নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি স্বপ্ন দেখি

হাজারটা স্বপ্ন একটি বাস্তবতাকে বদলাতে পারে না

বোধহীন স্বপ্ন

কিছুই ভালা লাগে না।

বোধহীন স্বপ্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবাঞ্চিত মৃত্যুপুরীতে একা

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩২

তার বের হবার কোনো কথা ছিল না আজ । একে তো খা খা রোদ, ভোর না পেরোতেই গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু, সেই গরমে লোকাল বাসের সীটে বসে গরম হাওয়া খেতে কার ভালো লাগে? তার উপর আবার আজ হরতাল । ভেবেছিল ঘরে বসেই কাটিয়ে দিবে দিনটা । কিন্তু আসলাম ভাইয়ের জরূরী তলব । ভাই ডেকেছেন যখন, কোনো দরকারেই ডেকেছেন, তিনি ফাও কথার মানুষ না । তাই, যেতেই হচ্ছে, ভাইকে অখুশি করার ইচ্ছে নেই ।

চলতে চলতে সে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে । হরতাল বলে কথা, কখন পিকেটারের কবলে পরেত হয় কে বলতে পারে । হরতাল ডাকা হয়েছে আজ, অথচ পিকেটিং শুরু হয়েছে গতকাল সন্ধ্যার আগে থেকেই । একে আগুন দেয়া হয়েছে একেকটি বাসে ও গাড়ীতে । মারাও নাকি গেছে একজন ।

তাই যেতে যেতে সবদিকেই নজর রাখছে সে । পাশের আধভাঙ্গা জানলা দিয়ে তাকিয়ে শহরের একেকটা ভবন আর শপিং কমপ্লেক্স দ্রুত পিছে পরতে দেখছে, আর দেখছে কোনো পিকেটার হামলা করে বসে কিনা ।

এই পথটা বেশ রিস্কি । মেইন রোডের পাশে অনেকগুলো গলি । এইসব গলি থেকেই হঠাত্‌ হঠাত্‌ তারা বার হয়ে আসে আর ইট-পাথর ছুড়ে মারে গাড়ির দিকে, যেটাই সামনে পায় না কেন । আজকাল তো ইটের বদলে মারা হচ্ছে ককটেল । তাই সতর্ক চোখ রেখে চলেছে সে, ঝামেলা দেখলেই যেন তড়িত ব্যাবস্থা নেয়া যায় । এই তো সেদিন মাত্র দেখে এসেছে এরকম একটি ঘটনা, কোথা থেকে কয়েকটা যুবক বয়সী ছেলে ছুটে এসে প্রথমে যাত্রী নামানোর জন্য থেমে যাওয়া একটা বাসে ঢিল ছুড়ল । তারপর অল্পবয়সী একটা ছেলে কি একটা জিনিস ছুড়ে দিতেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠে । হুড়মুড় করে বের হয়ে গেল সবাই বাস থেকে । এমনটা যে এখনো ঘটবে না এটা কে বলতে পারে? তাই কোনো স্টপেজে থামলেই ভয়ে তথস্থ হয়ে যাচ্ছে । তারপর বাস ছেড়ে দিলেই হাফ ছেড়ে বাঁচে ।

খেয়াল করে দেখল শুধু যে সে নিজেই ভয়ে আছে তা না । সামনের দিকে এক যাত্রি একবারও জানলার পাশে বসছে না, সবসময় একটু দূরত্ব বজায় রাখছে । যদি গাড়ির দিকে কিছু ছুড়ে মারা হয়, তা থেকে বাঁচার চেষ্টা ।

কিন্তু তবুও কি রক্ষা হয়? এইতো সেদিন একটা মিনিবাসে ইট ছুড়ে মারলে ফুল স্পিডে চলতে থাকা গাড়িটা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে উল্টে পরে যায় । তাদের বাসটা যেই গতিতে চলছে, তাতে এটাও যে উলটে যাবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? তখন কি করবে তারা?

পিকেটাররা তো চালকদেরও তো রেহাই দেয় না, চালক বা যাত্রীসহই একেকটা অটোরিক্সা ভেঙ্গে দিচ্ছে ।



কল এসেছে, আসলাম ভাইয়ের । তাই চিন্তায় বাঁধা পরে । রিসিভ করে বলে, "হ্যা ভাই, কন?"

অপ্রান্তে আসলাম ভাই,"মিলন, আইতাছো তো?"

"এই তো ভাই, বেশিক্ষণ লাগব না । রাস্তা ফাকাই আছে ।"

"আচ্ছা আসো।"

লাইন কেঁটে গেল ।

এই অবসরে যাত্রীদের দিকে খেয়াল করল মিলন । ঠিক পিছনের সীটে তিনটা যুবক বসেছে । হরতাল নিয়ে রসালো আলোচনা চলছে তাদের মধ্যে । তারা একেকটা সহিংসতার কথা বলছে আর হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে । এসবের মানে কি? এগুলো কি মজার কোনো ব্যাপার? একটা ক্ষীণ সন্দেহ তার মাথায় এল, এরা এইসব দুস্কৃতিকারীর একজন নয়তো? কে বলতে পারে, হয়তো তারা প[ইকেটিং এর জন্য রওনা দিয়েছে । তা হরতাল পালন যখন করবেই, বাসে উঠেছে কেন? হরতালও করবে, আবার গাড়ি চলার সুবিধাও নিবে? কিছুদিন আগে হরতালের আগের রাতে রহস্যজনকভাবে আগুন ধরে এক বাসে । পিছনের সীটে হঠাত্‌ আগুন ধরে যায়, মারা যায় একজন । তা এ আগুন তো নিজে নিজে লাগেনি, কেউ নিশ্চই সবার অগোচরে লাগিয়ে রেখে চলে গেছে, পরে তা ছড়িয়ে গেছে । এরাও এ ধরণের কিছুর পরিকল্পণা করে আসেনি তো ? নজর রাখতে হবে, সাবধানে.।।।

অথবা কে বলতে পারে, পিছনে হয়তো আগুন লেগেই আছে, বাইরে । তারা ভিতরে বলে এখনো টের পাচ্ছে না । গাড়ির স্পিডে বাতাসের ফলে তা নিবে যেতে পারে কি? নাকি গাড়ি থামলেই সেটা আবার জ্বলে উঠবে না তো??



এসব আকাশ-কুসুম ভাবতে ভাবতেই মিলন তার গন্তব্যে পৌছে যায় । মুহুর্তেই এক ছুটে বের হয়ে আসে সে । খুশি খুশি মনে সে যেভাবে দু হাত ছড়িয়ে দেয় যে মনে হয় সে স্বাধীনতা পেয়ে গেছে । যাক, এখন আর চিন্তা নেই, কোনো অসুবিধা ছাড়াই সে পৌছে গেছে, পিকেটাররা তার টিকিটিরও সন্ধান পাবে না ।

এখন তাকে রাস্তা পেরোতে হবে । হরতালে ফাকা রাস্তা নিমেষেই পার হয় মিলন । ডুকে পরে একটা পাকা রাস্তার গলিতে ।

কিছুদূর যাবার পর একটা গার্মেন্টস্‌ ভবন পরে । ওখান থেকে বিকট শব্দ হচ্ছে মেসিনের । বিরক্তিকর এ শব্দটাকে পাশ কাঁটাতে চাইল সে দ্রুত । এসময় মেসিনের শব্দ ছাপিয়ে উপর থেকে একটা হই হই চিত্‌কার শোনা যায় । মিলন একটু যেন থমকে দাঁড়ায় । কে যেন আর্তনাদ করে উঠে, "ভাইঙ্গা গেল রে ভাইঙ্গা গেল..."

হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পরে গার্মেন্টস্‌ ভবনটি, মুহুর্তেই ভবনের জায়গায় তৈরী হয় একটি ফাকা স্থান । মিলন তা দেখার সুযোগ পায় না, ভবনের ধ্বংস্তুপের নিচে চাঁপা পরেছে সে ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:৫৭

অদ্ভূত সেই ছেলেটি... বলেছেন: অতি সুন্দর...

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৮:২১

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: ধন্যবাদ...

২| ৩০ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৭

সানফ্লাওয়ার বলেছেন: ভয়াবহ ঘটনাটা যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম

৩০ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন: কি বলেন ! এতটা তো আশা করি নাই :-*

৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:১৩

হৃদয় এর স্পন্দন বলেছেন: ২ নং মন্তব্যের সহিত সহমত হয়ে বলছি এর আগে যেদিন গল্প টা পড়েছিলাম সেদিন সামুর মডুরা আমায় কমেন্ট করতে দেয়নি, আমি তখনো সাধারন ব্লগার ছিলাম না, এখন মন্তব্য করতে পারি, আসলেই আমি ব্লগার না, আমার ভিতর লেখার মত সুপ্ত প্রতিভা নাই, হ্যারে ২ নং মন্ত্যবের সহমত আমিও যেদিন পরেছিলাম সেদিন নিজেই কঠিন ঘটনা টা অনেক টাই চোখে দেখেছিলাম

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:৩৪

বোধহীন স্বপ্ন বলেছেন:

কি যে কস্‌... এর চেয়ে আরো ভয়াবহ লেখাও পড়ছি । পড়ে শুধু হিংসা লাগে । তুইও কিন্তু অনেক ভালো লেখছ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.