নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আশা নিয়ে বসে আছি ।

রানার ব্লগ

দূরে থাকুন তারা যারা ধর্মকে পুঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দূরে থাকুন তারা যারা ১৯৭১ থেকে অদ্যাবদি বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সকল পাকিস্তানী প্রেমী , রাজাকার ও তাদের ছানাপোনা ।

রানার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাতাহারীর নাম শুনেছেন?

১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৮





মাতাহারীর নাম শুনেছেন?

ইতিহাসের বিখ্যাত নারী গুপ্তচর বা স্পাই। ১ম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জার্মানির পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ১৯১৭ সালের ১৫ অক্টোবর, ফ্রান্স তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসে এমন এক সাহসী বীরাঙ্গনা রয়েছেন,যার নয় মাসের গুপ্তচরবৃত্তি আর সশস্ত্র যুদ্ধের কাহিনী ইতিহাসের বিখ্যাত গুপ্তচর মাতাহারীর চেয়েও বীরত্বময়। জানেন সেই বীর অগ্নিকন্যার নাম?

জানলে ভালো, না জানলে ভাবতে থাকুন।
আর এই ফাঁকে তাঁর বীরত্বের কিছু গল্প শুনুন :

( কি ভাবছেন? আজ ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬শে মার্চ কিংবা অন্য কোন বিশেষ দিন কি না?
নাহ্, সেরকম কোন বিশেষ দিন নয় আজ। তবুও বলতে ইচ্ছে হলো, নিজেদের রক্তাক্ত ইতিহাসের এক সূর্যচোখ- বীরাঙ্গনার গল্প! )

১৯৭১সাল,জুন মাসে দোয়ারাবাজার সীমান্তে পাকবাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধাদের মধ্যকার তুমুল লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনী হেরে গেলে অনেকের সাথে এই মহিয়সী নারীকেও আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদাররা । দিনের পর দিন চলতে থাকে পাকি নরপিশাচ আর রাজাকার আলবদর কর্তৃক তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতন। ভেঙে না পড়ে প্রতিশোধের আগুনে ফুঁসে উঠতে থাকেন এই বীরাঙ্গনা।
একপর্যায়ে হানাদার বাহিনী ছেড়ে দিলে পরিচয় হয় মুক্তিযোদ্ধা রহমতের সাথে। তিনি নিয়ে যান সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলীর কাছে। শুরু হয় প্রতিশোধের এক নতুন অধ্যায়। জীবনের রঙ্গমঞ্চে জীবন বাজি রেখে,যেমন খুশি তেমন সাজে, কখনো পাগল কখনো ভবঘুরের বেশে পাকবাহিনীর গতিবিধির খবর পৌঁছে দিতেন মুক্তিবাহিনীর কাছে এসব তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি অপারেশন সফল করতে সক্ষম হন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু জীবন তাঁর আরও ত্যাগের! আরও কণ্টকময়! গুপ্তচরবৃত্তি করতে গিয়ে একদিন বাংলাবাজারে পাকবাহিনীর হাতে আবারও ধরা পড়েন এই বীরাঙ্গনা শুরু হয় নির্যাতনের স্ট্রীমরোলার । একটানা ৭ দিন বিবস্ত্র করে চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। লোহার রড গরম করে তাঁর নরম আদুরে শরীরটার বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গায় নরক চিহ্ন এঁকে দিতে থাকে হায়েনারা। যা আজও তাঁকে নাড়া দেয়! আজও শরীরে সেই নরক চিহ্ন বয়ে বেড়ান, অজ্ঞান অবস্থায় একসময় মৃত ভেবে পাকিস্তানিরা তাঁকে ফেলে যায়। ৭ দিন পর জ্ঞান ফিরে এলে মুমূর্ষু এই বীরাঙ্গনাকে বালাট সাব সেক্টরে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হয়।

কী ভাবছেন,এখানেই শেষ?

ভুল করছেন।অসম সাহসিনী এই নারী সুস্থ হবার পর আমুল বদলে যান! চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে এসেই পাকিস্তান বধের নেশায় আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, আরও অবিচল লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ নেন অস্ত্র চালনার। শুরু হয় অস্ত্র হাতে জীবনের আরেক অধ্যায়। পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম।

১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস, টেংরাটিলায় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হন এই বীরাঙ্গনা । বিদ্ধ হন গুলির আঘাতে। সুস্থ হয়ে আবারো অস্ত্র হাতে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। মুক্তিবাহিনীর সাথে একে একে অংশগ্রহণ করতে থাকেন আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই, বলিউরা, মহব্বতপুর, বেতুরা, দূর্বিনটিলা, আধারটিলা সহ প্রায় ৯টি সম্মুখযুদ্ধে।

এতোক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন,কে ছিলেন একাত্তরের এই অকুতোভয় গুপ্তচর আর বীর নারী যোদ্ধা? হ্যাঁ, তিনি আমাদের কাকন বিবি। খাসিয়া সম্প্রদায়ের মুক্তির বেটি বলে পরিচিত আমাদের অগ্নিকন্যা কাকন বিবি।

দেশকে যিনি এতোটা দিয়েছেন,দেশের জন্য এতোটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, জীবন বাজি রেখে যিনি পাকিস্তানিদের পরাজয় আনতে ভূমিকা রেখেছেন, সেই কাকন বিবি আজ জীবন যুদ্ধে পরাজিত, এই স্বাধীন বাংলার মাটিতেই!

স্বাধীনতার পর অভিমানে বেছে নেন এক নিভৃত জীবন। চলে যান লোকচক্ষুর সম্পূর্ণ অন্তরালে। ১৯৯৬ সালে সাংবাদিক রনেন্দ্র তালুকদার পিংকু বাংলার এই মাকে আবিষ্কার করেন ভিক্ষারত অবস্থায়।
তাঁর বীরত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে বীর প্রতীক উপাধি দেবার সিদ্ধান্ত নিলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এখনও তা গেজেটেড আকারে প্রকাশিত হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধের হাজারো গল্প অজানাই থেকে যাচ্ছে এই প্রজন্মের কাছে। কাকন বিবির মতো অন্যান্য বীর সন্তানদের সংগ্রাম আর ত্যাগের ইতিহাস জানার আগ্রহ ও সদিচ্ছা নেই বলেই আজ পাকিস্তানি লোনে শরীর ঢাকতে চায় এ দেশের তরুনীরা।

আমাদের বীরাঙ্গনাদের রক্তাক্ত শরীর মনে রাখার কোনই প্রয়োজন নেই। আসুন, তারচেয়ে বরং উৎসবগুলোকে নিজেদের রাঙাতে পাকিস্তানি মেহেদি কিনি বেশি করে। খেলার মাঠে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে প্লেকার্ড হাতে আরো চিৎকার করে বলতে থাকি love u! want you! marry me! এই না হলে আমরা বাঙালি!

সেই একাত্তরে কি হয়েছে, না হয়েছে এইসব খুঁজে খুঁজে জানার, চোখের জল ফেলার কোন মানে হয়!
চেতনা এখন এ্যালকোহলিক ঘুমে আচ্ছন্ন!
ঘুমাক!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২

এম এস আরেফীন ভুঁইয়া বলেছেন: খুব সুন্দর দেশ প্রেমের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে কাকন বিবিকে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।কাকন বিবিকে স্যালুট।

২| ১৬ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৭

শিব সত বলেছেন: লাল সালাম । আমিও প্রথম শুনলাম উনার ব্যপারে । আশেষ ধন্যবাদ আপনাকে ব্যতিক্রমি বিষয় তুলে ধরার জন্য ।

৩| ১৭ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:৪০

ইতল বিতল বলেছেন: 'কাকন বিবি' উনার নাম শুনেছিলাম। কিন্তু বিস্তারিত জানতাম না।
পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.