নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

জামায়াতে ইসলামের উত্থান কাহিনী

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:১৪

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষে কয়েকটি রায় ঘোষণার সাথে সাথে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির দেশজুড়ে যে তা-ব ও হত্যালীলা, ভাংচুর শুরু করেছে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতাদেরকে বাঁচানো ও ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়ার দাবিতে তাতে মনেই হয় না জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী জাতির হাতে পরাজিত একটি শক্তি। তারা এতদিন ঘাপটি মেরে থেকেছে, দেশ বিদেশে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছে, অস্ত্র সংগ্রহ করেছে, সমাজের নানা অঙ্গনে অনুপ্রবেশ করেছে এবং জানা-অজানা বহু উৎস থেকে প্রকাশ্যে সেখানে বিপুল পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করেছে বহু অর্থকরী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে এই দীর্ঘ ৪২ বছরে। আজ তারা প্রশাসনে, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনে অনুপ্রবেশ করে রীতিমতো প্রভাব বিস্তারেও সক্ষম হচ্ছে সমাজে ও রাষ্ট্রে। জামায়াত-শিবির বাংলাদেশের মাটিতে বিন্দুমাত্র ঠাঁই করে নিতে পারবে তারা কদাপি প্রকাশ্যে দল গঠন বা রাজনীতি করতে পারবে, নির্বাচনে দাঁড়াতে সাহস পাবে, এখানে চাকরিবাকরি পাবে, সংবিধানে বৈধতা পাবে, নির্বাচনে আবার দাঁড়ানো বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় শুধু তাতে অপরাপর প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মারফত পরাজিত করে আমাদের পবিত্র সংসদ ভবনে প্রবেশ করবে সেখানে সম্মানিত ও মর্যাদাকর আসনে বসার সুযোগ পাবে এমনটাও ছিল কল্পনার অতীত।

কিন্তু তারা উপরে বর্ণিত সবই করল এবং তাই না শুধু, তারা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে দেশের অন্যতম কান্ডারীও হতে পারল। যাঁরাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন যারাই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করেছেন এবং যারাই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন দান করেছেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, যাদের পরিবারের সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধকালে তাদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, ধর্ষিত হয়েছেন সেই লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষগুলো ঐ চরম লগ্নে যে অসাধারণ দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন আজ তেমন কোটি কোটি পরিবার জামায়াতের এমন বিচরণ দেখে স্তম্ভিত, বিস্মিত, ক্ষুব্ধই নন, তারা প্রচ-ভাবে লজ্জিতও বোধ করছেন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আদর্শে প্রাণিত কোটি কোটি বাঙালী আজ চরমভাবে অপমানিত বোধ করছেন। নানাবিধ প্রশ্নও আজ জন্ম দিচ্ছে তাদের মনে। এর কারণ কি জিয়াউর রহমান? তিনি তো বহু আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে কি তাঁর পতœী বেগম খালেদা জিয়া? কয়েক দফা প্রধানমন্ত্রী হলেও দশ বছর তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেন এবং এখনও করছেন। অন্তত মৌলিকভাবে হলেও তিনি তো জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে প্রতিদিনই বক্তব্য রাখছেন দেশজুড়ে। তিনি তো জামায়াত নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তাদের বিচারেরও ব্যবস্থা করেছেন। তবুও তো জামায়াত থামছে না। তারা বড্ড বেশি বেপরোয়া। এতটা সাহস ও হিম্মত তারা কোথা থেকে পেল? এটা কি আকস্মিক? না কি আরও কিছু কারণ আছে যা বিশ্লেষণের দাবি রাখে? এর অনুসন্ধান করতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে অতীত ইতিহাসের দিকে। ভারতবর্ষের ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিকে।

কারণ সাম্প্রদায়িকতা, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি প্রভৃতি যা কিছু আমাদের রাজনীতি ও সমাজদেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছেÑতাকে কলুষিত করেছেÑতার উদ্ভব ও প্রয়োগ ঐ সময় থেকেই। যখন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তরকালে তারা বুঝল যে, তাদের ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ আর বজায় রাখা যাবে না, ভারতবর্ষে তখন তারা তাদের ফরারফব ধহফ ৎরফব ভাগ কর আর শাসন কর এমন নীতিকে আঁকড়ে ধরে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেয় মূলত মুসলিম লীগের মাধ্যমে। তাদের লক্ষ্য ছিল এই অস্ত্র সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে তারা ব্রিটিশ শাসন অধিকতরকাল বজায় রাখতে পারবে এবং যেতে যখন হবেই তখন ঐ নীতির পরিণতিতে ভারতবর্ষকে মুসলিম লীগের দাবি অনুযায়ী দ্বিখ-িত করে দুটি পৃথক রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে উভয় দেশের ওপর ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ মিলবে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী মহাযুদ্ধের সমাপ্তির সাথে সাথে উপনিবেশবাদবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন সর্বত্র তীব্র গতিবেগ অর্জন করে এবং তা এক অদম্য শক্তিতে পরিণত হয়। তখন ইংরেজদের কৌশল দাঁড়ায় ঐ স্বাধীনতা আন্দোলনকে সরাসরি মোকাবিলা করার চেষ্টার বদলে ঐ আন্দোলনকে বিপথে পরিচালনা করে তাকে ভ-ুল বা দুর্বল করে দেয়া, যাতে তাদের শাসন-শোষণ কিছুটা হলেও দীর্ঘায়িত করা যায়। আবার যেখানে তাও সম্ভব হবে নাÑসে সব উপনিবেশে যাতে স্বাধীনতার পর পুতুল সরকার গঠন করিয়ে নতুন ঐ সরকারগুলোর মাধ্যমে দেশটির/দেশগুলোর ওপর তাদের প্রভাব সমুন্নত রাখা যায়Ñনয়া ঔপনিবেশিক শোষণ অব্যাহত রাখা যায়। ভারতবর্ষ নামক যে বিশাল এবং বিপুল সম্পদে ভরা দেশটিকে তারা উপনিবেশে পরিণত করতে পেরেছিল এবং দাপটের সঙ্গেই সেখানে প্রায় পৌনে দু’শ’ বছরব্যাপী শাসন-শোষণ চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলÑ সেখানকার স্বাধীনতা আন্দোলনকে দমনের কৌশল হিসেবে তারা বেছে নিল হিন্দু ও মুসলিম নামক দুটি প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতায় বীজ বপন করে, উগ্র সাম্প্রদায়িক বিরোধ সৃষ্টি করে, দাঙ্গা ফ্যাসাদ বাধিয়ে রেখে শাসন চালানো এবং অতঃপর যদি তা তেমন একটা দীর্ঘায়িত করা সম্ভব না হয়, তবে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দুটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠা করে (ভারতবর্ষকে ভেঙ্গে) এবং যতটা সম্ভব নবসৃষ্ট দুটি স্বাধীন দেশের মধ্যে বিরোধ জিইয়ে রেখে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। দ্বিখ-িত ভারতবর্ষ তাতে অধিকতর দুর্বল হবেÑফলে উভয়েই তাদের উন্নয়নের জন্য পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে বাধ্য হবে এবং তার ফলে তারাও পুতুল সরকার গঠন করে সাধ্যমতো শোষণ অব্যাহত রাখবে আরও কিছুকাল। সম্ভবত সে লক্ষ্য থেকেই তারা পরে সাবেক ব্রিটিশ কলোনিভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে তাদের নেতৃত্বে ব্রিটিশ কমনওয়েলথও গঠন করে যার অস্তিত্ব আছে, তবে তা ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই এবং শক্তিশালী আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিপুল প্রভাব বিশ্বব্যাপী বিস্তারলাভ করার ফলে কমনওয়েলথ এখন কার্যত একটি নামমাত্র অস্তিত্ব বজায় রাখছে প্রকৃত প্রস্তাবে একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানেও পরিণত হয়েছে।

সাম্প্রদায়িকতার বিষধর দাওয়াই ভারতবর্ষের রাজনীতিতে ঠিকই কাজে লেগেছিল নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অবিসংবাদিত নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ এবং আরও কতিপয় মুসলিম লীগ নেতাকে দিয়ে। যারা আগেই মুসলিমদের জন্য পৃথক আবাসভূমি বা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতবর্ষকে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ করার দাবি উত্থাপন করিয়েছে। সর্বভারতীয় কংগ্রেস তখন ছিল ভারতবর্ষের বৃহত্তম এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল। ঐ দলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা কিছু সাম্প্রদায়িক হিন্দু নেতাকেও ঐ বিভক্তির সপক্ষে নিয়ে যেতে গোপনে ইংরেজরা সক্ষম হয়। কিন্তু কংগ্রেসের অবিসাংবাদিত এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় নেতা মোহনদাস করম চাঁদ গান্ধী, প-িত জওহর লাল নেহেরু এবং আরও অনেকেই সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী ছিলেন মনেপ্রাণে। তাই তারা অনমনীয়ভাবে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। অবস্থা বেগতিক দেখে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তখন তাদের শেষ অস্ত্র ছুড়লোÑবাধাল ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে উন্মুক্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং তার মাধ্যমে অগণিত নির্দোষ নিরপরাধ হিন্দু-মুসলিম এবং নারী নিহত হলেন। দাউ দাউ করে জ্বালানো আগুনে হাজার হাজার গ্রাম ও শহর, বাড়িঘর, শিশু-নারী, গৃহপালিত জীবজন্তু অজস্র সম্পদ পুড়ে ছাই হয়ে গেল, অগণিত হিন্দু-মুসলিম নারী হারাতে বাধ্য হলেন তাঁদের সম্ভ্রম। একবার নয়, বারংবার এমন ঘটনা ঘটানো হতে থাকল। মানুষের জীবনের নিরাপত্তাবোধ বিদূরিত হলো। সভ্যতা বিদায় নিল আর তার স্থান দখল করে নিল হিংস্র, বর্বরতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। ইংরেজরা তাদের তুরুপের তাস হিসেবে ক্রমাগতভাবে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে অত্যন্ত কুশলতার সাথে ব্যবহার করল। গান্ধীজীকে দেশভাগে সম্মতি আদায়ে তাঁর নিজ দল কংগ্রেসেরই সাম্প্রদায়িক নেতাদের ব্যবহার করল। বারংবার অসম্মতি জানালেও দাঙ্গা যখন কিছুতেই থামে না তখন ‘তবু মানুষ বাঁচুক’ এমন একটা মনোভাব থেকে ভারত বিভক্তিতে সম্মতি দিলেন এবং অবশেষে ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭ আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান নামে একটি সাম্প্রদায়িক মুসলিম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটল।

কিন্তু এর পরিণতি দাঁড়াল ভয়াবহ। দাঙ্গা তদাপি থামেনিÑ তবে কখনও কখনও তা কমেছে মাত্র। কিন্তু তার চাইতেও বড় কথা, সাম্প্রদায়িকতা গভীরভাবে দানা বাঁধল বহু হিন্দু-মুসলিম শিক্ষিত মানুষের মধ্যে। সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষ তো দাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িকতার ধারেকাছে ছিলেন না, কিন্তু তাঁদের একটি ক্ষুদ্র অংশকে তাঁদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে, দাঙ্গার সংগঠকরা ব্যবহার করে কাজে লাগিয়েছে, নিজেরা থেকেছে আড়ালে।

যা হোক, এহেন পরিস্থিতির সুযোগে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশ হতে সংখ্যালঘু বিতাড়ন পর্ব চলল ভয়াবহভাবে। পাকিস্তানের উভয় অঞ্চল থেকে হিন্দু-বিতাড়ন এবং ভারত থেকে মুসলিম খেদানো। এসবই উভয় সম্প্রদায়ের অংশের কীর্তি। প্রতিক্রিয়া হিসেবে উভয় দেশের সাম্প্রদায়িকতা আরও বেশি বেশি করে দানা বাঁধল। উভয় দেশের সরকার নিজ নিজ দেশের সরকারী চাকুরেদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্তদেরকে ড়ঢ়ঃরড়হ দিলেন তাঁরা ইচ্ছে করলে হিন্দুরা ভারতে এবং মুসলিমরা পাকিস্তানে চলে যেতে পারবেন সরকারী চাকরি অব্যাহত থাকবে। কবি সাহিত্যিক সাংবাদিকদের এক অংশ যেমন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তাঁদের লেখনী তীক্ষ করে তুললেন অপর অংশ তেমনি সাহিত্য এবং ইতিহাসকেও বিকৃত করতে শুরু করলেন। যার পরিণতিতে নজরুলের কবিতার যেখানে যেখানে ‘ভগবান’ ‘ভগবান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছিল সেখানে তা বদলে রহমান রহমান করা হলো নেহায়ত হাস্যকরভাবে। কিন্তু পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই আরবী হরফে বাংলা প্রবর্তন বা পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু প্রভৃতি ঘোষণা করতে শুরু করলÑপূর্ব বাংলার মানুষের পাকিস্তানের প্রতি মোহ তখন থেকেই কেটে যেতে শুরু করলÑবিশেষ করে পূর্ব বাংলার যুব সম্প্রদায় তীব্র প্রতিবাদে এবং পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতির দাবি ১৯৪৮-এর শুরু থেকেই আন্দোলন শুরু করেন। বস্তুত এ আন্দোলন দ্রুত এতটাই বিস্তার লাভ করতে থাকল এবং এমনই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকল যে, তার সাথে সাথে মানুষ কখনও সচেতনভাবে কখনও বা অবচেতনে পাকিস্তানের মৌলিক আদর্শ দ্বিজাতিতত্ত্বেরও বিরোধী হয়ে উঠল কারণ শাসকগোষ্ঠী এ কথা বলতে শুরু করেছিল যে বাংলা মুসলমানের ভাষা নয়, এটা হিন্দুদের ভাষা। ভাষা আন্দোলন তখন আরও বেশি বেশি করে ব্যাপ্তি লাভ করে এবং সরাসরি সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রূপ নিতে থাকে। ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী চেতনা মুসলিম মানসে ক্রমান্বয়ে স্থান করে নিতে থাকে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় রাজপথে রক্তঝরার পর তা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ববাংলার গ্রামে-গঞ্জে নগরে-বন্দরে সর্বত্র। একই সাথে ছড়াতে থাকে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী চেতনাও। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের চেতনার বীজ তখন থেকেই বিকশিত হতে শুরু করেÑযদিও তা গণদাবিতে পরিণত হতে আরও বহু আন্দোলন, বহু রক্তক্ষয়, বহু আত্মদানের প্রয়োজন হয়েছিল। দেখা গেল ১৯৪৮ এই ‘পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ’ নামে বামপন্থীদের উদ্যোগ এদেশে প্রথম একটি অসাম্প্রদায়িক যুব সংগঠন গড়ে উঠল, ১৯৪৯-এ জন্ম হলো পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (নামের সাথে ‘মুসলিম’ শব্দটি থাকলেও দলের নীতি ছিল অসাম্প্রদায়িক), ১৯৫২ সালের মাঝামাঝি এসে গঠিত হলো বামপন্থী, প্রগতিশীল, সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ-বিরোধী, ছাত্র সংগঠন ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন’ প্রভৃতি। এগুলো সবই ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনেরই ফলশ্রুতি।

ময়দানে ঢেউ উঠল অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ধীরে ধীরে তা সমাজের গভীরেও ঠাঁই করে নিতে থাকল। এ আন্দোলন যতটাই এগুছিল সাম্প্রদায়িকতা ততটাই পালাচ্ছিল মানুষের মন ও চিন্তা থেকে।

এভাবে আন্দোলন যেমন দিনকে দিন তীব্র হচ্ছিল গণচেতনাও ততই বেশি বেশি করে শানিত হচ্ছিল। তারই পরিণতি স্বরূপ হক-ভাসানী সোহ্রাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীনে গঠিত মুসলিম লীগবিরোধী ‘যুক্তফ্রন্ট’ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় এবং যুক্তফ্রন্টের প্রচারণাতেও সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা বিশেষ স্থান অধিকার করে। শুধু তা দলীয় কর্মসূচী নির্বাচনী ইশতেহারে লিখিত আকারে শেলফে থাকার বিষয় ছিল না, তা ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর ব্যাপক প্রচারণার উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়। এর ফলে ভাষা আন্দোলনের পর থেকে এ যাবত বহু নতুন নতুন দলের জন্ম হলেও ধর্মের নামে কোন দল কেউ গড়েননি, যে কটি আগে থেকেই ছিল তা থেকে বরং কমেছে সংখ্যায়। ইদানীং অবশ্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের বেশির ভাগ দলেরই নামের সাথে যদিও ‘ইসলাম’ শব্দটি জড়িয়ে আছে, কিন্তু তার মধ্যে অধিকাংশ দলই অস্তিত্বহীন, নাম বা প্যাডসর্বস্ব এবং তাদের কোথাও কোন শাখাও নেই। আর এটুকুও সম্ভব হয়েছে পরিবর্তিত পশ্চাৎমুখী রাজনীতির এবং তার অধঃগতির কারণে। এ সম্পর্কে পরে বলব।

সামরিক শাসক আইউব ক্ষমতাগ্রহণের বেশ কিছু আগে আওয়ামী মুসলিম লীগও তার নাম থেকে মুসলিম শব্দটি পরিত্যাগ করে দলের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমানের অক্লান্ত চেষ্টার ফলে এবং ভাষা আন্দোলন পরবর্তী রাজনৈতিক অবস্থার কারণে। এই বিশাল মুসলিম লীগবিরোধী রাজনৈতিক দলটির নাম থেকে মুসলিম শব্দ তুলে দেয়ার তাৎপর্য ছিল অসীম। কোণঠাসা হয়ে পড়ল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও ধর্মশ্রয়ী দলগুলো। ১৯৫৭ সালে গঠিত হয় বামপন্থী সাম্প্রদায়িকতা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি। আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগকারী মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে। এই দলটি জন্মাবধি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পূর্ব পর্যন্ত দেশের অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ রচনায় বিপুল অবদান রাখে। সোহ্রাওয়ার্দী পরবর্তী আওয়ামী লীগও বাঙালী জাতীয়তাবাদের উত্থান ও প্রসারে সীমাহীন অবদান রাখে। পাকিস্তান আমলটা তো হওয়া উচিত ছিল, তাদের স্রষ্টা ও মুসলিম লীগের বিঘোষিত নীতি অনুযায়ী সর্বাধিক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র। সেই হিসেবে জন্মলাভ করলেও দেশটির যুবসমাজের নেতৃত্বে ক্রমান্বয়ে সংগঠিত, পরিচালিত ধারাবাহিক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বস্তুত প্রতিনিয়তই সাম্প্রদায়িকতা পিছু হটেছেÑঅসাম্প্রদায়িক চেতনার বিস্তর বিকাশ ঘটেছে। যখন পাকিস্তান রাষ্ট্রের নাম ‘ইসলামিক সব পাকিস্তান’ রাখতে উদ্যত হলো তার প্রথম সামরিক শাসক আইউব খান প্রণীত সংবিধানে, তখন কি শহরে কি গ্রামে ঝড় উঠেছিল প্রতিবাদের। স্বাধীনতারই বিশাল বিশাল জনসভায় নেতাকর্মীরা বলেছেন, “ইসলাম রিপাবলিক নয়, আমরা চাই “পিপলস্ রিপাবলিক” অথবা “ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান। তখন শ্রোতৃম-লী হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে করতালি দিয়ে, মুহুর্মুহু জিন্দাবাদ, ধ্বনি তুলে নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তাঁদের বক্তব্যের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ঘোষণা করেছেন। একই অবস্থা হয়েছিল পাশ্চাতের দলকে যখন একবার পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার যৌথ নির্বাচন? নাকি ধর্মের ভিত্তিতে ‘পৃথক নির্বাচন?’ এই প্রশ্ন কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে প্রশ্ন উত্থাপন করেন তখনও একে একটি সাম্প্রদায়িক অপচেষ্টা বলে আখ্যায়িত করে যুক্ত নির্বাচনের সপক্ষে সর্বত্র সভা-সমিতি অনুষ্ঠিত হয় সাম্প্রদায়িক ঐক্যের দাবিতে। তাই জনগণের কাছে গেলে, জনগণকে বোঝালে ঠিকই মানুষ ধর্মীয় বা কোন প্রকার সাম্প্রদায়িকতা নয়, মর্মে বারবার রায় দিয়েছেন আজও তা হতে পারে। সেই জরুরী কাজটি পাকিস্তান আমলে নানা সময়ের নানা ইস্যুতে আন্দোলনের বিষয়ে পরিণত হয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও পাকিস্তান আমলে ক্রমশ কমতে শুরু করেছে জাতীয় রাজনীতির সাম্প্রদায়িকতা বিমুখতা এবং তা সযতনে প্রতিরোধ প্রচেষ্টার কারণে।

অতঃপর এই আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাঙালী জাতি তার স্বাধীনতা অর্জনের জন্য, একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে জীবন-মরণপণ করে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই যুদ্ধের, বাঙালীর স্বাধীনতার প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয় জামায়াতে ইসলামীÑতারা সিদ্ধান্ত নেয় দলীয়ভাবে যে পাকিস্তান রক্ষার জন্য, ইসলাম রক্ষার জন্য পাকিস্তানকে বাঁচাতে হবে এবং সে কারণেই বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাত্মক বিরোধিতা করতে হবে। ইসলামের নামে গঠিত অপর রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাঙালী জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে অবস্থানরত হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরাও তাদের টার্গেটে পরিণত হয়। ঐ তিনটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অসংখ্য নর-নারী-শিশুকে বর্বরতার সকল সীমা লঙ্ঘন করে তারা অত্যাচারে জর্জরিত করেÑহত্যার শিকার হন লাখে লাখেÑ নারীরা হন ধর্ষিত অপহৃত বাড়িঘর সহায়-সম্পদ হয অগ্নিদগ্ধ ও লুণ্ঠিত। এছাড়াও জোরপূর্বক অনেককে করা হয় ধর্মান্তরিত। বাদ-বাকি অনেকেই বাধ্য হন দেশত্যাগে স্রেফ নিরাপত্তা ও জীবন রক্ষার তাগিদে। পাকিস্তানী বেতার-টেলিভিশনে নিয়ত সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারণা তাদের নিয়মিত রুটিনে পরিণত হয় সঙ্গী তাদের জামায়াতে ইসলামী ও ইসলাম পছন্দ দলগুলো। ফলে দেখা গেল অনেক বাড়ির গেটে লেখা থাকত। ঞযরং রং সঁংষরসং যড়সব. তেমনি তারা দেশের স্বাধীনতাকামী অজস্র মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের বাঙালী জাতির স্বাধীনতার সমর্থক লাখ লাখ দেশপ্রেমিক মুসলিম জনগণও তাদের সীমাহীন বর্বরতা পাশবিকতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেনÑতাঁদের ঘরের যুবতীরাও নির্বিবাদে হয় ধর্ষণ অপহরণের শিকার।

বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ রাত গভীরে নিজ বাসগৃহ থেকে পাকবাহিনীর দ্বারা গ্রেফতার হওয়ার পর মুজিবনগরে গঠিত তাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভা এই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে এই লড়াইয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে বলেন, স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ হবে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তাঁরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামীসহ সকল ইসলামের নামধারী দল ও সংগঠনকে। কামনা করেন সমগ্র বাঙালী জাতি উপরোক্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। আহ্বান জানান সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ ও গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতাকামী মানুষকে এই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি নৈতিক ও বৈষয়িক সাহায্য সহযোগিতার হাত উদারভাবে বাড়াতে। এতে সাড়া দেন ভারত ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের দেশগুলো এবং পুঁজিবাদী বিশ্বেরও স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকামী, মানবতাবোধ সম্পন্ন অসংখ্য মানুষ, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সঙ্গীতজ্ঞসহ বিবেকবান বুদ্ধিজীবী সমাজÑযার ফলে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলÑপরাজিত হলো পাকিস্তানের সেনাবাহিনীÑজামায়াতে ইসলামীসহ সকল ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, রাজাকার, আলবদর, আল শাম্স, শান্তিকমিটি প্রভৃতি।

বঙ্গবন্ধু অতঃপর দেশে ফিরে আসেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ সেদিন তাঁকে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা জানায়। অতঃপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিছুকালের মধ্যেই বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। তার মূলনীতিতে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদÑএই চারটি রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গৃহীত হয়। ধর্মভিত্তিক দলগুলো (জামায়াতে ইসলামীসহ) সংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। অতঃপর আর তো জামায়াতে ইসলামী বা অন্য কোন ধর্মভিত্তিক দলের কোন স্থান এই বাংলাদেশে হবার কথা ছিল না। বিশেষ করে পরাজয় আসন্ন বুঝতে পেরে জামায়াতের প্রধান প্রধান নেতারা দেশত্যাগ করে পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ নানাদেশে চলে যাওয়ার পরে। কিন্তু ঘটনা ঘটল না প্রত্যাশা অনুযায়ী। তার ফলেই আজ জামায়াত বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে উঠে দাঁড়িয়েছে। দিনে দিনে তারা পুষ্টিলাভ করেছে এবং ক্রমান্বয়ে তারা শক্তি দেখানোর জন্য অবৈধ পথে আক্রমণ চালাচ্ছে। আরও কত কিছু করার হুমকিও দিচ্ছে। বাংলাদেশ তো বাংলাদেশ নামেই পরিচিত আছেÑ তবু তারা এটাকে পাকিস্তানের মতো অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র মনে করছে কেন? কিভাবে তা সম্ভব হলো? এ প্রশ্নগুলোর সঠিক জবাব আমাদের খুঁজে পেতেই হবে যদি দেশটাকে রক্ষা করতে চাই। সীমিত সাধ্যে ও স্মরণশক্তি নিয়ে আমার দৃষ্টিতে যে ছবিগুলো ভেসে উঠছে তার উল্লেখ করছি।

(১) সকল বাধানিষেধ উপেক্ষা করে জামায়াতপন্থী আলেমরা জনসভার বদলে ইসলামী জলসা ও ওয়াজ মাহফিলের নাম করে কৌশলে স্বাধীনতাবিরোধী মিথ্যাচার চালিয়ে থাকে। সরকার এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করে।

(২) বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ছাত্রলীগ দ্বিখন্ডিত হয়ে আ.স.ম রবের নেতৃত্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক (জাসদ) বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের স্লোগান কণ্ঠে নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে তাদের প্রচার পচারণায় তৎকালীন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকারকে জনগণের ও বাংলাদেশের এক নম্বর শত্রু এভাবে চিহ্নিত করে সশস্ত্র বিরোধিতা চালিয়ে যেতে থাকে তখন সরকার তাদেরকে গ্রেফতার শুরু করলে গোপনে জামায়াত তাদের আশ্রয় দেয় এবং এভাবে এই দুটি পরস্পর বিপরীত আদর্শে বিশ্বাসী দলের মধ্যে এক অশুভ আঁতাত গড়ে ওঠে। মানুষ এর ফলে কিছুটা হলেও আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বিভ্রান্তিত কবলে পড়ে। দলটি টগবগে তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত হলেও উগ্র সেøাগানের মাধ্যমে দ্রুতই তারা কিছুটা জনপ্রিয়তাও অর্জন করে। ফলে জামায়াতও কিছুটা নিরাপদ বোধ করে।

(৩) বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে হঠাৎ করে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ সফরে ভুট্টো ঢাকা আসছেন জেনে পাকিস্তানপন্থীরা উৎসাহিত হয় এবং সরকারী বেসরকারী মিলে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বিশাল জনতাকে রাস্তায় দুধারে দাঁড়িয়ে অপ্রত্যাশিত সংবর্ধনা জানানো হয়। এই ঘটনা পাকিস্তানপন্থীদের মানসিকভাবে অনেক সবল করে তোলে।



(৪) মাওবাদী নকশালপন্থীরাও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। ১৬ ডিসেম্বরে পাক বাহিনীর পরাজয়ের ফলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে তারাও আত্মগোপনে যায়। এই জামায়াত এদেরকেও গোপনে আশ্রয় দেয়। এদের হাতেও বিস্তর অস্ত্র থেকে যায় এবং তা মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের মত মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হয়।

(৫) লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে ভারতের আপত্তিকে আমলে না নিয়ে বঙ্গবন্ধু তাদের আমন্ত্রণে লাহোর যান। ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একটি বিরোধী অংশ তখনও স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাও সাম্প্রদায়িকতাবাদীদের উৎফুল্ল করে।

(৬) অপরদিকে দ্রব্যমূল্য, পণ্য সরবরাহে অপ্রতুল প্রভৃতি তৎকালীন পরিবেশে স্বাভাবিক হলেও তা জনমনে অস্থিরতার সৃষ্টি করে। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা নামধারী বেশ কিছু যুবকের নানাবিধ অপকীর্তি সরকারের জনপ্রিয়তা দ্রুত নেমে আসতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

(৭) সার্বিক পরিস্থিতি এমনই হতে শুরু করে যাতে স্বাভাবিক মিত্ররা সরকার থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেনÑশত্রুরাও তাই। বরং স্বাধীনতার শত্রুরা দিনকে দিন উৎসাহিত হচ্ছিল এবং শক্তি সঞ্চয় করছিল গোপনে গোপনে।

এহেন পরিস্থিতিতে ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হলেÑ আর এই হত্যালীলার ষড়যন্ত্রকারী খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে ওইদিনই এক অবৈধ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলেও ওই সরকারের মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই যোগ দেওয়াতে এক বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো। অন্তত ৩ নবেম্বরের নির্মম জেল হত্যা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের নেতৃত্বশূন্যতা আরও বাড়িয়ে তুলল। চরম হতাশায় ডুবল মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রচ- এক আঘাত ও চরম অনিশ্চয়তার মুখে নিপাতিত হলো।

দেশে ১৯৭২ সালে মূল সংবিধান পুনরুদ্ধার, গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অবসানের দাবিতে একটি গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক জোট গঠিত হলো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় তারা আন্দোলন, সভা-সমিতির অনুষ্ঠান শুরু করলেও আকস্মিকভাবে জিয়ার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত একদল সামরিক কর্মকর্তা হাতে জিয়াউর রহমান নির্মমভাবে নিহত হলেন। কিন্তু এর রাজনৈতিক পরিবেশের কোন উন্নয়ন না ঘটে সেক্ষেত্রে বরং আরও বেশি অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হলো। আন্দোলন সাময়িকভাবে হলেও বাধাগ্রস্ত হলো। সাম্প্রদায়িক শক্তির অবাধ বিচরণও তার ফলে অব্যাহত থাকল। অতঃপর সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায়, নতুন করে সামরিক শাসন এড়ানোর লক্ষ্যে উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুল সাত্তার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেন, গণতান্ত্রিক শক্তির চাপে। ছয় মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু অল্প কিছুকালের মধ্যে ক্ষমতালোভী সামরিক জেনারেল আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করেন। সব রাজনৈতিক দল (জামায়াত ব্যতিরেকে) ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৫ দল, ৮ দল, পাঁচ দল প্রভৃতি ভিন্ন ভিন্ন জোট গঠন করে সমন্বিতভাবে সামরিক শাসন বাতিল, সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭২-এর সংবিধান পুনরুজ্জীবন, বাক-ব্যক্তি ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনর্প্রতিষ্ঠা, সকল কালাকানুন বাতিল প্রভৃতি দাবিতে ধারাবাহিক গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার, তাকে সাংবিধানিক রূপ দেওয়ার এক জঘন্য নজির।

১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত ঐ নির্বাচনে সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি মন্ত্রিসভা গঠন করল জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে। ঐ আমলেই ভারতের উগ্র হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি বাবরী মসজিদ বিধ্বস্ত করায় তার প্রতিশোধ হিসেবে এদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পুনর্বার ঘটে এবং নির্দোষ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর জ্বালানো, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাটসহ, নারীধর্ষণ প্রভৃতির ঘটনা রাজধানীসহ দেশের বহু স্থানে ঘটলেও দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনগত বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়নিÑঅতীতের মতোই। ফলে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে থাকে।

যা হোক, ঐ সরকারের আমলে সকল সংসদীয় দলের সমর্থনে সর্বসম্মতবাবে সংসদীয় গণতন্ত্রের বিধান সন্নিবেশিত করে সংবিধান সংশোধন করা হয় রাষ্ট্রপতি শাসিত একনায়কত্ব সুলভ শাসনব্যবস্থা বাতিল করে। পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করলেও বিএনপির ঐ সরকারের শাসনামলে ন্যক্কারজনকভাবে মাগুরায় উপনির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে বিরোধীদলীয় প্রার্থীকে পরাজিত ঘোষণা করে সরকারদলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করলে চরমভাবে বিক্ষুব্ধ বিরোধী দল ঐ ফলাফল বাতিল ঘোষণা অথবা পুনর্নির্বাচন দাবি করে আন্দোলন শুরু করে। সরকার দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানালে আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং তা সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবিতে রূপান্তরিত হয়ে হরতাল, অবরোধ, সংসদ বর্জন প্রভৃতির মাধ্যমে দেশে প্রায় এক অচলঅবস্থার সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত সরকারী দল দাবি না মেনে ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সকল দলের বর্জন উপেক্ষা করে ভোটারবিহীন এক সাধারণ নির্বাচনের প্রহসন করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতা দখল করলেও আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান তোপ ও চাপের মুখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে এক সংশোধনী অনুমোদন করে ক্ষমতাগ্রহণের দু’সপ্তাহের মধ্যেই পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য হন, ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম দফায় আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করেÑআসম রব ও জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সমর্থনে ঐ সরকার তার পাঁচ বছর কার্যকালেও বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার অজুহাতে সৃষ্ট দাঙ্গার দায়ে কোন মামলা দায়ের বা কাউকে অভিযুক্ত করে বিন্দুমাত্র শাস্তির ব্যবস্থা করেনি বা জামায়াত অথবা কোন ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক দলকে বে-আইনীও ঘোষণা করেনিÑবাহাত্তরে মূল সংবিধান ফিরিয়ে আনার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও সে লক্ষ্যে সামান্যতম পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি। ফলে, জামায়াত ও সকল সাম্প্রদায়িক শক্তি যেন নতুন করে উৎসাহিত হয় এবং শক্তি সঞ্চয়ের কাজে অবাধে লিপ্ত হয়।

এই নির্বাচনের অব্যবহিত আগে ও পরে সমগ্র দেশজুড়ে বিশেষত দক্ষিণঞ্চলের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের একাংশের নেতৃত্বে সংঘটিত হয় তার নজির বিগত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে মেলা ভার। স্বভাবতই বিএনপি-জামায়াত সরকার ঐ সহিংসতার দায়ে কাউকে অভিযুক্ত করে একটি মোকর্দমাও দায়ের করেনিÑকাউকে শাস্তি দেওয়া তো দূরের কথা। সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর এমন দুর্লভ সুদিন আসার সম্ভাবনা তারা নিজেরাও কখনও দেখেনি।

সেই সরকার বিদায়ের পর ২০০৬ সালের নির্বাচনÑতত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রভৃতি নিয়ে সীমাহীন এবং রক্তাক্ত বিরোধ ও আন্দোলন তো সেদিনের কথা। এরই এক পর্যায়ে ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয়। ঐ আমলটিতে অবশ্য কোন সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বা রাষ্ট্রের তরফে সাম্প্রদায়িকতার প্রসার ঘটেনি। অতঃপর এলো ২০০৮-এর নির্বাচন। ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বই তা অনুষ্ঠিত হলো অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষতার সাথে। ব্যাপক ভোটাধিক্যে বিজয়ী হলো আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে মহাজোট গঠনের মাধ্যমে। কল্পনাতীত সংখ্যক আসনে বিজয়ী হয়ে মহাজোটের মন্ত্রিসভা ২০০৯ সালে গঠিত হলো। এই জোটের প্রতিশ্রুতিসমূহের মধ্যে ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনরুজ্জীবন, পঞ্চম ও অষ্টম সংশোধনী বাতিল, অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন এবং অপরাপর বহু জনপ্রিয় দাবি স্থান পেয়েছিল ২০০১ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার বিচার ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা ও তাতে সন্নিবেশিত ছিল। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদকালের চাঁর বছর অতিক্রান্ত হতে চলেছে।

১৯৭২ সালের সংবিধান পুনরুজ্জীবন? এনিয়ে যা করা হলো তাকে দিব্যি আর একটি জাতীয় কলঙ্ক বলে যুক্তিসঙ্গতভাবে অভিহিত করা যায়। সরকার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনরুজ্জীবনের। মহামান্য হাইকোর্ট অপর একটি রিট মোকর্দমার রায় প্রদানকালে পঞ্চম ও অষ্টম সংশোধনী বে-আইনী ও সংবিধানবিরোধী, বিসমিল্লাহ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মাশ্রয়ী দলগুলোর বৈধতা প্রদানকে সংবিধান বহির্ভূত ও বেআইনী বলে রায় দেয়। ওই রায়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে একমাত্র বৈধ সংবিধান এবং তার মূলনীতিসমূহ অপরিবর্তনীয় বলেও উল্লেখ করা হয়। এর বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপীল করা হলেও সুপ্রীম কোর্টও ওই রায় বহাল রাখেন। রায় প্রকাশের পর পরই সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে বলা হয়, বিসমিল্লাহ থাকবে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাতিল হবে না, জামায়াতে ইসলামীসহ সকল ধর্মশ্রয়ী দলও বৈধ দল হিসেবে কাজ করবে...। অতঃপর সংবিধান সংশোধন কমিটি ঢাকঢোল পিটিয়ে গঠন করা হলো সেই কমিটি রাজনীতিক, সংবিধান-বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, পত্রিকা সম্পাদক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ সমাজের সকল বিদগ্ধজনের সঙ্গে পরামর্শ করল। তাঁরাও সুপ্রীম কোর্টের প্রদত্ত। রায়ের সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতি রেখে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ জানালেন। এই সব মতামতকে উপেক্ষা করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী এনে তার মাধ্যমে বিসমিল্লাহ্ জামায়াতসহ সকল ধর্মাশ্রয়ী দলের বৈধতা, “রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রক্ষা, এবং জিয়া-এরশাদ প্রবর্তিত অবৈধ সংশোধনীকে বৈধতা প্রদান করে কার্যকর বঙ্গবন্ধুর ও মুক্তিযুদ্ধের সুমহান নীতি ও আদর্শসমূহ পরিত্যাগ করে জিয়া-এরশাদের সাম্প্রদায়িক অগণতান্ত্রিক নীতিসমূহকে বৈধতা দেয়া হলো। তাই সাম্প্রদায়িকতা এখন আমাদের রাষ্ট্রীয় মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত এবং এর পরিবর্তন আগামী এক যুগেও ঘটানো সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ।

২০১২ সালে তারা রামু, উখিয়া, কক্সবাজার, পটিয়া, চট্টগ্রামের দোহাজারী, সাতক্ষীরা ও চিরিরবন্দরে দিব্যি ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালাল এবং সে জাতীয় কর্মকান্ড তারা অব্যাহত রেখেছে। তারা এই বিশাল পটভূমিতে নিজেদের সংগঠিত করেছে পুর্ণোদ্যমে কাজকর্ম চালিয়েছে এবং চালাচ্ছে দুঃসাহসী পর্যায়ে এবং আজ তারা পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নেয়া এবং সেই অস্ত্র তাদেরকে পেটানোর মতো রাষ্ট্রের বিরোধী তাবৎ অপকর্মে লিপ্ত।

সাম্প্রদায়িকতার তাই অবাধ বিস্তার ঘটছে জামায়াতে ইসলামী স্বাধীন বাংলাদেশে আজ দিনে দিনে তাই বিশাল শক্তি অর্জনে সক্ষম হচ্ছে। আজ সন্দেহাতীতভাবে বলা চলে জামায়াত-শিবির ও ধর্মাশ্রয়ী দলগুলোকে নিষিদ্ধ করতে সংবিধান সংশোধন করা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থে অপরিহার্য।

সংগ্রহ: রণেশ মৈত্রের লেখা থেকে।

পর্ব-১

পর্ব-২

শেষ পর্ব

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.