![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাদের মোল্লা ওরফে কসাই কাদেরের ফাঁসি চেয়ে শাহবাগ আন্দোলনের সূত্রপাত। কিন্তু এখন যে তা শুধু কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতেই আটকে নাই সেটা পরিস্কার। একটা দাবি থেকে চারটা, ছয়টা, সাতটা নানান রকম দাবি উঠছে। এইসব দাবি দাওয়ার বাইরেও দীর্ঘদিনের জমে থাকা বিভিন্ন দাবি ও প্রসঙ্গ উঠে আসছে, আন্দোলনের ভেতর এবং বাইরে থেকে। আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়েও নানান রকম প্রশ্ন এসেছে, উত্তর এসেছে, অভিযোগও এসেছে। কিন্তু দিনশেষে সত্য হচ্ছে এই যে আন্দোলনের কর্তৃত্ব এখন পুরোপুরি স্বতঃস্ফুর্ত জনতার হাতে। নানান মত ও দলের মানুষ এখানে নিজ নিজ জায়গা থেকে জমায়তে হচ্ছে, স্লোগানে, গানে এবং অন্যান্য সৃষ্টিশীল কায়দায় প্রতিবাদ করছে। জনতার অবস্থান এখানে জামাতের বিরুদ্ধে, জনতার প্রতিবাদ এখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে সরকার এবং প্রধান বিরোধীদলের সক্ষমতা ও সদিচ্ছার বিরুদ্ধে। জনতা এখানে প্রচলিত রাজনৈতিক তত্ত্ব এবং চর্চার বাধ ভেঙে নিজেদের মতো করে তত্ত্ব এবং চর্চা নির্মান করছে। জনতা জামাতের ধ্বংস চাইছে, জনতা সরকারের উপর চাপ দিচ্ছে, জনতা চাপ দিচ্ছে বিরোধীদলের উপর। শাহবাগে জনতা স্বাধীন। জনতা শাহবাগে সবকিছু ভেঙেচুরে নতুন করে নির্মান করতে চাইছে। শাহবাগে কাদের মোল্লা ও অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীদের রূপকে জনতা যে আসলে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতিকেই ফাঁসিতে ঝুলাতে স্লোগান দিচ্ছে সেটা আন্দোলনে উপস্থিত থাকলে সহজেই বোঝা যাবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে জামাত বিরোধী এবং আওয়ামীলীগ ও বিএনপির রাজনীতির বিরুদ্ধে অনাস্থা ও প্রতিবাদের চর্চা বাঙলা ব্লগ ও ফেসবুক কমিউনিটিতে দীর্ঘদিনের। এই প্রতিবাদের ভাষা এখন মূল ধারার গণমাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে, ধিরে ধিরে জায়গা করে নিচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এবং বাস্তব জগৎ এখন মিলেমিশে একাকার হয়ে নতুন ভবিষ্যত নির্মান করতে চাইছে। এই ভবিষ্যত নির্মানের উপরই নির্ভর করবে এই আন্দোলনের সফলতার মাত্রা। শাহবাগে থমকে গেছে বাংলাদেশ। শাহবাগ থেকে এরপর বাংলাদেশ যখন চলতে শুরু করবে ততক্ষনে বাংলাদেশের ঘাড় থেকে অনেক কলঙ্কের বোঝাই নেমে যাবে, এবং সেই বাংলাদেশের গতি হবে অপ্রতিরোধ্য।
শাহবাগ পালটে দিয়েছে বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতির তাবৎ মেরুকরণ, শাহবাগ পালটে দিতে পারে বাংলাদেশ ঘিড়ে চলতে থাকা তাবৎ আন্তর্জাতিক রাজনীতির মেরুকরণ। কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে শাহবাগ আন্দোলন শুরু। শুধু একটা রায় নিয়ে জনতার এমন আবেগ কেনো? কারন এখানে কাদের মোল্লার রায় কোন বিচ্ছিন্ন বিষয় না, এর সাথে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির দীর্ঘদিনের ইতিহাস জড়িত, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাস জড়িত। ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত যে মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম সেই মুক্তিসংগ্রাম ছিনতাই হয়েছে পরে। এই মুক্তিসংগ্রামের চেতনাকে খুন করেই এদেশে সামরিক শাসন এসেছে, আর সে সামরিক শাসনের ছত্রছায়াতেই মুক্তিসংগ্রামের বিরোধীতাকারী যুদ্ধপারাধীরা এদেশের রাজনীতিতে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। এই জায়গা করে নেয়াটা সহজ ছিলনা। প্রথম থেকেই বাধা ছিলো। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের উত্থান হয়েছে নব্বইএর দশকে সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নিজেকে নির্মান করতে চেয়েছে ৫২ থেকে ৭১এর মুক্তিসংগ্রামের চেতনাতেই। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি এই দুইদলই সে সময় এই প্রতিজ্ঞা করেছে। দুটি দলই নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দল হিসাবে দাবি করে। সেই দাবি করতে গিয়ে এই দুটি দল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং চেতনায় নিজেদের মালিকানা ও দখলদারিত্বের লড়াইয়ে লিপ্ত নব্বই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত পুরো গণতান্ত্রিক সময়টাতেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের ফশল এই দুইটা জিনিসের মালিকানা নিয়ে এই বড় দুই দলের লড়াইয়ে যা হয়েছে তা হলো যে জনগণের হাত থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ফশলের মালিকানা চলে গিয়েছে। পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পালটে গেছে, বারবার। জনগণ শব্দটাকে রাজনৈতিক দলগুলো বারবার ধর্ষন করেছে, নিজ নিজ স্বার্থের জায়গা থেকে ব্যাবহার করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মালিকানা হারানো জনগণ একসময় নিজের অস্তিত্বের মালিকানাই হাড়িয়ে ফেলেছে মূল ধারার রাজনীতির নির্বাচনকেন্দ্রীক অপচর্চায়।
সামরিক শাসন বিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের পথচলার শুরু। আর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে প্রথম যে বড় গণদাবী হাজির হয়েছিলো তা হলো হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে এই আন্দোলন সেসময় প্রবল সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছিলো। দলমত নির্বিশেষে এই আন্দোলন সেইসময় পুরো জনতার আন্দোলন হতে পারতো। কিন্তু তা হয়নাই। ক্ষমতার মসনদের দখলদারিত্ব আর নির্বাচনী রাজনীতির অপচর্চায় এই আন্দোলনের মালিকানাও মানুষ হাড়িয়ে ফেলেছিলো। একানব্বই নির্বাচনে বিএনপির কৌশলগত ঐক্য এবং তারপর ছিয়ানব্বই নির্বাচনে জেতার জন্যে সে সময় যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিচিত জামাত ইসলামের সাথে আওয়ামীলীগ যে আন্দোলনের ঐক্য গড়ে তুলেছিলো তা প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে জামাতকে একধরণের রাজনৈতিক বৈধতা প্রদান করে। আর সে বৈধতা পরিপূর্ণ রূপ পায় ২০০১এর নির্বাচনে বিএনপির সাথে জামাতের নির্বাচনী ঐক্যের মধ্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের মালিকানা নিয়ে প্রধান দুই দলের কাঁদা ছোড়ছুড়ি মূলত ক্ষমতার মসনদ নিয়ে তাদের কাড়াকাড়ির অস্ত্র। জনতার আবেগ, চেতনা এবং দাবির বদলে প্রায় ১৫ বছরের গণতন্ত্রের নামে স্বৈরতন্ত্র এবং সামন্তবাদী রাজনৈতিক চর্চায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গটা একসময় পরিণত হয়েছিলো নেহায়েতই নির্বাচনী সমিকরণে। একদলের কাছে জামাত ভোটব্যাংক এবং আরেক দলের কাছে রাজনৈতিক বিরোধীতা ও নির্বাচনের ইস্যু। এই অবস্থার পরিবর্তন আসে ২০০৬ সালে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে যে সামরিক শাসন সে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সেসময় মূলত তরুন প্রজন্মই জেগে উঠেছিলো। একিসাথে সেই প্রজন্ম ধারণ করে নিয়েছিলো জাহানারা ইমামের আদর্শ, রাজাকার বিরোধী চেতনা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি। তারও আগে এই প্রজন্ম চারদলীয় জোটের আমলের শেষদিকে এসে কানসাট, শনীরআখড়া, ফুলবাড়ির গণআন্দোলনের চেতনায় উজ্জিবিত হয়েছে। সেই চারদলীয় জোটের আমল থেকে শুরু করে এখন এই ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোন গণ আন্দোলনেই নেতৃত্ব দিতে পারেনি বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল, ক্ষমতার দখলদারিত্ব নিয়ে তাদের সহিংস আন্দোলনগুলোকে অনেক আগেই জনগণ প্রত্যাক্ষান করেছে। টাকা খরচ করে এবং ক্যাডার বাহিনী মাঠে নামিয়েও কোন আন্দোলন এখন আর এই দুই দল জমাতে পারেনা। সামরিক-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়টাতেই আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবির যে আন্দোলন সংগ্রাম তাতে নিজেদের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছে তরুন প্রজন্ম। তরুন প্রজন্মই নিজেদের কাধে করে এই আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে এসেছে আজকের এই ২০১৩ সালে, এই আন্দোলন তারা চালিয়েছে ব্লগে, ফেসবুকে এবং রাজপথে। এর ইতিহাস খুব স্পষ্ট। ২০০৯এর নির্বাচনে তরুনদের এই দাবিপুরণের আশ্বাস দিয়েই আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এসেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে কতটুকু সৎ সেই প্রশ্ন প্রথম থেকেই ছিলো, যেহেতু ঈতিপূর্বে তারা এই ইস্যুকে নির্বাচনী ইস্যুর কাছে হাড়িয়ে যেতে দিয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই ইস্যুতে বা বারবার তরুন প্রজন্মের আশা আকাঙ্খা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং একমাত্র নির্বাচনী ভোট ব্যংক হিসাবেই জামাতের সাথে নিজেদের ঐক্য নষ্ট করতে চায়নি। আমরা ঈতিপূর্বে দেখেছি ১৮ দলীয় জোটের ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট তৈরি করার চেষ্টা করা হলেও ছাত্রদল চায়নি শিবিরের সাথে কোন রাজনৈতিক ঐক্য করতে। এমনকি শাহবাগের এই আন্দোলনেও বিএনপির হাই কমান্ডের নানারকম স্বিদ্ধান্তহীণতা সত্ত্বেও দলটির তরুন সমর্থকদের একটা বড় অংশই আন্দোলনের মাঠে অথবা বাইরে থেকে এই আন্দোলনের পক্ষে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করেছে।
কাদের মোল্লার রায় ঘোষনার পর প্রথম যে তরুনরা রাস্তায় নেমেছে, তাদের পরিচয় তারা ব্লগার, অনলাইন একটিভিস্ট। তাদের সমর্থন জানিয়ে নেমেছে বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠন, আন্দোলনকে গতি দিয়েছে এই ছাত্ররাই। এখন সে আন্দোলন পরিণত হয়েছে সকল শ্রেণী, বয়স, পেশা ও পরিচয়ের তাবৎ জনতার আন্দোলনে। এই আন্দোলন এমন একটা সময়ে শুরু হলো যখন সারা দেশে তখন সহিংস অরাজকতা কায়েম করেছিল জামাত-শিবির। বিএনপির অবস্থান তখন প্রবলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ এবং আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি মানুষের মনে জন্ম নিয়েছে অনাস্থা। আর এইসব কিছুরই ফলাফল শাহবাগে জনতার এই সরব উপস্থিতি। এই আন্দোলন যেইদিন থেকে শুরু হয়েছে সেইদিন থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রাজনীতির উপর সকল দলীয় রাজনীতির দখলদারিত্ব হাড়ানো শুরু হয়েছে। ২০০৬ সালে থেকে একটু একটু করে এই চেতনার মালিকানাটুকু তরুনরা ধারণ করছিলো, এখন প্রবল বেগে এই মালিকানাটুকু তারা ছিনিয়ে নিয়েছে। সেই সাথে তারা হাত বাড়িয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মালিকানায়, যেই চেতনার প্যাটেন্ট নিয়ে প্রধান দুই দলের মারামারি। এই আন্দোলন যতো দীর্ঘায়িত হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তরুন প্রজন্মের মালিকানা ততো সূদৃঢ় হবে। ইতিমধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান ‘জয় বাঙলা’ তারা ছিনিয়ে নিয়েছে, স্লোগানটির উপর আওয়ামীলীগ তার একক মালিকানা হাড়িয়েছে। একটু একটু করে এই দুই দলের হাত থেকে তরুনরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মালিকানাই ছিনিয়ে নেবে, তুলে দেবে জনতার হাতে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জনতার মালিকানা প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে তরুনদের সাথে যারা থাকবে তারাই বাংলাদেশে টিকে থাকবে, যারা থাকবেনা তারা হাড়িয়ে যাবে।
শাহবাগে এখন যে প্রজন্ম লড়াই করছে তার সাথে আমাদের জাতীয় রাজনীতির নেতৃত্বের বড় ধরণের কিছু ফারাক আছে। এই প্রজন্মের জন্ম অথবা বেড়ে ওঠা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যা নেহায়েত ফাপা বূলি এই প্রজন্মের কাছে তা চেতনা এবং আদর্শের বিষয়। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই এই প্রজন্ম ব্লগে এবং ফেসবুকে যুদ্ধাপরাধীদের দোষরদের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলেছে, তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে বয়কট করেছে। এবং এখন গণতান্ত্রিক কায়দাতেই এই প্রজন্ম রাজপথে আন্দোলন করছে। তারা চাইছে একি কায়দাতে যুদ্ধাপরাধীদেরকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে পুরোপুরি বয়কট করা হোক। এক্ষেত্রে তারা আপোষ করবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছে। আপোষহীণ যে গান এবং স্লোগান তারা ছুড়ে দিচ্ছে তা খুব অল্প সময়ের মধ্যে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পরেছে। যে চেতনার জাগরণ তারা ঘটিয়েছে তা আরো দীর্ঘদিন বাংলাদেশকে পথ দেখাবে।
যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মেরুকরণও এখন পাল্টাতে বসেছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করেনা। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল জামাত ইসলামের মতো একটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলকে বিভিন্ন সময়ে পেলে পুষে বড় করলেও এমনকি সরাসরি নিজেরাও নানাভাবে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা সত্ত্ব এদেশের জনগণের ছোট্ট একটা অংশই জামাতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সমর্থক। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ইসলাম ধর্মের অনুসারী। এদেশে ইসলামের বিকাশ ও বিস্তারের যে ইতিহাস সেই ইতিহাস বর্ণবাদ বিরোধী, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী। এদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জন্ম ও বিকাশ ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগে, সাম্রাজ্যবাদের ডানার নিচে। হিন্দুত্ব এবং মুসলমানিত্ব নিয়ে জন্ম নেয়া উভয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ক্ষেত্রেই এটা সত্য। বর্তমান দুনিয়ার নয়া ঔপনিবেশিক বাস্তবতায়ও এই ধারা অব্যাহত আছে। ইতিহাস বলেযে শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং সারা পৃথিবীতেই ইসলামকে কেন্দ্র করে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তার উত্থান ঘটেছে সাম্রাজ্যবাদের ছত্রছায়ায়। তালেবান, আল কায়েদের জন্ম হয়েছে সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়। স্বাধীন বাংলাদেশে জামাত ইসলামের টিকে থাকার পেছনেও সাম্রাজ্যবাদের ভুমিকা অত্যন্ত শক্তিশালী। একাত্ত্বরের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিলো। সাম্রাজ্যবাদী আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপের কারণেই পাকিস্তানী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি বারবার থমকে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও এই চাপ অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি টিকে থাকলে সন্ত্রাসের জুজু দেখিয়ে নানানরকম মাতবরি এবং আগ্রাসনের সুবিধা হয়, এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তাই বর্তমান দুনিয়ার নয়া ঔপনিবেশিক শক্তির আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্যতম অস্ত্র। এই রাজনীতি তার আগ্রাসনের বৈধতা প্রদান করে। ঠিক যেমন বর্তমান সরকারের আমলে একের পর এক দুর্নিতী, খুন, গুম ইত্যাদি অনাচারের বৈধতা প্রদান করতে আওয়ামীলীগ এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জুজু দেখিয়ে এসেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে এখনো যে আন্তর্জাতিক চাপ আমরা দেখি তা অত্যন্ত সচেতনভাবেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে চায়। এখানে বারবার নিরপেক্ষতার প্রশ্ন এসেছে, প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল, প্রশ্ন তুলেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। অথচ ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যতো বড় বড় যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে তার সবগুলোই হয়েছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে। যেখানে একটি পক্ষ এবং বিপক্ষ আছে নিরপেক্ষতার প্রসঙ্গ সেখানে অবান্তর। গত দশকেও আমরা দেখেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আগ্রাসনের পরে খুবি অল্পসময়ের মধ্যে নানান যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাদ্দাম হোসেইনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে, এইক্ষেত্রে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক বিচারের তারা তোয়াক্কা করেনি। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। মৃত্যুদন্ড এদেশের আইনে আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের আইনেও আছে। এদেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তাদের গণতান্ত্রিক রায় জানিয়ে দিয়েছে ২০০৯ সালেই। সেই রায় বাস্তবায়িত হওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের অনাস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে বলেই এখন তারা রাজপথে নেমেছে, এবং প্রবলভাবেই নিজেদের রায় জানাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কেন্দ্র করে যেকোন ধরণের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অপতৎপরতার বিরুদ্ধেও তাই জনগণ অবস্থান নিয়েছে শাহবাগে, এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
শাহবাগের আন্দোলন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, সেইসাথে চাই এই ইস্যুতে তাবৎ রাজনৈতিক অপচর্চার সমাপ্তি। জনগণ এখানে সংগবদ্ধ হচ্ছে, শক্তিশালী হচ্ছে। ব্লগ এবং ফেসবুক কেন্দ্র করে এর আগেও বাংলাদেশে অসম বৈদেশিক চুক্তি, শিক্ষার্থীদের অধিকার, সাম্প্রদায়িকতা, শ্রমিকের অধিকার ইত্যাদি ইস্যুতে আন্দোলন সংগঠিতে হয়েছে যা শেষপর্যন্ত রাজপথে আত্মপ্রকাশ করেছে। এইসকল আন্দোলনের শক্তিও জমা হয়েছে এই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির আন্দলনে। শাহবাগের জনতা তাই শুধু যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চায়না, সে চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে তাবৎ অন্যায় ও অশুদ্ধ রাজনীতির ফাঁসি। শুদ্ধ গণতান্ত্রিক রাজনীতির মশাল নিয়েন নতুন প্রজন্ম এরপরে সামনে আগাবে। সেই মশালের
আলোয় বাংলাদেশ আলোকিত হবে, সেই আলোয় বাংলাদেশের তাবৎ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্ধকার দূর হবে
তার আগে পর্যন্ত জনতা রাজপথে থাকবে। এক্ষেত্রে কোনরকম আপোষ জনতা মেনে নেবেনা।
২| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৮
অপর্না হালদার বলেছেন: চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ২ শিবিরকর্মী আটক
৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২০
দন্ডিত বলেছেন: সেদিন ইয়াং নাইটে আপনেরে ফুন দিতে চাইছিলাম। লাইন পাই নাই। পুস্ট সম্পর্কে বলার আগে সেইদিনের যা কইতে চাইছিলাম সেইটা একটু খুইলা বলি।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল, বিচার প্রক্রীয়া ইত্যাদি নিয়ে আমাদের অনেক অজ্ঞানতা আছে। সেই দলে আমি নিজেও অন্তর্ভূক্ত। আমি মাত্র ১০ দিন আগে জান্তে পারছি যে "অপরাধটা আন্তর্জাতিক"। পরে চিন্তাভাবনা করে দেখলাম যখন থিকা ট্রাইবুনাল গঠন হইছে তখন থিকা নিজের মধ্যে একটা গা ছাড়া ভাব আইসিলো। বিচার ঠিকঠাক হইব এইটাই ভাবছি। অথচ মামলাগুলা কেমনে চলতেছে , প্রসিকিউশান টিমের কোয়ালিটি কি, তদন্ত সংস্থার ফান্ড কেমন কিছুই খোজ খবর করি নাই। একই ব্যাপার সম্ভবত ঘটছে আরো অনেকের ক্ষেত্রে। গত কয়েকদিন বইমেলা ঘুইরাও এই সম্পর্কে কোন প্রামাণ্য বই পাইলাম না। সবমিলিয়ে আমাগো পারফর্ম্যান্স খুব এলার্মিং। শুনতে পাইলাম এই খাতে সরকারের বাজেট মাত্র ৩০ কোটি টাকা। এটি খুব কম। ন্যাশনওয়াইড তদন্ত কর্তে অনেক বড় তদন্ত দল দরকার, অনেকের কাছে ব্যাক্তিগত সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট থাকতে পারে যা হয়ত তদন্তে কামে লাগত। তাছাড়া সাক্ষীদের সেফটির ব্যবস্থা করা। পাব্লিক রিলেশন অফিস থাকন উচিত। যাই হোক এইসকল দাবী আন্দোলনের দাবীগুলোর সাথে সংযুক্ত করে দাবীগুলার ভাবসম্প্রসারন কইরা একটা ম্যানিফেস্টো টাইপ বানান যায় কিনা চিন্তা করা দরকার।
পুস্ট ভালো হইছে।
জয় বাংলা।
৪| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সকল আন্দোলনের শক্তিও জমা হয়েছে এই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবির আন্দলনে। শাহবাগের জনতা তাই শুধু যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চায়না, সে চায় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে তাবৎ অন্যায় ও অশুদ্ধ রাজনীতির ফাঁসি। শুদ্ধ গণতান্ত্রিক রাজনীতির মশাল নিয়েন নতুন প্রজন্ম এরপরে সামনে আগাবে। সেই মশালের
আলোয় বাংলাদেশ আলোকিত হবে, সেই আলোয় বাংলাদেশের তাবৎ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির অন্ধকার দূর হবে
তার আগে পর্যন্ত জনতা রাজপথে থাকবে। এক্ষেত্রে কোনরকম আপোষ জনতা মেনে নেবেনা।
++
৫| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৬
অনিক আহসান বলেছেন: পারভেজ ভাই এখনি সময় একটা পরিস্কার ম্যানিফেস্টো তৈরী করার। যা বাহুল্য বর্জিত অথচ সুনিদৃস্ট হবে। যাকে লক্ষ্য করে এই আন্দোলনকে চুড়ান্ত পরিনতির দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।
৬| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১৫
শের শায়রী বলেছেন: অসাধারন লিখছেন। ফেবুতে শেয়ার দিলাম। অভিনন্দন
৭| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:০১
হাবিব০৪২০০২ বলেছেন: ভাই একটা সত্যি কথা বলি এই কয়দিনও আমি কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দে ছিলাম আন্দোলনের ফল নিয়ে। আপনার এই পোষ্ট পড়ে সব ক্লিয়ার হয়ে গেল।
আন্দোলন সফল হোক। জয় বাংলা
৮| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১০
হাবিব০৪২০০২ বলেছেন: ফেবুতে শেয়ার দিলাম
৯| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০৩
বাংলার হাসান বলেছেন: বিশিষ্ট কবি ছাগু কিলার বলেছেঃ- যেখানে দেখিবে ছাগু তাহাদের মূখখানা পাবলিক টয়লেট মনে করিয়া করিবে হাগু।
৭১ এর হাতিয়ার
গর্জে উঠো আর একবার
১০| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:৩৯
তন্ময় ফেরদৌস বলেছেন: এই লেখাটার খুব দরকার ছিলো পারভেজ ভাই।
১১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:২৬
চলতে ফিরতে দেখা বলেছেন: এই পৃথিবী যতদিন থাকবে ততদিন ধর্মও থাকবে সাথে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিও থাকেবে।
"তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।
তিনি তাঁর রসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্যধর্ম নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর বিজয়ী করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। "-সুরা আস ছফঃ ৮-৯
যে, জাতি যখন ধর্ম থেকে বিমুখ হয়েছে তখনই সেই জাতির উপর নেমে এসেছে পরাজয়, গ্লানি, যুলুমের হাতিয়ার। তাই ধর্ম বাদ দিয়ে কোন কিছু চেন্তা করা বিফলতা ছাড়া আর কিছু নয়।
ভাই একমাত্র ধর্মীয় শাসনই পারে মানুষকে সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার থেকে রক্ষা করতে। তাই আসুন আমরা ধর্মকে সঠিকভাবে জানি সে মতে আমল করার চেষ্টা করি, নিজের জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে।
পাশাপাশি এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যে, কেউ যেন এই ধর্মকে নিয়ে অন্যায় আচরণ করতে না পারে।কাউকে যুলুমের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে। সে দিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
সাদ্দাম পরবর্তী ইরাক এখন বুঝতে পারছে, সাদ্দাম ভাল ছিল না আমেরিকা!!
১২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৩
২০১৩ বলেছেন: বিচারে ফাসি চাওয়ার কি দরকার, কুত্তারা রাস্তায় কামড়ের জন্য দাবী করেনা সরাসরি কামড়ে দেয়। ক্ষমতা আছে ব্রাশ ফায়ার করে দাও যেমন দিছিল মজিবার রে,
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৪
সাইক চৌধুরী বলেছেন: ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধের দাবীটা আরো জোরালো করতে হবে। নিঃসন্দেহে এই বিপ্লব আমাদের রাজনীতিবিদ দের জন্য এক বড় শিক্ষা যা ১/১১ থেকেও অনেক অনেক গুণ শক্তিশালী।