নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একশত সিপাহী ঢাল-তলোয়ার লইয়া যে ক্ষমতা না রাখে, অনুতাপের হাত তাহার চেয়ে অধিক ক্ষমতা রাখে।
সালাম নিবেন, অনেক দিন যাবত তেমন কোন যোগাযোগ নাই। আশা করি ভুলেন নাই। আপনার ব্যাস্ততার জন্য আমি নিজ থেকেই আপনাকে বিরক্ত করি না, আজ একটু করলাম।
গতকাল ছোটভাই সিঙ্গাপুর ট্রেনিং এর ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছে, আশা করি ২/৩ সপ্তাহের মধ্যেই রেজাল্ট হয়ে যাবে। আল্লাহর রহমতে পাশ করতে পারলে হয়ত আগামী দুই মাসের মধ্যেই সিঙ্গাপুর চলে আসবে।
আমার সম্পর্কে আপনি ভাল করেই জানেন, পরাজয়ের সব কিছুই আপনার সাথে শেয়ার করেছি।
বেকারি ব্যাবসা আপন লোকে লস দিল, ধানের ব্যাবসাটাও ঠিক ঠাক মত করতে পারিনি কেননা দেশের এই ব্যাবসাটা পরিচালনা করার মত তেমন কাউকে পাইনি তাই এই বছর থেকে ধানের ব্যাবসাও বন্ধ।
পার্টারশীপে হাউজিং ব্যাবসা করার জন্য এগিয়ে এসে বেশ ভাল একটু জমি কিনে ছিলাম, কিন্তু কি থেকে যে কি হয়ে গেল সবাই যার যার অংশ নিয়ে ভিন্ন হয়ে পরেছে এখন আমরা তিন জন আছি আমাদের মোট জমি ৩০ শতাংশ আমার অংশে ১০ শতাংশ পাব।
বাবার বয়স হয়েছে এখনো উনি একটা ফার্মেসি সুন্দর করেই পরিচালনা করছেন, কিন্তু উনার মনটাও চাই একটু বিশ্রাম নিতে কেননা বাবার বয়স প্রায় ৬০ বছর ছুই ছুই করছে।
ছোট হোক আর বড় হোক একটা স্বপ্ন নিয়ে সিঙ্গাপুর এসেছিলাম, জানিনা কতটুকু সফল হয়েছি। যখন পরিবারের মানুষ গুলিকে একটু হাসিখুসি দেখি তখন মনে মনে চিন্তা করি এইত ভালই আছি। নিজের সুখ গুলিকে ছুড়ে ফেল্লে যদি পরিবারের মুখে হাসি ফুটানো যায় তাখলে এই ত্যাগ টুকু স্বীকার করে নেয়াই উত্তম। আমিও মেনে নিয়েছি, কোন প্রকার প্রশ্ন ছাড়া।
আজ প্রায় ৭ বছর শেষ হতে চল্ল আমি সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছি, জানিনা আর কত দিন এই জীবনে পরে থাকতে হবে। কেন জানি আজ দেশ আত্নীয় পরিজন সবার জন্য মনটা একটু বেশি কাঁধে। জানিনা এটা কিসের জন্য হচ্ছে তাখলে কি জীবনের অন্তীম মূর্হুতে এসে পৌছে গেছি?
হতেও পারে দেখতে দেখতে কতটা বছর ছুড়ে ফেলে দিলাম জীবন থেকে এখন আর এই সবের হিসাব করে কি হবে।
জানি লেখাটা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে, তার পরও লিখছি। আমি জানি আপনি লেখাটার শেষ পর্যন্ত পরবেন, কোথাও হটকা লাগলে দুইবার তিনবার পরবেন আপনার ধৈর্য্য সম্পর্কে আমার যতটুকু ধারনা আছে তার উপর ভিত্তি করে এই কথাটা বল্লাম।
কি করছেন সাজ্জাত ভাই?
নিশ্চয় কোন বিশেষ কাজের জন্য তৈরী হয়েছিলেন হঠাৎই আমার লিখাটা আপনার বিশেষ কজটাকে বিলম্ভ করে ফেল্ল।
দুঃখিত কিংবা ক্ষমা চাই বলে আপনাকে ছোট করবনা।
জানেন ভাই? প্রথম যে দিন সিঙ্গাপুরে আসলাম ২০০৭ সালের জুন মাসের ৩ তারিখ স্বপ্ন হোক আর অভিমান হোক চিন্তা ছিল ৫ বছরের মধ্যে বিদেশ শেষ করে দেশে চলে যাব এবং একটা ছোট করে ব্যাবসা শুরু করব। কিন্তু স্বপ্ন শুধুই স্বপ্ন হয়ে থাকে কখনোই তা ভাস্তবে আসে না।
দেখতে দেখতে তিন বোনের বিয়ে দিলাম, আর বাংলাদেশে একটা মেয়ের বিয়ের জন্য কম করে হলেও ৫/৬ লক্ষ টাকা লাগে এই হিসেবে আমার প্রায় ১৫ থেকে ১৮ লক্ষ টাকা শুধু বোনের বিয়ের জন্য খরচ করতে হয়েছে।
তার পর বি-বাড়িয়া থেকে সাভারে চলে আসলাম, বাবার চলতি ব্যাবসা ছিল গ্রামে সব কিছু বন্ধ করে চলে আসল। বুজতেই পারছেন আবার নতুন করে শুরু করতে গিয়ে পরিবারটা সম্পূর্ণ আমার উপর নির্বরশীল হয়ে পরে। যখন চিন্ত করছিলাম এখন কিছু একটা করতে হবে, তখনি পরিবারের সম্পূর্ণ দ্বায়িত্ব আমার কাধে। আমি নিরুপাই শুধু এদের হুকুম পালন করে গেছি।
আমার প্রথম কর্ম জীবন শুরু করি ২০০২ সালে ছোট কাকার সাথে সেফ একজন সাধারন কর্মী হিসাবে। কাকার ছিল প্রিন্ট গার্মেন্টস আমি এর সব কাজেই খেয়াল রাখতে হত, কখন কোন গার্মেন্টসে মাল আসবে কোথায় যাবে কখন কোন ডেলিভারি এক কথায় এ থেকে জেড পর্যন্ত সব কিছুই করেছি। কিন্তু তারপর কাকা নিকট থেকে কোনপ্রকার সহযোগিতা পাইনি বলতে পারেন ২ টা বছর বিনামূল্যে মুজুরি দিয়েছি কাকার গার্মেন্টসে। সারাদিন গার্মেন্টসএ কাজ করতাম কখনো কখনো রাত ২টা ৩টা পর্যন্ত কাজ করে সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে কাকার দুই মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসে ৮টার মধ্যে আবার কাজ শুরু করতাম, আমার থাকা খাওয়া ঘুম সব কিছুই ছিল কাকার গার্মেন্টসএ। অনেক করেছি বিনিময়ে কিছুই পাইনি, তাই চিন্তা করলাম এবার বাড়ি ফিরে যাব।
আগ পাছ কিছুই হিসাব করিনি পা রাখলাম বি-বাড়িয়ার দিকে, শুরু করলাম বাবার সাথে ফার্মেসী ব্যাবসা। প্রথমে বাবা বাড়িতে ব্যাবসা করতেন, আমি বাজারে একটা দোকান নিলাম। বাড়িতে একটা ফার্মেসী এবং বাজারে একটা, দুইটা ফার্মেসী নিয়ে শুরু হল আমার নতুন দিনের পথ চলা।
দেখতে দেখলে একটা ইলেক্ট্রিকের দোকান একটা টেলিফোন এর দোকান বাড়ালাম, সাথে ৩০টা রিক্সা কিনলাম। সব মিলিয়ে ভালই চলছিল দিন কাল, হঠাৎ কি থেকে কি হল কিছুই বুঝতে পারলাম না।
অনেক সময় পেরিয়ে গেল অনেক পথ পিছনে চলে গেল, আমি ঠিক দাড়িয়ে আছি একটা বালির বাধের উপর যে কোন সময় হতে পারে সালিল সমাধি শেষ হয়ে যেতে পারে শরিফ নামের ছেলেটার রহস্য ঘেরা একটা জীবন।
হয়ত অন্য একদিন শেয়ার করব কি করে বিদেশের পথে পা রাখলাম, আজ শুধু চলার পথের কথাটাই বলি।
মানুষের জীবন চলতে থাকে কিছুতেই থেমে থাকে না, জীবন সত্যিকার ক্ষেত্রেই একটা বিচিত্রময় স্থান। কখনো সুখ আবার কখনো কান্না সব কিছু মিলিয়ে চলতে হয় জীবন নামের এই পথে।
হয়ত আপনি বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে কি যে কঠিন একটা সংগ্রাম করেছি বিদেশের মাটিতে এই জীবন নামের ছোট্ট শব্দটার সাথে, রোদ বৃষ্টি ঝড় তুফান সব কিছুর সাথেই নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়েছে। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরে খাবার প্যাকেট করে ছুটতাম কাজের দিকে। সারা দিন কাজ করে রাত ১১টায় বাসায় ফিরতাম তারপর রান্না করা অন্য সব কাজ শেষে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাতে প্রায় ১টা বেজে যেত এই ভাবেই চলছিল আমার জীবন নামের ঘড়ির কাটা একটু একটু করে। আমার প্রথম কোম্পানির কাজ ছিল পাইলিং এর সারদিন রোদ বৃষ্টিতে কাজ করতে হত, কি যে অমানুষিক পরিশ্রম করেছি প্রথম দিন গুলি সেই কথা আপনাকে বলে শেষ করা যাবে না।
''কঠিন প্রশিক্ষন সহজ যুদ্ধ'' ঠিক এই কথাটার মতই আমার জীবনে আসল একটা পরিবর্তন মুন্সিগন্জ জেলার একজন স্যার আমাকে বুদ্ধি দিলেন কিছু পরিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং আমি তাই করলাম। কাজ থেকে ৭টায় ফিরে ক্লাসে যেতাম ১০টায় ক্লাস শেষে বাসায় ফিরতাম তারপর পড়াশুনা। এটা একদিনের সাধনা ছিলনা প্রায় ১৮মাসের এই সাধনার পর আজকের এই অবস্থানে আমি এসে পৌছেছি। বর্তমানে অনেক ভাল আছি, একটা বিরাট কোম্পানির সেফটি কো-অরডিনেটর হিসাবে কাজ করছি। মাস শেষে আড়াই হাজার ডলার পকেটে আসছে, নিজেকেই অবিশ্বাস্য লাগে আমি একজন সাধারন শ্রমিক আজকের এই অবস্থানে!
এত কিছুর পরেও আমি ক্লান্ত বড্ড ক্লান্ত, বিশ্বাস করুন সাজ্জাত ভাই কিছুতেই আর এই বুঝা টানতে পরছিনা। এখন মনটা চাচ্ছে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে, শেয়ার করতে সবার সাথে আনন্দ বেদনার সব কিছু।
আমি কখনোই কিছুই শেষ করতে পারিনাই তাই হইত আজকের লিখাটারও কোন শেষ সমাধানে নিয়ে আসতে পারিনাই..................
ভাল থাকবেন অনেক ভাল
২৭ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪০
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, জীবন যুদ্ধের মাঠে যখন আপনাদের মত কেও আমাদের পিঠ চাপরিয়ে বলে এগিয়ে যাও পথ খুজে পাবে।
তখন সত্যিই মনে একটা সাহস পাই।
ভাল থাকবেন অনেক ভাল।
২| ২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:৩৬
ইলি বিডি বলেছেন: ভাল থাকবেন অনেক ভাল। অনেক শুভকামনা থাকলো।
২৮ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৫:৩৮
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, আপনিও ভাল থাকবেন।
৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৩২
দস্যু বনহুর বাই রোমেনা আফাজ বলেছেন: নক্শী কাঁথার মাঠ বলেছেন: সাবাস ভাই.... সাব্বাস! আপনার জন্য অনেক অনেক অনেক শুভকামনা থাকলো।
২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৬:৫৭
দুঃখ হীন পৃথিবী বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, জীবন যুদ্ধের মাঠে যখন আপনাদের মত কেও আমাদের পিঠ চাপরিয়ে বলে এগিয়ে যাও পথ খুজে পাবে।
তখন সত্যিই মনে একটা সাহস পাই।
ভাল থাকবেন অনেক ভাল।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৯
নক্শী কাঁথার মাঠ বলেছেন: সাবাস ভাই.... সাব্বাস! আপনার জন্য অনেক অনেক অনেক শুভকামনা থাকলো।