নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ রক্ষার সৈনিক

মারুফ মুনজির

আমাকে যে ভালবাসে তাকে আমার খুব ভাল লাগে

মারুফ মুনজির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাড়ি থেকে ফেরার পথে ভাবনার চিরকুট

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:১১

অনেকদিন পর বাড়ি থেকে ফেরার পথে খারাপ লাগা অনুভব করলাম, এতটা নাড়িয়ে দেয়নি সে অনেককাল, মনটা কেমন জানি অস্থির লাগছিল, গুমোট একটা কষ্ট অনুভব করেছি, ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল না এই গ্রাম শহর, ফেরার পথে গ্রাম দেখি, তার মানুষ দেখি, তাদের প্রতি আমার ইর্ষাও জন্মায়, কত ভাগ্যবান হয়ে গ্রামে বাস করে। খুব বাধ ভাঙ্গা আবেগ জাপটে ধরছিলো, বিশেষ করে আমার মায়ের জন্য খুব খারাপ লাগছিল, একা একা কেমনে থাকবে, সেই বারো বছর ধরে তো থেকেই যাচ্ছে, আসার পথে মায়ের চোখের দিকে তাকাতে পারিনি, ছেলে হয়ে জন্ম নিয়েছি তাই মাকে বুঝার ঘাটতিও রয়েছে, সে ব্যর্থতা আমার, মা বাবার শান্তির জন্য কিছু করতে পারছি না এই অক্ষমতা আমাকে কষ্ট দেয়, সাধ্যমত চেষ্টা করছি তবুও মনে আরো আরো করি, কিন্তু আমারও সীমাবদ্ধতা আছে।

আসার পথে পথে বারবার স্মৃতিজড়িত স্থানগুলির দিকে তাকিয়ে দেখেছি, আমার যানবাহন ছুটছে, আর দৃষ্টি থেকে পিছনে চলে যায় শহর গ্রাম, আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার চষ্টা করছি বারবার। মনে হয় আরেকটু দেখি, এইতো এই পথে সাইকেল চালিয়ে গেছি, এই সেই মাঠ যেখানে রোদ মাথায় নিয়ে খেলেছি, এইতো আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে পড়েছি, কত শত স্মৃতি তুমুলভাবে ঝাপিয়ে পড়ে আমার মগজে মগজে, আধুনিক যানবাহন- দ্রুত পিছে চলে যায় চারপাশ, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকি, স্বাধ মিটেনা। গ্রামের সবুজ ক্ষেত, নির্মল আকাশ, গাছ গাছালি, নগরের আচড়হীন গ্রাম্য পথ, মনটা উদাস হয়ে পড়ে। সারাটা বছর কোথায় থাকি, আহ এই প্রকৃতির মাঝে যদি থাকা যেতো, কত দুরন্তপনা, কত স্মৃতি এই গ্রামের সাথে পথে পথে, সবকিছু ছেড়ে চলে যাচ্ছি আবেগহীন শহুরের বদ্ধ খাচায়।

এবারো মানুষ দেখি, মানুষের চিন্তা জানার চেষ্টা করি। কে কত বড় পশু কোরবানি দিল তাই নিয়ে আলোচনা, কার টা কত দাম দিয়ে কিনেছে সেটাই মুখ্য বিষয়, মানুষ যেনো বেশি দামের কথা বলতেও ভালোবাসে, নিজেকে সম্মানিতবোধ করে, কেন দিচ্ছি তার থেকে বড় ভাবনা হলো আমার পশুটা দেখে যেনো প্রশংসা করা হয়, আমার টাকার বড়লোকি প্রকাশ পায়, বড় পশু, অনেকগুলো পশু কোরবানির মাধ্যেমে সামাজিক প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা। সব প্রদর্শনেচ্ছা, স্রেফ ভন্ডামি, অনেক পরিবার দেখেছি কোরবানি ওয়াজিব হয়নি, তবুও কোরবানি দিচ্ছে সম্মানের ভয়ে, মানুষ কি বলবে যদি কোরবানি না দেই, এই সাহস নেই কোরবানি ওয়াজিব হয়নি আমি দেবো না, কি লাভ এই কোরবানি দিয়ে, কি লাভ এই সম্মানের জন্য নিজেকে আল্লার কাছে ভন্ড হিসেবে উপস্থাপন করে।

মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা কমেছে, আমাদের গ্রামের বাড়িতে ৬ গরু কোরবানি দেয়া হয়েছে চার জায়গায়, অথচ ছোট সময়ে বাড়ি যখন যেতাম তখন দেখেছি সবাই একসাথে কোরবানি দিচ্ছে, একসাথে পাশাপাশি অবস্থানে গোস্ত কাটাকাটি করছে, একধরনের আনন্দ ছিলো, আমরা ছোটরা রক্ত, ঢোল বানানোর জন্য একধরনের চামরা নিয়ে মজা করতাম, কুকুরের ঘেউ ঘেউ, একটা হৈ হৈ অবস্থা, এখন কেমন ম্যারম্যারে লাগলো যে যার মতো কোরবানি দিয়ে গোস্ত নিয়ে বাড়ি, কে কত গোস্ত ফ্রিজিং করতে পারে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা, আগে থেখেই পরিকল্পনা থাকে কোথায় কার বাড়ির ফ্রিজে গোস্ত রাখা হবে।

ছোট বেলার নানা বাড়ির কথা মনে পড়ে যায়, কোরবানির পর নানা বাড়ি বেড়াতে যেতাম, নানু আমাদের জন্য গোস্ত রেখে দিতেন হলুদ মাখিয়ে জ্বাল দিয়ে, অনেক দিনের জ্বাল দেয়া গোস্ত খেতাম লুকিয়ে লুকিয়ে, আহ জ্বাল দিতে দিতে ছুটে যাওয়া ঝুরঝুরে গোস্তের কি স্বাধ, অনেক দিন সে রকম খেতে পাইনি। আর পাবো কিনা জানি না, প্রযুক্তির ফ্রিজ সে আর খেতে দিবে না।

গ্রামের সেই মেঠো পথ আর নেই, সব পিচঢালা পথ, ধুলা উড়িয়ে পায়ে ধুলো বা কাদা লাগিয়ে হাটার আর সুযোগ নেই, এটা যেমন উন্নত জীবনের আনন্দ তেমনি প্রকৃতির ছোয়া থেকে বিচ্ছিন্নতার বিষাদের বিষয়ও, রাস্তার দুধারে ফসলি জমি নেই, রাস্তার পাশে খেজুর গাছ আর বড় বড় তালগাছ, বটগাছ নেই, হাটতে গেলেই বিশাল ক্ষেতের স্নিগ্ধ বাতাসে মনটা জুড়িয়ে যেতো সে আর নেই, নতুন নতুন ঘর উঠেছে, ঘর আর ঘরের আড়ালে সেই সবুজ ক্ষেত আর দেখতে পাই না, গ্রামের সেই প্রানবন্ত মানুষ নেই, আধুনিক কৃষকের ভিরে স্মৃতিজড়িত কৃষকের দেখা পাই না। সব হারিয়ে গেছে আধুনিকের ছোয়ায়, অনেকদিন পুকুরের পানিতে হাস দেখিনি, সাকো দেখিনি, পাকা ধান দেখিনি, ঘরে উঠা পাকা ধানের ঘ্রান নেইনি, ধান সিদ্ধ পিঠা সে এখন অতীত, রাস্তার ধারের খেজুরের রস খাওয়া, রাস্তার দুপাশে ঘাস জড়িয়ে মাঝখানে সরু সাদা মেঠো পথ, আহ সেই পথে একটু খালি পায়ে ধুলো লাগিয়ে হাটতে পারতাম, ধান ক্ষেত সেচে মাছ ধরা, কাদায় মাখামাখি হৈ হুল্লোর, ডুবোডুবি করে চোখ লাল করা, সে কি আর হবে। তুমুল বৃষ্টিতে ভেজা, হাটু কাদা পেরিয়ে পথচলা, কাদায় ভরপুর তুমুল বৃষ্টিতে ফুটবল খেলা। সে জীবন এই দ্রুত অতীত হয়ে গেলো?

মানুষের মাঝে যেমন স্বার্থপরতা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রতা বেড়েছে তেমনি বেড়েছে অস্থিরতা সহিংসতা, এক ছেলের সাথে মেয়ের কয়েক বছরের প্রেম, মেয়ে এখন প্রেম করবে না, এনিয়ে ঝগড়া শেষ পর্যন্ত ছেলেটি মেয়েটিকে কুপিয়ে আহত করলো, বাড়ির সামনে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখলাম, ইদের পর আমার শহর বাউফলে এই ঘটনা ঘটে, সবার কাছে মুখরোচক ঘটনা, বলতে সবার কাছে ভালো লাগছে, আমি ভাবি অন্য দিক থেকে, সম্পর্ক খুব দ্রুত ভাংছে, কেনো ভাঙ্গছে, ভাঙ্গার পর কি ঘটছে, নতুন সম্পর্কের গভীরতা কতটুকু, কিসের প্রভাবে এসব ঘটছে। সর্ম্পক এতো ঠুনকো হলে ভবিষ্যতের স্বাভাবিক সর্ম্পেকর কি পরিনতি হবে, সামাজিক অবস্থা কি করুন পরিনতি সামনে অপেক্ষা করছে। অবিভাবকরাই বা কি করছে, কি ভাবছে। সময়টাই কেমন শৃঙ্খলহীন, সবকিছু এতো দ্রুত ঘটছে এতো ডাইমেনশন, এর কার্যকারন ব্যখ্যা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। এর জন্য কি দায়ী, কারা দায়ী, ভাবা যেতে পারে, ভাবতে থাকি, ভাবতে থাকুন।

অনেকদিন পর প্রান ভরে আকাশ দেখি, লঞ্চের ছাদে শুয়ে থেকেছি অনেক্ষন, চাদের আলোয় ভরপুর বিশাল আকাশ দেখি, ছুটে চলা মেঘ, নদীর মাঝে আমি, চিক চিক করা রুপালি পানি, কি অদ্ভুত ভালো লাগা, নিজেকে মুক্ত মনে হয়, পৃথিবীতে বাচতে ইচ্ছে হয়, হঠাত করেই আকাশের দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে থাকায় মনে হলো আমি কতো ক্ষুদ্র, হাজার নক্ষত্র নিয়ে কত বিশাল আকাশ, কত পানি নিয়ে এই নদী, আর আমি কোথায়, ভাবতেই কেমন জানি অস্তিত্বহীনতার অনুভব করলাম, এমনিতেই নিজের জীবনের হিসেবটা চোখের সামনে চলে আসে, খুব অস্থিরতায় পড়ে যাই, কে আমি, কেনো আমি, কি চাই আমি, এর শেষ কোথায়, মাথার মধ্যে এক ধরনের ঝড় উঠে, আশে পাশে এতো মানুষ, সব কিছু যোজন যোজন দূরের বস্তু মনে হয়, খুব দুর থেকে কিছু শব্দ ভেসে আসছে, আর আমার খুব ভয় করছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৪০

ব্লগ মাস্টার বলেছেন: পড়ে অনেক কষ্ট ও লাগলো আপনার জন্য

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:২২

মারুফ মুনজির বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.