স্পাইক করা চুলের ভাবই আলাদা...!

০৩ রা আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১:৩৮

নাস্তা করে নিজের রুমে এসেছি অনেক্ষন কিন্তু ব্যাপারটা একই রকম দেখছি...ঘটনা কি?! সাত সকালে উঠে এভাবে আয়নার সামনে দাড়ানোর মানে কি?তাও আবার আবার রুমের আয়নায়...!আজকেতো কোন দাওয়াত আছে বলে মনে পড়েনা তাহলে...?!!



ঘড়িতে বাজে প্রায় ৯টা,আজকে ছুটির দিন,ক্লাস নেই তাই ভাবছি একটু শপিং এ বের হব,কিছু কেনাকাটা করতে হবে,কিন্তু ছোট ভাইয়ের কাহিনীটা কি কিছুই বুঝতেছিনা...সেই কখন থেকে নিয়ে সে আমার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথার চুল হাতরাচ্ছে,ব্যাপারটা কি...!হঠাৎ কলিংবেলটা বেজে উঠল,ছোট ভাইয়ের আয়নার সামনে থেকে নড়ার কোন লক্ষন নাই,তাই আমিই উঠে জানালা দিয়ে নিচে তাকালাম,দেখি পিয়াস দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা প্যাকেট আমাকে দেখে বলল,



;আপু,ভাইয়া আছে?থাকলে নিচে আসতে বল।



আমি বললাম,



;উপরে আয়,আব্বু বাসায় নেই,বাইরে গেছে।



একটু পর পিয়াসকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে আমি কিচেনে গেলাম,বুঝলাম আজকে দুইটা নিশ্চয়ই কোন খিচুরি পাকাচ্ছে,সকাল সকাল পিয়াস আসছে আর ওদিকে সাহেব আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সমানে পোজ দিয়ে যাচ্ছে,গোড়বোড় তো একটা আছেই,ঘটনাটা একটু তলিয়ে দেখা দরকার,কিন্তু ঘটনা তদন্ত করার আগে এই দুইজন সম্পর্কে একটু বলে নেয়া দরকার,প্রথমজন মানে আয়নার সামনে দাঁড়ানো জন আমার গুনধর ছোট ভাই বাবু,আর পরের জন আমার আর এক ছোট ভাই পিয়াস।পিয়াসরা আর আমরা এই পাড়ায় আছি প্রায় অনেক বছর,পিয়াস যখন তিন কি চার বছর বয়সের তখন ওরা এই এলাকায় আসে,আমাদের সাথে ওদের বাসার খুবই ভালো সম্পর্ক সেই তখন থেকেই,আর এখন সে আমার ভাইয়ের অতি ভক্ত,অতি বিশ্বস্ত,অতি আদরের,অতি...অতি...ভালো শাগরেদ!দুটার মধ্যে সেই রকম মধুর সম্পর্ক...সেটা দেখে পাড়ার বাকী ছেলেরা খুবই বিরক্ত।পিয়াসের অনেক গুলো নাম আছে,যেমন "খাই খাই পিয়াস'' আবার ''জাবর কাটা পিয়াস''এইটাইপের অনেক নাম পাড়ার বাকী ছেলেরা দিয়েছে,অবশ্য সব গুলো নামই যথার্থ।দুনিয়া উল্টায় যাইতে পারে, আমবশ্যায় পূর্ণিমা হইতে পারে কিন্তু পিয়াসের মুখ নাড়া কখনোই বন্ধ হবেনা,সারাক্ষন এই বান্দার মুখ নড়ে...আই মিন সে সারাক্ষনই কিছু না কিছু চাবাতে থাকে।প্যান্টের দুই পকেট,শার্টের পকেট সব জায়গায় খাবার থাকে সব সময়।এক বার ওর আব্বু কোন কারনে মাইর দিছে সে তখন কাঁদতে ছিল আর খাচ্ছিল!ওর ছোট ভাই পাভেল যার কাজ হইল আমি যেইসময় টিভি দেখতে বসব সেই সময় কোন চ্যানেলে কোন কার্টুন হয় তার আপডেট আমার বোন কে দেয়া!!যাইহোক,যে ঘটনার কথা বলছিলাম,আমি নাস্তা নিয়া ড্রয়িং রুমে ঢুকে দেখি বাবু আর পিয়াস একটা প্যাকেট নিয়া আলোচনা করছে আমি কিছু না বলে বের হয়ে আসতে নিলাম তখন বাবু ডাক দিল,



;আপু শুন,একটু হেল্প কর প্লিজ



আমি সোফায় বসে বললাম,কি হইছে?



;শুন,আমি আর পিয়াস ঠিক করছি চুল কালার করে স্পাইক করে রাখব,কিন্তু কোন কালার লাগাবো সেটা বুঝতেছিনা!



আমি লাফ দিয়ে ঊঠলাম,



;কি করবি তোরা??!!চুল কালার করে স্পাইক করবি?ছিঃ ছিঃ ছিঃ...শেষ পর্যন্ত এই কাজও শুরু করলি?



আমার কথা শুনে পিয়াস মিট মিট করে হাসতে লাগল,আর বাবু কিছু হয়নি এমন একটা ভাব নিয়া বলল,



;তোর চুলতো আর কালার করতে বলতেছিনা,আর তাছাড়া তোর চুল কালার করতে অনেক রঙ লাগবে এত রঙ নাইও যা আছে তা দিয়া আমি আর পিয়াস করব,এখন বল কোন কালার করব?



;এই সব জিনিস পত্র পিয়াস কোথেকে আনছিস?



পিয়াস আগের মতোই হেসে বলল,



;এগুলা পাপ্পু ভাইয়ার,ঐ যে নাঈমদের বাসার পাশে থাকে যে,পাপ্পু ভাইয়াতো ডি.জ়ে তাই তার কাছ থেইকা আনছি।



;আহ এতো কথার কাম নাই,আপু তাড়াতাড়ি বল,কি করব...আর শুন,আম্মু হয়তো দেইখা একটু প্যাচ প্যাচ করতে পারে তুই প্লিজ সামলাবি...!



আমি স্প্রে গুলো নিয়ে কিছুক্ষন নাড়াচড়া করে বললাম,



;আমার মতে তোরা দুইটা মাথার চারপাশে কর সবুজ রঙ আর মাঝখানে কর লাল রং!তারপর লাল প্যান্ট আর কটকটা সবুজ গেঞ্জি পইড়া জুমার নামায পড়তে যা...



বাবু আমার দিকে কিছুক্ষন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থেকে বলল,



;আপু তুই যা...প্লিজ যা,তোরে দিয়া আসলেই কিছু হবেনা,ছোট ভাইরে হেল্প করতে পারিস না আবার হাসিস,আমি আর জীবনেও তোর মোবাইলে টাকা ভরে দিবনা সাফ কথা...!



আমি হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে এলাম,আজকে ভালোই ড্রামা হবে...আব্বু যখন দেখবে তার আলালের ঘরে দুলাল কি করছে তখন হয়তো দুঃখে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলবে,''আব্বুসোনা তুমি এই রকম একটা কাজ কেন করলা?মনে খুব কষ্ট পাইলাম''!!আর আম্মু তো কথাই নাই,"এক্ষনি চুল শ্যাম্পু কর না হলে আমি বাড়ী ছেড়ে চলে যাব,কর বলতেছি...''



হাহাহাহাহাহাহ



কিছুদিন পর,ক্লাস থেকে এসে নিজের রুমে শুইয়ে আছি,বেলের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল একটু পর পিয়াসের গলা পেলাম,আমি আম্মুর রুমের দিকে যেতে গিয়ে থমকে গেলাম,ড্র্ইয়িং রুমে পিয়াস বসে আছে কিন্তু সেটা বড় কথা না বেচারার মাথায় রুমাল বাধা কেন সেটাই বুঝলাম না!!আমি রুমে ঢুকে বললাম,



;কিরে?তোর মাথায় কি হইছে?!!



পিয়াস মুখ নাড়াতে নাড়াতে বলল,



;সেই কথা আর জানতে চাইওনা আপু...এক্কেবারে শেষ আমি,শুধু আমি একা না কয়দিন পরে বাবু ভাইয়াও মাথায় রুমাল বাধবে শিউর থাকো...



;খাইছে!!!কেন কি হইছে?



;কি আর হইবো,ঐ যে চুল স্পাইক করলাম তার পর থেকে দেখি সমানে চুল উঠতাছে,এক্কেবারে ঝইড়া পরতাছে...দেখলে তোমার বুক ফাইটা যাবে আপু...!



হোহহো...যাক কাজ হইছে তাইলে...হো হো হাহাহা...এবার বুঝবা ভাই জান কতো ধানে কত চাল...!



বাবু এসে বলল,



;আপু তোর জানামতে চুল পড়া বন্ধের জন্য কি কি করা লাগে প্লিজ বল,কোন ঝামেলা করবিনা খুবই টেনশনে আছি...



;কেন?এখন টেনশন কেন?মেয়াদ শেষ স্প্রে দেয়ার সময় মনে ছিল না?চান্দু...



বাবু আর পিয়াস লাফ দিয়ে উঠল এক সাথে,



;মেয়াদ ছাড়া মানে?!!!



;হুম,তোরা ঐ দিন যে স্প্রে গুলা দিছিস তার একটাতেও মেয়াদ ছিল না,আমি নিজের চোখে দেখে গেছি...



;দেখে গেছিস?তাহলে বললিনা কেন?



;বলবো কেন?নিজেদের চোখ নাই?পাপ্পু ভাই দিছে আর মাথায় দিয়া বইসা থাকো,ভালো হইছে,এবার বুঝ,না করছিলাম...



বাবু এবার পিয়াসের দিকে তাকিয়ে বলল,



;পিয়াস,পাপ্পু ভাইয়ের খবর আছে,নিচে চল,নামায পইড়া ঐ ডি.জ়ে.বান্দরটারে দেইখা আসি,আর আপু তোর খবর আছে, আগামী একবছর আমি তোর কোন কাজ করে দিব না,তুই আমার চুল পড়ার জন্য দায়ী......



আমি বহু কষ্টে হাসি চেপে মাথা নাড়লাম,পিয়াস মুখ নাড়তে নাড়তে বলল,



;আপু,তুমি আমারে একটু কইতা,যাক,এখন প্লিজ চুল পড়া বন্ধের জন্য কোন উপায় বাইর কইরা দাও আমি আসতেছি...



দুইটা বাইর হয়ে গেলে আমি দোড় দিলাম আম্মুর রুমে,আম্মুকে গরম গরম নিউজ টা দিয়া আসতে...হাহাহাহাহাহা

০ টি +০/-০