নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্প, অনুভূতি আর জীবনের টুকরো কথা

সুম১৪৩২

আমি লিখি আমার দেখা, শোনা আর অনুভবের গল্প। কল্পনা আর বাস্তবের মিলনে গড়ে তুলি নতুন এক জগত। কলমে আমি হলো আমার একান্ত লেখা, শুধু আমার নিজের শব্দের ভুবন।

সুম১৪৩২ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাদুর পাশে, বাবার স্মৃতি

০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২

মোবাইল ফোনটা রিং দিলো — ঘুম ভেঙ্গে গেলো। পাশে আমার মতো ঘুমানো সাবিকও বিরক্ত হয়ে চোখ মোচড়াতে মোচড়াতে বলছে " বাবা ফোন বন্ধ কর "। আজ শুক্রবার, সাত সকালে ; কে ফোন দিলো জানি না। বিছানার পাশে রাখা bedside টেবিল থেকে মোবাইলটা তুলে দেখি কলার নাম “Abba”। অথচ কল করল আম্মা। ইচ্ছা করেই নামটা বদল করিনি; বাবা চলে যাবার পর ওই নম্বরটা আম্মাই ব্যবহার করে।



ফোনটা ঘুমন্ত কণ্ঠে ধরে উঠলাম, একটু বিরক্তমিশ্র গলায় বললাম-
- আম্মা, তোমারে না বলছি, শুক্রবার সাত সকালে ফোন দিবা না।
- ওই শয়তান, কয়টা বাজে?
- জানি না।
- সাড়ে এগারোটা বাজে, এখনও পরে পরে ঘুমাস?

সাড়ে এগারোটা—শুনতে পেয়ে আমি মনে মনে অবাক হলাম। শুক্রবারে আমি সাধারণত নয় টা থেকে সাড়ে নয়টা পযন্ত ঘুমাই যদিও গতকালকে অনেক রাত পর্যন্ত ছেলের সাথে বিরক্তিকর (এই লেখার , এই শব্দ যদি ছেলের কানে যায়, তাহলে খবরই আছে) কার্টুন দেখেছি, যার জন্য গত রাতে ঘুমাতে দেরি হয়ে গিয়েছিলো। ও পাশে ফোনে বললাম,

- ওও, সাড়ে এগারোটা বাজে। আচ্ছা রাখো, fresh হয়ে ফোন দিচ্ছি.
- সাবিক কই
- ঘুমাচ্ছে আমার পাশে।
- বাহ .... , বাপ বেটা দুটিই ঘুম, আল্লাহ খোদার নাম নাই। পরে পরে ঘুমাচ্ছিস।
- (বিরক্ত হয়ে) “আচ্ছা রাখো তো, পরে কল দিচ্ছি ।
- আচ্ছা , শোন , যেটার জন্য ফলে দিয়েছি
- বলো
- তুই বলে, অনেক প্রেসার আছিস , নীপা বললো, ঠিক মত ঘুমাস না, অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করিস।
- না, এমন কিছু না—MD নেই তো, তাই একটু অফিস আর কাজের চাপ। ওপরে একটা বড় সরকারি প্রজেক্ট পেয়েছি, ওইটার কাজ। তোমার কী খবর? কখন আসবা?
- নিপার কাছে তোর কথা শুনে তো আমি টেনশন আছি। দেখি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
- অরে আমি ঠিক আছি , অনেক দিন পর গেসো , থাকো আরো কিছু দিন
- অনেক বৃষ্টি এই খানে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না
- তোমার যতদিন মন চায় থাকো, কোনো প্রবলেম হয় নাই ।
- হাটাহাটি করিস তো ?
- হুম করি।
- তোর আব্বার কবরে যাবি না ?
- আজকে যাবো না, কালকে যাবো। বেল্লাল এর ছেলেকে আসতে বলছি কালকে কবরস্থানে।
- কেন?
- ওকে বলেছি সকাল সকাল, যেয়ে একটা খতম পড়ানোর জন্য।
- ভালো করেছিস।
- আম্মা রাখি, নামাজে যাবো, সাবিককে তুলতে হবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে।

লাইন কেটে দিলাম।

আব্বা মারা গেলে আমাদের আম্মার অবস্থা—হয় USA-তে, নয়তো নিজের বাড়িতেই; হঠাৎ করে গ্রামে চলে যায়, আবার ফিরে আসে—উথলি-পাতলি। আব্বাও জীবিত থাকলে এমনই করতো। তাই আম্মা যখন গ্রামে যেতে চাইতো, আমি আর আমার বোন সাধারণত না করতাম না । তবু বেশি গরম পড়লে আমরা বাধা দিতাম; আম্মাও বুঝতেন—শীতকাল বা বর্ষার কিছুটা ঠান্ডা সময়ে বাড়ি যেতেন।

আম্মা ঢাকায় থাকলে আমার বাড়ির প্রায় সত্তর শতাংশ কাজের চাপ কমে যেতো। অনেক কাজ থেকে আমি পুরোপুরি মুক্ত থাকতাম, যেমন দারোয়ান এর issue, ভাড়াটিয়া র issue, পানির মোটর সমস্যা, ব্লা ব্লা।

মাঝে মাঝে আম্মা কথা বলতে চায় বাড়ির issue নিয়ে, আমি শোনার জন্য শুনতাম কিন্তু কোনো decision দিতাম না, আবার Major কোনো সমস্যা হলে decision দিতাম। মাঝে মাঝে মা-বোন কেও বলে, কিন্তু আমার বোনও আমার মতো decision দিতো না। আমার আর আমার বোনের কথা হলো, তোমার বাসা তোমার যা মন চায় তুমি করো। আসলে আমি আর আমার বোন চাই, আম্মা busy থাকুক। Decision না দেয়ার ফলে অনেক সময়, আম্মার অনেক বকা বকি শুনতাম আমি আর আমার বোন।

আর সেই বকা-বকির মধ্যে খুব কমন লাইন গুলো ছিল—
“আমার বেলায়: তুই বাসায় থেকে বের হয়ে যা, আমার সামনে আসবি না।”
আর বোনের বেলায়: “তুই বাংলাদেশে এলে, আমার বাসায় আসবি না, শ্বশুর বাড়িতেই থাকবি।”

Decision না দেয়ার কারণে যে কত বার, আম্মা মুখ দিয়ে আমাকে আর আমার বোনকে বাসায় থেকে বের করে দিয়েছে, ঐটার হিসাব রাখলে, আল্লাহ ভালো জানে কত দিস্তা কাগজ লাগতো। তবুও আমার আর আমার বোনের কথা, তোমার বাসা তোমার যা মন চায় করো। আমরাও বেশ ভালোভাবে জানি, মা মনে মনে খুশি হয়। আসলে একটা বয়স পেরুলে বাবা, মা রা সবার নজর চায়, স্পেশালি তার ছেলে মেয়ের । এই জন্যই, মা যতবার বলে বাসায় থেকে বের হয়ে যেতে, ততবারই আমরা হোহো করে হেসে মা-কে খেপাই, আর মা ও চিলা চিলি করে।

আসলে মা হলো ……

সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে , আবার আম্মার ঘরে এসে, গুনগুন করে কোরআন শরীফ পড়ার মাঝে, মার ঠিক কোলের কাছে শুয়ে অল্প কিছুক্ষণের প্রশান্তির ঘুমটা—আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রশান্তি। ঠিক ওই ঘুমানো অবস্থায়, কিছুক্ষণ পর ছেলে বিছানায় বাবাকে না পেয়ে দাদুর ঘরে আসে, বাবার পাশে শুয়ে পড়ে—ওই মুহূর্তটা যেন সবচেয়ে নিরিবিলি; যেন বেহেশতের একটা টুকরো।

কোরআন পড়া শেষে মোনাজাত, আমার কপালে আর আমার ছেলের কপালে ফু দিয়ে, হাত মুঠো করে চুল ধরে ঝকানো—তার পরই শোনা যায়,

- “উঠ, এত বড় চুল রাখছিস, গরম লাগে না? ওঠ।”
- আমি বিরক্ত হয়ে বলি, “উফ্, ব্যথা লাগে তো।”

রাগ করে বিছানাটা ছাড়তে ছাড়তে বলি, “তোমার জ্বালায়, একটু শান্তি মতো ঘুমাতে পারি না।”

এই বলে উঠে যাই, সঙ্গে সঙ্গে আমার ছোট্ট ছেলেটাও উঠে পড়ে, বিরক্ত কণ্ঠে ফিসফিস করে, “দাদু, তুমি না আসলে বেশি জ্বালাও।”

আমাদের এই কান্ডকারখানা দেখে আম্মার মুখে থাকে, অন্য রকম একটা প্রশান্তির হাসি, যে হাসির বিবরণ দেয়া যায় না ।

আমরা দুজনে উঠে যাই; চুল টেনে ঘুম থেকে উঠানো টাই আমাদের দুজনের অ্যালার্ম—আমি অফিসে যাব, ছেলে স্কুলে যাবে।

যদি আব্বা জীবিত থাকতেন, সবকিছু অন্যরকম হতো। সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে মার ঠিক কোলের কাছে শুয়ে আমার ছেলে দাদুর কাছে। কারণ দাদা ছিল ওদের ভালোবাসার fighting partner। দাদা নেই—তাই আমার ছেলে খুঁজে নিয়েছে তার বাবার পাশের জায়গা টুকু।

আব্বাকে আমি বিস্তারিত লিখেছি—
আমার প্রথম বই “মৃত্যু” তে। ওই টা নিয়ে ছোট্ট করে একটা লিখা লিখবো , কিছু দিন পর ….

কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য এই পোস্টটির কমেন্টগুলো রিভিউয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। সরাসরি কমেন্ট প্রকাশ করতে না পারায় দুঃখিত। আমাকে সরাসরি লিখতে পারেন — [email protected]বিশেষ ধন্যবাদ @অপু তানভীর ভাই কে , নিষিদ্ধ তালিকা অ্যাড করা শিখানোর জন্য। কমেন্ট সরাসরি প্রকাশ হবে , রেস্টাকশন তুলে নেওয়া হয়েছে

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৫

অপু তানভীর বলেছেন: আপনার লেখার হাত ভাল। নিয়মিত লিখুন।



ব্লগে দুর্গন্ধ ছড়ানো পাবলিক কেবল একজনই রয়েছে। যে কোন পোস্টে একবার ল্যাদানো শুরু করলে আর থামে না। তার কমেন্ট অপশন বন্ধ করুন। দেখবেন আপনার ব্লগ পরিস্কার পরিছন্ন থাকবে।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:২২

সুম১৪৩২ বলেছেন: ওই অপসন কি কিভাবে চালু করব , একটু যদি বলে দিতেন খুব ভালো হতো। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:৩৯

অপু তানভীর বলেছেন: এই পোস্টে গিয়ে দেখে আসতে পারেন। এখানে টিউটেরিয়ালটা দেওয়া আছে।

০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

সুম১৪৩২ বলেছেন: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ,

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.