![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
.. স্বপ্ন দেখি বিশ্বশান্তির .জাতি ধর্ম নির্বিশেষে অপার ভালোবাসার বন্ধনের---.
জোছনা রাতে কোথায় তুমি বনে
July 23, 2012 at 9:49pm
এই লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে তখন সব্যসাচী লেখক হুমায়ুনের হিম-শরীরখানি মাটির ঘরে আশ্রয় নিয়েছে চিরকালের জন্যে । নিউইয়র্কে হুমায়ুন আহমেদ এসেছিলেন চিকিৎসার জন্যে। তাঁর সহধর্মীনি বরেণ্যা অভিনেত্রী শাওন তাঁর সাথে ছায়ার মতোই ছিলেন সর্বক্ষণ ।
তাঁদের ছোট্ট দুটি বাচ্চা সামলে অসুস্থ হুমায়ুনকে কিভাবে সেবা করেছেন শাওন তা প্রত্যক্ষদর্শীরা বেশ জানেন । হাসপাতালে সম্পূর্ণ চিকিৎসার ব্যয় পরিশোধ না করলে চিকিৎসা হবে না জেনে তিনি পাগলের মতো কেঁদে কেঁদে হাসপাতালের কড়িডোরে ভেঙে পড়েছেন ।
হুমায়ুন তাঁকে নিবৃত্ত করে ঘরে ফিরে যেতে বললে, মাথা ঝাঁকিয়ে বলেছেন- ‘তোমার চিকিৎসা আজই হবে- কিন্তু জানিনা কিভাবে হবে’ !! এক অসাধারণ আত্মপ্রত্যয়ে আপোষহীন শাওনের নিরবচ্ছিন্ন সেবার গভীর পরশ নিয়ে হুমায়ুন চলে গেছেন সেই অজানা দেশে যেখানের খবর হুমায়ুন ও কখনো তাঁর সাহিত্যে বা কোন লেখায় সুস্পষ্ট করে দিয়ে যাননি। কি করে দেবেন? তিনি এইমাত্রই তো সেখানে গেলেন !
তাঁর চলে যাওয়ার সংবাদে সমগ্র নিউইয়র্ক, সারা বাঙলা, সকল পাঠকের হৃদয়াকাশ স্তব্ধ, শোকাচ্ছন্ন । তিনি তাঁর লেখায়, নাটকে, চলচ্চিত্রে সারা দেশের মানুষেরই হৃদয় করেছেন জয় । তাঁর সহজাত ক্ষমতায় অবলীলায় তিনি উপেক্ষা করেছেন তাঁর নিন্দুকের কুৎসা, দূর্মুখের মুখের ঝাল – স্বভাবসুলভ কৌতুকের ছটায় তিনি ভরে দিয়েছেন তাঁর চারপাশ ।
প্রচন্ড দুঃখের মুহুর্তেও তিনি কৌতুকের তীরে শাওনের মুখে এনেছেন অনাবিল হাসি । অসাধারণ এই প্রেমিক পুরুষ তাঁর সাহিত্যে, তাঁর সৃষ্টিতে, তাঁর একান্তজনের অনুভবে নিরন্তর রেখে দিয়েছেন বিস্ময়কর প্রেমের আগ্রাসী প্লাবন । সেই প্লাবনে গুলতেকিন যেমন ভেসেছেন, তেমনই ভেসেছেন শাওন – আর ভেসেছেন তাঁর অগণিত গূণমুগ্ধ পাঠক -দর্শক।।
তিনি নিউইয়র্কের জ্যামাইকায় যেখানে বাসা নিয়েছিলেন তা আমার আবাস হতে মাত্র মাইল দূরত্বে । তাঁর অসংখ্য হিতাকাঙ্খী চারপাশে । তাঁর রোগমুক্তি কামনায় সকলেই নিজের মতো প্রার্থনা করেছেন। কতোবার তাঁর বাড়ীর সামনে দিয়ে হেঁটে গেছি , শুধু একটু সামনাসামনি দেখে তাঁর জন্যে প্রার্থনা করবো এই অলীক আশায়; –ওঁদের দুজনকেই বেশ কয়েকবার দেখেছি, কিন্তু এগিয়ে গিয়ে বিরক্ত করতে ইচ্ছে হয়নি অসুস্থতায় ম্রিয়মান লেখককে। শুধু একটু দাঁড়িয়ে দূর থেকে মনে মনে প্রার্থনা করেছি, ভালো হয়ে আবার যেনো তিনি তাঁর লেখার জগতে ফিরে আসেন শতমাত্রায় । কিন্তু কারো প্রার্থনাই তাঁকে রক্ষা করে নি, তিনি চলেই গেলেন, গেলেন কি একবুক অভিমান নিয়ে? কার উপরে তাঁর অভিমান ! তাঁর শেষের দিকের সংবাদপত্রে দেয়া লেখাগুলোতে মৃতুঞ্জয়ী অভীপ্সা যেনো মূর্ত হয়ে উঠেছে, সহজসুন্দর কৌতুকে তিনি মৃত্যুদূতকেও যেনো কাতর করে দিয়েছেন ।
তাঁর স্বপ্নপূরী নুহাশ পল্লীর চারুভূমিতলে চিরঘুমে ঘুমিয়ে আছেন তিনি । তাঁর পাঠক-ভক্তকুলের জন্য নুহাশ পল্লী চিরতরে তীর্থ হয়ে থাকলো । আর এই তীর্থটিকে সৃজনের জন্যে যাঁকে অশেষ কষ্টেও জেদ করতে হয়েছে – সেই হুমায়ুন প্রেমিকা শাওনকে ভবিষ্যত সাহিত্য-তীর্থগামীদের পক্ষ থেকে অশেষ কৃতজ্ঞতা ।
হুমায়ুন কখনো তোমায় ছেড়ে যাননি শাওন, কখনো তোমায় ছাড়েননি গুলতেকিন, কখনো তোমাদের ছাড়েননি - নুহাশ, বিপাশা, নোভা, শীলা ও নিষাদ, কখনো ছাড়েননি তোমাদের হে অগণিত পাঠক-ভক্তকুল । তাঁর মতো অতিষ্মান প্রেমিকপুরুষ শুধু ভালোবাসায় জড়াতে পারেন – ছাড়তে পারেন না ।
হুমায়ুন –আপনি চিরভাস্বর সকলের অন্তরে গভীর ভালোবাসায় ।।
নিঊইয়র্ক, ২১শে জুলাই, ২০১২
©somewhere in net ltd.