![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘হে তরু এ ধরাতলে রহিব না যবে
সেদিন বসন্তে নব পল্লবে পল্লবে
তোমার মর্মর ধ্বনি পথিকের ক’বে
ভালবেসেছিল কবি বেঁচেছিল যবে।’-(বরীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
সবুজের অবারিত মাঠে আমি ছুটে বেড়াই। তার সাগরে আমি সিঞ্চন করি। তার ছোয়ায় পুলকিত হই, পবিত্র হই, বিশুদ্ধ হই, নির্মল হই। সবুজ পাতার দোয় খাওয়া দেখে আবেগ তাড়িত হই, বিমোহিত হয় আমাদের হৃদয়-মন। মাঠের পর মাঠ সবুজ। মাইলের পর মাইল সবুজ। পাহাড়ের পর পাহাড় সবুজ। চারদিকে যেন সবুজের সাগর! সবুজের খনি! যে দিকে চোখ যায় সবখানে শুধু সবুজ আর সবুজ। আমাদের আদরের সবুজ। ভালবাসার সবুজ। বাংলাদেশের সবুজ। এমন সবুজ কি আর কোথাও মিলবে? এই সবুজ বাংলাদেশের জন্মের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে । লাল-সবুজের পতাকার সাথে লেপটে আছে এই সবুজ। আমার দুষ্ট ছেলেবেলার মিষ্টি সবুজ। সবুজের নির্মল বাতাস আমাদের বাঁচিয়ে রাখে; প্রাণধারণে সহযোগিতা করে। সবুজ এমনভাবে আমাদের মনে-মননে গেঁথে আছে, তাকে অস্বীকার করবো কিভাবে। একে অস্বীকার করা মনেই তো নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। কেউ কি নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে চায়? করতে পারে? আসলেই পারে না। এভাবে সবুজ আমার পূর্ব পুরুষেদের রক্তের মত প্রবাহমান হয়ে গেছে আমারদের রক্তের প্রতিটি অনু পরমানুতে। সবুজ আতœীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছে। সে বন্ধন আতœার বন্ধন। সে বন্ধন নাঁড়ির বন্ধন।
তাই সবুজ এসে আমাদের সামনে ধরা দেয় মায়ের শাড়ির আঁচলের মত। বোনের আদরের মত। ভাইয়ের ভালবাসার মত। বাবার শাসনের মত। ছোট বোনটির অভিমানের মত। আবার কখনোবা প্রিয়ার সাথে পিসপিসিয়ে কথা বলার মত; কিংবা তার হাসির মত। এভাবে সবুজের সাথে আমরা একাকার হয়ে মিশে গেছি।
‘হাঁট্টা না যাইতে কন্যার পায়ে পড়ে চুল
মুখেতে ফুট্টা উঠে কনক চাম্পার ফুল।’-(মৈমনসিংহ গীতিকা)
‘নাচেন ভালা সুন্দরী লো
বাঁধেন ভালো চুল,
যেন হেলিয়া দুলিয়া পড়ে
নাগকেশরের ফুল।’-(পূর্ব-শ্রীহট্টের লোকগীতি)
মানুষ হল সৃষ্টিকর্তার সৃজনের আশ্চর্য রকম বিস্ময়ের বিস্ময়! সবুজ গাছ-পালার বৈচিত্র হল প্রকৃতির বিস্ময়! সবুজ মানুষের বেঁচে থাকার উৎস। অতœার খাদ্য। আমার রহমানুর রাহীম সৃষ্টিকর্তর অপার লীলা; অসীম ক্ষমতার অন্যতম বহিঃপ্রকাশ। তাঁর অপরূপ সৃষ্টি নৈপুন্যের পরিচয়।
প্রকৃতির এই রূপবৈচিত্র দেখে আমি আমার প্রাণের সুন্দর সৃষ্টিকর্তাকে বড় বেশি অনুভব করি। তখন সবুজকে মনে হয় এক সপ্নপুরী মত। মনের আকাশে নির্মাণ করি এক সপ্নিল জগৎ।
আমরা যেদিন পৃথিবীর বুকে আগমন করেছি সেদিন থেকেই এই সবুজ প্রকৃতি আমাদের সঙ্গী হয়েছে। প্রকৃতির এই নজরকাড়া সৌন্দর্য, কোমল বাতাস, ¯িœগ্ধ পরশ আমাদেরকে নতুনরূপে-নবরূপে বাঁচিয়ে রাখে-উদ্বেলিত করে। সবুজ পাতায় বাতাসের জিরিজিরি বাতাস আমাকে উদাস করে তোলে। সবুজ পাতার উপর সকালের সোনারোদের ঝিলিক আমাদের মনকে রাঙিয়ে দেয়। কাইয়ুমের রং তুলির আঁচড়ের মত আমাদের মনের ক্যানভাসে এঁকে দেয় ভালবাসার পবিত্র পরশ।
গাছের ঝোপে পাখির বাসা। ঝুলে থাকা ফল, ফুটে থাকা ফুল। আকুল করা শো শো বাতাস মনকে উদাসী করে তোলে। মনে পড়ে, মনের মানুষ, কাছের মানুষ প্রাণের প্রিয়তমাকে। পৃথিবীর কলহপূর্ণ পরিবেশ আর বন্ধনের মোহ ত্যাগ করে মাঝে মাঝে আমরা সবুজের মায়াবী জগতে হারিয়ে যাই। ডুব দেই তার রূপের সাগরে। খুঁজে ফিরি শান্তনা। ভালবাসার নিরাপদ আশ্রয়।
কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে বর্তমানে আমাদের এই মায়ার সবুজ প্রকৃতি, আশ্রয়ের সবুজ প্রকৃতি, আক্রান্ত হচ্ছে মানুষরূপী অমানুষদের হাতে। মানুষের দ্বারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এর কোমলতা। লাবন্যময়ী, মনোহরোণী, মায়াবীনী, বনহরিণীর মত সবুজ প্রকৃতির শরীর খুবলে খাচ্ছে মানুষরূপী বন রাক্ষসরা। যত্রতত্র কাটা হচ্ছে গাছ, কিন্তু সে তুলনায় যা লাগানো হচ্ছে তা প্রয়োজন এবং পরিবেশের চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। প্রতি বছর সরকারীভাবে প্রচুর গাছ লাগানো হলেও কাগজে কলমে যা লিখা হয় বাস্তবের সাথে তার কোনই মিল পাওয়া যায় না। অধিকিন্তু সরকারী অর্থায়নে লাগানো গাছের অধিকাংশই বিদেশী; যা আমাদের পরিবেশের জন্য উপযুক্ত নয়। যার কারণে মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের পরিবেশ। আমারা আক্রান্ত হচ্ছি নানান অসুখ-বিখুখে। তাই আমাদের উচিত যাবতীয় দেশী গাছ লাগিয়ে আমাদের চারপাশের প্রকৃতিকে সবুজে সবুজময় করে গড়ে তোলা। ব্যক্তিগত উদ্যোগে উদ্যান গড়ে তোলা। নিজ হাতে লাগানো গাছের পাতা স্পর্শ করতে, এর ছায়ায় বিশ্রাম নিতে, ডালে পাখির উড়াওড়ি দেখতে-গান শুনতে কার না ভাল লাগে। সে এক নস্টালজিয়া জীবনের বিশেষ মুহূর্ত। এতে যে ভিন্ন একটা স্বাদ রয়েছে তা সবাই উপলব্ধি করতে পারেনা; অনুভব করা তো দূরের কথা। এটা শুধুমাত্র যে ব্যক্তি গাছ লাগান একান্ত তিনিই গভীর করে হৃদয়ঙ্গম করতে সক্ষম হন। পরিশেষে, সবুজের মাঝে হোক আমাদের আগামীর প্রজন্মের বসবাস। সাবার মন হোক সবুজ গাছের পাতার মত নির্মল ও পবিত্র। সবুজে সবুজে ছেঁয়ে যাক আমাদের চারপাশ। জীবনানন্দ দাশের কবিতার পংক্তি দিয়ে এই লেখার ইতি টানছি-
‘তোমার যেখানে সাধ চলে যাও
আমি এই বাংলার পারে
রয়ে যাবো; দেখিব কাঁঠাল পাতা ঝরিতেছে
ভোরের বাতাসে।’
২৭ ডিসেম্বর ২০১২ইং
লেখক: সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক
ই-মেইল:ংঁৎবফধশনধৎ@মসধরষ.পড়স
যোগাযোগ:০১৭৬৬১০৭০৮৮
২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩০
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: ভাল লাগলো,,,,,,,,,,,
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:০৭
দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: +++++