নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুফি ফারুক এর ব্লগ

জোর হোক শুধু গলার আওয়াজ, গায়ের জোরটা তোলাই থাকুক

সুফি ফারুক

বিশ্বাস রাখি - মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশে। চাই - প্রযুক্তি নির্ভর দক্ষ পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশ। এবং সেই দিন বদলের সংগ্রামের সাথে থাকতে। কাজ - পলিসি, আইসিটি, উদ্যোক্তা, কারিগরি শিক্ষা নিয়ে। করি - পথ দেখা-দেখানো। ধাক্কা দিয়ে শুরু করানো। সরকারি ও বেসরকারি - অবকাঠামো ও নীতিমালা নিয়ে ঠেলাঠেলি। হাতিয়ার - লেখালেখি, প্রশিক্ষণ, বক্তৃতা, রেডিও-টেলিভিশনে অনুষ্ঠান, পেশাজীবী ও গন-সংগঠন, বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রাজনীতি এবং যখন যা লাগে।

সুফি ফারুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা-কে নিয়ে তীর্থ যাত্রা (পর্ব ২)

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:২৩

যখন মসজিদুল হারামের পাশে আমাদের জন্য নির্ধারিত বাসার সামনে পৌঁছলাম, তখন অনেক রাত। একটু তন্দ্রা মত এসেছিল। আমাদের গাইডের হ্যান্ড মাইকের আওয়াজে ঘুম ভাঙল। সব হাজি গাড়ি থেকে বেরিয়ে পাশাপাশি দাঁড়ালাম। সিদ্ধান্ত হল - সকালের নাস্তার পর আমরা একসাথে কাবায় যাব। ওখানে তওয়াফ, সায়ি ও নামাজ শেষ করে বাইরে আসব। এরপর চুল ছেঁটে এহরাম ভাঙ্গার মাধ্যমে প্রথম ওমরা পালন শেষ হবে। গাইড সবার রুমের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে ফজরের নামাজ নিজের ঘরে পড়ে নিতে পরামর্শ দিল।



আমি কাবা দেখার জন্য চরম উত্তেজিত ছিলাম। তখনই একবার ঘুরে আসতে চাই বলে গাইডকে জানালাম। সে হেসে বলল – জীবনের প্রথমবার যখন দেখবেন, তখন দিনের আলোতে দেখেন।



নতুন বিছানায় ঘুম তেমন একটা হল না। শেষ রাতে চোখ বুজতেই ফজরের নামাজের জন্য মা ডেকে দিলেন। গরম পানি দিয়ে একটা ভাল গোসল দিয়ে ক্লান্তি কিছুটা কমলো।



নামাজ শেষ করে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ অন করতেই তাজ্জব। একটা ওপেন ওয়াইফাই সিগনাল পাওয়া যায়। সিগনাল স্ট্রেংথ ভালো। কানেক্ট করা চেষ্টা করতেই কানেক্ট হয়ে গেল, এন্টি ভাইরাসটাও মোড়া দিয়ে আপডেট হয়ে গেল। তার মানে ইন্টারনেট কাজ করছে !!! খবরে অবশ্য দেখেছিলাম হাজিদের ওয়াইফাই সুবিধা দেয় হবে। তবে কাবা থেকে একমাইল দুরে সেটা আশা করি নাই। মনটা দ্বিগুণ ভাল হয়ে গেল। মোবাইলে রোমিং পার্টনার মবিলি সিলেক্ট করলাম। ওয়েলকাম, বিভিন্ন অফার সহ ৭/৮ টা এস এম এস পেলাম। আরবিতেই বেশিরভাগ। কিছুক্ষণ পরে ইনবক্সে পলা আর ভাইয়ার মেসেজ পেলাম।



সকালে বেশিক্ষণ খালি পেটে থাকতে পারি না। ভাবলাম - হাজিদের জন্য নির্ধারিত নাস্তা হয়ত ৮ টার আগে পৌঁছাবে না। নাস্তা সহ টুকিটাকি কেনার উদ্দেশ্যে নিচে নামলাম। আমাদের দেশের মতই রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিংগুলোর নিচে সারি সারি দোকান। সম্ভবত হাজিদের জন্যই ফজরের আজানের আগে থেকেই খুলে আছে।



প্রথম দোকানের সামনে দাড়াতেই দোকানদার লম্বা সালাম দিয়ে চট্টগ্রামের স্থানীয় টোনে জানতে চাইলো কি চাই। দোকানে ঢেকার পর থেকেই – কখন এসেছি, কি করি, সাথে কে, কদিন মক্কায় আছি, ইত্যাদি প্রশ্নের সাথে আন্তরিকতা মেশানো উপদেশ – বেশি করে তরল খাবেন, রোদে কম যাবেন, ইত্যাদি। সওদা দেখার ফাঁকে জিজ্ঞেস করলাম বাড়ি চিটাগাং কোথায়। বলল কক্সবাজার। আমি বললাম কক্সবাজার কোথায়? এবার বিব্রত হয়ে মিনমিনে গলায় উত্তর - বর্মা। একটু অবাক ও বিরক্ত হয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। তারও দন্ত-পাটি প্রস্ফুটিত হলো।



লাবান, দুধ, চায়ের পাতা, কলা, জ্যাম আর গরম রুটি নিলাম। একাটা ওয়াটার হিটার নিলাম। দাম মোটামুটি সস্তাই বলা যায়। মিডিলইস্ট দেশগুলোর ব্রেড কালচারটা আমার খুব পছন্দ। ফজরের পরেই বেকারির গাড়িগুলো দোকানে এসে যায়। হরেক রকম সুস্বাদু রুটি। দোকানে রুটিগুলো এমন ভাবে রাখে যেন কিছু সময় গরম থাকে। বাইরে থেকে আসা হাজিদের বেশি করে তরল খাবার খাওয়া উচিৎ। লাবান আর দুধই সবচেয়ে ভাল অপশন। যতদিন ছিলাম লাবান আর দুধ নিত্যসঙ্গী ছিল।



৮ টার পরে নাশতা এলো। রুটি, সবজি, মিষ্টি দিয়ে বেশ ভালো প্যাকেজ। তবে তার যা পরিমাণ, তাতে আমি আর মা খাবার পরেও ৪ জনার খাবার থাকে। ফেরত দিতে চেয়ে জানলাম ব্যবস্থা নেই। আমরা একজনের নির্ধারিত খাবার খেলাম। বাকিটা নষ্ট হলো। এই ব্যাপারটা আমার একদম সহ্য হয়না। অথচ আরবে খাবার নষ্ট করাটাই সংস্কৃতি। একজনের জন্য ন্যূনতম দুজন খাবার উপযুক্ত খাবার রাখবে। এবং একজনের জন্য নির্ধারিত খাবার অন্য কেউ খাবে না। পরবর্তীতে আমাদের গাইডকে একটু শক্ত কথায় জানিয়েছিলাম। তার পক্ষে যতখানি সম্ভব ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।



খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই বিল্ডিং এর তলাই একত্রিত হলাম। আমাদের গাইড ওমরার নিয়ম কানুন নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিলেন। বক্তৃতা শেষে এক সাথে হারামের দিকে যাত্রা। উদ্দেশ্য প্রথম ওমরাহ পালন। এরপর যে কদিন থাকা হবে তার মধ্যে যে কেউ চাইলে আরও ওমরাহ পালন করতে পারবে। সেক্ষেত্রে মিকাতের বাইরে গিয়ে এহরাম বেঁধে আসতে হবে।



রাস্তা খুব বেশি না হলেও যাত্রাটা খুব উপভোগ করলাম। এহরাম পরা একদল মানুষ প্রায় নি:শব্দে এগিয়ে চলেছে। রাস্তায় আরও কয়েক দলের সাথে দেখা হলো। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এক বিরাট স্রোতের সাথে মিশে গেলাম।



আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা শুরু করলাম। স্থানীয়দের হজিদের বিষয়ে আন্তরিকতা এবং সাবধানতা। রাস্তা দিয়ে একজন হাজিকে পার হতে দেখলেও গাড়িগুলো দাড়িয়ে যাচ্ছে। হাজি রাস্তার ওপাশে না পৌঁছানো পর্যন্ত কোন গাড়ি আগাচ্ছে না।



আমাদের গাইড জানালো - সামনের রাস্তাটার বাঁক ঘুরতেই মসজিদুল হারাম দেখা যাবে। আমার প্রায় নি:স্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।



১ম পর্বের লিঙ্ক : Click This Link

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৫৮

স্বপ্নখুঁজি বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

২| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ২:০৭

নষ্ট শয়তান বলেছেন: দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমাকে আর আমার মাকে নিয়ে আপনার মত ওখানে যাবার তৌফিক দান করে।

আপনাকে আর আপনার মা আমার সালাম।

আর ভাই আমার সালাম পৌছে দিয়েন সেই রসূল কে যার উছিলায় এই দুনিয়া।

আসসালামু আলাইকুম।

৩| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:২৩

জাহাঙ্গীর জান বলেছেন: মহান আল্লাহ আমাদের হজ কবুল করুন, আমিন "ইয়া রব"

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.