নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূরে থাকুন তারা যারা ধর্মকে পুঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দূরে থাকুন তারা যারা ১৯৭১ থেকে অদ্যাবদি বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সকল পাকিস্তানী প্রেমী , রাজাকার ও তাদের ছানাপোনা ।
মধ্যে রাত, আগামীকাল অংক পরিক্ষা। মাথা গুজে জানা অংক গুলো বারাবার কসছি, যাতে ভুল না হয়ে যায়, পরিক্ষা আগে হিরা স্যার বারাবার সতর্ক করে দিয়েছেন অংক প্রশ্ন হুবাহু বইয়ের মত নাও আসতে পারে, এই দুশ্চিন্তায় ঘুমের শ্রাধ্য করে অংকে মাথা ঘসছিলাম। হঠাৎ করে লোডশেডিং, সেই সময় কারনে অকারনে লোডশেডিং হতো, মার্চ মাসের ভয়াবহ গরমে বারান্দায় গিয়ে বসলাম, আমাদের চার তলা বাসার বারান্দা টা বেশ প্রশস্ত ও লম্বা ছিলো, বারান্দার এক কোনে বেশ কিছু গাছ লাগানো ছিলো, আমি গাছ গুলোর বেশ যত্ন নিতাম।
বারান্দায় বসেও ঘামছি, মনে মনে চোখ বুজে জ্যামিতির উপপাদ্যের সূত্র আওরাচ্ছি, হঠাৎ করে চোখে এক পশলা আলোর ঝলকানি এসে পরলো, আমি চোখ খুলে দেখি আমারদের বিল্ডিংয়ের উল্টো পাশের বিল্ডিং থেকে একটা বড় টর্চের আলো এসে আমার চোখে পড়েছে। আলো থেকে চোখ বাচিয়ে চেয়ে দেখলাম এক রুপসি তার নরম কোমল হাত খানা আমার উদ্দেশ্যে নাড়ছেন।
অবাক বিষ্ময়ে চেয়ে রইলাম, হাত নেড়ে নেড়ে কিছু জিজ্ঞাসা করছে, আমিও হাত নাড়তে লাগলাম, লম্বা দুই বিনুনি দুলিয়ে দুলিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে যা আমার মত হাদা গংগারামের মাথায় ঢুকছে না। বিস্ময় ঘেরা মুগ্ধতা নিয়ে চেয়ে চেয়ে তার বিনুনির দোলা দেখতে লাগলাম। মেয়েটা মনে হয় রেগে গেলো, সে হাত নাড়া বন্ধ করে গাল ফুলিয়ে তার চিকন কোমরে সরু হাত দুখানা রেখে অভিমানী চোখে চেয়ে রইলো। আমি অবশ্য হাত নাড়া বন্ধ রাখি নাই। আমার মুগ্ধতা কোন ভাবেই কাটছে না।
ধুম করে বেরসিকের মত বিদ্যুৎ চলে এলো, প্রতিবার এক ঘন্টা না হলে আসেই না আজ তার দশ মিনিটে আসতে হলো, দুঃখ দুঃখ চোখে মেয়েটার দিকে তাকালাম, এ যেন আকাশ থেকে লম্ফ দিয়ে নামা এক পরী। মেয়েটা তখনো রাগ মশৃত অভিমান নিয়ে বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে, কিছুক্ষন থেকে দূর থেকে কিল ছুড়ে দিয়ে পালিয়ে গেলো। মনে মনে সপ শাপান্ত করতে লাগলাম বিদ্যুৎ বিভাগ কে। বিষন্ন মন নিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত তিনটা মানে পাক্কা দুই ঘন্টা বিদ্যুৎ ছিলো না। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। নাহ ঘড়িটা ঠিক করাতে হবে, ভুলভাল সময় দিচ্ছে। রিভিসন আর হলো না। মন জুরে কেবলি দুই বিনুনির দোলা খাওয়া। অভিমানী দুই চোখের দৃষ্টি। টুক করে ঘুমিয়ে গেলাম কখন টেরই পেলাম না।
অংক পরিক্ষার মতো একটা জটিল বিষয় সবাই সিরিয়াস, আমিও সিরিয়াস হওয়ার চেস্টায় মসগুল কিন্তু সেই হাতের ইশারা আর দুই বিনুনি কেবলি জ্যামিতির কোন মেলনর বদলে আমার চোখে ভাসে। বীজ গনিতের সূত্র গুলো কেবলি বালিকার চোখের অভিমানী জলের সাথে গুলিয়ে যায়। অনেক কস্টে মন কে পরিক্ষার খাতায় টেনে নামালাম, মন কি শোনে আমার কথা, ফুরুত করে ছুটে যায়া আমার বারান্দায়। মেয়েটা কি এখন এসে দাড়ালো না কি ও জানে আজ আমার পরিক্ষা। নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে। বীজগণিতের বাশের অংকে আমি শুধুই বিনুনির দোল দেখি। তিন ঘন্টা বড্ড লম্বা সময়, শেষ হওয়ার নাম নাই, আমি বারবার বাহিরে তাকাচ্ছি, দপ্তরি ঘন্টা বাজাতে এত্ত দেরি কেন করছে।
একশো মার্কের পরিক্ষা আশি মার্কের উত্তর দিয়েই আমি খাতা জমা দিয়ে দিলাম, একজামিনার হতোবাক, আগের পরিক্ষা গুলোতে যে কিনা লুজ পেপার নিয়ে নিয়ে খাতার ওজন দিস্তা করেছে সে আজ দুই ঘন্টাতেই খাতা জমা দিয়ে দিছে, তিনি আমাকে যেতে দিলেন না, তিনি আমার খাতা ফেরত দিয়ে বললেন এখনো এক ঘন্টা বাকি, আমি বিরক্তি নিয়ে বসে বসে হাত চুলকাতে লাগলাম, একজামিনার কিছুক্ষন পরপর এসে আমাকে তারা দিতে লাগলেন, কই অংক করছনা কেনো, আমি দাত দেখানো হাসি দিয়ে বললাম জ্বি স্যার করছি, একটা কোন কে দুই ভাগ করতে গিয়ে দেখি জ্যামিতি বক্সটা আর বক্স নেই ওখানে সেই বিনুনি দুলছে, অনেক মনযোগ দিয়ে বৃত্ত আকলাম, পেছন থেকে হুংকার এটা কার মুখ আঁকছ, বৃত্তের লম্বা লম্বা মেয়েদের মতো বেনি থাকে নাকি, ধাম করে মাথায় একটা গাট্টা মেরে বসলো। মনে মনে বলতে লাগলাম স্যার যাই আকি আপনার কি তিন নম্বর ঘন্টাটা দিন।
ডং ডং করে শেষ ঘন্টা পরে গেলো, খাতা জমা দিয়েই ছুট, সাধারণত আমি বাসায় সরাসরি যেতাম না, পরিক্ষা শেষ হলে মা রিক্সা ভাড়া হিসেবে যা দিত তা দিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো ঘুগনি খেতাম, ঝালমুড়ি খেতাম, আইসক্রিম খেয়ে অন্যদের সাথে গল্প করতে করতে লাফাতে লাফাতে বাড়ি ফিরতাম, আজ সেই আমি আর আমি নেই, বন্ধুদের ঘুগনির আমন্ত্রণ, আইসক্রিমের লোভ সব ফেলে এক ছুটে বাড়ি ফিরে এলাম, মা অবাক, কি রে পরিক্ষা শেষ
হুম, শেষ
এত্ত তারাহুরো করছিস কেনো ঠিক মত জামা প্যান্ট খোল, কোন রকমে স্কুল ইউনিফর্ম খুলে বাসার কাপড় টা গায়ে চড়িয়ে বারান্দায় বসে পরলাম। আহারে মেয়েটা বুঝি আমার অপেক্ষায় থেকে থেকে একটু আগেই ঘড়ে ঢুকে গেছে।
কি রে খাবি না, আয়, বললি না তো পরিক্ষা কেমন হলো, আমি কোন সাড়া দিলাম না। এক পলকে ওপাড়ে বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পরে মা এসে কান ধরে টেনে হিড়হিড় করে খাবার টেবিলে নিয়ে গেলো, পিঠের উপর কয়েক দফা কিল বর্ষন করতে লাগলো, কিল গুলো কে আজ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে তারাতাড়ি খাওয়া শেষ করলাম। মা চ্যাচিয়ে উঠলো, খবরদার কোথাও যাবি না, কাল জীববিজ্ঞ্যান পরিক্ষা, যা শুয়ে পর, ঘুমা।
কাল না পরশু, কাল ছুটি, আবার বারান্দায় বসে রইলাম প্রিতক্ষিত মানোষির অপেক্ষায়।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ভাবলাম রাতে আসবে, রাত অনেক হলো, আজ লোডশেডিং ও নেই, ওপাশের বারান্দা শুন্য মরুভূমি, মরুদ্দানের আশায় চেয়ে আছি, মরিচিকায় ও সে ধরা দেয় না। মন কে শান্তনা দিলাম হয়তো আজ আসবে না কাল আসবে। এই রকম করে পরিক্ষা শেষ হয়ে গেলো, বাকি পরিক্ষায় কেবলি বিনুনির দোল বুকের এই পাশ থেকে ওই পাশে দুলে গেছে। ওপাশের বারান্দা সেই যে মরুভূমি ওতে আর জল দেয়ার তাগিদে একবারেও বৃষ্টি হলো না। এক রাশ শ্বাসকষ্ট নিয়ে কাটিয়ে দিলাম পরিক্ষাটা।
প্রাক্টিকাল পরিক্ষার শেষ দিন, বিষন্ন মনে এক গাদা অজানা প্রশ্নের অদ্ভুত উত্তর দিয়ে স্যার কে মিনতি মাখা কন্ঠে পচিশে পচিশ দেয়ার আকুতি জানিয়ে হল থেকে বাহির হলাম, আমাদের বাসার নিচ তলায় থাকে আমার ক্লাশমেট মন্টু, সে হাত নাড়িয়ে ডাকতে লাগলো এই পল্লব এই দিকে আয়, আমি বিরক্তি নিয়ে গেলাম, আমি বরাবরই এই ছেলের উপর বিরক্ত কারন অতি মাত্রায় স্মার্ট এই ছেলে।
কি রে কি বলবি, ডাকলি যে
খাবর আছে দোস্ত, মুচকি হাসি দিলো মন্টু, নে পরিচয় করিয়ে দেই আমাদের বাসার উল্টা পাশে থাকে অন্তরা, চিনিস না?
বুকটা ধক করে উঠলো, তবে কি তার নাম অন্তরা।
আন্তরা কে দেখিয়ে বললো এই যে আমার গার্লফ্রেন্ড, তোর ভাবি আরকি, উদ্দেশ্যমূলক চোখ টিপ দিলো
আমার ইচ্ছে করছে মন্টুর গলা টিপে ধরি, কিন্তু কি করে ধরবো আমার যে হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। শুনতে পেলাম অন্তরা বলছে আমি তো চিনি ভাইয়াটা কে, উনি তো রোজ হ্যাবলার মতো বারান্দায় দাড়িয়ে থাকে। সেই যে আমি তোমাকে চিঠি দিয়ে তার উত্তর জানার জন্য রাতে ইশারা করছিলাম না তখনো দেখেছি হা করে হাসছে আর হাত নাড়ছে।
মনে হয় তোমার প্রেমে পরছে, মন্টু টা হা হা করে হেসে বলতে লাগলো।
কি জানি হতেও পারে, তারপরে তো প্রাই দেখতাম বারান্দায় বসে থাকতে। যত্তসব পাগল ছাগলের কান্ডকারখানা।
ওরা দুজন মিলে প্রমের হাসি হাসতে হাসতে চলে গেলো। প্রেমের হাসি বুঝি এতোটাই ভয়ানক হয়, আমার চোখের সামবে কেবলি দুট বেনুনি দুলছে। বুকের বা পাশ টা বড্ড জ্বলে যাচ্ছে। এটা কি প্রেম না অন্যকিছু।
২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৫৬
রানার ব্লগ বলেছেন: ওই সময়কার ছ্যাকা গুলো বড্ড বেদনাদায়ক ছিলো।
২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:১২
আমি রানা বলেছেন: আহা জ্যামিতির বৃত্ত। অতীত মনে পড়ে গেল।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৩৪
রানার ব্লগ বলেছেন: আতীত বেদনাদায়ক
৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৩০
মা.হাসান বলেছেন: যে ফুল না ফুটিতে ...
শুরুতে ভেবেছিলাম ভুতের গল্প । সে যাক, গল্প ভালো লেগেছে।
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৩৫
রানার ব্লগ বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো
৪| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০০
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: মাইরালা
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৩৫
রানার ব্লগ বলেছেন:
৫| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:০৫
শেহজাদী১৯ বলেছেন: বেচারা কিশোর প্রেমিক। এমন করে কষ্ট দিতে হয়?
২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:১১
রানার ব্লগ বলেছেন: কিশোর বয়সের কষ্ট গুলোই বার্ধক্যের মধুর স্মৃতি !!!
৬| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ২:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: বাহ!!
০৫ ই মে, ২০২১ দুপুর ২:১৬
রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !!
৭| ১১ ই মে, ২০২১ সকাল ১০:৪৫
নির্জন অঙ্কন বলেছেন: সুন্দর
১৩ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:২১
রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ
৮| ১৩ ই মে, ২০২১ রাত ১২:০৪
সোহানী বলেছেন: হাহাহা....... আহারে!! এইভাবে প্রেমের ভরাডুবি!!
১৩ ই মে, ২০২১ বিকাল ৫:২০
রানার ব্লগ বলেছেন: শুধু কি ভরাডুবি একে বারে নাক মুখে চুন কালি লাগিয়ে ভরাডুবি।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৩৫
মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: আহা!! প্রেমের দোলা লাগতে শুরু করেছে মাত্র, এর মধ্যেই এতবড় ছ্যাকা!!