নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ রক্ষার সৈনিক

মারুফ মুনজির

আমাকে যে ভালবাসে তাকে আমার খুব ভাল লাগে

মারুফ মুনজির › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুভি রিভিউ ঋতুপর্ণ ঘোষের “দহন”

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪

ঋতুপর্ণ ঘোষ এর “দহন” সিনেমাটি দেখে রাতে ঘুমুতে পারছিলাম না, বিছানায় এপাশ ওপাশ করছিলাম, এতটাই বাস্তবিক আর জীবন ঘনিষ্ট যে বারবার নিজের জীবন আর চারপাশের মানবজীবনের সাথে মিলাচ্ছিলাম, আর চিন্তার ডাইমেনশনে অস্থির হয়ে পড়ছিলাম, বর্তমান সমাজে তো অহরহ নারীরা শ্লীলতাহানি হচ্ছেন, কিন্তু কখনো গভীরভাবে ভেবে দেখিনি, ভুক্তভোগী নারীর সামাজিক অবস্থা কি হয়, তার সমাজ সংসার কিভাবে চলে, সে কি আগের মতো স্বাচ্ছন্দ্যবোধে চলতে পারে, তার স্বামী তাকে মেনে নেয়?- অনেক কথা মাথায় ঘুরপাক খায় । সিনেমাটা দেখার পর ভাবতে হলো, নারীর শ্লীলতাহানির জন্য তে দায়ী পুরুষ নাকি নারী, সে বিতর্ক শেষ হয় না। যাই হোক সিনেমার শেষ দৃশ্য আমাকে বার্তা দিলো- আমরা সবাই একা, শুধূ বেচে থাকার জন্য এ ওর সাথে সম্পর্ক রাখি, কিন্তু সে সম্পর্ক কতটা গভীর আর অগভীর সেটা দিয়েই জীবনের সুখ আর সার্থকতা মাপা যায়, সমাজে বাস করি বলে অনেক নীতিহীনতার সাথে কমপ্রোমাইস করে সংসার করি কিন্তু সে সংসার অন্তসারশূণ্য, অগভীর আর ঠুনকো।
সিনেমাটি ১৯৯৭ সালের, ঋতুপর্ণ ঘোষ সেই সময় এরকম ভাবনা করেছেন তা দু:সাহসিক ও সাধূবাদের, তবে গল্পটা ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক সুচিত্রা ভট্টাচার্যের, এর আগে সুচিত্রার “কাছের মানুষ” ছাড়া কোন উপন্যাস আমি পড়িনি, “দহন” সিনেমাটি দেখার পর মনে হলো সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কিছু বই পড়ি, যা হোক সিনেমাতে আসি- স্বামী স্ত্রীসহ বৃষ্টির রাতে বাড়ি ফিরছিলেন, পথে স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করে কিছু বড়লোকের দুষ্টু সন্তানরা, রাস্তা দিয়ে অনেক লোকই যাচ্ছে কেউ সাহায্যে করতে এগিয়ে আসে না, কিন্তু মন্তব্য চলছে- কেউ বলছে বাজারি মেয়ে নিয়ে টানাহেচরা ইত্যাদি ইত্যাদি, শেষ পর্যন্ত এক স্কুল শিক্ষিকা মারামারি করে এদের রক্ষা করে, আর স্বামী প্রতিবাদ করে মার খেয়ে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে।পরের দিন স্কুল শিক্ষিকার ছবিসহ খবরকাগজে তার সাহসিকাজের খবর প্রকাশিত হলো, প্রচুর সংবর্ধনা পাচ্ছে, খুব বাহবা পাচ্ছে, অন্যদিকে ভুক্তভোগী বেচারির অবস্থা শোচনীয়, সে বাইরে বের হতে পারে না, বারান্দায় যেতে পারে না, আত্মীয় স্বজন আসছে আর ঘটনাকি জানতে যাচ্ছে, আসলে জানার ইচ্ছের মধ্যেই গন্ডগোল কারন এটা মুখরোচক, অশ্লীল ইঙ্গিতও আছে, এইয়ে চলমান জীবনে হঠাত করেই থেমে গেলো একটি মেয়ের জীবন, অপরদিকে উদ্ধার করতে যাওয়া সাহসি মেয়ের চলমান জীবন স্থির হয়ে যাওয়া আরেক গল্প, এটাই সিনেমার কাহীনি, এখানে প্রশ্ন আসে সমাজ নিয়ম তৈরী করে নাকি নিয়ম সমাজ তৈরী করে, এক চরম দ্বন্ধে পড়ে যেতে হয় সিনেমাটি দেখতে গিয়ে, এদিকে আসামীরা ধরা পড়ে, ভূক্তভোগী মেয়ের পরিবার স্বামী সবাই এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে যায় না, কমপ্রোমাইছে যেতে চায়, যে মেয়েটা এই পরিবারের সম্মান বাচালো তাকেই এরা এখন কালপ্রিট মনে করে, কারন ওর জন্যই মিডিয়া জেনেছে তাই সমাজের সবাই জেনেছে, এখন এরা সমাজে চলতে পারে না সবাই অন্যভাবে দেখে, শেষ পর্যন্ত সাক্ষী দেয় যারা ধরা পড়েছে তারা এই কেউ না, অন্যদিকে সাহসী মেয়ে নীতির কাছে অটল, সে সাক্ষী দিবেই, এই নিয়ে তার বয়ফ্রেন্ডের রিকোয়েস্ট রাখেনি, সম্পর্কও খারাপ হয়ে যায়, কমপ্রোমাইস করবে না এটাই তার সিদ্ধান্ত, কিন্তু আদালতে কথার মারপ্যাচে আসামীরা বেকসুর খালাস পায়, ততদিনে এই দুই নারী চরিত্রের জীবনে পরিবর্তন হয়ে যায়, সাহসী নারী হিরোইন থেকে ভিলেন হয়ে পড়ে, যেখানে কমপ্রোমাইস করবে না সেই বয়ফ্রেন্ডকেই বিয়ে করে, আর সেই ভুক্তভোগী মেয়ে যে কিনা পরিবারের সম্মান জন্য মিথ্যে বলল সে আর সংসার করতে পারলো না, স্বামীর সাথে সম্পর্ক ভালো যায়না, শেষ পর্যন্ত যে সংসার রক্ষার জন্য সত্যের সাথে কমপ্রোমাইস করল সেই সংসার ভেংগে কানাডা চলে যায়, এখানেই গল্পের ট্রাজেডি, এক নারী সমাজের বিরুদ্ধে দাড়ালো কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সমাজ নীতির কাছে হার মানলো, আর একজন সামাজিক সম্পর্ক রক্ষার জন্য মিথ্যে বলল কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে সম্পর্ক ভাংগলো, এই চিরন্তন দ্বন্ধ দেখি সমাজ ব্যবস্থায়, তার অসাধারন চিত্রায়িত হয়ে সিনেমাটিতে, ঋতুপর্ণ ঘোষকে স্যালুট।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩

খেলাঘর বলেছেন:


আপনি সেনসেটিভ মানুষ, মুভি কম দেখবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.