নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আশা নিয়ে বসে আছি ।

রানার ব্লগ

দুরে থাকুন তারা যারা ধর্ম কে পুজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দূরে থাকুন তারা যারা ১৯৭১ থেকে অদ্যাবদি বাংলাদেশ বিরধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সকল পাকিস্থানী প্রেমী গন।

রানার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সা ঝাক

২০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:০৬






আষাড় মাসের পুর্নিমা। ভরা কটালের জোয়ারে বিলের পানি যুবতির যৌবনের মত খলবল করছে। সাদা শাপালা পুর্নিমার আলোয় মেতে উঠেছে রুপ চর্চায়। বিলের এক কোনে আলম তার ছোট্ট ডিংগায় বসে আছে এক হাতে কোচ নিয়ে তিক্ষ নজর পানির নিচে। পুর্নিমার আথাল পাথাল রুপে তার নেশা নাই, তার চোখ খুর্ধাতর মত চেয়ে আছে পানির নিচে কালো কুচ কুচে মাছের পিঠের দিকে, মাছটা অনেক্ষন ধরে শাপলার আড়ালে ঘাপটি মেরে আছে, সে জানে উপরে তার মৃত্যু দুত কোচ হাতে, একটু এদিক ওদিক হলেই সা ঝাক কোচের তিক্ষ ফলে তার পিঠ ভেদ করে পেটে ঢুকে যাবে। মাঝ মাঝে বুদবুদি কাটার জন্য মাথা ওপরে তুলতে হয় কিন্তু তাও সাবধানে। পেট ভর্তি তার ডিম, আগামি হাজার পোনার মা সে, তাকে আরো সাবধান হতে হবে।

আলমের হাতের পেশি ফুলে উঠলো, শক্ত করে চেপে ধরলো হাতের কোচ টা। কোন ভাবেই এই মাছটা ফসকানো যাবে না, আমেনারে কথা দিছে বড় এক টা মাছ খাওয়াবে, আমেনার কথা মনে হতেই মনটার ভেতর ঠান্ডা এক টা বাতাস বয়ে গেল, দুই দুই বছর সাধনা করে হের পর আমেনারে বিয়া করতে পারছে আলম। ভরা গাংগের মতো যৌবন টল টল করে বউডার শরিলে। বিয়ার দিন আছিলো ঘোর অমাবস্যা। গ্রামের লোক জন মানা করছিল অমাবস্যায় বিয়া করতে নাই, মানে নাই আলম, আমেনার টল টলা হাসি আর ভরা উথাল পাথাল বুক তারে কোন কিছুই বাধা দিতে পারে নাই। কথা গুলা মনে পরলে অহনো শিরিলের মধ্যে চিলিক মাইরা ওঠে। কোচ টা শক্ত হাতে ধরে তিক্ষ চোখে পানির দিকে চেয়ে থাকে আলম, হালার কাইল্লা মাছ শাপলার তলে পাইছে কি, মাথাই তো তোলে না। বৌডা সাত মাসের পোয়াতি। গনোকে কইছে একটা পোলা বিয়ান দিব। সাত মাসে আমেনার শরিলে যে ত্যাল ত্যালা ভাব আইছে তাতে তার মোটে তর সয় না, পোলা বিয়ান দিব শুইনা নিজেরে চাইপা রাখছে, হারামি বৌডা সব বোঝে, আড়ালে মিস মিসাইয়া হাসে। হালকা ঝিমানি আসছিলো, মাথা টা নারা দিয়ে ওঠে নাহ এই রম করলে মাছ মারন যাইবো না, আইজ মাছ না নিয়া গেলে ইজ্জত থাকবে না আমেনার কাছে, ঢং করে কইবে, কইবর্তের পো গেছে মারতে মাছ, লইয়া আইছে জিয়ল গাছ। আমেনার ওই রহস্যময় হাসি তাকে আর উত্তেজিত করে, ইচ্ছা করে বুকের মধ্যে চাইপা ধইরা পিষা ফালায়। বুর বুর করে বুদ বুদি ছারলো মাছটা, আলমের ঠোঁটের কোনে হাসি খেলে গেল, সে জেনে গেছে মাছ টা কোন জায়গায় লুকিয়া আছে। ধিরে ধিরে ডিংগির কিনারে এসে দাঁড়ালো, চাদটা তার মাথার ছায়ায় আড়ালে চলে গেলো। হাতের কোচ টা ধিরে ধিরে উপরে উঠিয়ে, জোরে সমস্ত শক্তি দিয়ে ছুরে দিলো কোচ, সা ঝাক। কয়েক ফোটা পানি ছিটে এসে তার মুখে লাগলো। গায়ের সব শক্তি এক করে চেপে ধরে আছে, বিলের মাছ অনেক শক্তিশালী হয়, কিন্তু তার আমেনার মতো না, আমেনা যখন তারে সাপ্টিয়ে ধরে কোন কিছুর শক্তি নাই সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে। মনে মনে হাসে আলম, আইজ বউ কিছুতেই না করতে পারবে না। মাছটা টেনে হিচড়ে কোচ থেকে বের হতে চাচ্ছে, পারবেনা, সারা দিন ধরে কোচে সে ধার দিছে, ফলার মাথায় যে আর টা আছে ওটারে পাইন দিয়া মজবুত করছে। হালার কাইল্লা মাছ আইজ তোর ছারন নাই। মাছ যতো মোরামুরি করে আলোম ততো জোরে চেপে ধরে। ধিরে ধিরে মাছটা ক্লান্ত হয়ে যায়। টেনে তোলে আলম, আরিবাপ এতো দেখছি মাছের জম, বিশাল এক টা কাতল। খুশিতে আলমের মুখ চওরা হয়ে যায়। আইজ বউটারে কিছু ভাল মন্দ খাওয়ানো যাবে। বউ ডা খুশি হবে। ক্লান্ত অর্ধ মৃত মাছটা গলুইতে সাবধানে রেখে দেয়, পেট ভর্তি ডিম। মাছের ডিমের একটা সালুন যা রানধে আমেনা, কাইল বেইন বেলা কওন লাগবো। ডিংগতে বসে লগিতে দেয় ঠেলা, ইচ্ছা করছে উরে চলে যায়। মনে মনে গান ধরে আলম মনে যারে চায় তারে কি ভুলিতে পারি পরের কথায় গো।

অনেক্ষন ধরে পানির নিচে মাথা ডুবিয়ে ছিলো মাছটা। প্রকৃতিক নিয়মে তাকে মাথা টা তুলতে হয় বুড়বুড়ি কটার জন্য। যদিও জানে মাছ তার মৃত্যু দুত অপেক্ষায়, কিন্তু কি করবে দমে ফেটে যাচ্ছে বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য। টুপ করে মাথা তুলে শ্বাস নিয়ে আবার ডুব দেয়। এই শাপলাটার গায়ে অনেক শ্যাওলা জমে আছে, এখানে ডিম ছারলে ডিম গুলা নিরাপদ থাকবে। ডিম ছারার প্রস্তুতি নেয় মাছটা, আগামি ছানাপোনার কথা মোনে করেই মনে ভরে ওঠে মাছের, অমনি তিব্র সুচালো কিছু ঢুকে যায় তার পিঠ দিয়ে পেট পর্যন্ত, প্রথম ধাক্কাতেই তার পেট ফুটো হয়ে যায়। ধাক্কা টা এতো তিব্র ছিলো যে পেটের ভেতর জমে থাকা সব বাতাস ভুস করে মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়, সেই সাথে কিছু রক্ত। অসহ্য যন্ত্রনায় মাছটি কোচ থেকে বের হওয়ার চেস্টা করে। লেজ দিয়ে বার বার পানিতে বারি মেরে দিক পরিবর্তন করে ছুটে বের হওয়ার চেস্টা করে। পেটের ভেতর আরো বেশি করে গেথে বসে কোচ টি। মাথা লেজ সপাটে নাড়তে থাকে মাছ টি। কোন লাভ হয় না। নিজের গায়ের রক্তে পানি ঘোলা হয়ে যায়। এক সময় বড় ক্লান্ত লাগে। ধিরে ধিরে শরির নেতিয়ে আসে। ক্লান্ত মাছ ঝিমাতে থাকে। টের পায় কেউ একজন তাকে টেনে তুলছে। পেটের ভেতর ফলা গুল আরো বেশি চেপে ধরে। যন্ত্রনায় শরির কুকড়ে আসে। ঝাপসা আলয় দেখতে পায় তার হন্তা কারি কে। নির্বাক ঝাপসা দৃস্টিতে চেয়ে দেখে। আহারে ডিম গুলর কি হবে। ডিম গুল এখনো তার পেটে, আর একটু সুজুগ পেলেই ডিম গুল ছারা যেতো। লেজটা নেরে চেস্টা করব ডিংগীর পাশে গিয়ে পানিতে ঝাপিয়ে পরার। শরিরে এক ফোটা শক্তি নাই। চারিদিক কেমন আধার হয়ে আসে, অসংখ্য পোনা তার চোখে ভাসতে থাকে। মৃদু হাসি খেলে যায় মাছের ঠোটে।

আমেনা শুয়ে শুয়ে মানুষটার আসার অপেক্ষায় থাকে। মাবুষটার কথা ভাবলেই তার কেমন জানি শরিলের মধ্যে শিনশিন করে এক টা কিছু করে। মুখটা লাল হয়ে যায়। সন্ধার সময় কানের কাছে মুখ নিয়া কইল আইজ আমার বউরে মাছের সালুন খাওয়ামু। চোখ বন্ধ করে মানুষটার ফিসফিসানি উপভোগ করে আমেনা। মুচকি হাসি দিয়া বলে দেখুম নে, খালি আমারে সাপডাইয়া ধরেন, মাছ তো আমি না। যে ধরলেই কাইত। রহস্যময় একটা হাসি দিয়া মানুষটা আমেনাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে। আমেনা সুখের আবেশে ভুলে যায় সে সাত মাসের পয়াতি, সেও সারা দেয়। শরিরের প্রতিটা অংগে যেন ঝর তোলে। ঝনঝনিয়ে বাজতে থাকে শরিল।, মানুষ টার ফোস ফোস নিশ্বাস পাগল করে তোলে আমেনা কে, মজবুত হাত দিয়ে নিংড়ে নিচ্ছে যেন, অসিম এক ভালো লাগা এসে যেন আছড়ে পরে, খামচি দিয়ে ধরে, কখন যে চার হাত পা একাকার হয়ে যায় টের পায় না। এশার আজানে হুস ফেরে। লাফ দিয়া ওঠে মানুষ টা, তুই একটা ডাইনি, আমারে কি চাবিয়ে খাবি? লুংগি ঠিক করতে করতে রওনা দেয়, আইজ না গেলে হয় না, আকুতি ভরা কন্ঠে বলে আমেনা, নাহ, মাথে নারে মানুষটা। কইছি আইজ তোরে মাছ খাওয়ামু, ব্যডা মাইনসের কথার নরন নাই। কোচটা নিয়া ডাকাইতের মত চলে গেল মাছ মারতে।
শুয়ে শুয়ে চাদ দেখে আমেনা। মাঝে মাঝে পেটে হাত বুলায়। মনে মনে পোলার নাম ও রাখছে, রতন। কথা বলে রতনের সাথে, তোমার বাপে গেছে মাছ ধরতে, বিরাট মাছ আনবে, তখন দেইখ কত মজা হইবো, আকাসে পুর্নিমার চান ডা ঝক ঝক করে বড় বাসন ডার মত, যেই বাসন ডায় তার মানুষ টা খায়। সেই বাসনডার মত। ইস্টিলের বাসন কিন্তু দেখলে মনে হয় চান্দি। একটু তন্দ্রা আসে আমেনার। হঠাত মনে হলো পিঠের মধ্যে কিছু ঢুকে গেলো, ব্যাথায় শরির তিরি তির কাপছে, ব্যাথাটা সোজা পেটের মধ্যে গিয়ে থামলো। দম নিতে না পেরে আমেনার মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে, আমেনা পেট চেপে ধরে উঠে বসার চেস্টা করে। পেটের মধ্যে ব্যাথাটা মুচরিয়ে মুচরিয়ে যাচ্ছে। আমেনার তলদেশ ভারি হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আজি বাচ্চা হয়ে যাবে। জোরে চিতকার দিল আমেনা। উঠে দারাবার চেস্টা করলো আমেনা, সামনে এগিয়ে যেতেই ভয়ানক এক টা ধাক্কা তাকে মাটিতে ফেলে দিল। সে অনুভব করল তার তলদেশ থেকে তরল কিছু ধিরে ধিরে বের হচ্ছে। এক সময় সে জ্ঞ্যান হারালো। মানুষটা এই সময় কই, রতনের না দেখা মুখটা ভেসে উঠলো।

ডিংগি টা ঘাটে ভিরিয়ে এক মুহুর্ত দেরি করলো না আলম, মাছটার কানকো ধরে টেনে তুল্ল। আরি বাব্বা চার পাচ কেজি তো হবেই, পেট ভরা ডিম, অন্য সময় হলে সে মাছটা বাজারে নিয়ে যেত, ভালই দাম পাওয়া যেত, আইজ সে এটা করবে না। আমেনার শরির ভালো না ডাক্তার কইছে ভালো মন্দো খাওয়াতে। অনেক টা ছুটতে থাকে। দশ পনের মিনিটের রাস্তা সে উরে যায়। বাড়ির সামনে এসে সে থমকে যায়। বাড়িটা তার কেমন অচেনা লাগে। বউ ও বউ, ঘুমাইছো, চিতকার করে ডাকে। কোন সারা শব্দ পায় না। মনে মনে হাসে, বউডা তার ঘুম পাগল। দরজা টা সে বাহির থেকে নিজে লাগিয়ে দিয়েছিল, হুরকো টা খুলে ঘরে ঢোকে আলম, হারিকেনের মৃদু আলয়ে দেখে মাটিতে কেউ উপর হয়ে আছে, মাছটা হাত থেকে ফেলে তারাতারি যেয়ে হারিকেন নিয়ে এসে দেখে সারা ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এক পুকুর রক্তের মধ্যে আমেনা শুয়ে পরে আছে। কদম ফুলের মত শুভ্র মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে। ঝাপিয়ে পরে আলম আমেনাকে কোলে তুলে নেয়। জোরে জোরে ঝাকি দিয়ে ডাকতে থাকে বউ ও বউ কথা ক, মৃদু সারা দেয় আমেনা, অস্পস্ট আলোয় আলমের মুখটা দেখে চোখ থেকে পানি ঝরে পরে। হাত নাড়িয়ে কিছু এক টা বলে। বউ ও বউ কথা ক, কি হইছে, কথা বলতে পারে না আমেনা, তার বড্ড শিত শিত করে, হালকা আধার এসে ঢেকে দেয় তার চোখ। মাছটা আলমের পাশেই পরে আছে, আমেনার রক্ত আর মাছের রক্ত মিলেমিশে একাকার। রক্তের সাথে দুই তিন টা মাছের ডিম ভাসছে।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৫৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


দরিদ্র বাংগালীদের দু:খের জীবন, মানুষকে কষ্টকর চয়েসের মাঝে নিয়ে যায়

২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩৬

রানার ব্লগ বলেছেন: আমরা সাধারন বাংগালী আমাদের জীবনের শুরুই দুক্ষ দিয়ে।

২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৪০

রানার ব্লগ বলেছেন: করনা কাল কেমন কাটছে??

২| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৩

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে। +++

২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩৬

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন ।

৩| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৪২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর গল্পের কাহিনী । ভালো লাগলো।

২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩৭

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ, চেস্টা করছি।

৪| ২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমি কখনও মাছ ধরিনি।
তবে গ্রামে গেলে লোকজনের মাছ ধরা দেখি। বহু লোক নদী খাল বিল থেকে মাছ ধরে জীবন যাপন করছে।

সুন্দর গল্প লিখেছেন।

২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১১:৩৯

রানার ব্লগ বলেছেন: আমি নিজেও কখনই মাছ ধরি নাই। মাছ ধরাটা এক ধরনের নেশা। এটা অবশ্য ভালো নেশা। ধন্যবাদ। কেমন কাটছে করনা কাল??

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.