নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখক। প্রচ্ছদ শিল্পী । শৌখিন আলোকচিত্রী

তালহা মুনতাসির (নাফি)

অনেক কাল আমি হেঁটেছি একা

তালহা মুনতাসির (নাফি) › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ এখানে আবু তোয়েব ঘুমিয়ে আছেন

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৬

কে যেন কবরটায় প্রতিরাতে পেচ্ছাব করে। আবু তোয়েব কেবল শব্দ শুনেন। ঝিরঝির শব্দ। তারপর প্যান্ট এর জিপার আটকানোর শব্দ।

কবরটার পাশে একটা শিউলি গাছ। প্রতিদিনই থোকা থোকা ফুল পড়ে মাটিতে। ফুল পেচ্ছাব মিশে একটা বিচ্ছিরি বাস দেয়। তোয়েব নাক বন্ধ করে মুখ দিয়ে বড় বড় শ্বাস নেন। বাতাস ঢুকে না৷ তিনি ভুলে যান মৃতদের শ্বাস নিতে হয় না। তার বুক খালি খালি লাগে। বড় করে শ্বাস নিতে ইচ্ছে করে।

তার কাছে রাত-দিন সমান। মাস-বছর সমান। তার সামনে-পেছনে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু কানগুলো পরিষ্কার। তার মা বাল্যকালে চুলের ক্লিপ দিয়ে যখন তার কান দু'টো সাফ করে দিতো, ঠিক তখনের মতো। সাফ করবার পর কানে সে আঙ্গুল দিয়ে নাড়া দিতো। 'চ্যাতচ্যাত' শব্দ করতো। আর আঙ্গুল জুড়ে আবৃত হতো হলুদ গুড়োগুড়ো ময়লা।

তার মায়ের কথা প্রায়ই মনে পড়ে। তারা থাকতো মাগীপাড়ায়। মাগীরা-আদমীরা সকলেই মা'কে ডাকতো "রুপালী" বলে। এইটা নকল নাম। পুরোনো নাম কেউ জানে না। জিজ্ঞাসা করলে মা বলতো, "পুরানা নাম পুরানা মাগীরে নিয়ে ডুব দিছে। এখন আপনেগো সামনে যে খাঁড়াই আছে এর নাম 'রুপালী' "।

আদতে রুপালী তোয়েবের মা ছিল না। তোয়েবের মা কে ছিল এ নিয়েও রহস্য আছে। রুপালী বলতো, "তুই আছিলি একটা পুটলা। পুটলার মইধ্যে একদিন একটা প্রজাপতি বইসা ওর প্রাণটা তোরে দিয়া গেছে।"

তোয়েব বড় বড় চোখ করে বলতো, "আর পুখটার কী হইছে?"

রুপালী তখন উঠে গিয়ে আলমারির চিপা থেকে একটা টিনের বাক্স বের করে আনতো। বাক্সটা খুলতেই দেখা যেতো, একটা মরা প্রজাপতি। মৃত হলেও এর শরীর এত বছরেও এতটুকু বিনষ্ট হয়নি। প্রজাপতিটার শরীর আলকাতরার মতো কালো। পিঠে আলো ফেললেও চকচক করে না।

ও বলতো, "এইটা দেহি বাতি গিল্লা লায়"।

রুপালী খুব বেশিদিন বাঁচে নাই। কোনো খদ্দেরের কোলে বসা অবস্থায়ই আজরাইল এসে তার জানটা ছোবল মেরে নিয়ে যায়।

কবরে মৃতদের বিশাল নেটওয়ার্ক। মা'কে চেষ্টা করলেই দেখা যাবে। কিন্তু তোয়েবের ইচ্ছে করে না। তার সময় কাটে ডেভিড ঐস্ত্রখ নামক এক বুড়োর বেহালা শুনে। বেহালাটা হাড়ের তৈরি। বুড়োটা গম্ভীর। দেখতে ধবল ফিরিঙ্গিদের মতোন। এর নামটা জানার কথা ছিল না। কিন্তু এ'কে একদিন ডাকতে গিয়ে ওর বদলে উত্তর দেয় এক ওপার বাংলার দাদা। বলে, "আরে মশাই, ইনাকে বিরক্ত করবেন না। ইনি মস্ত বড় শিল্পী। নাম ডেভিড ঐস্ত্রখ। তার বেহালার সুর স্বয়ং ভগবান ভালোবাসেন"।

তোয়েব হাই তুলতে তুলতে বলেন, "ভগবান রে দেখছেন নাকি?"

"কী বলছেন! ভগবান দেখব কোথায়!"

"তাইলে?"

"অনুভব করেছি।"

"সেইটা তো শয়তানও হইতে পারে।"

লোকটা তার কথা শুনে হতভম্ব গলায় বলে, "আপনার সঙ্গে আর কথা বলব না। এই কানে ধরলাম"।

কানে ধরাটা বিফলে গেল। কেননা এর পর থেকে লোকটা প্রায়ই তার সঙ্গে কথা বলতে লাগলো। তোয়েব বিরক্ত হোন। তবে কিছু বলেন না।

তোয়েবের মা 'রুপালী' গত হবার পরপরই তোয়েবকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করা হয়। পল্লীর সর্দারনী ইসমত বাঈজি তোয়েবের অন্ডকোষ দু'টো চেপে ধরে বললেন, "এর বিচিতে বল নাই। এরে গেইটম্যান বানানি লস। আমি ইসমত, পুরুষের হেডম চিনতে ভুল করি না"।

তারপর তার পাশের দু'টো পালোয়ান চেহারার জোয়ানদের নির্দেশ দিলেন তাকে ফেলে আসতে।

আবু তোয়েব তখন ১৩ বছরের বালক। মাতৃহীন পৃথিবী নিষ্ঠুরতার সঙ্গে তার ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়ে গেছে।

প্রথম প্রথম এঁটো চেটে পেট চললেও দিন যেতেই ক্ষুধার তীব্রতা তার অন্ত্র ছেড়ে গলায় বসে যায়। যেন একটা আঙ্গুল ভেতর থেকে উঠে আসছে। পর্যায়ক্রমে আঙ্গুলের সংখ্যা বাড়ছে। দু'টো আঙ্গুল। তিনটা আঙ্গুল। আঙ্গুলগুলোকে ঢোক গিলে সে ভেতরে বসিয়ে দেয়। নাড়াচাড়া বন্ধ হয় না। পেট ভর্তি কিলবিল করে ক্ষুধা।

দোকানে দোকানে কাজ হেকে বেরিয়েছে। কিন্তু কেউ কাজ দিতে রাজী হয়নি। মন্দির-মসজিদে খাবার পেলেও হরহামেশা ভাগ মিলে না। ছোটলোকের কামড়াকামড়িতে যেন সে তলিয়ে যায়।

কী অসহ্য দিন যে গেছে! তার মনে পড়ে, তার চোখ ভর্তি ছিল স্বপ্ন। সে কিছু একটা হবে। ভিখিরিদের খাবার ছিনে ক্ষুধা মেটানোর কোনো মানে হয় না। এভাবে জীবন চলে না। ফুট-ফরমায়েশ খেটে, ফুটপাতে শুয়ে বছর দুই পর্যন্ত ব্যবস্থা করা গিয়েছিল। কিন্তু বাড়ন্ত শরীরে পিঠ শুকিয়ে বুকের সঙ্গে লেগে যাচ্ছিল। অথচ কী অসম্ভব বল'ই ছিল না তার মুষ্ঠিতে। তার সমবয়সী ছেলে-পেলেরা তার কাছ ঘেষতে পারতো না। মুষ্ঠির জোরে তাদের একচ্ছত্র অধিপতি হয়েছিল সে।

ছোট্ট মফস্বলের, ছোট্ট পাড়ায় তার এই ছোট্ট অর্জন যেন তার ছাতি অনেকখানি চওড়া করে দিয়েছিল। রোজ রাতে সারাদিনের কামাইয়ের কিছু অংশ সে সবার থেকে নিতো। যেন এইটা একটা অধিকার। তার সমবয়সী বিলু একটু ঘাড় ত্যাড়া ছিল। সে কপালের রগ ফুলিয়ে জবাব দিল, "তোমারে লিডার বানাইছি ঠিক আছে। তয় গতর খাটনের টেকা তোমারে দিমু ক্যান?"

তোয়েব হাসি হাসি গলায় বললো, "প্রটেকশানের খরচ। তোগোরে প্রটেকশন দিতেছি এই কারণে। নাইলে তো পূবের শ্যামল তোগোর সব টেকাই মারতো। ওর লেঞ্জাগুলারে তো দেখছসই? একেকটা দেখতে লাগে পেট্রোল খাইয়া পেট বানাইছে। ওগোর লগে তোরা পারতি?"

এই কথায় আর কেউ দ্বিমত করলো না। তোয়েবের কথাই সই।

পনেরো বছর বয়সী তোয়েব একদিন হুট করে সতেরো হয়ে গেল। 'সতেরো' অদ্ভুত বয়স। এইসময় শরীরে পুরুষ পুরুষ ভাব আসে। বগলে-নিচে লোম গজায়। তখন মেয়ে মানুষকে দেখলে আলগা কৌতুহল জাগে। সেধে কথা বলতে ইচ্ছে করে। তাছাড়া তোয়েবের নামের পাশে 'টোকাই' সড়ে গিয়ে 'ইলেকট্রিক মিস্ত্রি' বসে। বাড়িতে বাড়িতে সে গিয়ে কারেন্টের কাজ করে। পয়সা কড়ি যা পায় তা খুব সন্তপর্ণে জমিয়ে রাখে। তার সমবয়সীদের মতো জুয়ায় উড়ায় না।

এই পাড়া দিয়েই প্রতিদিন একটা ডোম কন্যা যেতো। এর গা ছিল কৃষ্ণকায়। কিন্তু মসৃণ। সূর্যের আলো যখন ওর ব্লাউজহীন পিঠ মাড়িয়ে দিয়ে যেতো কিংবা ঘামে চটচটে ত্বক আলোয় আরো চকচক করতো তখন তোয়েবের ঠোট শুকিয়ে আসতো। সের দেড়েক পানি খেয়েও সেই তৃষ্ণা মিটত না।

ডোম কন্যার নাম ছিল শ্যামা গাওলি। সে এই গায়ে আসতো বড়লোকদের ঘর ঝাট দিতে। ফিরতো বেলা করে। তোয়েব প্রায়শই তার আসার পথটায় একটা গাছের নিচে ওর জন্য অপেক্ষা করতো।

শ্যামা তোয়েবকে তেমন পরওয়া করেনি। তোয়েব বেশ কয়েকবার বাজিয়ে দেখেছে। মুখ দিয়ে শব্দ করেছে। কিন্তু মেয়েটা যেন শুনতেই পায়নি এমন ভাব করে প্রতিদিন একইভাবে হেঁটে চলে গিয়েছে। কিন্তু এদিকে তোয়েব ভেতরে ভেতরে ফুসছিল। তাই একদিন সে আর সহ্য করতে না পেরে শ্যামার সামনেই দাঁড়িয়ে গেল।

"এ! এত ভাব রে তোর! রোজ বিহানে তোরে যে ডাকতে ডাকতে মুখে ফেনা তুইল্লা লাই দেহস না রে?"

শ্যামাও দ্বিগুণ ঝাঁঝের সহিত উত্তর দেয়, "তোর লগে কথা কইতে যামু ক্যান? তুই কেডা?"

"গা তো তোর আলকাতরার লাহান। তা লইয়াই এত ডাড? আল্লা ধলা কইরা পাঠাইলে না জানি কী করতি।"

শ্যামা যেন এই কথায় খানিক আহত হলো। গলার তেজ বাড়িয়ে বললো, "নিজের সুরত দেখসস? বান্দরের মুখ ও তো তোর থেইকা সহি। আবার আমার কথা কইতে আহস"।

এই পর্যায়ে কথা কাটাকাটির জের ধরে তোয়েবের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সে মেয়েটাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে যায় বাঁশঝাড়ের ঝোপে। এমনিতেই বেলা। সূর্য পড়ে যাচ্ছে। এই সময়টায় এদিকে কেউ আসে না। শ্যামা প্রথমে হাত-পা ছোড়াছুড়ি করলেও শক্ত-সামর্থ্য তোয়েবের সঙ্গে সে পারবে কেন? তোয়েব তার মুখ চেপে ধরে রাখে এবং দাঁত দিয়ে তার লুঙ্গি কামড়ে ধরে বড় বড় করে নিশ্বাস ফেলে বলে, "চুপ! চুপ!"

যখন কার্য সমাধা করে সে উঠে তখন মেয়েটা যেন পুরোপুরি জমাট বেঁধে গেছে। তোয়েবের হুট করেই বুঝ এলো যে মুখ ধরে রাখবার ফলে মেয়েটার প্রাণপাখি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। মেয়েটাকে হত্যার তেমন কোনো উদ্দেশ্য তার ছিল না। তোয়েবের মন খারাপ হলো কিন্তু খেয়াল করলো তার তেমন ভয় করছে না। সে আপাতত এখানেই মেয়েটাকে এক কোনায় রেখে রাতে আবার ফিরে এলো। ওর লাশটা টেনে নদীর কাছে নিয়ে গেল। ঘাটে দুই-একটা নৌকা সবসময়ই বাঁধা থাকে। এসবের একটাতেই চড়ে বসে নৌকা নিয়ে গেল মাঝ নদীতে। লাশের সঙ্গে কয়েকটা ইট বেঁধে দিয়ে ছেড়ে দিল অথৈ জলে।

একটা জলজ্যান্ত মেয়ে হঠাৎ গুম হয়ে গেল। কিন্তু তেমন কোনো সাড়াশব্দ আসলো না। বোধহয় ডোম কন্যা বলেই কারো উচ্চবাক্য করতে ইচ্ছে হলো না। মেয়েটার বুড়ো বাপ এর কাছে ওর কাছে যান। লোকে সাহায্য তো করেই না বরং বলে, "ধেমড়ি মাইয়া আর কই যাইব। দেখো গিয়া কোন পোলার লগে রংতামাশা করতে পালাইছে। ওর শইলে রস হইছে। রস শেষ হইলে আবার ফিরত আইব। পেরেশান হইও না"।

একসময় তার বাপটাও চুপ হয়ে গেল। ডোম কন্যা হারিয়ে গেল।

তোয়েবের হত্যা যাত্রা এখানে শুরু হলেও শেষটা অনেক দূরে গিয়ে ঠেকেছিল। রাজনীতিতে যখন ঢুকলো, তখন এলাকার দলীয় নেতা শামসুল আলমের দু'হাত হয়ে সে মেলা লোককে স্বর্গে পাঠিয়েছে।

মফস্বলি রাজনীতি বুঝতে তোয়েবের বেশিদিন লাগেনি। তাই পায়ের তলা মোটামুটি শক্ত করতে না করতেই এক ভোরে জানা গেল সে শামসুল আলমকে কতল করেছে। শামসুল আলমের বিবি হয়ে গেছে তার বিবি।

বিবাহ উপলক্ষে সে বিরাট ভোজ দেয়। তার তখন সবে কাঁচা পয়সা। শামসুলের কিশোরী বধু 'মালা'কে সে স্বর্ণ দিয়ে প্রায় মুড়িয়ে রেখেছে। এলাকার লোকজনের এই বিয়েতে মত ছিল কিনা জানা যায় না। তবে কেউ উঁচুবাক্য করবার সাহস করেনি।

তবে বিয়ের বছরখানেক পরই ইসমতের কথার সত্যতা পাওয়া যায়। তার পৌরুষে দম নেই। অবশ্য এতে তোয়েবের তেমন দুঃখও ছিল না। বাসর রাতেই তিনি জেনেছিলেন এই কিশোরী বধু পোয়াতি।

এই সন্তানের নাম তোয়েব নিজেই রেখেছিলেন। নিজ নামের সঙ্গে মিলিয়ে রেখেছিলেন 'শোয়েব'। পরের সন্তান। অথচ তোয়েব সন্তান বলতে যা অনুভব করেছিলেন তাই ছিল 'শোয়েব'। ওর কোনোরকম কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না তিনি। এমনকি শোয়েবের মা, মালা একবার শোয়েবকে চড় দিয়েছিলেন বলে তোয়েব তাকে তালাক দিয়ে দেন। মালা প্রায় প্রতিদিন পাগলের মতো তোয়েবের কাছে নিজের পুত্র ভিক্ষা চাইতেন। কিন্তু তোয়েবের মন কোনোদিন নরম হয়নি।

শোয়েবের দেখাশোনার জন্য মানুষ রাখলেন। তারপরও আর কোনোদিন মালা এই দ্বার দিয়ে প্রবেশ করতে পারেননি।

এমন সময়ে তোয়েবের স্মৃতিচারণে বিচ্ছেদ ঘটলো। ক্যালকেশিয়ান লোকটা জিজ্ঞেস করে,

"দাদা! কী ভাবছেন?"

তোয়েব জবাব দেন, "আমার পোলাডারে নিয়া ভাবতেছি। বুঝলেন, ভাইবা দেখছি যে এই দুনিয়া ছাইড়া আইছি তো মেলাদিন হইছে। তাও মরনের পরও দুনিয়া ছাড়া আর কোনো ভাবনা আহে না"।

তোয়েবের মৃত্যু হয়েছিল ঘুমের মধ্যে। কেউ একজন বালিশ চাপা দিয়ে তাকে মেরেছিল। কে মেরেছিল সেটা না জানলেও তোয়েবের শত্রু সংখ্যা নগন্য ছিল না বলে তিনি ব্যাপারটা নিয়ে তেমন একটা ভাবেন না।

প্রতিদিনের মতো আজকেও কেউ একজন পেচ্ছাব করছে। তবে আজকে শব্দের তীব্রতা বেশি। প্রস্রাবের শব্দ ছাপিয়ে আরো নানান কিসিমের শব্দ তার কান আন্দোলিত করে। যেন দুনিয়ার সব শব্দ আজ তিনি শুনতে পাচ্ছেন।

তোয়েব ডাকেন, "ভাই! আজকা উপরের আওয়াজ বেশি লাগে ক্যান? মনে হইতেছে কান ফাঁইটা যাইব"।

ওপারের লোকটা জবাব দেন, "চোখ খুলুন"।

"চোখ খুইলা কী হইব। সবই তো আঁন্ধাইর"।

"আজকে অন্ধকার দেখবেন না। আজ সব দেখা যাবে। 'ব্লু মুন' উঠেছে। মানে নীল চাঁদ। এটা খুবই রেয়ার একটা ব্যাপার। বিষয়টা ঘটলে পৃথিবীর সব মৃত মানুষকে স্বল্প সময়ের জন্য মাটির উপরের জগৎ কে দেখতে এবং শুনতে দেয়া হয়। আপনি চেষ্টা করুন। ইচ্ছে করলে আপনি আপনার সন্তানকেও দেখতে পারবেন এখন। এই দিনটায় কেন এমন হয় আমি জানি না। তবে আমি বছরের পর বছর এই চাঁদের জন্য অপেক্ষা করি। আমার দু'টো সন্তান আছে। ওদেরকে দেখি। আমার তখন খুব আনন্দ হয়.., " লোকটা কথা বলতেই থাকে। তার থামার নাম গন্ধ নেই।

তবে আবু তোয়েব আসলে তেমন কিছু শুনছেন না। তিনি বড় বড় চোখ করে উপরের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার কবরের সামনে শোয়েব দাঁড়িয়ে আছে। প্যান্টের জিপার খোলা। রোজ রাতে তাহলে সেই তার কবরের উপর প্রস্রাব করে।

শোয়েবের চোখ লাল। এক হাতে মদের বোতল। তাকে কিছু বলতে শোনা যাচ্ছে। তোয়েব মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করেন।

"তোরে মাইরাও তো আমি শান্তি পাই না রে! আমার বাপরে মারছস। আমার মা'রেও বাড়িছাড়া কইরা রাস্তার পাগলী বানাইছস। তোর কী মনে হয়! আমার মা আমারে কয় নাই তোর আসল পরিচয়? তোর উপরে আমি মুতি শালা!"

তিনি ভাবেন, আসলেই তো। তিনি তো আর শোয়েবের প্রকৃত বাবা নন। তিনি নিজ হাতে ওর বাবা'কে কতল করেছেন। এই কথা তো আজ না-হয় কাল ওর জানার কথাই ছিল। এখানে মন খারাপ করবার কিছু নেই"।

কিন্তু মানুষ নিজের সঙ্গে বেশিক্ষণ মিথ্যে কথা বলতে পারে না। তোয়েবের কষ্ট হয়। তার প্রবল আকাঙ্খা হয় ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরবার। কিন্তু পারেন না।

নীল জোছনা ধীরে ধীরে সাদা হয়ে যাচ্ছে। উপরের পৃথিবী মিলিয়ে যাচ্ছে অবশেষে। আবু তোয়েবের দীর্ঘদিন পর কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কান্না আসে না। মৃতেরা কাঁদতে পারে না।

নীল জোছনা ধীরে ধীরে সাদা হয়ে যাচ্ছে। উপরের পৃথিবী মিলিয়ে যাচ্ছে অবশেষে। আবু তোয়েবের দীর্ঘদিন পর কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কান্না আসে না। মৃতেরা কাঁদতে পারে না।

গল্প: এখানে আবু তোয়েব ঘুমিয়ে আছেন
লেখা: তালহা মুনতাসির নাফি

উল্লেখ যে, সংযুক্ত ছবিটা মিডজার্নি এবং ফটোশপ দুইয়ের মিলিত প্রয়াসে বানানো হয়েছে। আসলে যেভাবে দেখাতে চেয়েছিলাম মিডজার্নি তেমনটা পুরোপুরি দেখাতে পারেনি। অথবা আমি হয়তো মিডজার্নিকে বোঝাতে পারিনি। কিন্তু যেহেতু স্বভাবদোষেই আমি প্রচ্ছদ শিল্পী। তাই বেশ কিছু ইলেমেন্টস এখানে এড করেছি। কেমন হয়েছে জানাবেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.