নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার আপনার চেয়ে আপন যেজন, খুঁজি তারে আমি আপনায় ..
বায়না মেটাতে, আমার কন্যার সর্বশেষ জন্মদিনের বেশ কিছুদিন আগেই, ওকে একজোড়া সবুজ রঙের [খাঁচায় বন্দী] পাখি কিনে দিয়েছিলাম। ও চেয়েছিল ময়না, টিয়া। যারা কথা বলতে পারে। গিয়েও ছিলাম তাই কেনার জন্য।
কিন্তু কথা বলা পাখিদের অনেক দাম!!
কাটাবনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ভাবলাম, "কথা কম বলাই ভাল! না বললে আরও বেশী ভাল !"
তাছাড়া যেই পাখিই কিনি, ঠিক করেছিলাম, রাচিতার জন্মদিনে ওই পাখি জোড়াকে ও নিজহাতে খাঁচা থেকে মুক্ত করবে, আর ওদের উড়ে যাবার আনন্দ দেখবে।
তাই অল্প কদিনের জন্য এত টাকা খরচ করে, কথা বলা পাখী না কিনে, মোটামুটি সুন্দর, নম্র, ভদ্র, 'কথা না বলা' পাখী নিয়েই ঘরে ফিরেছিলাম। কন্যা আমার খুব খুশিও হয়েছিল। প্রথম প্রথম কদিন সেই পাখিদের জামাই আদর দেয়া হলো। ফটো সেশান হলো। ফেসবুক হলো।
তারপর এলো রাচিতার জন্মদিন।
কথা মতো ওদের ছেড়ে দেবার আয়োজনও হলো। কিন্তু ছাড়বার আগে আগে, নানান জায়গা থেকে নানান রকমের গায়েবী তথ্য আসা শুরু হলো।
"এরা উড়তে পারে না। ছাড়লে, মাটিতে পড়ে থাকে।
এদের বিড়ালে খেয়ে ফেলে।
বিড়াল পাখি খেতে পছন্দ করে .. ইত্যাদি এবং ইত্যাদি।"
চুরি করে দুধ খায়, মাছের কাটা-কুটা খায় জানতাম।
কিন্তু বিড়াল যে পাখি খায়, একথা জীবনে আমি আগে কখনও শুনি নাই।
এমন অনেক কথাই তো আমি শুনি নাই। তাই বলে সব তো আর উড়িয়ে দিতে পারি না।
বিড়ালের পাখি খাওয়া যেমন তেমন। উট-পাখী ছাড়াও যে আরও পাখি আছে যারা উড়তে পারে না - এই কথা বই পুস্তক, ইন্টারনেটে কখনও দেখিনাই, পড়িও নাই।
কারও কোন যুক্তিই আমার মনঃপুত হলো না। তবু .. জেনেশুনে এক জোড়া অসহায় পাখিকে বিড়ালের মুখে কিভাবে ঠেলে দেই? উড়তে যদি না পারে, তাহলে এরা তো খাবারের অভাবে, বা ঝড় বৃষ্টিতে পরে মরবে। পাখি দুই টাকে আর ছাড়া হলো না। বেশ কদিন কাটলো। মাস গেলো। তারপর কয়েকমাস গেলো।
জিগাতলার যে বাড়িটায় আমি এখন থাকি, সেখানে শোবার ঘর, রান্না ঘর, স্নানঘর ছাড়াও তিনটা ছোট ছোট 'খোপ'ঘর আছে [যেগুলোকে বাড়িওয়ালা 'বারান্দা' বলে]। এই তিনটা খোপের একটা আমার নামে বরাদ্দকৃত। এখানে বসেই আমি চা-টা খাই, মোবাইল দেখি, গান শুনি, বৃষ্টি দেখি, রোদ পোহাই, চাঁদ দেখি।
সবুজ রঙের সেই পাখিজোড়া আমার এই খোপঘরে, আমার সাথে, ওদের খোপে থাকে। প্রতিদিন ওরা আমাকে দেখে। আমিও ওদের দেখি। আমি ওদের নিয়ে ভাবি। ওরাও নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে ভাবে। মনে মনে হয়তো আমাকে নিয়ে ঠাট্টাও করে - " মাষ্টার সাব, আমরাও খোপে। তুমিও খোপে। বেশী ভাব নিও না।"
দিন কয়েক আগে মাঝ রাত্তিরে ওদের পাশে বসে আমার ‘রুটিন চা’ শেষ করে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।
তেমন জটিল বা চমকপ্রদ কোন সিদ্ধান্ত ছিলনা, যার জন্য নাটক করতে হবে। খুব সহজ সিদ্ধান্ত। যদিও কথায় আছে যে, মানুষ সবচাইতে কঠিন দ্বিধার কুয়ায় পরে যখন খুব সহজ কোন সিদ্ধান্ত নিতে যায়।
চৈত্র সংক্রান্তির রাতে, সেদিন পাখি জোড়া আমাকে নিয়ে যখন ওদের ভাষায় কথা বলছিল, তাদের সেই কথাগুলো আমি শুনতে পেয়েছিলাম। এটা কোন দৈবশক্তিক্রমে ঘটেনি।
প্রতিটা মানুষের মনের মধ্যেই একটা করে পাখি বাস করে। তাই বলে সব মানুষ পাখি হয়ে উড়তে পারেনা।
কেউ কেউ ওড়ে। আর কেউ বা খোপে বসে আমার মতো আরেক খোপের পাখির কথা শোনে।
ওদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম যে, সে রাতেই ওদের আমি মুক্ত করবো। “আগামী ভোরের আকাশটা আমাদের”- এমন ভাবতে ভাবতে রাতের অন্ধকারে মুক্তির আনন্দে হয়তো পাখী জোড়া আমার খোপের দিকে তাকিয়ে বলবে, "মাস্টার সাব, ধন্যবাদ। আমাদের কে আকাশটা ফিরিয়ে দেবার জন্য।"
ঘুমুতে যাবার আগে তাই, কাউকে না জানিয়ে ওদের খাঁচার দরজাটা খুলে রেখে দিলাম। মনে মনে চাইলাম, সকালে উঠে আমার খোপে ঢুকে যেন দেখি ওদের খোপ টা ফাঁকা।
বৈশাখ মাসের ১ তারিখ।
আমার সকাল হলো।
ঘড়িতে যদিও সময় দুপুর ১২টা বেজে ৩৫ কি ৩৭ মিনিট।
কন্যা রাচিতার কাঁপা চিৎকার শুনেই ওঠা।
"বাবা ... একটা পাখি উড়ে চলে গেছে।”
“আরেক টা আছে।”
“পাখির খাঁচার দরজাটা, কে যেনো মা'র মাথার ক্লিপ দিয়ে আটকে খুলে রেখে দিয়েছিলো।"
কিছুই হয়নি, এমন একটা ভাব ধরে গেলাম আমার খোপে। দরজাটা তখনো খোলাই ছিল। একটা সবুজ পাখি তখনও বসে।
মলিন! স্থির! রাচিতার মতন।
উড়ে আসা তথ্যগুলো সত্য মনে হতে লাগলো। এই পাখিগুলো কি আসলেই উড়তে পারে না? নাকি অনেক দিন না উড়তে উড়তে, উড়বার ক্ষমতায় মরিচা ধরেছে?
যে পাখিটা চলে গেলো, সে কি উড়ে গেছে? নাকি ৬তলার 'বারান্দা' থেকে পরে গেছে? আসে পাশে কি তখন কোন বিড়াল ছিল? যে পাখিটা এখনও খোপে বসে আছে, সে কি উড়তে না পারার কষ্ট নিয়ে বসে আছে? নাকি অপেক্ষায় আছে অন্যজন ফিরবে বলে?
খাঁচার দরজাটা এখনও খোলা। চলে যাওয়া পাখিটা আজও ফেরেনি। রয়ে যাওয়া পাখিটা এখনও যায়নি।
পাখিটি আছি বলেই তো, আমিও আছি।
বায়না মেটাতে, আমার কন্যার সর্বশেষ জন্মদিনের বেশ কিছুদিন আগেই, ওকে একজোড়া সবুজ রঙের [খাঁচায় বন্দী] পাখি কিনে দিয়েছিলাম। ও চেয়েছিল ময়না, টিয়া। যারা কথা বলতে পারে। গিয়েও ছিলাম তাই কেনার জন্য।
কিন্তু কথা বলা পাখিদের অনেক দাম!!
কাটাবনের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ভাবলাম, "কথা কম বলাই ভাল! না বললে আরও বেশী ভাল !"
তাছাড়া যেই পাখিই কিনি, ঠিক করেছিলাম, রাচিতার জন্মদিনে ওই পাখি জোড়াকে ও নিজহাতে খাঁচা থেকে মুক্ত করবে, আর ওদের উড়ে যাবার আনন্দ দেখবে।
তাই অল্প কদিনের জন্য এত টাকা খরচ করে, কথা বলা পাখী না কিনে, মোটামুটি সুন্দর, নম্র, ভদ্র, 'কথা না বলা' পাখী নিয়েই ঘরে ফিরেছিলাম। কন্যা আমার খুব খুশিও হয়েছিল। প্রথম প্রথম কদিন সেই পাখিদের জামাই আদর দেয়া হলো। ফটো সেশান হলো। ফেসবুক হলো।
তারপর এলো রাচিতার জন্মদিন।
কথা মতো ওদের ছেড়ে দেবার আয়োজনও হলো। কিন্তু ছাড়বার আগে আগে, নানান জায়গা থেকে নানান রকমের গায়েবী তথ্য আসা শুরু হলো।
"এরা উড়তে পারে না। ছাড়লে, মাটিতে পড়ে থাকে।
এদের বিড়ালে খেয়ে ফেলে।
বিড়াল পাখি খেতে পছন্দ করে .. ইত্যাদি এবং ইত্যাদি।"
চুরি করে দুধ খায়, মাছের কাটা-কুটা খায় জানতাম।
কিন্তু বিড়াল যে পাখি খায়, একথা জীবনে আমি আগে কখনও শুনি নাই।
এমন অনেক কথাই তো আমি শুনি নাই। তাই বলে সব তো আর উড়িয়ে দিতে পারি না।
বিড়ালের পাখি খাওয়া যেমন তেমন। উট-পাখী ছাড়াও যে আরও পাখি আছে যারা উড়তে পারে না - এই কথা বই পুস্তক, ইন্টারনেটে কখনও দেখিনাই, পড়িও নাই।
কারও কোন যুক্তিই আমার মনঃপুত হলো না। তবু .. জেনেশুনে এক জোড়া অসহায় পাখিকে বিড়ালের মুখে কিভাবে ঠেলে দেই? উড়তে যদি না পারে, তাহলে এরা তো খাবারের অভাবে, বা ঝড় বৃষ্টিতে পরে মরবে। পাখি দুই টাকে আর ছাড়া হলো না। বেশ কদিন কাটলো। মাস গেলো। তারপর কয়েকমাস গেলো।
জিগাতলার যে বাড়িটায় আমি এখন থাকি, সেখানে শোবার ঘর, রান্না ঘর, স্নানঘর ছাড়াও তিনটা ছোট ছোট 'খোপ'ঘর আছে [যেগুলোকে বাড়িওয়ালা 'বারান্দা' বলে]। এই তিনটা খোপের একটা আমার নামে বরাদ্দকৃত। এখানে বসেই আমি চা-টা খাই, মোবাইল দেখি, গান শুনি, বৃষ্টি দেখি, রোদ পোহাই, চাঁদ দেখি।
সবুজ রঙের সেই পাখিজোড়া আমার এই খোপঘরে, আমার সাথে, ওদের খোপে থাকে। প্রতিদিন ওরা আমাকে দেখে। আমিও ওদের দেখি। আমি ওদের নিয়ে ভাবি। ওরাও নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে ভাবে। মনে মনে হয়তো আমাকে নিয়ে ঠাট্টাও করে - " মাষ্টার সাব, আমরাও খোপে। তুমিও খোপে। বেশী ভাব নিও না।"
দিন কয়েক আগে মাঝ রাত্তিরে ওদের পাশে বসে আমার ‘রুটিন চা’ শেষ করে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম।
তেমন জটিল বা চমকপ্রদ কোন সিদ্ধান্ত ছিলনা, যার জন্য নাটক করতে হবে। খুব সহজ সিদ্ধান্ত। যদিও কথায় আছে যে, মানুষ সবচাইতে কঠিন দ্বিধার কুয়ায় পরে যখন খুব সহজ কোন সিদ্ধান্ত নিতে যায়।
চৈত্র সংক্রান্তির রাতে, সেদিন পাখি জোড়া আমাকে নিয়ে যখন ওদের ভাষায় কথা বলছিল, তাদের সেই কথাগুলো আমি শুনতে পেয়েছিলাম। এটা কোন দৈবশক্তিক্রমে ঘটেনি।
প্রতিটা মানুষের মনের মধ্যেই একটা করে পাখি বাস করে। তাই বলে সব মানুষ পাখি হয়ে উড়তে পারেনা।
কেউ কেউ ওড়ে। আর কেউ বা খোপে বসে আমার মতো আরেক খোপের পাখির কথা শোনে।
ওদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম যে, সে রাতেই ওদের আমি মুক্ত করবো। “আগামী ভোরের আকাশটা আমাদের”- এমন ভাবতে ভাবতে রাতের অন্ধকারে মুক্তির আনন্দে হয়তো পাখী জোড়া আমার খোপের দিকে তাকিয়ে বলবে, "মাস্টার সাব, ধন্যবাদ। আমাদের কে আকাশটা ফিরিয়ে দেবার জন্য।"
ঘুমুতে যাবার আগে তাই, কাউকে না জানিয়ে ওদের খাঁচার দরজাটা খুলে রেখে দিলাম। মনে মনে চাইলাম, সকালে উঠে আমার খোপে ঢুকে যেন দেখি ওদের খোপ টা ফাঁকা।
বৈশাখ মাসের ১ তারিখ।
আমার সকাল হলো।
ঘড়িতে যদিও সময় দুপুর ১২টা বেজে ৩৫ কি ৩৭ মিনিট।
কন্যা রাচিতার কাঁপা চিৎকার শুনেই ওঠা।
"বাবা ... একটা পাখি উড়ে চলে গেছে।”
“আরেক টা আছে।”
“পাখির খাঁচার দরজাটা, কে যেনো মা'র মাথার ক্লিপ দিয়ে আটকে খুলে রেখে দিয়েছিলো।"
কিছুই হয়নি, এমন একটা ভাব ধরে গেলাম আমার খোপে। দরজাটা তখনো খোলাই ছিল। একটা সবুজ পাখি তখনও বসে।
মলিন! স্থির! রাচিতার মতন।
উড়ে আসা তথ্যগুলো সত্য মনে হতে লাগলো। এই পাখিগুলো কি আসলেই উড়তে পারে না? নাকি অনেক দিন না উড়তে উড়তে, উড়বার ক্ষমতায় মরিচা ধরেছে?
যে পাখিটা চলে গেলো, সে কি উড়ে গেছে? নাকি ৬তলার 'বারান্দা' থেকে পরে গেছে? আসে পাশে কি তখন কোন বিড়াল ছিল? যে পাখিটা এখনও খোপে বসে আছে, সে কি উড়তে না পারার কষ্ট নিয়ে বসে আছে? নাকি অপেক্ষায় আছে অন্যজন ফিরবে বলে?
খাঁচার দরজাটা এখনও খোলা। চলে যাওয়া পাখিটা আজও ফেরেনি। রয়ে যাওয়া পাখিটা এখনও যায়নি।
পাখিটি আছি বলেই তো, আমিও আছি।
২| ০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ৯:০০
চাঁদগাজী বলেছেন:
পরিচিতদের পাখী না কিনতে উৎসাহিত করবেন।
৩| ০৩ রা মে, ২০১৮ সকাল ৯:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: বাচ্চা জড় বস্তু থেকে জীবন্ত খেলনা বেশি পছন্দ করে।
৪| ০৪ ঠা মে, ২০১৮ রাত ৩:৩৮
সিসৃক্ষু বলেছেন: মানুষের কথা শুনে অতদিন ওদের আটকে রেখেছেন, এটাই বিস্ময়কর। কোন বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণীর আটকে থাকা নিশ্চয় সীমাহীন কষ্টের। আর ওরা পাখি, যা আকাশে ওড়ে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা মে, ২০১৮ রাত ১:৫২
নোয়াখাইল্ল্যা বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন.। পাখির জন্য ভালবাসা রইল।