নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আশা নিয়ে বসে আছি ।

রানার ব্লগ

দূরে থাকুন তারা যারা ধর্মকে পুঁজি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। দূরে থাকুন তারা যারা ১৯৭১ থেকে অদ্যাবদি বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত এবং সকল পাকিস্তানী প্রেমী , রাজাকার ও তাদের ছানাপোনা ।

রানার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ সে যে বসে আছে

১২ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ১০:২৪



কন্যা, তুমি আমার মেঘ ডুমুরের ফুল,
তোমায় নিয়ে ভাসতে পারি,
ডুবতে পারি,
করতে পারি গন্ডা খানেক ভুল।

কন্যা, তুমি আমার রক্ত জবার লাল,
সুনীল আকাশ,
মধ্য গগন,
যথা ইচ্ছা উড়িয়ে নেবার পাল।


দিনগুলো এখন কেমন যেন হাওয়ায় ভেসে উড়ে যাচ্ছে। কখন সকাল হচ্ছে, কখন সন্ধ্যা হচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে না। সকাল হতে হতে সন্ধ্যার আঁধার নেমে আসে আমার দুয়ারে। সে কোনো বিষণ্ণতার আঁধার নয়। অদ্ভুত ভালো লাগা পালিয়ে যাওয়া বিকেল, সন্ধ্যা নামের এক দুষ্টু মেয়ে চটুল পায়ে আমার চিলেকোঠার আঙ্গিনায় নেচে বেড়ায়। আমি নিশ্চিত হই, প্রেমে আমি পড়েছি। দুচোখ কেবল তার ছায়া খোঁজে। অলিতে গলিতে, পথে প্রান্তরে—সর্বত্র, একজনকেই খোঁজে।

গত সাত দিন ধরে আমি ক্লাসে যাই না। টিউশানিতেও যাই না। টিউশানির ওখান থেকে ওরা বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছে। ফোন ধরিনি। এটা অন্যায়। ফোন ধরতে ইচ্ছা হচ্ছিল না। টিউশানির টাকা বোধ হয় মিস হয়ে গেছে। মাসের শেষে হাজার দশেক টাকা পেতাম। আজ যেতেই হবে টিউশানিতে। উড়ে বেড়ানো মনটাকে শাসনের বক্সে ঢুকিয়ে তালা মেরে নিলাম। ঘণ্টা দুই ছাত্রদের সাথে পলান টুকটুক খেলে ক্লান্ত শ্রান্ত ছাত্রদের রেখে বেরিয়ে পড়লাম। ভাবছি, আজ একবার লেক পারে গিয়ে ফোন দেব। গত দুই ঘন্টায় খরচ করা এনার্জি ফিরে পেতে হলে তাকেই দরকার।

বুকের ভেতর বড্ড তোলপাড় হচ্ছে। অমন মুখশ্রী না দেখে থাকার মতো পাষণ্ড আমি নই। সেই সাথে তার সুবাসিত উপস্থিতি আমাকে বড্ড তাড়িত করছে। না, আজ একবার দেখা করা জরুরি। দুই তিন রিংয়ে কলটা ধরলেন। আজ কি একবার দেখা হতে পারে? বিনা হ্যালো ট্যালো বলে আসল কথা বলে ফেললাম।

মানুষ ফোন করে আগে জিজ্ঞাসা করে, কেমন আছেন, শরীর ভালো না মন্দ। কিন্তু আপনি শুরুই করলেন নিজের মতলব দিয়ে। আপনি তো মারাত্মক মতলববাজ।

মনে মনে বললাম, কন্যা, আমি তোমার জন্য গ্রামের কুটিল বুড়ো, মতলববাজ ফেরেব্বাবাজ, ঠকবাজ, চিটার, বাটপাড়, চোর, ডাকাত, দস্যু, বনহুর কিংবা রবিনহুড সব হতে রাজি, কিন্তু হেসে বললাম, মতলবের কি হলো? ইচ্ছে হলো আপনাকে দেখতে তাই বললাম। আপনি তো বলেছেন ইচ্ছে হলে ফোন করে বলতে।

"না, আপনাকে বিশ্বাস নেই। আপনি কি বলতে কী বলেন, আপনি নিজেই জানেন না।"

"প্লিজ, আপনি আসুন। আমি একদম মুখে জিপার টেনে বসে থাকবো।"

"কেন আসবো? আর আপনি বললেই আসতে হবে নাকি?"

"ওইদিন তো বলেছিলেন আসবেন।"

"ও তো কথার কথা, সবাই বলে।"

"আমি বলি না," গম্ভীর হয়ে বললাম। "আপনি বলেছেন আপনার বাড়ির সামনে না যেতে, গত সাত দিন কি আমি গেছি?"

"না, তা আসেননি।"

"তাহলে?"

"তাহলে কি?"

"আপনি আপনার কথা রাখুন।"

"দুঃখিত, আমি অচেনা কোনো মানুষের সাথে দেখা করি না। মাফ করবেন।"

"তাহলে আমিও কথা রাখতে পারবো না। আপনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকবো।" খানিকটা উত্তেজিত হয়ে হুমকি দিলাম।

ওপাশ থেকে ফিক করে হাসির মতো আওয়াজ পেলাম, "এসেই দেখুন, আপনাকে আমি পুলিশে দেব।"

চিৎকার করে দু হাত আকাশে ছুড়ে দিয়ে বলতে ইচ্ছে হলো, কন্যা, পুলিশে দাও আর জেলে দাও, আমি ভয় করি না, আমি ভয় করি না কোনো বন্দুক কামানের । আমি কি ডরাই সখি ভিখারী রাঘবে ? মৃদু গলায় কেবল বললাম, "হয় আপনি আসুন, নয়তো আমি আসছি।"

লাইনটা যথারীতি কেটে গেল। এ যেন সপাটে মুখের উপর থাপ্পরের মতো। ভিখারীর কাছে ভিক্ষে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার মতো অনুভূতি আমারও তেমনই হচ্ছে। প্রচণ্ড অভিমানে চোখের কোণা ভিজে গেল। হয়তো দুই-এক ফোটা গড়িয়ে পড়েছে। গত সাত দিনের সকল প্রেমানুভূতি নিমেষেই কাঁচের টুকরো মতো গুঁড়িয়ে গেল। সন্ধ্যাটা আর সন্ধ্যার মতো লাগছে না। মনে হচ্ছে নিরেট আঁধার আমাকে চারপাশ থেকে চেপে ধরতে চাচ্ছে, কিন্তু আমার শক্তি নেই সেই জায়গা ছেড়ে উঠে চলে যাওয়ার। অদৃশ্য কোনো শেকল আমার পায়ে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। আঁধারের বিষাক্ত শকুনেরা আমাকে চাচ্ছে দুমড়ে মুচড়ে ঠুকরে ঠুকরে মেরে ফেলতে।

সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি উঠে দাঁড়াবো। ছুটে যাবো সেই সাত তলা এপার্টমেন্টের সামনে, তারপর চিৎকার করে বলবো, "আমার কী দোষ? কেন আমাকে অপমান করা হয়? কেন... কেন...!"

ফোনের কিরমির শব্দে হুস ফিরলো। কিছু না ভেবেই রিসিভ করলাম। ওপাশে হালকা কোনো সংগীতের অচেনা সুর বাজছে। খানিকক্ষণ নিরবতা। মৃদু গানের রিমঝিম সূর ছাড়া কোনো শব্দই ভেসে এলো না।

"হ্যালো," রাগী অভিমানী গলায় খানিকটা চিৎকার বোধহয় করে উঠলাম।

"আপনি কি এখনো ওখানেই আছেন?"

"হুম," দুই ঠোঁট চেপে ধরে নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করলাম।

"আমাকে আপনার কেন দেখতে ইচ্ছে হলো? আগে এটা বলেন। আমি তো কোনো সিনেমার নায়িকা বা বিশ্ব সুন্দরী না।"

কোনো উত্তর দিলাম না, বুক চিরে ভারি একটা নিঃশ্বাস নিজে নিজেই বেরিয়ে এলো। "আপনাকে দেখতে ইচ্ছে হলো, আর আপনি বলেছেন বলেই আপনাকে অনুরোধ করেছি। আপনার ইচ্ছে হলে আসবেন, না হলে আসবেন না। ব্যাস। এর বেশি আমি আর কী বলতে পারি।"

"আপনি কি আর বিশ মিনিট অপেক্ষা করতে পারবেন?"

আশার বাতি যেন হালকা জ্বলে উঠলো, বুকের ভেতর খানিক রক্ত ছলকে গেল। "কেন?" অনিশ্চিত গলায় জিজ্ঞাসা করলাম।

"আমার কুকুরটার পটি করানোর সময় এখন। দেখি, এই ফাঁকে আপনার সাথে দেখা করা যায় কি না।"

মাথার রক্ত পায়ে নেমে তা আবার মাথায় চলে গেল। দিনের পর দিন এই মেয়ে অপমান করেই যাচ্ছে। কাহাতাক আর সহ্য হয়? কোনো উত্তর না দিয়ে এবার আমি লাইনটা কেটে দিলাম। মানুষ এতটা পাথরের মতো নিষ্ঠুর কী করে হয়? আশপাশটা বেশ ঠান্ডা ছিল। শীত আসছে আসছে করছে, কিন্তু আমি ঘামে নেয়ে অস্থির। অপমানের তাপ সম্ভবত সূর্যের তাপের থেকেও উত্তপ্ত।

“আরে! আপনি দেখছি এখনো আছেন। আমি তো ভাবলাম, আপনি চলে গেছেন।” অদ্ভুত সুন্দর মিষ্টি রঙের একটা সেলোয়ার-কামিজ পরে সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, যেন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কোনো গ্রিক সুন্দরী তার দক্ষিনা নিতে স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। ঘাড় ঘুরিয়ে থাকলাম। কথার উত্তর দিলাম না।

“কেউ কি আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না?”

বেশ হাসি হাসি গলায় বাতাসে কথা ছুড়ে দিলো, “না বললে সমস্যা নেই। বোবা মানুষের সাথে কথা বলে বেশি আরাম। আমি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ মোটামুটি জানি। ইশারা ইঙ্গিতে কথা চালিয়ে নিতে পারবো।”

ভারী গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনার কুকুর কোথায়?”

“কিসের কুকুর?” অবাক হলো।

“আরে বাহ, একটূ আগেই তো বললেন কুকুরকে পটি করাতে নিচে নামবেন।”

অসংখ্য শাপলা ফুল যেন ফুটে উঠলো লেকপারের জলরাশিতে। এক রাশ বিশৃঙ্খল হাসি পার ভাঙা ঢেউয়ের মতো লেক পারে এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো।

“একদম না, আমি কোনো কুকুরের কথাই বলিনি। আপনি ভুল শুনেছেন।”

মুখোমুখি বেঞ্চিতে বসে পড়লো।

“এখন বলুন, আমাকে দেখতে ইচ্ছে হওয়ার কি এমন হলো?”

অমন বড় বড় কাজল টানা চোখ দিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন করে, উত্তর না দিয়ে থাকা মুশকিল। আমারও মুশকিল হলো। আপনাকে ভালো লাগে তাই।

“আচ্ছা, আর কী কী লাগে?”

“মানে?”

“একবারে সব বলে ফেলুন যাতে বারবার আপনাকে আসতে না হয়, সেই সাথে আমাকে না আসতে হয়।”

“আপাতত ভালো লাগে, এর বেশি বলার সামর্থ্য আমার নেই।”

“সামর্থ্য বাড়ান। এত অল্প সামর্থ্যবান পুরুষ আমার দুই চোখের বিষ।”

“চা খাবেন?” বিষয়বস্তু পাল্টানোর জন্য বললাম।

“আমি এই সময়ে চা খাই না।”

“কি খান তবে?”

“কফি হলে খেতে পারি এবং আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে এই এলাকায় কফি পাওয়া যায় না।”

“কোন এলাকায় পাওয়া যায়?”

“সে অনেক দূর।”

“চলুন যাই।”

“আপনার মাথা খারাপ। এখন আমি কফি খেতে আপনার সাথে এত দূর যাব?”

“যাওয়ার সমস্যা কি? আমি রাক্ষস না।”

“খোক্কস তো হতে পারেন কিংবা ভূত বা পিশাচ।”

“আপনি যাবেন না তাহলে।”

“না, কিন্তু আপনি আসলে কি? এটা কিন্তু বললেন না।”

“কি মানে?”

“ভূত না খোক্কস? কারণ আপনি যেখানে বসে আছেন, ঠিক এক বছর আগে ওখানে এক মেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। আপনি হয়তো তার ভূত ঘাড়ে নিয়ে বসে আছেন।”

“আপনি থাকলে আমাকে অন্য কোনো ভূত ধরতে পারবে না,” মুচকি হেসে বললাম।

“আমি ভূত,” চোখ পাকিয়ে কোমরে দুই হাত বাঁধে যেন তেড়ে এলো।

“অবশ্যই আপনি ভূত, সেই জন্যই তো সকাল সন্ধ্যা কেবল আপনাকেই দেখতে পাই।”

“সকাল সন্ধ্যা সব সময়?” মাথা কাঁকিয়ে এক রাশ চুল ছড়িয়ে অবাক হওয়ার ভান করলো বা আসলেই অবাক হলো।

“হ্যাঁ, এখন তো সন্ধ্যা। আর আপনাকে কেমন চোখের সামনে দেখছি।”

“আপনি তো মহা বিটকেল।”

“হা হা হা করে হেসে উঠলাম। আপনি যদি পারেন, কিছুটা আমিও তো পারি।”

“কি পারি? আমি কি আপনাকে ভূত বলেছি?”

“হ্যাঁ, বলেছেন খোক্কস, ভূত, পিশাচ।”

“আচ্ছা, আমি যাচ্ছি। আশা করি আপনার পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের দর্শন শেষ হয়েছে। এবার আমাকে মুক্তি দিন।” বলে একরাশ সুবাস ছড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমিও কিছু না বুঝেই ঝপাট করে দুই হাঁটু পেতে মাটিতে বসে পড়লাম। কথা দিন, আমি ডাকলে আবার আসবেন। আমার বসে পড়া দেখে যেন চমকে গেলো, আশেপাশে তাকিয়ে খানিক পেছনে সরে গেলো।

“কি, কি, কি সব করছেন? উঠুন, উঠে দাঁড়ান!” দূরে সরে গিয়ে হাত নাড়িয়ে বলছে।

“না, আমি উঠবো না। আপনি কথা না দিলে উঠবো না।”

তবে, থাকুন অমন করে; পেছাতে পেছাতে মোড় ঘুরে ছোট ছোট পায়ে দৌড়ে যেন পালিয়ে গেলো।

“আপনি না এলে, আমি এই লেকের জলে আত্মহত্যা করে ভূত হয়ে আপনার ঘাড়ে চড়বো,” বলে দিলাম।

বোধহয় শুনলো বা শুনলো না, শুধু হাত উঁচিয়ে কি যেন একটা ইশারা করলো আর চোখের পলকে উঁচু হিলের শব্দ তুলে টুকটুকিয়ে দূর আধারে মিশে গেলো।





মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ২:০৮

শায়মা বলেছেন: হা হা কুকুরের পটি করানোর সময়ে দেখা করে টাইম পাস!!!!!!!

হা হা হা হা হা :P

১৫ ই আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ২:২৭

রানার ব্লগ বলেছেন: আমি চেস্টা করছি মেয়েরা যে শান্ত শিষ্ঠের আড়াল্র ভয়ানক পাজি হয় তা প্রমান করতে।

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮

শায়মা বলেছেন: হা হা মিছা কথা বলে লাভ নাই!!!


মেয়েরা অনেক অনেক শান্তি শিষ্ঠ একদম আমার মত ভালো হয় বেশি ভাগই......

কিছু কিছু তোমার লায়িকার মতন শয়তানের লাঠি..... :P

১৬ ই আগস্ট, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

রানার ব্লগ বলেছেন: যাক !! একেই বলে আত্মউপলব্ধি !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.