![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি লিখি আমার দেখা, শোনা আর অনুভবের গল্প। কল্পনা আর বাস্তবের মিলনে গড়ে তুলি নতুন এক জগত। কলমে আমি হলো আমার একান্ত লেখা, শুধু আমার নিজের শব্দের ভুবন।
আমি অনেক লেখকের বই পড়েছি, কিন্তু একটা সত্য কথা বলতে হবে—খুব কম পাঠকই আছেন যারা হুমায়ূন আহমেদের লেখা পছন্দ করেন না। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। মনে আছে, প্রথম যখন তার বই হাতে নিয়েছিলাম, তখনো বুঝিনি আমি কীসের ভেতর ঢুকতে যাচ্ছি। পড়তে পড়তে মনে হলো, বইয়ের পাতা নয়—আমার আশেপাশেই সবকিছু ঘটছ
বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিহাসে অসংখ্য নাম আছে, সোনার অক্ষরে লেখা। কিন্তু হুমায়ূনের নাম সেখানে আলাদা আলোয় জ্বলে। তিনি শুধু লেখক ছিলেন না, ছিলেন এক অনুভূতির কারিগর। তার কলমে এমন এক জাদু ছিল, যা পাঠককে গল্পের ভেতরে টেনে নিত।
সবচেয়ে অবাক হয়েছি তার ভাষা দেখে। এত সহজ, এত সরল অথচ এত গভীর! কোনো জটিলতা নেই, কোনো অহেতুক ভণিতা নেই। মনে হতো, পাশের বাড়ির কেউ বসে গল্প শোনাচ্ছে। আমার মতো সাধারণ পাঠকের কাছেও সেই গল্প হয়ে উঠত নিজের জীবনের গল্প।
তার চরিত্রগুলো যেন আমার চারপাশেই হাঁটত। হিমু—হলুদ পাঞ্জাবি পরে রাতে শহর ঘুরে বেড়ায়, মিসির আলি ঠান্ডা মাথায় রহস্যের জট ছাড়ায়—এরা আমার কল্পনার বাইরের কেউ নয়, বরং খুব চেনা মানুষ। একসময় মনে হতো, রাস্তায় বের হলেই হয়তো হিমুর সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে।
আমি তার বই পড়ে হেসেছি, আবার চোখের পানি মুছেছি। জীবনের ছোট ছোট আবেগকে তিনি এমনভাবে ধরতে পারতেন যে, মনে হতো—এই তো আমার নিজেরই কথা। নিঃসঙ্গতা, আশা, ব্যর্থতা, ক্ষণিকের আনন্দ—সবকিছু তিনি লিখে ফেলতেন অবলীলায়। এজন্যই মনে হতো, তিনি আসলে আমাকে নিয়েই লিখছেন।
হুমায়ূন শুধু উপন্যাস লিখেই থেমে থাকেননি। অনুবাদে তার আগ্রহ ছিল, ইতিহাস নিয়ে লিখেছেন, বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের কৌতূহল জাগিয়েছেন। এমনকি শুনেছিলাম, তিনি আমাদের নবীজি ﷺ–কে নিয়ে লিখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই কাজ শেষ করতে পারেননি। এটা আমার কাছে আজও এক অপূর্ণতা। ভাবতে খারাপ লাগে—যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, হয়তো আমরা নবীর জীবন নিয়ে তার কলমে এক অসাধারণ রচনা পেতাম।
তার শেষ বই “যখন নামবে অন্ধকার” আমি যখন পড়ি, বুকের ভেতর কেমন একটা হাহাকার জন্মায়। মনে হয়েছিল, তিনি যেন নিজের জীবনের শেষ আলাপন পাঠকের কাছে লিখে রেখে গেছেন।
২০১২ সালে তিনি চলে গেলেন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো—তার লেখা মরে যায়নি। বরং আজও নতুন প্রজন্ম তার বই হাতে তুলে নিচ্ছে। এটা হয়তো তার লেখার সবচেয়ে বড় সাফল্য। তিনি সময়কে অতিক্রম করেছেন।
আমার কাছে হুমায়ূন আহমেদ শুধু একজন লেখক নন। তিনি এমন একজন, যিনি আমার কিশোর বয়সের নির্জন দুপুরে, তরুণ বয়সের একাকিত্বে, আর আজকের ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে ফাঁকেও সঙ্গী হয়ে আছেন। আমি বিশ্বাস করি, যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে, হুমায়ূনের বই ততদিন বেঁচে থাকবে।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫০
জেনারেশন একাত্তর বলেছেন:
নবীজী চাননি যে, উনি নবীজীকে নিয়ে লিখুক। এই কাজটা আপনার করা উচিত।