![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সহকারি শিক্ষক, সানারপাড় শেখ মোরতোজা আলী উচ্চ বিদ্যালয়। সিদ্ধিরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ। এবং মাস্টার ট্রেইনারঃ টি কিউ আই-সেফ-২, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ।
আমার গ্রাম সনুড়া থেকে বার মাইল দক্ষিণে প্রিয় নেত্রকোণা।
ছোট বাজার দাদার বাড়ি থকলেও সপরিবারে কেউ ছিলনা।
বছরে দু-একবার বেড়াতে যেতাম মামার বাড়ি মোক্তারপাড়া,
শৈশবে বর্ষাকালে মা-বাবা,ভাই-বোন মিলে ভোরে উঠতাম,
ছইওয়ালা নৌকায় যেতে হতো দূরে খাল-বিল,নদী-নালা ঘুরে।
আমার নদীর পর গোমাই নদী ছেড়ে অনেক খাল-বিল পেরিয়ে,
পড়েছি ফকিরের বাজারের পাশ দিয়ে খরস্রোতা কংস নদীতে।
এখন কংসের স্রোতের সাথে যুদ্ধ করে যেতে হবে উজানে,
মাঝিরা আল্লা-নবীর নাম স্মরে এগিয়ে যাচ্ছে খুব সাবধানে।
কয়েক মাইল যাওয়ার পরে খুব আগ্রহে মাঝিরা হাক ছাড়ল,
“ঐ তো দেখা যায় বড়াইয়ের খাল একটু দূরে,টানো বইঠা জোরে।”
খানিক পর মাঝির বদনে হাসি ফুটল বড়াইয়ের খালে পরে,
এখন যেতে পারবে নৌকা নিয়ে আরামে ভাটির স্রোতের টানে।
চিন্তা শুধু বাংলায় আছে পাশাপাশি সড়কসেতু ও রেলসেতু সামনে,
মাঝিদের আছে মনে আল্লার নামে ধরতে হবে হাল অতি সাবধানে,
তারা জানে অসাবধানে ধাক্কা লেগে পিলারে বিপদ হতে পারে।
অনেক নৌকাই প্রায়ই ভেঙ্গে ডুবে যায় এখানে তাদের আছে জানা,
সুকৌশলে,সাবধানে পেরিয়ে বাংলার ব্রিজ, পড়লাম বাংলার বিলে।
চার ঘন্টা পর আশ্বস্ত হলাম, ঐ দেখা যায় প্রিয় নেত্রকোণা শহর।
বিল পেরিয়ে শহরের উত্তরে সড়কের পাশে নোঙ্গর ফেলল নৌকা।
সেজেগোজে নতুন কাপড় পড়ে রিক্সায় চড়ে গেলাম মামার বাড়ি।
শহরের প্রধান আকর্ষণ ছিল হাসনা,হিরামণে গিয়ে সিনেমা দেখা,
যতবার মা-বাবার সাথে গিয়েছি নেত্রকোণা বাদ যায়নি সিনেমা।
বড় হয়ে বার মাইল হেঁটে বাবার সাথে যখন গিয়েছি নেত্রকোণা,
অনেক কষ্ট হলেও গয়ানাথের মিষ্টি যখন খেয়েছি শূন্যপেট ভরে।
সন্ধ্যার পর বাবার সাথে সিনেমা হলে গিয়ে দেখব ‘ছুটির ঘন্টা'।
এখন আমি চিন্তা করি, কীভাবে স্থায়ীভাবে থাকা যায় নেত্রকোণা?
প্রস্তাব দিল মামাত ভাই-বোনেরা চলে আয় আমাদের বাসায়,
রাজি হয়ে গেলাম, মামাকে বলে চলে আসলাম স্বপ্নের শহরে।
ভর্তি হলাম ক্লাস ফাইভে পাশেই দত্ত হাই স্কুলে,চলল লেখাপড়া।
আমি গ্রামের দুরন্ত বালক, আদৌ কমলোনা আমার দুরন্তপনা।
সাথে ছিল আমার দুষ্ট মামাত ভাই আবু সাঈদ তালুকদার,
সাঈদ ও আমার বন্ধুরা মিলে ফাঁকে চষে নিতাম শহর নেত্রকোণা।
পাশেই ঐতিহাসিক মগড়া প্রতিদিন সাঁতার কাটতাম দল বেঁধে,
মোক্তার পাড়ার পাকাঘাটে পানিতে ড্রাইভ দিতাম উপর থেকে।
যেতাম কাটলি ও নাগড়া, দিতাম ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা।
কড়ই-রেইন্ট্রি বড় বড় গাছে উঠে যেতাম কাটা ঘুড্ডি পাড়তে।
রেল স্টেশন ছিল বাসা থেকে দু’মাইল দূরে,যেতাম সেখানে প্রায়ই,
আমরা রেলগাড়ি ও কয়লার ইঞ্জিন দেখেছি শখ করে প্রাণ ভরে।
ট্রেন চলে গেলে দু’জনে সিগারেটের বান্ডি কুড়িয়েছি পকেট ভরে।
অপেক্ষায় থেকেছি দূর্গাপূজার, সারা শহরের মণ্ডপ দেখেছি ঘুরে,
একে অপরের বন্ধু,ভেদাভেদ ছিলনা তখন কে মুসলমান কে হিন্দু।
তিন টাকা ঘন্টা করে ভাড়া সাইকেল চালিয়েছি প্রতিদিন বিকালে,
একঘন্টার ভাড়া করে সাইকেল বাড়িতে গিয়ে আসিনি তিনদিন।
জালেক ভাই নালিশ করল মামার কাছে, “ও কী করল সাইকেল?”
বাড়ি থেকে এসে দোকানে দিলাম দশ টাকা আর তাঁর সাইকেল।
রাগে সে বলে, “আমার ভাগ্য এটা সাইকেল যে ফেরত দিয়েছিস।”
স্কুল থেকে এসে বাসার সব কাজ সেরে বাজারও করতে হতো,
কখনও ফাঁক পেলে মামী বাজারে পাঠাতো এটা সেটা এনে দিতে।
ক্লাস সিক্সে উঠে চলে গেলাম বাড়ি পল্লির টানে আসা হলনা শহরে।
ভর্তি হলাম গ্রামের জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়লাম সিক্স ও সেভেনে।
আবার মন আকুল হল যেতে আমার প্রিয় সেই নেত্রকোণা শহরে,
আবার গেলা্ম, ভর্তি হলাম অষ্টম শ্রেণিতে চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে।
পরের বছর উনিশ শ বিরাশি সালে ইন্টারভিউ দিয়ে ভর্তি হলাম-
নবম শ্রেণিতে পাশেই আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।
এখন সরকারি স্কুলে পড়ি, ভাবি কী করে ভাল রিজাল্ট করি?
ভালভাবেই পাস করি এসএসসি পরীক্ষা উনিশ শ চুরাশি সালে।
তখন আমার ছোট ভাই সোহাগ পড়ে আঞ্জুমানে অষ্টম শ্রেনিতে,
মামার বাসায় থাকিনা এখন, থাকি দু’ভাই মিলে অন্যখানে।
এখন দুষ্টুমি কমেছে, ভর্তি হয়েছি নেত্রকোণা সরকারি কলেজে।
এইসএসসি পাস করে ভর্তি হয়েছি অনার্সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আজ পর্যন্ত আছি ঢাকা শহর কখনও যাই নিজ গ্রামে ও নেত্রকোণা।
২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:০৬
সৈয়দ আনোয়ারুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই জাকির বালী, আমার শহরে কাল যাবেন তাই। দুঃখিত, আমি নেত্রকোণা থাকলে ভাল হতো, তাহলে একসাথে ঘুরতে পারতাম।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:০৭
জাকির বালী বলেছেন: কাল প্রথমবারের মত যাচ্ছি আপনার শহরে। ফিরে এসে ছবি ব্লগে আপনার শহরকে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।