![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘বন্ধু’ কথাটি শুনলেই মন আমার দোলা দিয়ে ওঠে। হৃদয় নেচে ওঠে তা দিন তা। বুক ধড়পড় করে। গা চমচম করে। গলা ছেড়ে গান গাইতে মন চায়। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, হৃদয় আমার নাচেরে...শরীরের গোটা সত্ত্বা জুড়ে শিহরণের, অনুভবের, পুলকের একটা ভিন্ন ঢেউ খেলে যায়। নীল আকাশের ভেলায় ডানা মেলে উড়তে ইচ্ছে করে। প্রজাপতির মত ফুলের বাগানে ঘুরে বেড়ায় আমার অবুঝ মন। প্রথমে আলোচনা করা যাক, বন্ধুত্বের ধরণ সম্পর্কে। কেমন হওয়া উচিত আমাদের বন্ধু। বন্ধুত্বের নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে এতটুকু বলা যায়, হৃদয়ের শত কথা হাজারও ব্যথা যার সাথে অকপটে বলা যায়। শেয়ার করা যায় ছোট ছোট সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো। সুখের দিনে যে পাশে থাকে। বিপদ এলে যে আগলে রাখে বটবৃক্ষের মত। সাহস জোগায় বুকে। সান্তনা দেয় মনে। সেই তো বন্ধু। বন্ধু হয় বর্তমানের সহযোগী। আগামী দিনের পথচলার সাথী। প্রকৃত বন্ধু কখনো বিপদে তার বন্ধুকে ছেড়ে যায় না। যেতে পারে না। এটা বন্ধুত্বের ধর্ম নয়। সে শুধু দুধের মাছি হয় না। হয় শত সুখ-দুঃখের অংশিদার। সমব্যথী, সমমর্মী, সহযাত্রী যে জন সেতো আমার বন্ধুই। মাত্র একজন ভাল বন্ধুই পারে আমাদের এ জীবনকে বদলে দিতে। বদলে দেবার জন্য যথেষ্ট। আর একজন ভাল বন্ধু পাওয়া তো বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার। মহান আল্লাহ তাঁয়ালার বড় নেয়ামতও বটে। কথায় আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ অবশ্যই এ বন্ধু হতে হবে এমন বন্ধু যে, আপনাকে ছেড়ে কখনো যাবে না। কখনো আপনার বিপদ দেখলে সে গা বাঁচিয়ে চলবে না। চলার চিন্তাও করবে না। আপনার জন্য সে শত কষ্ট, শত জ্বালা, শত অপমান, নিরবেই সহ্য করবে। কেননা প্রকৃত বন্ধু বন্ধুর জন্য শত ঝুঁকি নিতেও কার্পণ্য করে না। তাই জীবনের জন্য চাই একজন ভাল বন্ধু। তাই চাই সৎ, পরিশুদ্ধ, পরোপকারী, চরিত্রবান, সাদা মনের একজন বন্ধু।
সুপ্রিয় পাঠক, একবার চিন্তা করে দেখুন এমন বন্ধু ক’জনেরই বা ভাগ্যে জোটে। যার ভাগ্যে জোটে সে অবশ্যই ভাগ্যবান। তার জীবন স্বার্থক। সোনা-রূপার মত মূল্যবান তার শরীর। তার মাথায় যেন শোভা পায় রাজমুকুট।
আমাদের জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে লেগে আছে বন্ধুত্বের ছোঁয়া। লেগে আছে তার গন্ধ, তার স্পর্শ। বন্ধুত্বের রূপ, রস, গন্ধে, ফুলে, ফলে সুশোভিত আমাদের জীবন। বন্ধুত্বের নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। সীমা ডিঙিয়ে পথ চলাই এর স্বভাব। ছোট-বড়, বয়সের ব্যবধান, বয়সের মিল যে কারো সাথেই বন্ধুত্ব হতে পারে। এক বন্ধুর সাথে আরেক বন্ধুর থাকে টক-ঝাল-মিষ্টি মিশ্রিত মধুর সম্পর্ক। অবশ্যই আমি এখানে নারী-পুরুষের বন্ধুত্বের কথা বলছি না। নারী-পুরুষে কখনো বন্ধুত্ব হয় না; যদি হয় তাহলে সেটা হয় প্রেম। অনেকে এ ক্ষেত্রে অনেক বড় বড় যুক্তি দাঁড় করাবেন, দাঁড় করাতে চেষ্টা করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রিপুর তাড়নাকে অস্বীকারই বা করব কেমন করে। বন্ধুত্ব এক পবিত্র সম্পর্কের নাম। নিঃস্বার্থ ভালবাসার নাম। রিপুর তাড়না এলে তো সে সম্পর্ক আর পবিত্র থাকে না। তা যে কোনো সময় যে কারো উপর সুনামির আঘাত হানতেই পারে। তাই নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব না হওয়াই ভাল। তবে আমি আবারও বলছি তাদের ভেতর প্রেম হতে পারে। ইসলাম ধর্ম কিন্তু বিয়ের আগে প্রেম-ভালবাসার অনুমোদন করে না। স্বামী-স্ত্রীর কথা আলাদা। স্বামী-স্ত্রীতে প্রেম যে রকম হতে পারে সে রকম বন্ধুত্বও হতে পারে।
সাধারণত বয়ঃসন্ধি কালে মানুষের জীবনে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় ছেলে-মেয়েদের শরীর লাউ গাছের মত লকলকিয়ে বাড়তে থাকে। তাদের গলার স্বর পরিবর্তন হয়। সে অভিভাবকের শাসন মানতে চায় না। বড়দেরকে সম্মান করে না। সে হয় কিছুটা খেপাটে, কিছুটা ডানপিঠে, কিছুটা দুরন্ত স্বভাবের। চোখ রাঙানিকে সে ভয় পায় না। এটা হল যৌবনের ধর্ম। অন্যায় দেখলে তারা প্রতিরোধ করে। বিপদ জেনেও সে ঝাঁপিয়ে পড়ে আগুনে। সে হয় নির্যাতিতের সহায়। এ বয়সের ছেলে-মেয়েরা সহজে পরাজয় মানে না। তবে তারা ভালবাসার কাঙাল। ভালবাসার জন্য সে উন্মুখ হয়ে থাকে। একটু ভালবাসার জন্য সে চৈত্রের জমিনের মত হা করে থাকে। একমাত্র ভালবাসার কাছেই সে বশ্যতা স্বীকার করে।
বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে মেয়েদেরকে অনেকেই বন্ধু হওয়ার জন্য আহ্বান জানায়। অনেক দিক থেকে তাদেরকে অপার করা হয়। অনেক মতবাদ তাদেরকে ভোগবাদী জীবনের দিকে আহ্বান জানায়। সুন্দরী নারীরা আহ্বান জানায় প্রেম করতে। এসবের উপকরণ, হিসেবে ব্যবহার করা হয়, মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ই-মেইল। একথা স্পষ্টভাবে বলতে হয় যে, একজন মানুষকে বন্ধুত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। না হয় যেনতেন লোকের সাথে বন্ধুত্ব করলে জীবন চলার পথে গভীর সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। একজন খারাপ বন্ধু এ জীবনের জন্য যেমন বিড়ম্বনা আর অপমানের কারণ তেমন পরকালের জীবনেও তাকে এ বন্ধুর জন্য দোযখের অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হবে।
বর্তমানে একটি কথা প্রচলিত, বন্ধু ছাড়া জীবনই অচল। আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমি বলব অন্য কথা। একজন ভাল বন্ধু জীবনের জন্য অপরিহার্য। শুধু শুধু গন্ডায় গন্ডায় বন্ধু করে ক্ষতি ছাড়া কোনোই লাভ নেই। তাই বন্ধুত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বণ করা প্রয়োজন। কারণ, একজন ভাল বন্ধুই পারে জীবনকে আমূল পরিবর্তন করে দিতে। জীবন চলার পথে একশত খারাপ বন্ধুর চেয়ে একজন ভাল বন্ধু উত্তম। সে হয় আপনার প্রকৃত সুখ-দুঃখের সাথী। আপনার মর্ম সে বুঝতে পারবে। আপনি মুখ হা করলেই সে বুঝে নিতে পারবে আপনি কি বলতে বা বুঝাতে চেয়েছেন। আপনাকে সঠিক কথা, সঠিক পরামর্শ দেবে সে জন সে হল আপনারই বন্ধু। যে আপনাকে নিয়ে ভাববে। আপনাকে সময় দিবে। আপনার কাজকে নিজের কাজের মত মনে করে সুচারুভাবে সম্পন্ন করবে। আপনার সমস্যাকে নিজের সমস্যা মনে করে সমাধান করবে। আপনার পছন্দকে নিজের মত করে পছন্দ করবে। আপনার জন্য হাসি মুখে সব কষ্ট সহ্য করবে।
বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতার পাশাপাশি আমাদেরকে বিচক্ষণতারও পরিচয় দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম গাজ্জালী (রহ বলেছেন, ‘এমন লোকের সাথে বন্ধুত্ব করো যার মধ্যে পাঁচটি গুণ রয়েছে। এক. বুদ্ধিমত্তা, দুই. সৎ-স্বভাব, তিন. পাপাচারী না হওয়া, চার. বিদয়াতি না হওয়া, পাঁচ. দুনিয়াসক্ত না হওয়া।’
এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা এর একটি বাণী স্বরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘মানুষ তার অন্তরঙ্গ বন্ধুর রীতিনীতি ও আদর্শের অনুসারী হয়ে থাকে। অতএব প্রত্যেকেরই লক্ষ্য করা দরকার সে কাকে, কেমন মানুষকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে।’
বন্ধুত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরো যা প্রযোজ্য, তা হল-এক. বন্ধুর প্রতি বিশ্বাস রাখবে, দুই. সন্দেহ করবে না, তিন. রাগ করবে না, চার. কখনো বন্ধুর সাথে মিথ্যা বলবে না, পাঁচ. বন্ধুর প্রতি নির্ভরতা থাকা, ছয়. বন্ধুকে কখনো ঠকাবে না, সাত. বন্ধুর জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকবে, আট. বন্ধুর মনের কথা বুঝতে চেষ্টা করবে, নয়. বন্ধুর ছোট খাট চাওয়া গুলোকেও গুরুত্ব সহকারে পূরণ করবে, দশ. ভাল কাজে উৎসাহ দেবে, এগার. খারাপ কাজে বাধা দেবে, বারো. জীবনের ক্লান্তিলগ্নে পরামর্শ দেবে, তেরো. নিজের জন্য যা পছন্দ করবে বন্ধুর জন্যও তা পছন্দ করবে তবে ছাপিয়ে দেবে না, চৌদ্দ. মাদকাসক্ত না হওয়া।
পরিশেষে, আমাদের জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনে একজন ভাল বন্ধু অবশ্যই প্রয়োজন। যে শোনাবে আশার বাণী। আমরা শত জ্বালা, শত অপমান, শত দুঃখ নিয়েও যার কাছে ঠাঁই নিতে পারবো। একটু সম্মানজনক জায়গা পাবো। যার কাছে পাবো নিরাপদ আশ্রয়। সে হলো আমার, আপনার, আমাদের বন্ধু। একজন বন্ধুর কাছে বন্ধুর চাহিদা, মর্যাদা, গুরুত্ব কখনো কমে না। বন্ধুত্ব কখনো পুরাতন হয়না। তাই একজন ভাল বন্ধু জীবনের শ্রেষ্ঠ এক সম্পদ। একে সম্পদের মতই রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য। তাই আসুন, ভাল বন্ধু নির্বাচনের মাধ্যম আমাদের জীবনকে বর্ণিল, রঙিণ, বৈচিত্রময় এবং স্বার্থকময় করে তুলি। বন্ধুত্বের ছোঁয়ায় পবিত্র হোক আমাদের জীবন। জয় হোক বন্ধুত্বের, জয় হোক ভালবাসার। বন্ধুত্বের আলোয় আলোকিত হোক আমাদের হৃদয়ের উঠোন।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৯:৫৯
সাদাকালো টেলিভিশন বলেছেন: ভাল্ল লাগলো