নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ রক্ষার সৈনিক

মারুফ মুনজির

আমাকে যে ভালবাসে তাকে আমার খুব ভাল লাগে

মারুফ মুনজির › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুভি রিভিউ ঋতুপর্ণ ঘোষের “উনিশে এপ্রিল”

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৬

অনেক দিন থেকেই ঋতুপর্ণা ঘোষের “উনিশে এপ্রিল” সিনেমাটি দেখার আগ্রহ ছিল, কিন্তু ভালো প্রিন্ট পাচ্ছিলাম না, গতকাল পেয়ে গেলাম, দেখলাম। ক্যারিয়ার, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক আর সন্তানের উপর তার প্রভাব নিয়ে এক অনন্য সিনেমা। পুরো মুভিটার শেষের ৩০ মিনিট হলো ১৩৮ মিনিটের সিনেমার আসল অংশ, ঋতুপর্ণা ঘোষের ছবি দেখে বুঝলাম সবসময় ইউনিক গল্পই নিয়ে ছবি তৈরী করে, ওর ছবিতে গেস গেম খেলাটা কঠিন হয়ে পড়ে, আসলে শেষ টা কি হবে সেটা শেষ না দেখে বুঝার উপায় নাই, সে ধারাবাহিকতায় খুব আগ্রহ নিয়ে সিনেমার পুরোটা শেষ করেছি, ১৯৯৪ সালের সিনেমা হলেও এর গল্পের প্রাসঙ্গিগতা চরমভাবে সমসাময়িক, এই ছবির বাস্তবতা আসলে এখনকার সময়ের। সেলিব্রেটি, আর্থিকভাবে অপেক্ষাকৃত বেশি সফল, ব্যস্ত স্ত্রীর সাথে স্বামীর মানসিক কমপ্লেক্স, দাম্পত্যের ঝড়-ঝাপ্টা, জটিলতা আর সন্তানের উপর তার প্রভাব, পরে বাবার মৃত্যু, মৃত্যুর জন্য মাকেই দোষী মনে করা, পরে মা আর মেয়ে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব নিয়ে পুরা সিনেমা।
মা বিখ্যাত নাচনেওয়ালী, আর মেয়ে ডাক্তার, আজ উনিশে এপ্রিল নাচনেওয়ালী মা পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি ব্যস্ত মিডিয়া কর্মীদের সাক্ষাতকার দিতে, আবার বিকেলে মাদ্রাজ যাবে ওস্তাদ গুরুজির সাথে দেখা করতে, অন্যদিকে মেয়ে ব্যক্তিগত ক্ষোভে ফুসছেন, মায়ের উপর রাগ বাড়ছে তো বাড়ছে, কারন আজ উনিশে এপ্রিল তার বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর দিন কিন্তু মায়ের সেকথা মনেই নেই, সে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে সেটা নিয়ে ব্যস্ত, এভাবে শুরু হতে থাকে সিনেমা। এদিকে মায়ের পুরস্কার পাওয়ার পর মেয়ের বয়ফ্রেন্ড জানান- বয়ফ্রেন্ডের মা এই বিয়েতে রাজি না কারন তার ছেলের বউ নাচনেওয়ালীর মেয়ে হতে পারে না, এভাবে বাবার মৃত্যু, নিজের রিলেশন ভেঙ্গে যাওয়া, শৈশবে আদর স্নেহ থেকে বঞ্চনা, বয়োসন্ধির সময় ব্যস্ত মাকে না পাওয়ার অভিমান, সব মিলে মাকেই দোষারোপ করে মেয়ে অদিতি, তাই অদিতি বাবার মৃত্যুর দিনকেই নিজের জীবনের শেষ দিন হিসেবে আত্মহত্যা করবে বলে ঠিক করে, রাত গভীর হয়, বাবার ছবি নিয়ে অদিতি কাদে আর মৃত্যুর প্রস্তুতির দিকে এগিয়ে যায়, এক বেদনা বিধুর নির্মম দৃশ্য, কিন্তু সবকিছু উলোটপালোট হয়ে যায় মায়ের মাদ্রাজ যাবার ফ্লাইট ক্যানসেল হয় আর বাসায় মায়ের ফিরে আসায়, আর সিনেমার শেষ ৩০ মিনিট এখান থেকেই শুরু।
অনেকদিন পর মা মেয়ে একা বাসায়, রাতের যৌথ রান্না করতে গিয়ে ধীরে ধীরে নিজেদের মধ্যে কথা শুরু হয়, এভাবে আস্তে আস্তে কথপোকথনে বেরিয়ে আসে মা বাবার সর্ম্পক, মা মেয়ের দূরত্বের কারন। এই দৃশ্যে বেরিয়ে আসে আমাদের সমাজের বাস্তবতা। মা নাচে, সারা দিন রাত বাইরে যেতে হয় ফাংশনে, মেয়ের পছন্দ হয় না। মা তখন প্রশ্ন করে আমি যদি অর্থনীতির প্রফেসর হতাম আর দিন রাত সেমিনারে বাইরে যেতাম তাহলে তার কেমন লাগতো, মেয়ে জবাব দিতে পারে না, এখানেই নারীর পেশার সাথে আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি উঠে আসে, এরপর মেয়ে প্রশ্ন করে তাহলে বাবার সাথে সম্পর্ক খারাপ কেনো? এখানে উঠে আসে মায়ের খ্যাতির সাথে বাবার কমপ্লেক্স, এত নাম যশ এত টাকার ইনকাম বাবার মাঝে হীনমন্যতা জন্ম দেয়, নিজের থেকে বউয়ের এত উন্নতি সে মানতে পারে না, ক্যারিয়ারে বউ সফল ডাক্তার স্বামীর এটা মানতে কষ্ট হয়, এভাবে মানসিক দুরত্ব বাড়ে, আর ডাক্তার স্বামী বাসায় থাকে নাচনেওয়ালী স্ত্রী বাইরে বাইরে ফাংশনে থাকে, সন্তানকে বাবাই বেশি সময় দেয়, আর বাবা তার নিজের মতো করে মায়ের কাছ দূরে সরিয়ে বড় করে, আর সন্তান মাকে এভাবেই দোষারোপ করে মানসিক দূরত্ব নিয়ে বড় হয়, আট বছরে বাবা মারা গেলে হোস্টেলে হোস্টেলে বড় হয় সন্তান, মেয়ে তখন বাবাকে আদর্শ মনে করে ডাক্তার হয়, মা যখন বলে তোমার ডাক্তার হবার পিছে আমারই অবদান বেশি- মেয়ে অস্বীকার করতে গেলে মা তখন বলে এই নাচের টাকা দিয়েই তোমার পড়াশোনার খরচ চালানো হয়েছে, এভাবেই কথার পিঠে কথা চলে, মা মেয়ের দ্বন্ধ চলে আর দুরত্ব কমে, এই দ্বন্ধমুখর কথা থেকে উঠে আসে মা মেয়ে দুজনেই দুজনের অপেক্ষা করতো, কিন্তু মানসিক দুরত্ব, জড়তা, ইগোর জন্য কারো কাছে কারো যাওয়া হয়ে উঠে না, আর এই দুরত্ব থেকে মানসিক যন্ত্রনা নিয়ে দুজনকে আলাদা আলাদাভাবে বেড়ে উঠতে হয়েছে। এই সিনেমা দেখে মনে হলো প্রেম করা যেতে পারে তবে বিয়ে করতে গেলে সমান মনমানসিকতা দরকার, স্বামী স্ত্রী ক্যারিয়ারে সমান সমান থাকতে হবে, বিশেষ করে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষদের মানসিকতা এটাই- নিজের থেকে বউয়ের শ্রেষ্টত্ব মানতে পারে না। স্ত্রী হয়তো সবকিছু ছেড়ে স্বামীর সংসার করতে চায় কিন্তু সেখানেও সমস্যা- স্বামী নিজেকে মানাতে পারে না তার কারনে কেনো তার স্ত্রী সবকিছু ছেড়ে দিবে, বা স্ত্রী আদৌ মনে প্রানে ছেড়ে দিতে পেরেছে এই সন্দেহ থেকে যায়, আর এই সন্দেহ, এই নিজেকে দোষারোপ থেকে আচরনে পরিবর্তন আসে স্বামীর, তখন স্ত্রীর এই মনে প্রানে সংসার করার ইচ্ছেটুকু আর থাকে না পরবর্তীতে স্বামীর সাথে সম্পর্ক রক্ষার থেকে নিজের ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দেয় স্ত্রী আর সেই গল্পই অসাধারন চিত্রায়নে তুলে ধরা হয়েছে এই ছবির নাচনেওয়ালীর চরিত্রে। শেষ কিছু দৃশ্য নাচনেওয়ালী কয়েকবারই বলে ডাক্তার স্বামীকে বিয়ে করা তার ভুল হয়েছে। আর এই স্বামী স্ত্রীর দ্বন্ধ বা সিদ্ধান্তে ভুল এর শিকার হতে হয়েছে সন্তানদের।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৫

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: লিংটা দিবেন ?

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০২

মারুফ মুনজির বলেছেন: vi youtube

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৫

টানিম বলেছেন: ভালো রিভিউ । অল্প কথায় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.