নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূরে থাকুন তারা যারা ধর্মকে পুঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দূরে থাকুন তারা যারা ১৯৭১ থেকে অদ্যাবদি বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সকল পাকিস্তানী প্রেমী , রাজাকার ও তাদের ছানাপোনা ।
গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস অর্থাৎ কি না ওখানেই খতম কিন্তু আসলে ওটা খতম না , নতুন শুরুর অশনি সংকেত । স্যারের ক্লাশে বসে থাকতে থাকতে হাতে পায়ে ঝিম ধরে যায় । অপেক্ষায় থাকি কখন তিনি লম্বা শুর তুলে বলবে বুজছো ও ও ও । আজকে সম্ভাবত স্যার তার জীবনের আখেরি ক্লাশ নিয়ে নিচ্ছেন শেষ করতেই চাচ্ছেন না ।মোবাইল টা পকেটেই আছে , ক্ষীণ আশা যদি সেই কিন্নরি আর একবার ফোন দিয়ে বলেন কি ব্যাপার মিস কল দিচ্ছেন না কেনো । বলতেই পারে, জগতে কতো কিছুই না হয়, শোনা কথা লম্বা মানুষ বয়স হলে ঝুকে ছোট হয়ে যায় অথচ হিমালয়ের কতো বয়স হলো ঝুকে ছোট হবার পরিবর্তে তিন ফুট বেশি লম্বা হয়ে গেছে । কিছুক্ষন পর পর পকেটে হাত বোলাচ্ছি । কিন্তু জগতের কতো কিছু হবার মতো আমার জন্য কিছুই হচ্ছে না । সারাদিন কেটে গেলো, অভদ্র মোবাইল একবারো বেজে উঠলো না অথচো দোকানে রাস্তায় পার্কে বাগানে কেউ না কেউ মোবাইল হাতে পৃথিবীর সকল সুখের একক মালিকানা নিয়ে হাত পা দুলিয়ে ঘাড় নাড়িয়ে চোখ নাচিয়ে শরীর দুলিয়ে অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে অথচ আমি পকেটে আস্ত একটা মোবাইল নিয়ে নির্বাক ভবকান্ত কুমার হয়ে বসে আছি ।
অপেক্ষার প্রহর লম্বা হতে হতে পুলিশের হাতের থেকেও লম্বা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু হাতে কিছুই ধরা পরছে না । আশা একদম ছেড়েই দিয়েছি। অমন মিষ্টি ঝর্নার মতো কন্ঠ যার সে কি আর আমাকে মনে রাখবে? না রাখার সম্ভাবনাই বেশি । মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকাতে তাকাতে মোবাইলটা কে এখন অসহ্য লাগা শুরু করেছে । গরম আর মিষ্টি কণ্ঠি দুইজনি আমার ধৈর্যের পরিক্ষা নিতে লাগলো । আমি ও পন করলাম, বিনা যুদ্ধ নাহি দেব সুতাগ্র মেদিনী । আমি কল করে ফেললাম । লম্বা টানে টু টু বেজেই যাচ্ছে , ধরার নাম গন্ধ নাই । এমন কেনো, কল আসলে ধরবে , দুইটা বকা ঝকা দেবে , কেনো কল করলাম , এতো বড় সাহস আমার কি করে হলো বা বামন হয়ে আকাশের চাঁদের দিকে নজর কি করে দিলাম , চোখে এতো পাওয়ার আসলো কই থেকে ইত্যাদি । তা না মোবাইল বেজে বেজে নিজেই চুপ হয়ে গেলো । ধুর ভাল লাগে না । তিন দিন ধরে ফোন টা পকেটে নিয়ে ঘুড়তে ঘুড়তে ওটা এখন বোঝার মতন লাগছে । ফোন টা বিছানায় ফেলে রেখে চিলে কোঠার বাহিরে গিয়ে দাড়ালাম । তিব্র গরমে জান যায়া যায় । বুক চিড়ে চাপা নিঃশ্বাস এসে ফুরুত করে বেড়িয়ে গেলো ।
চতুর্থ দিন, কোন ফোন এলো না । খেয়াল করলাম , আমার কেমন কান্না পাচ্ছে । বুকের ভেতর চাপা কষ্ট মাঝে মাঝেই নিঃশ্বাসের সাথে ফোপানোর মতো করে বেড়িয়ে আসছে । আচ্ছা একটা মানুষ চাচ্ছে যেন অন্য মানুষ টা তাকে মনে করুক কিন্তু সেই মানুষ টা কেনো চাচ্ছে না মনে করতে । এটা কেমন কথা । এই মানুষটার চাওয়ার কি কোন দাম নাই । চিলে কোঠার টিনের ছাদের বলা নেই কওয়া নেই বড় বড় ফোটার বৃষ্টী এসে পরতে লাগলো সেই সাথে উড়িয়ে নেয়া বাতাস । গরমে গা ঘেমে স্যাঁত স্যাঁতে হয়ে গেছিলো। বৃষ্টী রফোটা পরতেই দৌড়ে ছাদে চলে এলাম । আহ বৃষ্টী, কি যে মিষ্টি ।দু হাত ছড়িয়ে বৃষ্টী টা সারা শরীরে মেখে নেবার সব চেষ্টা করলাম ।বাড়ির আশে পাশের ছাদেও হৈ হুল্লর পরে গেছে বৃষ্টীতে ভেজার । কি যে এক আনন্দ । হুট করে এসে হুট করে বৃষ্টী গায়েব । যাহ, বাবা, এ আবার কেমন তরা । আধা কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম । আবার যদি বৃষ্টী আসে । হঠাৎ কানে ধরা পরলো টিং টিং মোবাইলের মৃদু শব্দ । ছুটে গিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখি সেই কল, যে কলের অপেক্ষায় আমি এক পায়া কানি বক হয়ে তপস্যায় ছিলাম । কাঁপা হাতে রিসিভ করলাম ।
এই লোক, শয়তান, পাজী, বেহায়া, অসভ্য , বারণ করেছিলাম না আমাকে কল করতে, কল করলেন কেনো ? ও পাশ থেকে মাটিতে পরে কাচের প্রিচ ভেঙ্গে যাওয়ার মতো করে ঝনঝনিয়ে উঠলো । আমি থতমতো খেয়ে ফোন টা কেটে দিলাম । কি জানি কি বলতে আবার কি বলে ফেলি, না বাবা মাফ চাই দোয়া চাই । ফোন আবার বেজে উঠলো ।এইবার কিছুটা সাহস ধার করে রিসিভ করলাম ।
আপনার সাহস তো কম না, আমার মুখের উপর কল কেটে দেন , একে তো আমাকে ফোন করে বিরক্ত করছেন তার উপর আবার আমার মুখের উপক কল কেটে দিচ্ছেন । স্টুপিট, মাংকি হেড, গর্ধভের নানা ।
আমি কি একটূ কথা বলতে পারি, কাচুমাচু হয়ে বললাম ।
কি ! কি! বলবেন টা কি আপনি , এই তো বলবেন, আপনি কল দেন নাই, আপনার ভুত কল করেছে ।
জ্বী না কল আমি দিয়েছি ।
কেনো দিয়েছেন , রাগী কঠর গলায় বললো
জানেন আজ অনেক বৃষ্টী হয়েছে , পরিস্থিতি আমার অনুকুলে আনার চেষ্টা করলাম ।
তো, কি হয়েছে ?
না বললাম আর কি
বৃষ্টী হলে কি আপনি অচেনা অজানা মানুষদের বিরক্ত করা শুরু করেন । ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করলো । এতো দেখছি মহা যন্ত্রনা হলো , এখন যতোদিন বৃষ্টী হবে ততদিন আপনি আমাকে জ্বালাবেন ।
বৃষ্টীর কথা বলে তো দেখছি মহা বিপদে পরে গেলাম । কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না । ওদিকে এটাও চাচ্ছি না কল টা কেটে যাক । মনের মধ্যে লক্ষ কথার ঝর বইছে মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে হে! হে ! আওয়াজ ।
হে হে , করেন কেনো, আপনি তো বোবা না ।
আপনি ভালো আছেন
ওপাশে খানিক নিরাবতা নেমে এলো , জ্বী আমি ভালো আছি আমার বাবা দাদা নানা চাচা সবাই ভালো আছেন, আর কিছু?
আপনার মা, নাই ?
ওমা সে কি কথা মা থাকবে না কেনো
ওদের কথা বললেন না তাই জিজ্ঞাসা করলাম, জোকস করার চেষ্টা ।
আপনি নিজেকে কি জনি লিভার মনে করেন?
কে উনি ?
থাপরিয়ে দাঁত খুলে নেব, জনি লিভার কে উনি চেনে না । অথচ জনি লিভারের মতো জোকস মারা শুরু করছেন ।
আমি হা হা হা করে হেঁসে উঠলাম, মনের ভেতর এক রাশ প্রশান্তির বৃষ্টী এসে যেনো ভিজিয়ে দিলো । চাতক পাখি যেমন বছর জুড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে জলের তেষ্টায় আর জলের ফোঁটার প্রথম পরশে পাখা মেলে উড়াল দেয় আকশের পানে, আমার মন ও ঠিক তেমনি উড়াল দিলো তাহার পানে, অজানা উদ্দেশ্যে ।
বেকুবের মতো হাসছেন কেনো
আপনি ঝিনুক দেখেছেন , জবাব না দিয়ে জিওজ্ঞাসা করলাম
কেনো দেখবো না , অনেক দেখেছি, আমার গ্রামের বাড়ির পুকুরে অনেক পাওয়া যায় ।
জানেন, ঝিনুক পানির নিচে লুকিয়ে থাকে কিন্তু যখন বর্ষার প্রথম জল এসে পুকুরে পরে ঝিনুক পানির উপরে ভেসে ওঠে তার খোলস খুলে দেয় । আর সেই জলের ফোঁটা এসে তার খোলসে আশ্রয় নিলে খোলস বন্ধ করে টুপ করে পানির নিচে তলিয়ে যায় ।
এতো জ্ঞ্যান কেনো দিচ্ছেন আর এতে হয় টা কি ?
মুক্তা, বিশুদ্ধ নির্ভেজাল মুক্তা হয় ।
কটাশ করে ফোন টা কেটে গেলো, মনে হলো বুকের ভেতর একটা হৃদ স্পন্দন খানিক ক্ষনের জন্য থেমে গেলো । বিশাল জলধারা কে থামিয়ে দিলে যেমন নদীর দুই পার চুর্ন বিচুর্ন করে ফেলে তেমনি আমার হৃদয়ের দুই কিনার চুর্ন বিচুর্ন হয়ে যেতে লাগলো , অজানা ভীতি এসে রাক্ষসের মতো চেপে ধরলো হৃদপিন্ড । বাতাসে অক্সিজেনের তিব্র অভাব বোধ করলাম, জলের তলায় হারিয়ে যাওয়া মানুষের মতো খাবি খেতে লাগলাম। দিশাহারা হয়ে ফোনের বাটন চেপে গেলাম । ফোন বেজেই যায় , যায়, যায় , যায়। কোন প্রতি উত্তর নাই । আবার চেস্টা করি , বন্ধ একদম বন্ধ। মনে হয় তাহারে চিরকালের তরে হারালাম ।
০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ২:০৫
রানার ব্লগ বলেছেন: হ্যা দিলো তো। দেখি আবার ফোন ধরে কি না।মনে হয় না ধরবে, যা নখরা!!!
২| ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:০৫
মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার কাব্যিক বর্ণনা!
সত্যিই দারুণ জমেছে লেখা।
০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ২:০৬
রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ, চেষ্টা করবো জমিয়ে রাখতে।
৩| ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৬
সেলিনা জাহান প্রিয়া বলেছেন: কেন কেটে দিলো ফোনটা!!
০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ২:০৭
রানার ব্লগ বলেছেন: আমারো একই প্রশ্ন, ফোন কেনো কাটবে?
৪| ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: চমৎকার....
শুভ সকাল দাদা...
০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮
রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ!! সু প্রভাত!!
৫| ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮
মিরোরডডল বলেছেন:
আপনার মা, নাই ?
হা হা হা
রা্না ..........
কি বলবো, খুব ভালো লাগছে এই টেলিফোন প্রেম।
রানার লেখার স্টাইল খুবই মজার।
নেক্সট লেখা তাড়াতাড়ি দিবে, আজ কালকের মধ্যে।
ব্যস্ত হয়ে গেলে পড়া হয় না।
১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫
রানার ব্লগ বলেছেন: এই সপ্তাহে আমার পরিবারের দুই জন সদস্য মারা গিয়েছেন । মানুষিক ভাবে বেশ চাপে আছি । বেশ কয়েকবার লিখতে বসে উঠে গেছি । তবে জলদি ফিরবো আশাকরি ।
মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ।
৬| ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩০
মিরোরডডল বলেছেন:
একসাথে দুই জন!!
I'm so sorry to hear Rana!
আশা করি রানা এবং পরিবারের সবাই দ্রুত শোক কাটিয়ে উঠবে।
১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪
রানার ব্লগ বলেছেন: হ্যা এক সাথেই দুই জন । একজন দুই তারিখ অন্যজন চার তারিখ ।
ধন্যবাদ !!
৭| ২২ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩০
খায়রুল আহসান বলেছেন: আহারে! মনে হয় তাহারে চিরকালের তরে হারালাম! - পাঠক হিসেবে আমার কিন্তু তেমনটি মনে হচ্ছে না। আবার ফিরে পাবেন তাহারে।
গল্প জমে উঠছে। ছাঁদ কুঠরির কাব্য চলতে থাকুক।
০৩ রা আগস্ট, ২০২৪ রাত ১২:৩৮
রানার ব্লগ বলেছেন: ধন্যবাদ !
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:৫১
শায়মা বলেছেন: আহারে! আহারে কেটে দিলো ফোনটা!!