের মনে হচ্ছে।
.
প্রায় মিনিট বিশেক লম্বা একটা দুরুত্ব নিয়ে রিমুকে অনুসরণ করতে থাকলাম। বিষয়টা রুবেলকে বুঝতে না দিলেও সে বুঝে ফেললো। বললো, দোস্ত তুই কি ঐ গোলাপি রঙের কাপড় পরা মেয়েটিকে ফলো করছিস?
আমি আর মিথ্যা না বলে তাকে বললাম, হ্যাঁ।
সে বেশ খানিকটা কৌতুহল নিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কেন? এটা আমার ভাবি মানে তোর ইয়ে লাগে নাকি?
- ধুর বেটা। ও আমার বোন হয়। আমার বন্ধু রাকিবের বোন।
- তো, তার পিছু নিয়ে তোর কী লাভ?
- লাভ লোকশান কিছুই না। চল চল একটু দ্রুত হাঁট। ওরা ভেতরের রাস্তায় ঢুকে গেল।
.
আমি মনে মনে যা ভেবেছিলাম, হলোও ঠিক তাই। দেখলাম, ছেলেটি রিমুকে নিয়ে নির্জন দিকটাতে যাচ্ছে। রুবেলকে আমার পিছে আসতে বলে আমি লম্বা লম্বা পা ফেলে একটু দ্রুত হেঁটে গিয়ে তাদের কাছাকাছি গিয়ে রিমুকে ডাক দিলাম। তার নাম ধরে ডাকতে শুনে সে পেছনে ঘুরে আমাকে দেখে সচকিত হয়ে বললো, ভা.. ভা... ভাইয়া আপনি?
- এখানে কী করছো তুমি? এদিকে কোথায় যাচ্ছো? আর এই ছেলেটা কে?
- ও... ও.... ও আমার....
- বয়ফ্রেন্ড?

রিমু 'হ্যাঁ' সূচক মাথা ঝাঁকালো। আমি ছেলেটিকে বললাম, বাসা কোথায় তোমার? কোথায় পড়ালেখা করো?
ছেলেটি আমার এমন প্রশ্ন শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। বললো, ভাইয়া আমি.....
- আমি কী?
- আমি....
- থাপড়াইয়া তোর দাঁত ফেলে দেবো। প্রেমের নামে এখানে অশ্লীলতা করতে এসেছিস?

ছেলেটি দৌঁড়ে পালিয়ে গেল। আমি রিমুকে বললাম, এসব কী রিমু? তুমি জানো না এখানে এই উঠতি বয়সি প্রেমিক-প্রেমিকারা কেন আসে?
সে সিক্ত কণ্ঠে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো, জানি ভাইয়া।
- একি! কাঁদছো কেন তুমি?
হঠাৎ করেই রিমু আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, কী হয়েছে? কাঁদছো কেন তুমি?
- ভাইয়া, আমি নিরুপায় ছিলাম ভাইয়া। এছাড়া আমার কোনো পথ ছিল না। নিহান আমাকে ভালোবাসতো। যখন তাকে বিয়ের কথা বললাম। তখন সে বললো, আমি যদি তার কথায় এখানে ঘুরতে আসি। তাহলে সে তার বাবা মাকে বলে আমাকে বিয়ে করে নেবে।
- বুঝলাম না তোমার কথা।

সে একটু দম নিয়ে বলতে শুরু করলো, রাকিব ভাইয়া আমার আপন ভাই না। আমাকে তাদের পরিবার কুড়িয়ে পেয়েছিল। বাবা বেঁচে থাকা পর্যন্ত আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই ছিলাম। যেদিন বাবা মারা গেলেন, তার পরদিন থেকেই আমার উপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হলো। মা আর রাকিব ভাইয়া প্রতিরাতে একটা করে ছেলে নিয়ে আসতো বাড়িতে। তারপর তাকে আমার রুমে ঢুকিয়ে দিতো।

এটুকু বলেই সে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে কান্না করতে লাগলো। তারপর কান্না থামিয়ে আবারো বলতে শুরু করলো, আমার আর পতিতালয়ের বেশ্যাদের মধ্যে পার্থক্য ছিল শুধু স্থান এবং প্রবৃত্তির। বেশ্যারা পতিতালয়ে স্বেচ্ছায় নিজেকে বিলিয়ে দিতো। আর আমি নিজের বাড়িতে অনিচ্ছায়।

রিমুর থেকে এসব শুনে মাথায় রক্ত উঠে গেল আমার। রাকিব আমার ভাল একজন বন্ধু। কিন্তু তার মানসিকতা এতটা নিচু, ভাবতেই নিজেকে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করছে। কার সাথে বন্ধুত্ব করেছিলাম আমি!

আমি বললাম, তুমি এই বিষয়ে পুলিশকে জানাওনি? তুমি না কলেজে পড়ো?
সে কান্না করতে করতে বললো, রাকিব ভাইয়া বলতো এসব কথা যদি বাইরের কারো কানে যায়, তবে সে আর আম্মু মিলে আমাকে মেরে ফেলবে।

আমি রিমুর হাত ধরে বললাম, চলো আমার সাথে। রুবেলকে বললাম, দোস্ত আরেকদিন তোকে নিয়ে ঘুরবো। আজ চল।
.
রিমুকে বাড়িতে নিয়ে এলাম। তারপর আম্মুকে বললাম, আম্মু আজ থেকে এটাও তোমার মেয়ে। সেজুতিকে যেমন মাথায় করে রাখো। একেও তেমন মাথায় করে রাখবে।

পরদিন রিমুকে সাথে নিয়ে ভার্সিটিতে গেলাম। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেখি রাকিব সজীবদের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। আমি সোজা গিয়ে তার কলার চেপে ধরে কয়েকটা চড় থাপ্পড় দিলাম। যখন সে আমাকে একটা ধাক্কা মারলো। মাথাটা তখন পুরো গরম হয়ে গেল। ওকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলাম। আর বললাম, এখন তো সামান্য ডোজ দিলাম। সুস্থ হ আবার। তারপর তোকে পুরো ডোজটাই দেবো।
.
বেশ কয়েকটা বছর কেটে গিয়েছে। রিমু এখন অনার্স থার্ড ইয়ারে পরে। তাকে বিয়ের কথা বললে সে বলে, ভাইয়া আমি অনার্সটা শেষ করি।

তার অনার্স শেষ হলো। সে একটা প্রাইভেট ব্যাংকে জব পেল। আমি বললাম, এখন তো তোর অনার্স কমপ্লিট। এখন তো আর বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নেই।
সে লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বললো, হ্যাঁ।
আমি বললাম, কোনো ছেলে পছন্দ আছে নাকি? মানে কাউকে ভালোবাসিস কিনা?
- আমাদের ভার্সিটিতে একটা স্যার আছে। নাম, সাহেদ। উনাকে পছন্দ করি আমি।
- তিনি কি তোকে পছন্দ করেন?
- তা জানি না। তবে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো।
- আচ্ছা আমি আব্বাকে বলছি তাহলে।
.
আজ রিমুর বিয়ে। সাহেদকে আমি একান্তভাবে রিমুর সেই ভয়ংকর অতীত সম্বন্ধে অবগত করেছি। ছেলেটা সবকিছু মেনে নিয়ে আমার বোনটাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।

যাওয়ার সময় রিমু আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ কান্না করলো। এ কান্না দুঃখের নয়। বরং সুখের। সাহেদের সাথে হ্যাণ্ডসেক করার সময় তাকে বললাম, আমার বোনটাকে দুঃখ দিও না ভাই। এখন থেকে তুমিই তার সব।

সাহেদ আমার কাঁধে হাত রেখে বললো, চিন্তা করবেন না ভাই। রিমু এখন থেকে শুধু আপনাদের না, আমারও সম্পদ।

সাহেদ রিমুকে নিয়ে চলে গেলে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, বোন আজ থেকে তোর নতুন জীবন শুরু। মহান আল্লাহ সুবহানাহু তা'আলা যেন তোকে সুখে থাকার তৌফিক দান করেন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: একটা প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে পার্কে গেলে সমস্যা কি? তার পছন্দ অপছন্দ থাকবে না?

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৫৯

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা, আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।

২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৪৭

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন:
ব্লগার রাজীব নুরের সাথে একমত। একটা মেয়ে বিয়ের আগে পার্কে প্রেমিকের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ সময় কাটালে সেটাকে আমরা নৈতিক মনে করতে পারিনা, ঠিক আছে। কিন্তু এতে বাঁধাও দেওয়া যাবেনা যেহেতু প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েটির জীবনের চয়েসেসগুলো ভালো অথবা খারাপ তাকেই করতে হবে। ধর্ম যেমন কারো ওপরে চাপিয়ে দেওয়া যায়না, সমাজকেও চাপিয়ে দেওয়া যায়না। সবাই শুধু নিজের জায়গা থেকে নিজের পরিবারের ছোটদের উচ্চ মূল্যবোধ দিয়ে বড় করতে পারে, অন্যের পরিবারের মানুষকে গুঁতো দিতে পারেনা। বড় ভাইয়ের বন্ধুর এতটা অধিকার দেখানোটা সভ্যতার মধ্যে পড়েনা।

তারপরে "নায়ক" কে নায়ক দেখানোর জন্যে এবং নায়িকাকে সতী সাবিত্রী দেখানোর জন্যে গল্পে একটার পর একটা অদ্ভুত টুইস্ট আসতে লাগল।
অনেকে পালক মেয়েকে অত্যাচার করে তবে এইধরণের অত্যাচার করে সমাজে নিজের মান সম্মান রাকিব ও তার মা কেন খোয়াতে যাবে?
তারপরে নায়কের মা, ও পরিবারের কেউই আপত্তি করল না মেয়েটিকে নিজের কাছে রাখতে! এত সহজ?
মেয়েটির শেষে এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে হলো যার পাস্ট নিয়ে কোন মাথাব্যাথাই নেই!!!

ওপরের এতসব অবিশ্বাস্য ব্যাপারকে কয়েক প্যারার মধ্যে লেখার কারণে কেমন যেন তালগোল পেকে গিয়েছে লেখাটি। একটি ছোটগল্প লিখতে গেলে একটি বা দুটি টুইস্টই যথেষ্ঠ। আর আপনার গল্পের মতো কিছু লিখতে হলে অনেক পর্ব করে, প্রচুর জাস্টিফিকেশন, ও বিশ্লেষণ দিয়ে ঘটনার পেছনের ঘটনা বর্ণনা করতে হবে। যেমন নায়কের মা নিজেও পালক ছিলেন এজন্যে তিনি আপত্তি করেন নি বা নায়ক বাড়ির খরচ চালায় বলে সবাই তার কথা বিনা বাক্যব্যয়ে শোনে, সামথিং লাইক দ্যাট। গরুকে গাছে ওঠানোর দরকার হলে ওঠান কিন্তু যৌক্তিক কারণ তো দেখান; বলুন তো কিভাবে? কেন? কখন?

আপনার আগের একটি লেখা বেশ ভালো লেগেছিল, মনে হয়েছিল আপনি লিখতে পারেন, তাই এই মন্তব্যটি করা। নাহলে হয়ত করাও হতোনা।

আরো উন্নত হোক আপনার লেখনী! :)

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৫৮

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ দাদা আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য।

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:১৮

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: প্রথমত আমি দাদা না দিদি।
কিছু মনে করবেন না আপনাকে কিছু ফ্রি টিপস দিয়ে যাই সহব্লগার হিসেবে।

আপনি এভাবে প্রতিমন্তব্য করেন কেন? একই কথা সবাইকে কপি পেস্ট করার মানে কি? আমাদের মন্তব্যে ভ্যারিয়েশন থাকলেও আপনার প্রতিমন্তব্যে কোনই ভ্যারিয়েশন থাকেনা। আচ্ছা আমার মন্তব্যটির কথা বাদই দিলাম, ওটাতে শুধু কিছু মতামত ছিল। কিন্তু ব্লগার রাজীব নুর তো প্রশ্নই করেছেন, তার উত্তর দেবেন না? একটা লেখা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হতে হলে লেখার পাশাপাশি প্রতিমন্তব্যেও নজর দিতে হবে লেখককে।
নাহলে তো পারসোনাল ডায়েরীতেই সব লেখা যায়, ব্লগে বা অন্যকোন মাধ্যমে লেখা শেয়ার করার মানেই হচ্ছে নিজের লেখাটি নিয়ে সবার সাথে মত/ভাব বিনিময়, সেটাও লেখকের বড় শান্তির জায়গা। মিস করবেন না সেই আনন্দটাকে। :)

ধন্যবাদ।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২৪

শ্রাবণ আহমেদ বলেছেন: জ্বী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.