নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রত্যাশাদের স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা আর প্রত্যাশা পূরণ হয় না... তাও তারা স্বপ্নচারিণী নামে পরিচিতি পেয়ে গেল... ইন্সটাগ্রাম ― @swarochita
প্রত্যাশার অনেক খুশি লাগছে। এত আনন্দ তার শেষবার কবে হয়েছে সে মনে করতে পারছে না। আম্মু এত এত জামা তার জন্য কখন বানালো মাথায় আসছে না। আগে যখন ছোট ছিল তখন অনেক জামা আম্মু বানিয়ে দিত। কিন্তু বড় হওয়ার পর আর তেমন কিছু বানায়নি। আসলে সময় সুযোগ কিছুই হত না তাই সেটাও একটা কারণ ছিল। ছোটবেলায় বেশিরভাগ সময়ই ফ্রক বানাতো তার জন্য। মজার ব্যাপার হল আজও সব ফ্রকই বানিয়েছে, একটাও কামিজ না। সব থেকে সুন্দর লাগছে বোটল গ্রীন কালারের ফ্রকটা। ফ্রক পরলে তাকে কেমন লাগবে কে জানে। তার সব সময় মনে হয় ফ্রকে তাকে মানায় না। তাই সে কখনও ফ্রক কাটিং এর কোনো ড্রেস পরেনা। তবে আজ খুব যত্ন করে বোটল গ্রীন ফ্রকটা পরলো। সাথে আবার আম্মু সব ড্রেসের সাথে ম্যাচিং মাস্ক বানিয়ে রেখেছে। প্রত্যাশা আসলেই ভাবেনি ফ্রকটা পরলে তার বয়স দশ-বারো বছর কম দেখাবে। নিজেকে কখনও ভালো লাগেনা তার তবে আজ মনে হচ্ছে তাকে ভালো দেখাচ্ছে। হয়তো আম্মু বানিয়েছে ড্রেসটা সেই জন্য হতে পারে। কিন্তু আম্মু মাস্কটা কি কাপড়ের বানিয়েছে আল্লাহই ভালো জানেন। এত ট্রান্সপারেন্ট! দেখে মনে হচ্ছে মসলিন বা টিস্যু কাপড়ের মাস্ক। কিন্তু হাত দিয়ে ধরলে মনে হচ্ছে সুতি কাপড়ের। এমন কাপড় তো কখনও দেখেনি সে। দেখতে ভালো লাগলেও এর অসুবিধা আছে। মাস্ক পরলে মানুষজন মুখের কোনো এক্সপ্রেশান ঠিকমত দেখতে পায় না। তাই কোনো সিরিয়াস অবস্থাতে হাসি পেলেও অনায়াসে হাসা যায়। এটা পরে বাইরে গেলে এমনভাবে হাসা যাবে না। এই যে এখন প্রত্যাশা সব দাঁত বের করে হাসছে সেটা আয়নাতে দেখা যাচ্ছে।
"তুশি! তুশিমনি! এই জামাটাও একটু পরে দেখো। এটা পরলে অনেক ভালো লাগবে।"
"আম্মু আমার কমলা রং একটুও ভালো লাগেনা। আমার ধারণা এই রং পরলে আমাকে পাগল দেখা যায়। রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে মানুষ বলবে ঐ দেখো একটা পাগল যাচ্ছে। তুমি জানো তারপরও এই রং এর ড্রেস কেন বানালে?"
"এটা অনেক সুন্দর। স্ট্যান্ডার্ড লাগছে। তুমি আর কোনো কথা বলবে না। যাও এটা পরে আসো।"
প্রত্যাশা মন খারাপ করে জামাটা নেয়।
************************************************
ঘুম ভেঙ্গে গেল প্রত্যাশার। কত বাজে জানে না সে তবে বুঝা যাচ্ছে এখন অনেক রাত। এটা কি স্বপ্ন ছিল? পুরোটাই মায়া? মন খারাপ হয়ে গেল। সুন্দর জিনিসগুলো শুধু স্বপ্ন হয় কেন? পাশে আম্মুর বালিশে কোলবালিশটা শুয়ে আছে। প্রত্যাশা এমনভাবেই রাখে প্রতিদিন বালিশটা যাতে অন্ধকারে মনে হয় আম্মু শুয়ে আছে পাশে। কিন্তু হঠাৎ করে প্রত্যাশাকে অবাক করে দিয়ে বালিশটি নড়ে উঠলো। না কোলবালিশ নয়তো, আম্মুই শুয়ে আছে।
"আম্মু তুমি এসেছো? আমি ভেবেছি তুমি আর কোনোদিন আসবে না।"
"তুশিমনি, আজ কি অনেক শীত পড়েছে? কম্বলে তো শীত মানাচ্ছে না। সোয়েটার পরে ঘুমানো উচিত ছিল।"
"যা খুশি পরো কিন্তু গতবারের মত আমার জাম্পার পরে ঘুমাবেনা। আমার জাম্পারটা বড় হয়ে যাবে।"
"তুই তোর জাম্পার মাথায় করে রাখ। আগে শীতে বেঁচে নেই তারপর দেখা যাবে। এত তো শীত লাগেনা আমার, আজ মনে হয় অনেক শীত পড়েছে।"
"আম্মু তুমি কি সত্যিই এসেছো? তুমি না এলে আমি আসলেই থাকতে পারতাম না। আমার বিশ্বাসই হয়না তোমার সাথে পৃথিবীতে আমার জার্নি এতটুকুই ছিল। আমার এখন অনেক ভালো লাগছে তুমি চলে এসেছো।"
"তোর আব্বু আর নানি অনেক যন্ত্রণা করছে?"
"হ্যাঁ, অনেক! জানো আম্মু সেইদিন গিয়েছিলাম সেই পুরানো টেইলারের কাছে, যার কাছ থেকে আগে জামা বানাতাম। তোমার কথা জিজ্ঞাসা করেছিল।"
"কি বলেছিলি?"
"বলেছিলাম তুমি মারা গিয়েছো। কিন্তু বলতে একটু সময় লেগেছিল। কেন যেন মুখে আসছিল না কথাটা, গলার কাছে আটকে ছিল।
আচ্ছা আম্মু! নানা মারা যাবার পর নানার খাতাটা তুমি নিয়ে এসেছিলে না? ওটা আমার অনেক প্রিয় ছিল। অনেক দিন ধরে ওটার কথা মনে ছিল না। ওটা কোথায় রেখেছো? খালাও একদিন বলছিল খাতাটার কথা। বলছিল ওটা পেলে খালা ওটা নিবে। তবে আমি তাকে সেটা দিব না। আমার কাছেই রাখবো।"
"সব তুই তোর কাছে রাখবি?"
"রাখতে আর পারলাম কই? আমি যখন স্কুলে পড়তাম সেই সময় আমার জন্য পহেলা বৈশাখে শাড়ির সাথে পরার জন্য একটা ব্লাউজে তুমি গ্রাফ পেপার বসিয়ে সেলাই করেছিলে। সেই ডিজাইনটার স্যাম্পল তোমার কাছে আর একটাও ছিল না। কিন্তু তুমি তাও সেটা ফুফুর মেয়েকে দিয়ে দিলে। কি দরকার ছিল দেওয়ার? অনেক সুন্দর ছিল ডিজাইনটা।
তুমি একটা শালে ফুল সেলাই করেছিলে কিন্তু দিয়ে এলে তোমার ছোট খালাকে। সেইদিন দেখছিলাম তোমার ছোট খালার সাথে তোলা ছবি গুলো। সেই চাদরটা পরে ছিলেন। আমি একবার চিন্তা করেছিলাম তোমার ছোট খালাকে আমি অন্য একটা শাল দিয়ে তোমার সেলাই করা শালটা নিয়ে আসবো। তোমার জিনিস আমি যতটা যত্ন করে রাখতে পারবো অন্য কেউ তেমনটা পারবে না আম্মু। কিন্তু পরে সেই চিন্তা ড্রপ করে দিয়েছি। তুমি যেহেতু দিয়ে গিয়েছো তাই আর নিতে ইচ্ছা করেনি।"
"জিনিস তো অনেক আসবে আর যাবে তুশি। কিন্তু সবার কাছে তো আর আমি যেতে পারবো না। তোমার কাছে যেমনটা আমি আসতে পেরেছি।"
"সেটা ঠিক বলেছো। তুমি প্লিজ প্রতিদিন একবার করে হলেও এসো। আমার একা থাকতে আর ভালো লাগছে না।
আচ্ছা আম্মু! দাঁড়াও একটু। সব কথা কি অন্ধকারে বলবো নাকি? লাইটটা জ্বালিয়ে আসি। তোমাকে কিছু জিনিস দেখাবো।"
প্রত্যাশা খাট থেকে নেমে লাইটটা জ্বালালো।
"হ্যাঁ, আম্মু যা বলছিলাম ...... আম্মু! কোথায় গেলে তুমি?"
জানালার পাশ দিয়ে একটা নাম না জানা পাখি ডাকতে ডাকতে চলে গেল। প্রত্যাশা অনেকবার এই পাখির ডাক শুনেছে কিন্তু নাম জানেনা। শুধু রাতের বেলা এটা ডাকে। আম্মুও নাম জানতো না। দূর থেকে আজানের ধবনি ভেসে আসছে। আম্মুর বালিশের উপর কোলবালিশটা শুয়ে আছে। শূন্য বিছানার দিকে তাকিয়ে প্রত্যাশা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
সেই রাত্রির মায়া
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী
০৪/০২/২০২২
ছবি ― মুঠোফোনে তোলা
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:০১
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: আমাদের ছোটবেলায় সব মায়েরাই এমন ছিলেন। অবসর সময়েও সেলাই করতেন। অসুস্থ থাকা কোনো অজুহাত ছিল না।
ভালো থাকবেন।
২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৩৬
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: প্রত্যাশার কাছে তার মা প্রতিরাতে একবার করে আসবে প্রত্যাশার মন ভরিয়ে দিতে।
প্রত্যাশাকে বলবেন সে যেন সব সময় এই দোয়া পড়ে - 'রাব্বির হাম হুমা কামা রব্বা ইয়ানি সগিরা।' অর্থ - ( 'হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন; যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।)
পোস্টে ++++++
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:০৩
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য। অনেক ধন্যবাদ।
প্রত্যাশা জানিয়েছে সে প্রতিদিন এই দোয়া পড়ে তার আম্মুর জন্য।
ভালো থাকবেন।
৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৩০
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: মাঝে মাঝে স্বপ্নগুলি এমন হয় যে স্বপ্নের মাঝে বুঝতে পারা যায় স্বপ্ন দেখছি, তবুও দেখতে ভালো লাগে।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:০৩
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: স্বপ্ন বাস্তবের থেকে অনেক বেশি সুন্দর তাই ভালো লাগে।
ভালো থাকবেন।
৪| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৫১
আখেনাটেন বলেছেন: প্রত্যাশার হাহাকার ছুঁয়ে গেলো হ্নদয়কে...
অল্পবয়সে বাবা-মাকে হারালে যে কতটা ট্রমার মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে.......।
চমৎকার লিখেছেন......
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১০
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৫৫
আখেনাটেন বলেছেন: আপনি মনে হয় দক্ষিণ ভারতের সিনেমার চমৎকার রিভিউ দিতেন.....কিছুদিন আগে...মালয়লাম সিনেমা দুলকারের পুরাতন চার্লি ও ফাসিলের মালিক দেখলাম...আমাদের বাংলাদশীদের অনেক কিছুই শেখার আছে.....এত ছোট্ট একটি ইন্ডাস্ট্রি কী অসাধারণ সিনেমায় না বানাচ্ছে......পারলে ছবি দুটোর রিভিউ দেন.....বাংলাদেশীরাও জানুক কম বাজেটেও সিনেমা কেমন বানানো যায়।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:১৩
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: ব্লগে আমার প্রথম পোস্টে আমি চার্লি নিয়ে লিখেছিলাম। এই লিংকে পাবেন।
নতুন ফিল্ম দেখা বন্ধ আছে আপাতত। তাই মালিক দেখা হয়নি।
৬| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১:০০
জাহিদুল ইসলাম ২৭ বলেছেন: সুন্দর গল্প লিখেছেন।মা ও মেয়ের বন্ধন অবিচ্ছেদ্য।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৪২
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৭| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১০:৪২
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৮| ০৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:১২
খায়রুল আহসান বলেছেন: ঘটনাটি কতটুকু সত্য তা জানিনা, তবে লেখায় ব্যক্তিগত আবেগ অনুভূতি বেশ প্রকাশ পেয়েছে। প্রত্যাশার প্রত্যাশা বাস্তবে পরিণত হবার সম্ভাবনা নেই, তাই তার জন্য ব্যথিত বোধ করছি।
পোস্টে প্লাস। + +
১৫ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৫২
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৯| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রত্যাশা একটা ঘোরের মধ্যে ছিল মনে হয়। এমন আমারও হয়।
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৩৫
স্বরচিতা স্বপ্নচারিণী বলেছেন: তবে এই ঘোরটা অনেক ভালো লাগে। তাই না কাটাই ভালো।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৩০
তানীম আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: মনে পড়ে গেল
অনেকগুলো বাচ্চা কাচ্চা সামলিয়ে আম্মু বড় আপা স্বচ্ছ এক ধরনের কাগজে তোলা ডিজাইন থেকে চাদর শালে সেলাই করতেন ।
লেখায় মুগ্ধতা ।
পৃথিবীর সকল প্রতাশার মা চিরদিন অন্তরে থাকুন ।