নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আশা নিয়ে বসে আছি ।

রানার ব্লগ

দুরে থাকুন তারা যারা ধর্ম কে পুজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দূরে থাকুন তারা যারা ১৯৭১ থেকে অদ্যাবদি বাংলাদেশ বিরধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সকল পাকিস্থানী প্রেমী গন।

রানার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ

১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:০৩

মানুষ

-কাজী নজরুল ঈসলাম


গাহি সাম্যের গান-
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান!
নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি,
সব দেশে, সব কালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।-
পূজারী, দুয়ার খোলো,
ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পূজার সময় হলো!’
স্বপন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়,
দেবতার বরে আজ রাজা-টাজা হ’য়ে যাবে নিশ্চয়!-
জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ
ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোলো বাবা, খাইনিকো সাত দিন!’
সহসা বন্ধ হলো মন্দির, ভুখারী ফিরিয়া চলে,
তিমির রাত্রি, পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে!
ভুখারি ফুকারি কয়,
ঐ মন্দির পূজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয়!’

মসজিদে কাল শিরনি আছিল, অঢেল গোস্ত-রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে আজারির চিন,
বলে ‘বাবা, আমি ভুকা-ফাঁকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা – ‘ভ্যালা হলো দেখি লেঠা,
ভুখা আছো মরো গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?’
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – ‘তা হলে শালা,
সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!
ভুখারি ফিরিয়া চলে,
চলিতে চলিতে বলে-
‘আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তোমায় কভু,
আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করনি প্রভু!
তব মসজিদ-মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবি,
মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবি!’
কোথা চেঙ্গিস, গজনি-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়?
ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া-দ্বার!
খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা?
সব দ্বার এর খোলা রবে, চালা হাতুড়ি-শাবল চালা!
হায় রে ভজনালয়,
তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!
মানুষেরে ঘৃণা করি
ও কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি
ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে,
পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! -মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন্থ; -গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো।
আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মাদ
কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর, -বিশ্বের সম্পদ,
আমাদেরি এঁরা পিতা-পিতামহ, এই আমাদের মাঝে
তাঁদেরি রক্ত কম-বেশি করে প্রতি ধমনীতে রাজে!
আমরা তাঁদেরি সন্তান, জ্ঞাতি, তাঁদেরি মতন দেহ,
কে জানে কখন মোরাও অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ।
হেসো না বন্ধু! আমার আমি সে কত অতল অসীম,
আমিই কি জানি কে জানে কে আছে আমাতে মহামহিম।
হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদী ঈসা,
কে জানে কাহার অন্ত ও আদি, কে পায় কাহার দিশা?
কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই, কাহারে মারিছ লাথি?
হয়ত উহারই বুকে ভগবান্‌ জাগিছেন দিবারাতি!
অথবা হয়ত কিছুই নহে সে, মহান উচ্চ নহে,
আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ-দহে,
তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন্থ ভজনালয়
ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয়!
হয়তো ইহারি ঔরসে ভাই ইহারই কুটির-বাসে
জন্মিছে কেহ- জোড়া নাই যার জগতের ইতিহাসে!
যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ, যে মহাশক্তিধরে
আজিও বিশ্ব দেখনি,-হয়ত আসিছে সে এরই ঘরে!

ও কে? চন্ডাল? চম্‌কাও কেন? নহে ও ঘৃণ্য জীব!
ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব।
আজ চন্ডাল, কাল হ’তে পারে মহাযোগী-সম্রাট,
তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে, করিবে নান্দীপাঠ।
রাখাল বলিয়া কারে করো হেলা, ও-হেলা কাহারে বাজে!
হয়ত গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল সাজে!
চাষা বলে কর ঘৃণা!
দেখো চাষা-রূপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কি না!
যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারাও ধরিল হাল,
তারাই আনিল অমর বাণী-যা আছে রবে চিরকাল।
দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায় নিতি ভিখারী ও ভিখারিনী,
তারি মাঝে কবে এলো ভোলা-নাথ গিরিজায়া, তা কি চিনি!
তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-মুষ্টি দিলে,
দ্বারী দিয়ে তাই মার দিয়ে তুমি দেবতারে খেদাইলে।
সে মার রহিল জমা-
কে জানে তোমায় লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে কিনা ক্ষমা!
বন্ধু, তোমার বুক-ভরা লোভ, দু’চোখে স্বার্থ-ঠুলি,
নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হ’য়েছে কুলি।
মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা-মথিত-সুধা,
তাই লুটে তুমি খাবে পশু? তুমি তা দিয়ে মিটাবে ক্ষুধা?
তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই জানে
তোমার মৃত্যু-বাণ আছে তব প্রাসাদের কোনোখানে!
তোমারি কামনা-রানি
যুগে যুগে, পশু, ফেলেছে তোমায় মৃত্যু-বিবরে টানি।

না না ভয় পাবেন না আমি এটা দাবী করছি না যে এই কবিতা আমি লিখেছি, এমন দাবী করলে মাঠা মারা যাবো জনগনের গনো ধোলাইয়ে ।

আমি কবিতাটা মাঝে মধ্যেই পড়ি। কেনো পড়ি ? উপলব্ধির জন্য ।

সেই ১৮৯৯ সালের ২৪শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) মানুষটা জন্ম নিয়ে দারদ্রতার কষাঘাতে চ্যাপ্টা হয়ে সমাজের সকল কলুষিত মুখের দর্শন করে নিজেকে খাটি কবি হিসাবে তুলে ধরেছেন আমাদের মাঝে সেই কবি আজ থেকে প্রায় একশত বছর আগে যে সমাজ ব্যাবস্থাকে তাচ্ছিল্য করে মানুষ কবিতা খানা লিখেছিলেন ঠিক একই সমাজ ব্যাবস্থা এমখনো বিদ্যমান । একচুলো পরিবর্তন বা পরিমার্জন হয় নাই । যে সমাজ নজরুল ফেলে গেছেন আস্তাকুরে আমরা আধুনিক সমাজে ঠিক একি আস্তাকুরে পরে আছি । উঠে দাড়াবার চেস্টা তো দুরের কথা ইচ্ছাশক্তিও কাজে লাগাচ্ছি না।

মসজিদে কাল শিরনি আছিল, অঢেল গোস্ত-রুটি
বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি!
এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে আজারির চিন,
বলে ‘বাবা, আমি ভুকা-ফাঁকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন!’
তেরিয়া হইয়া হাঁকিল মোল্লা – ‘ভ্যালা হলো দেখি লেঠা,
ভুখা আছো মরো গো-ভাগাড়ে গিয়ে! নামাজ পড়িস বেটা?’
ভুখারী কহিল, ‘না বাবা!’ মোল্লা হাঁকিল – ‘তা হলে শালা,
সোজা পথ দেখ!’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা!


মানুষ


মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:১০

জুল ভার্ন বলেছেন: এখন সাম্য শব্দটা সমাজ থেকে হারিয়ে গিয়েছে।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:১৫

রানার ব্লগ বলেছেন: সাম্য ??? আমিতো দেখি যে আস্তাকুরে আজ থেকে ২০০ বছর আগে ছিলাম একই আস্তাকুরে আমরা এখনো পরে আছি ।

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:১৫

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




কবিতার শেষের আট লাইন ভয়ংকর ভাবে সত্য। আমিও কবিতাটা মাঝে মধ্যেই পড়ি। কেনো পড়ি? উপলব্ধির জন্য। খুব সম্ভব আমাদের উপলব্ধি ন্যায়পাল দেশ ভাগের সময় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। নয়তো দেশের এই অবস্থা কেনো?

উপলব্ধি +++



১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:১৯

রানার ব্লগ বলেছেন: আমাদের চিন্তা চেতনা ভাবনা সবই সেই একি জায়গায় ক্যাসেটের ফিতার মতো আটকে আছে ।


তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!
মানুষেরে ঘৃণা করি
ও কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি
ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে,
পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! -মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ এনেছে গ্রন্থ; -গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো।

৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:২৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: সাম্যের অস্তিত্ব বিনিল হয়েছে, বেড়েছে শুধু ব্যবধান।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৫০

রানার ব্লগ বলেছেন: তা এতোটাই বেড়েছে যে এখন দুরত্ব আর খালি চোখে দেখা যায় না ।

৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৩৭

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

আসিতেছে শুভদিন
দিনে দিনে বহু বাড়িতেছে দেনা,শোধিতে হইবে ঋণ!

১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৫০

রানার ব্লগ বলেছেন: শুভদিনের প্রতিক্ষায় কেটে গেলো ৩০০ বছর আর কতো দূরে হে পাঞ্জেরী ।

৫| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৪৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: " পরের কারনে স্বার্থ দিয়া বলি ,
এ জীবন-মন সকলি দাও।
তার মত সুখ কোথাও কি আছে,
আপনার কথা ভূলিয়া যাও" - এই হওয়ার কথা ছিল মানুষের জীবনের-ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ।

তবে মানুষ বর্তমানে ভোগবিলাসে ও আপনজনে এমন ভাবে মজে গেছে পরের জন্য কিছু করার সময় বা চিন্তা করারও সময় নেই, কিছু করা দূরে থাক।

চমতকার পোস্টের জন্য +++।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৫১

রানার ব্লগ বলেছেন: দিনে দিনে বহু বাড়িতেছে দেনা,শোধিতে হইবে ঋণ!

৬| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: কাজী নজরুল ইসলাম গ্রেট কবি।

৭| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:৫৯

সোবুজ বলেছেন: এই সকল কবিতা এখন আর পাঠ্য পুস্তকে নাই।

১৮ ই এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১০:৫৩

রানার ব্লগ বলেছেন: থাকা উচিৎ !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.