নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আশা নিয়ে বসে আছি ।

রানার ব্লগ

দুরে থাকুন তারা যারা ধর্ম কে পুজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দূরে থাকুন তারা যারা ১৯৭১ থেকে অদ্যাবদি বাংলাদেশ বিরধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সকল পাকিস্থানী প্রেমী গন।

রানার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ জহিরের ফাঁশি

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:১৩




সকাল থেকে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে । কন্ডেম সেলের উঁচু জানালা থেকে হালকা জলের ছিটা এসে জহিরের গায়ে লাগছে । পাক্কা নয় বছর ধরে একই সেলে আছে । আট বাই আট একটা খোপের মতো সেলের ভেতর হাটু মুড়িয়ে বসে উঁচু জানালার দিকে তাকিয়ে আছে জহির । সময়ের কোন হিসাব নাই । সন্ধ্যা নামে রাত হয় আবার দিন আসে । তার জীবনের পরিবর্তন বলতে কেবল একটা চড়ুই পাখি । রোজ সে ওই উঁচু জানালায় এসে বসে । কিচমিচ করে কিছুক্ষন জহিরের সাথে কথা বলে । মাঝেমধ্যে সাহস করে নিচে নেমেও আসে । আজ মনে হয় আসবে না । সকাল থেকে যে হারে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে ওইটুকু চড়ুই পাখির না আসার সম্ভাবনাই বেশি । তবুও জহির চেয়ে থাকে তার ক্ষিন আশা চড়ূই পাখিটা আসবে । সকালের নাস্তা থেকে রুটির দুই টুকরা সে রেখে দিয়েছে যদি জানালার শিকের ফাঁক গলে নিচে নামে তাহলে খেতে দেবে । এই নয় বছরের জীবনে এক এই চড়ুই পাখি তার স্বাক্ষাত প্রার্থী । ঘাড় উঁচু করে একমনে চেয়ে থাকে জহির । বৃষ্টির ছটা এসে চোখে পরে । চোখে জ্বালা ধরে যায় । তবুও পলক ফেলে না জহির। ওর ভয় যদি পলকের ফাকে চড়ুই পাখিটি চলে যায় ।

ঘটাং করে সেলের দরজায় শব্দ হয় । একধ্যনে উঁচু শিকের জানালায় চেয়া থাকা জহিরের ধ্যান ভাঙ্গে ঘটাং শব্দে । খানিকটা বিরক্ত হয়ে দরজার দিকে তাকায় । দরজার সামনে জেলের মেঝ সাব দাঁড়িয়ে । সাথে আরো দুইজন । জিজ্ঞাসু চোখে তাকায় জহির । মেঝেসাব বোরহান উদ্দিন মাথা নিচু করে সেলের ভেতর ঢোকে । সামান্য হাশি দেয়ার ভান করে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে জহিরের দিকে । জহিরের মনে হলো সব শব্দ কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো । কোথায় কোন শব্দ নাই । খুক করে কাশি দিয়ে শব্দহীনতার অসত্বি কাটিয়ে জহির জিজ্ঞাসা করলো, কিছু বলবেন স্যার !
- ভালো আছো জহির, ভাড়ি গলায় জিজ্ঞাস করলো বোরহান
- জ্বে ভালো আছি , মাথায় নাড়ায় জহির
বোরহান উদ্দিন কোন রকম ভনিতা না করে সর্বচ্চ সম্ভব শান্ত গলায় জহির কে বললেন, আজ রাতে তোমার ফাঁশি কার্যকর হবে । রাস্ট্রপতি বরাবর তোমার আবেদন রাস্ট্রপতি গ্রহন করেন নাই ।
জহির কোন কথা না বলে আবার সে উঁচু জানালার দিকে তাকিয়ে থাকলো। চড়ুই পাখিটা কি আজ আসবে না? এখনো অবশ্য সময় আছে। মাঝেমধ্যে দেরি করে । হাতের ভেতর রুটির টুকরা দুইটা শক্ত করে ধরে থাকলো ।
বোরহান উদ্দিন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উঁচু গলায় আবার জিজ্ঞাসা করলো জহির তুমি কি আমার কথা শুনতে পাইছো?
জহির মাথা ঘুড়িয়ে জেলারের দিকে তাকিয়ে বললো, শোল মাছের ঝোল আর আমড়া টকের ডাল দিয়ে ভাত খাইতে মন চায় স্যার। শেষ খাওন খাওয়াবেন না ?
বোরহান উদ্দিন জহিরের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন না। তিনি চোখ নামিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলেন হ্যা ব্যাবস্থা করছি। তুমি আর কিছু চাও? কারো সাথে কথা বলতে চাও?
- স্যার চড়ুই পাখি টা কি আজ আর আসবেই না?
বোরহান উদ্দিন কিছু না বুঝে জেল পুলিশের দিকে তাকালেন তারাও মাথা নেড়ে বুঝালো কিছু জানে না । তুমি তোমার মেয়ে স্ত্রীর সাথে দেখা করতে চাও?
- চড়ুইটার সাথে কিছু কথা ছিলো গেল হপ্তায় চড়ুইটার পায়ে ব্যাথা ছিলো সারলো কি না কে জানে? বিড়বিড় করে বলতে বলতে জহির কাঁত হয়ে শুলো। স্যার দরজাটা বন্ধ করে দেন ঠান্ডা বাতাসে শীত লাগে ।

সেকেন্ড জেলার বোরহান উদ্দিন ৩৩ নম্বর সেল থেকে চিন্তিত মনে বেড়িয়ে এলেন । তিনি এই আসামী কে অনেক দিন ধরে দেখছেন । এই জেলে তিনি পাঁচ বছর ধরে আছেন । এই পাঁচ বছরে কেউই জহিরের সাথে দেখা করতে আসে নাই। জহিরের কেস ফাইল বলে সে তার প্রথম স্ত্রী কে নিজ হাতে খুন করেছে । প্রথম স্ত্রীর ভাইদের করা মামলায় সে ধরে পরে এখন ফাঁশির অপেক্ষায় । কেন যে সে তার প্রথম স্ত্রী কে খুন করে এর কোন কারন রাস্ট্রপক্ষ বাহির করতে পারে নাই । জহিরও বলে নাই । অনেক ভাবে তার কাছ থেকে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু জহিরের একই কথা লাইলির মৃত্যু তার হাতে লেখা ছিলো তাই মৃত্যু হইছে সব সৃস্টিকর্তার বিধান ।

দুপুরের দিকে একজন সেন্ট্রি কে ডেকে বললেন বাজার থেকে আমড়া আর সোল মাছ কিনে আনতে । এই ধরনের রান্না তিনি তার নিজের বাসায় করান । মৃত্যুপথ যাত্রীরা একটা ভালো খাবারের স্মৃতি নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে গেলো এটাই তিনি চান। তার স্ত্রী আঞ্জুমানারার হাতের রান্না অমৃতসম । বোরহান উদ্দিন মাঝে মাঝেই তার স্ত্রী কে বলেন টেলিভিশনে কতো রান্নার অনুষ্ঠান হয় তাতে অংশ নিতে। কিন্তু আঞ্জুমানার কোন গাইগুই নাই । খালি হাসে। বলে এই সব ছাতামাতা রান্না কে খাবে ? বোরহান উদ্দিন তার ছাত্রজীবনের চার বছর মেসে খেয়ে কাটিয়েছেন তাই তিনি খুব ভালো করেই জানেন ভালো রান্না আর খারাপ রান্না কাহাকে বলে । তিনি গোপনে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তার স্ত্রীর রান্নার সুখ্যাতি করে মেইল করেছেন কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন উত্তর তিনি পান নাই । তিনি অবশ্য হাল ছাড়ছেন না। তিনি ফেইসবুকে আঞ্জুমান রান্নাঘর নামে একটা পেইজ খুলে তাতে প্রতিদিনের খাবারের ছবি দেন। বেশি লাইক টাইক পরে না ।

সেন্ট্রি আধাঘন্টা পর ফিরে এসে বললো স্যার শোল মাছ ও নাই আমড়া ও নাই । রুই মাছ আর আলু আছে বাজারে ওইটাই দেই । বোরহান উদ্দিন অসম্ভব বিরক্ত হয়ে একটা ধমক লাগালেন সেন্ট্রী কে । যত্তসব অকম্মার দল । একজন মৃত্যু পথযাত্রী সোল মাছ খাইতে চাইছে তার রুই মাছ দিয়ে খাওয়াবে এদের কি কান্ডজ্ঞ্যান নাই নাকি ? তিনি নিজেই মটর সাইকেল নিয়ে স্থানীয় বাজারে গেলেন শোল মাছ আর আমড়া খুজতে । সমস্ত বাজারে কোন মাছই নাই । তন্য তন্য করে খুজেও কোন মাছ পেলেন না । ক্লান্ত হয়ে বিকেলের দিকে কোয়ার্টারে ফিরে এলেন । ভিষন চিন্তায় অস্থির কি করে তিনি জহিরের শেষ ইচ্ছা পুরন করবেন বুঝতে পারছেন না । বসার ঘরের সোফায় ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পরলেন । আঞ্জুমানারা এসে বোরহান উদ্দিন কে ক্লান্ত দেখে মাথা হাত বুলিয়ে দিলেন । কিছু খাবা না? আর তুমি যে শোল মাছ আর আমড়া লোক দিয়ে পাঠাবা আমাকে জানাবা না ? বোরহান উদ্দিন চমকে লাফিয়ে উঠলেন । শোল মাছ আর আমড়া কে এনে দিল? চোখ বড়বড় করে জিজ্ঞাসা করলেন ।
- কি যেন নাম বললো, আঞ্জুমানারা মনে করতে লাগলো ।
- জেলের কোন সেন্ট্রী ?
- না , না, কি জেন নাম , ও হ্যা মনে পরছে । জহির, বললো স্যার কে আমার নাম বললেই চিনবে । লোকটা কিন্তু ভালো মাছ চেনে একদম টাটকা মাছ এনেছে। এই অসময়ে শোল মাছ পাওয়াই যায় না। ওকে দিয়ে মাঝেমধ্যে মাছ আনিও তো তোমার অফিসের লোক কি সব বাজার করে অর্ধেক থাকে পচা ।
- জহিরের নাম শুনে বোরহান উদ্দিন চমকে গেলেন, জহিরের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব না জেলের তালা খুলে বাজার করে দিয়ে যাওয়ার। তিনি তার স্ত্রী কে জিজ্ঞাস আকরলেন জহির দেখতে কেমন।
- কি জানি দরজার ওপাশ থেকে দিয়ে গেলো , বসতে বলেছিলাম বসলো না , বললো কাজ আছে অনেক সময় নাই ।
বোরহান উদ্দিন তার স্ত্রী কে কিছুই বললেন না আর । আঞ্জুমানার শত অনুরোধেও কিছু খেলেন না । তার আসলে ক্ষুদাটাই নাই । তিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলেন । সন্ধ্যার দিকে উঠে স্ত্রী কে ডেকে বললেন একটা টিফিন ক্যারিয়েরে করে শোল মাছের ঝোল আর আমড়ার ডাল সেই সাথে একজনার পরিমানের ভাত দিয়ে দিতে ।

বোরহান উদ্দিন রাত আটটায় সেন্ট্রি কে দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিলেন জহিরের সেলে । তার এখন অনেক ব্যাস্ততা। জেলের প্রধান জল্লাদের নাকি ভিষন পেটে ব্যাথা তাই সে আজ ফাঁশি দিতে পারবে না । গতো তিনদিন ধরে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর ব্যাটা এখন পেটে ব্যাথায় পরবে এইটা কোন কথাই না । তিনি ছুটলেন প্রধান জল্লাদের সেলে । প্রধান জল্লাদ পেট চেপে ধরে জেলের মাটিতে গরাগড়ি খাচ্ছে । বোরহান উদ্দিন কে দেখে মুখ ব্যাকিয়ে থাকলো । দেখে মনে হচ্ছে তার সমস্তা ব্যাথা মুখে পেটে না ।
- সামসু শেষ সময়ে এই পেট ব্যাথার ঘটনা টা কি , প্রচন্ড রেগে জিজ্ঞাসা করলেন বোরহান উদ্দিন
- স্যার আইজ আমারে মাফ দেন , পেটের মধ্যে কুত্তায় কামড়ায় আপনি ইদ্রিসরে দিয়া কাম সারেন ।
- ইদ্রিস কি পারবে, এর আগে তো ও নিজে কোন ফাঁশি দেয় নাই ।
-পারবে স্যার, সোজা কাম, গলায় রশি দিয়া ঝুলায় দেবে, না পারলে ওঁরে ঝুলায় দিয়েন । কিন্তু আমি স্যার পারবো না আইজ ।
কিছুক্ষন সামসুর দিকে তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করলেন সামসু সত্য কথা বলছে না মিথ্যা অভিনয় করছে। সতের খুনের আসামি সামসু , একশ পচিশ বছর জেল হইছে এর । এই লোক সত্য কথা বলার কেউ না । ইদ্রিস কই, ডাকো ওরে । সামসুর পেছন থেকে অন্ধকারের মধ্য থেকে খুক করে কাশি দিয়ে উঠলো ওস্তাদের পিছেই আছি স্যার । আপনি অনুমতি দিলে একজন না বিশ জনরে একি সাথে ফাঁশি দিতে পারি । ফাঁশি দেয়াটা যেন একটা আনন্দময় কোন কাজ এমন ভাবে বললো ।

সবকাজ সম্পন্ন করতে করতে রাত এগারোটা বেজে গেলো । এর মধ্যে জহির কে তওবা পরিয়ে মসজিদের ইমাম সাহেব প্রস্তুত হয়ে আছেন । জেলের ডাক্তার এসে খুব তরিঘরি করছেন । তার মেয়ের জন্মদিন, ফাঁশি তাড়াতাড়ি দেয়ার জন্য উশখুশ করছেন। জহিরের বাড়ির লোকজন কে খবর দেয়া হয়েছে তারাও এসে হাজির । ফাশীর মঞ্চে এক হাজার ভোল্টের লাইট জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। আলোর বন্যা লেগে গেছে ফাঁশির মঞ্চে । বোরহান উদ্দিন খুবি অসত্বিবোধ করছেন। তিনি তার রুমে পায়চারি করছেন। কিছুক্ষন পরে সেন্ট্রি এসে বললো স্যার জহির কে মঞ্চে আনা হয়েছে । বোরহান উদ্দিন নিজেকে শান্ত করে অফিস থেকে বেড়িয়ে মঞ্চের দিকে গেলেন। ডাক্তার , ইমাম , সরকারি উকিল এরা সবাই তার অপেক্ষায় আছে। ডাক্তার সাহেব বারবার ঘড়ি দেখছেন । বোরহান উদ্দিন এসে দাড়াতেই ফাশির মঞ্চে জহির তাকে দেখে হাসি দিয়ে বললো স্যার ম্যাডামের হাতের রান্না অনেক ভালো , জীবনেও এমন স্বাদের রান্না খাই নাই। ম্যাডাম কে বলবেন পেট ভড়ে খাইছি । বোরহান উদ্দিন কোন জবাব দিলেন না। তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে থেকে ইশারায় কাজ শেষ করতে বললেন ইদ্রিস কে । তার সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে । তিনি আর দাড়িয়ে থাকলেন না। ডাক্তার মৃত্যু নিশ্চিত করতেই তিনি তার অফিসে ফিরে গেলেন । সরকারি সব আইনি কাগজ পত্রে সাইন করে লাশ হস্তান্তরের কাজ দ্রুত করার জন্য ফাইল পাঠিয়ে দিলেন। তিনি আদেশ দিলেন সরকারি এম্বুলেন্সে করে যেন জহিরের লাশ তার দেশের বাড়িতে পাঠানো হয় । সব কাজ শেষ হতে হতে রাত একটা বেজে গেলো। তার অস্থিরতা এখনো কাটে নাই। একমন সিগারেট টানতে লাগলেন । ডাক্তার আর সরকারি উকিল অনেক্ষন ধরে কিছু বলার চেষ্টা করছে। বোরহান উদ্দিন ওনাদের দিকে তাকিয়ে থেকে মাথা নেড়ে চলে যেতে বললেন ।

জেলের ভেতর একদম নিশ্চুপ অবস্থা। একটা ঝিঝি পোকাও ডাকছে না । ফাশির কাজে যারা ছিলো তারাও চলে গেছে । একটু ঝিমুনি মতো লেগে গেলো বোরহান উদ্দিনের । দূরে বুটের ঠকর ঠকর পায়ে দৌড়িয়ে আসার শব্দ আসছে। বোরহান উদ্দিনের কামরার সামনে এসে থেমে গেল। ব্যাস্ত হাতে দড়জায় টোকা দিতে থাকলো । ঝিমুনি কাটিয়ে জেগে গেলো বোরহান উদ্দিন, কে , কড়া গলায় জিজ্ঞাস করলেন। ওপাশ থেকে উত্তর এলো স্যার আমি মোতালেব, সেন্ট্রি নম্বর সাত শো চাইর । বোরহান উদ্দিন বিরক্ত হয়ে বললেন আসো ভেতরে আসো । মোতালেব হুড়মুড় করে কক্ষে ঢুকে হাপাতে লাগলো, তার চোখে স্পস্ট ভয় আর অস্তিরতা। বোরহান উদ্দিন কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞাস করলো কি ব্যাপার কি হইছে মোতালেব ,
- স্যার জহির চোখ বড়বড় করে বললো
-হ্যা জহিরের ফাঁশি হয়ে গেলো তো । ওর লাশ কি এখনো এম্বুলেন্সে পাঠাও নাই , মেজাজ খারাপ করে জিজ্ঞাসা করলো বোরহান উদ্দিন
- না স্যার জহিরের ফাঁশি হয় নাই স্যার। ও তো ওর সেলেই আছে। একটু আগে দেখে এলাম, আমারে জিজ্ঞাস করে মোতালেব ভাই স্যার রে বলেন আমারে কখন নিবো ।
বোরহান উদ্দিন চমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। কি বলে এই সব । তিনি নিজের চোখে সব দেখেছেন ডাক্তার উকিল মৌলানা সবাই ছিলো । তিন জোড়ে একটা ধমক লাগালেন মোতালেব কে। কাজের সময় গাজা টাজা খাওয়া বন্ধ করো। এর পর এই রকম হলে আমি তোমার চাকরী খাবো।
- না স্যার না, আল্লার কসম, জহির তার সেলে বইসা আছে আমি নিজের চোক্ষে দেখছি । আপনি একটু আসেন স্যার । আমার ডর লাগছে স্যার ।
বোরহান উদ্দিন উঠে দাড়ালেন এইসব ব্যাপার কে তিনি একদম গুরুত্ব দিতে চান না। সাইকোলজিক্যালি এমন হতে পারে । জীবিত মানুষ এর থেকে মৃত মানুষ বেশি ভয় তৈরী করে। তিনি মোতালেবের সাথে রওনা দিলেন, কই দেখি তোমার জহির। যতসব ভিতুর ডিম। বোরহান উদ্দিন জোর পায়ে হেটে জহিরের কন্ডেম সেলের দিকে গেলেন পিছনে মোতালেব । জহিরের সেলের ভেতর ঘোর অন্ধকার । কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। তিনি মোতালেবের দিকে তাকিয়ে বললেন কি কোথায় তোমার জহির। মোতালেব কাপা হাতে ইশারা করে দেখালো।
-স্যার আমারে কখন নেবেন ফাঁশি দিতে। সেই যে কইলেন আর তো আইলেন না। অন্ধকার সেলের ভেতর থেকে শোনা গেলো । বোরহান উদ্দিন স্পস্ট দেখতে পেলেন সেলের অন্ধকারে কেউ একজন বসে আছে যে দেখতে সম্পুর্ন জহিরের মত। আরো ভালো করে দেখার জন্য সেলের আরো কাছে গেলেন । ওপাশ থেকে জহির বলে উঠলো স্যর ম্যাডামের কাছে যে শোল মাছ আর আমড়া দিয়ে আসলাম রান্নার জন্য খাইতে দেবে না ?

জেলার বোরহান উদ্দিনের পায়ের শক্তি নিমিষেই যেন ফুড়িয়ে গেলো । তিনি সেলের দেয়ালে হাত রেখে বসে পরলেন। মাথা উঁচু করে আর একবার দেখার চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না। কন্ডেম সেলের পাশেই গড়িয়ে পরে গেলেন।

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩৩

মিরোরডডল বলেছেন:




রানা এটা কি পড়লাম !!!
চমৎকার লেখা ।
মনে হচ্ছে হুমায়ুন আহমেদের লেখা পড়লাম ।
ওয়েল ডান রানা ।


১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩৮

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !!! B-)

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:১৯

জুল ভার্ন বলেছেন: অসাধারণ সুন্দর লেখা!!! +

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:২১

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৩১

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: Just Wow. ♥️

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৩৪

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !

৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৩৪

বিটপি বলেছেন: অসাধারণ, মনে হচ্ছিল যেন চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় দেখছি।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:৩৮

রানার ব্লগ বলেছেন: হা হা হা !!!! বুঝলাম না সবাই কারো না কারো সাথে মেলাতে চাচ্ছে !!!!

ধন্যবাদ !!!!

৫| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: প্রথমে পোস্টে প্লাস।
খুবই ভালো লিখেছেন আপনি। যদিও পড়তে মেলা সময় নিলাম।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৯

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !!!!

৬| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৭

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


পড়তে খুব ভালো লেগেছে।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩২

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ!

৭| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৫৪

শেরজা তপন বলেছেন: অবশ্যই ভাল লিখেছেন না হলে -একবারে এতবড় লেখা পড়ার ধৈর্য্য থাকেনা।। মন খারাপের গল্প হলেও পড়ে মজা পেলাম।


(*আমার চোখে কিছু সহজ শব্দের বানান ভুল দৃষ্টিকটু ঠেকেছে; যেমন 'ফাঁসি' কখনো হয়েছে -ফাশী,ফাশি,ফাঁশি)

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৩

রানার ব্লগ বলেছেন: কষ্ট করে পড়েছেন এই জন্য ধন্যবাদ!! বানানের বিষয় টা হলো আভ্র দিয়ে লেখি তারফলে সাজেস্ট বানান গুলো অটমেটিক বসে যায়। অবশ্যই ঠিক করে নেব।

৮| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১৮

কামাল৮০ বলেছেন: পড়লাম।ভালো লেখা।ফাঁসি বন্ধ করার সময় এসে গেছে।এটা সবার জন্য অমানবিক।বেঁচে থাকার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩১

রানার ব্লগ বলেছেন: জ্বি আপনার সাথে আমিও একমত!! ধন্যবাদ পড়ার জন্য!

৯| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১১:১০

অঙ্গনা বলেছেন: ব্যাপার টা কেমন হইলো ?
মানে জহিরের আত্মা ছিল ?
সেই মাপের দারুণ লেখা।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:২৮

রানার ব্লগ বলেছেন: আমাদের আশেপাশে এমন অনেক বিষয় থাকে যার আসলে কোন ব্যাখ্যা নাই। ধন্যবাদ।

১০| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৩৯

অপ্‌সরা বলেছেন: মনে হয় আয়নাবাজী হয়েছে।
জহিরের বদলে অন্য কাউকে ফাঁসি দিয়ে দেওয়া হয়েছে তাই না?

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৭:৪৭

রানার ব্লগ বলেছেন: কি জানি এটা জানে জেলার সাব!! ;)

ধন্যবাদ!!

১১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ৮:২১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: একটা চমক আছে ! মেটাফরিক লেখা, পাঠকে ভাবায়।
বেশ লেখা, ভালোলাগা।


শুভ কামনা।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৪৩

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ আপা !!!

১২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গল্প অসাধারণ। একটা খটকা লাগল জল্লাদের ব্যাপারে। ১৭ খুনের আসামীর তো ফাঁসি হওয়ার কথা।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:২৪

রানার ব্লগ বলেছেন: এই রকম ম্যাসিভ সাইজের খুনীর ফাঁশি কেনো হয় না তা আদালত জানে । সাধারনতো জেলখানায় জল্লাদ তারাই হয় যারা এমন ম্যাসিভ খুন করে আজীবন জেলের ঘানী টানছে । ধন্যবাদ !!!

১৩| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:

দারুন গল্প। এটার পার্ট-২ করলেও ভালো হবে।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১২:৩৭

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !!! কিছু ব্যাপার রহস্য থাকাই ভালো ।

১৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ১২:৫৩

সোনালি কাবিন বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৩:৪৪

রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !

১৫| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:০৮

শ্রাবণধারা বলেছেন: গল্পটা দারুন হয়েছে। তবে গল্পের নামটা একটু যেন কানে বাজলো।

"আজ জহিরের বিয়ে" এটা শুনতে যেমন স্বাভাবিক লাগে, "আজ জহিরের ফাসি", এটা স্বাভাবিক লাগে না। কারো নাম ধরে আমরা যখন কিছু বলি তখন ধরে নেয়া যায় যে এটা একটা ভাল কিছু বা অন্তত খারাপ কিছু নয়। আজ রাজাকারের ফাসি - এটা শুনতেও অস্বাভাবিক লাগে না। কিন্তু একটা সাধারন মানুষের আজ ফাসি - ব্যাপারটা ভালো শোনায় না।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৯

রানার ব্লগ বলেছেন: গল্পটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.