নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ইসলাম সালাম (সমর্পণ, আনুগত্য), সিল্ম (সন্ধি করা, মিলন, সমবেদনা), সালা’ম (শান্তি, প্রণিপাত, সংশোধন, দোষমুক্তি), সালা’মাত (মুক্তি, অভয়, নিরাপত্তা) এর যে কোন ধাতু হতে নির্গত বলা যায়। কারণ ইসলাম শব্দ উল্লিখিত প্রত্যেক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইসলাম শব্দটির উৎসমূল হিসেবে আমরা যে শব্দকেই নির্বাচন করি না কেন তার প্রকৃত অর্থ শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও মুক্তি অথবা এসবের পরিপূরক হিসেবেই বিবেচিত হবে। পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার ও অজ্ঞানতমসাচ্ছন্নতার যুগে তথা আইয়ামে জাহিলিয়াতে শান্তির চেরাগ জালিয়েছিল ইসলাম। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করা পশুত্ব ও বর্বরতা দূর করেছিল ইসলাম। মানবেতিহাসের নিকৃষ্টতম এক জাতি ইসলামের সোনালি পরশে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে সর্বোত্তম জাতিতে পরিণত হয়েছিল। ইসলামকে অনুসরণ করে রাসুল (সা.)-এর নক্ষত্রতুল্য সাহাবিগণ ইতিহাসের সর্বোৎকৃষ্ট মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। মানবিকতা, উদারতা, পরমতসহিষ্ণুতা, পরোপকারিতা আর ন্যায়-নীতিবোধের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইসলামকে তাঁরা এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। অবর্ণনীয় ত্যাগ-তিতিক্ষা, সংযম আর মানবিক মূল্যবোধের কারণে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছিলেন। ইরশাদ হচ্ছে-‘রাদিআল্লাহু আনহুম ওয়ারাদু আনহু’ অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাঁদের (সাহাবায়ে কেরাম) ওপর সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও আল্লাহর ওপর সন্তুষ্ট। আল্লাহর পক্ষ থেকে এর চাইতে বড় সুসংবাদ মানুষের জন্য আর কি হতে পারে? প্রকারান্তরে মহান আল্লাহর এই ঘোষণা সাহাবিগণের জন্য তাঁদের কর্মের স্বীকৃতিও বটে। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আল্লাহর পক্ষ হতে সাহাবিগণের জন্য এত বড় সার্টিফিকেট কেবলমাত্র ইসলামের কারণেই সম্ভব হয়েছে। মহান প্রভুর সন্তুষ্টি ও স্বীকৃতি অর্জনে তাঁদের অনেক কঠিন ও কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আচরণে, কথাবার্তায়, চলাফেরায় তথা সার্বিক জীবনাচারে তাঁরা আক্ষরিক অর্থেই ইসলামের ফরমাবরদার ছিলেন। আর সেজন্য ইসলামও তাঁদের কাছে শান্তির হীরকখ-ে পরিণত হয়েছিল।
খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে মহানবী (সা.) প্রবর্তিত শান্তির ধর্ম ইসলাম পৃথিবীতে এক নতুন আলোকবর্তিকার জন্ম দেয়। অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে ইসলাম পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। তারই ধারাবাহিকতায় অলি, সুফি, পীর, ফকির, দরবেশ, গাউস, কুতুব ও সাধক হিসেবে যাঁরা আমাদের সমাজে পরিচিত; মূলত তাঁদের মাধ্যমেই সুদূর অতীত থেকে বাংলা ভূখ-ে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার-প্রসার ও বিস্তৃতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সুফিবাদের মহান দীক্ষায় উজ্জীবিত হয়েই তাঁরা আমাদের এতদঞ্চলে ইসলামের শান্তির সুবাতাস বইতে দিকপালের ন্যায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। বিনয়, ভদ্রতা, নম্রতা আর সাধুতার গুণকে নিজেদের জীবনের অন্যতম ব্রত হিসেবে গণ্য করে তাঁরা মানব হিতৈষীরূপে সর্বদা পরোপকার আর মানব কল্যাণে নিয়োজিত ছিলেন। অপরের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থ পরিহার করে তাঁরা জীবনের সাফল্য খুঁজেছেন। ব্যক্তি ইচ্ছা আর ব্যক্তি স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে সমাজের সামষ্টিক চাহিদাকে অগ্রাধিকার প্রদান করে তাঁরা ইসলামের কল্যাণ নীতির সফল বাস্তবায়নে সক্ষম হয়েছিলেন। এঁদের পবিত্র সান্নিধ্যে ও মমতার স্পর্শে বাংলার মানুষ হয়ে ওঠে পারস্পরিক সহানুভূতিশীল, উদার, নৈতিক ও মানবতাবাদী। সুফি-সাধকদের মহান শিক্ষার ফলেই এতদঞ্চলের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত।
ইসলাম নামের যে শান্তিধর্ম সুফি-সাধকদের প্রেমময় বাণীর সাথে একাকার হয়ে সুদূর অতীত থেকে এদেশে শান্তি-সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধন গড়ে তুলেছিল- তা যেন আজ হুমকির মুখে পড়েছে। শতকরা নব্বই ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এই জনপদে ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে অথবা ইসলাম রক্ষার নামে যা হচ্ছে- তা কোনভাবেই ইসলাম সমর্থিত নয়। সঙ্কীর্ণ ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত বা দলীয় স্বার্থসিদ্ধির জন্য আজ বাংলাদেশে সর্বজনীন ইসলামকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইসলাম আল্লাহ পাক নির্দেশিত এক পরিপূর্ণ জীবন বিধান। পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে ইসলামের আলোকবর্তিকাও ততদিন জাজ্বল্যমান থাকবে; কেউ ইচ্ছে করলেও ইসলামের জীবন প্রদীপ নির্বাপিত করতে পারবে না। আল্লাহ পাক বলেন, য়ুরিদুনা লিয়ুতফিউ নুরাল্লাহি বিআফওয়াহিহিম ওয়াল্লাহু মুতিম্মুনুরিহি ওয়ালাও কারিহাল কাফিরুন’ অর্থাৎ ‘তারা চায় ইসলামকে ফুঁৎকার দিয়ে নিভিয়ে দিতে, কিন্তু মহান আল্লাহ ইসলামের চেরাগ আলোকোজ্জ্বল করে রাখবেন; যদিও কাফেররা এটি অপছন্দ করে।’ তাই ইসলাম সম্পর্কে কে কি চায় আর কে কি বলে তা বড় কথা নয়; বরং ইসলামকে আল্লাহ পাক নিজ দায়িত্বেই সংরক্ষণ করবেন। ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন সম্পর্কে তিনি বলেন-‘ইন্না নাহনু নায্যালনায্ যিক্রা ওয়া ইন্না লাহু লাহাফিযুন’ অর্থাৎ ‘আমি (আল্লাহ) স্বয়ং এ কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর হেফাজত করব।’ ইসলামের প্রিয় নবী (সা.) সম্পর্কে বলা হয়েছে-‘রয়া রাফানা লাকা যিক্রাক’ অর্থাৎ ‘হে রাসুল (সা.)! আমি (আল্লাহ) আপনার মর্যাদাকে দিগন্তময় বিস্তৃত করে দেব।’ এতে বুঝা যায় ইসলাম, পবিত্র কুরআন ও প্রিয় নবী (সা.)-এর শান, অবস্থান ও মর্যাদার জিম্মাদারি স্বয়ং আল্লাহর হাতে। তাহলে হেফাজতে ইসলাম কেন সেই দায়িত্ব নিল? আর সম্প্রতি তারা ইসলাম হেফাজতের নামে যা করছে তা কি আদৌ ইসলামসম্মত?
ইসলাম রক্ষার জন্য ৬ এপ্রিল তারা লংমার্চের ডাক দিলেন। ইসলামের কোথায় লংমার্চের কথা বলা আছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। লংমার্চ-এর মতো বিশাল কর্মসূচিতে ব্যয় হওয়া বিপুল অর্থের উৎসই বা কি? আমাদের দেশের আলেম-ওলামারাতো এত টাকা-পয়সার মালিক কখনো ছিলেন না। হঠাৎ করে এত টাকা কোত্থেকে এল? ৫ এপ্রিল হেফাজত নেতৃবৃন্দ লালবাগে সংবাদ সম্মেলন করলেন। তাদের কথাবার্তা, অঙ্গভঙ্গি ও আচার-আচরণে ইসলামের আদর্শ অনুপস্থিত। হেফাজতের ঢাকাস্থ সভাপতি নূর হোসাইন কাসেমী পোশাকে ও বাহ্যিক সুরতে একজন হুজুর মানুষ; কিন্তু হরতালে বাস না পাওয়ায় মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি খুবই ক্ষুব্ধ হলেন, বকা দিলেন বাপ তুলে। এটি ইসলাম সমর্থন করে কি না? মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মুসলমান সেই হবে, যার জিহ্বা ও হাত হতে অপর ব্যক্তি নিরাপদ থাকবে।’ কাসেমী সাহেব কি তার জবান থেকে বাসমালিক ও শ্রমিকদের নিরাপদ রাখতে পেরেছেন? যদি না পারেন তবে মহানবীর (সা.) ঘোষণা অনুযায়ী তিনি কি সেই মুসলমান হতে পেরেছেন? তাহলে যারা নিজের জিহ্বার হেফাজত করতে পারে না তারা কিভাবে ইসলামের হেফাজত করবেন? চট্টগ্রামে কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর হেফাজতের লোকেরা চড়াও হয়, মারধর করে-এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কাসেমী সাহেব যখন কিছুটা ইতন্তত, বিব্রত; তখন তার পেছনেই দ-ায়মান হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রুহী কানে কানে জবাব বলে দিলেন আর কাসেমী সাহেব জানিয়ে দিলেন-এটি ছাত্রলীগের কাজ। অথচ ভিডিও ফুটেজে পরিষ্কার দেখা গেছে কারা সাংবাদিক নির্যাতন করেছে। তাহলে মাদ্রাসার তালিম ছেড়ে রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ নিয়ে কিছু করলে সেখানে এ রকম মিথ্যার বেসাতি গাইতে হয়-এটি ইসলামের কোথায় আছে? কয়েকটি টিভি চ্যানেল মতিঝিলের হেফাজত মহাসমাবেশ সরাসরি সম্প্রচার করছিল। হঠাৎ সমাবেশের ঘোষক উচ্চ কণ্ঠে, প্রচ- ক্ষোভের সঙ্গে ঘোষণা করলেনÑসরকার সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে। ঘোষক ভক্তিভরে প্রথমেই তার প্রিয় দিগন্ত টিভির কথা বলেছেন। সমাবেশে সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে নাস্তিক, মুরতাদ বলে গালি দেয়া শুরু হয়ে গেল; আর ঘোষক নিজে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর নাম নিয়ে তাঁর গালে জুতা মারার সেøাগান দিতে লাগলেন। ‘তৌহিদি জনতা’ ক্ষুব্ধ হলো, তারাও জুতা উঁচিয়ে ধরল এবং গলায় যত শক্তি ছিল সর্বস্ব ঢেলে জুতা মারতে লাগল। অথচ সরকার সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করেনি; ঘোষক যখন একথা বলছিলেন আমরা তখন অবাক বিস্ময়ে তার মিথ্যাচার শুনছিলাম আর ‘তৌহিদি জনতা’র প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম। ইসলামের নবী (সা.) জঘন্য দুষমনকেও কি কোনদিন জুতা মেরেছেন? কাউকে কোনদিন বকা দিয়েছেন? একুশে টিভির সাংবাদিক হিসেবে সমাবেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন একজন নারী। পুরুষদের সমাবেশে নারী সাংবাদিক কেন-এই অপরাধে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। হেফাজত নেতাদের মদদে তৌহিদি জনতা মাতৃত্ব ও সম্মানের প্রতীক সেই কর্তব্যরত নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে; তার পরিধেয় বস্ত্র ছিড়ে ফেলেছে! ইসলামে স্বীকৃত নারীর অধিকার ও মর্যাদাও সেখানে ভূলুণ্ঠিত। যারা একজন নারীর সম্ভ্রমের হেফাজত করতে শিখেনি তারা কিভাবে ইসলামের হেফাজত করবে?
সমাবেশের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম মাও. আহমদ শফি সাহেব। সবার কৌতূহল ছিল তিনি কি বলেন তা শোনার। কিন্তু তিনি কিছু বলেননি। একটি লিখিত বক্তব্য তার পক্ষ থেকে তারই স্নেহাস্পদ পুত্র পাঠ করলেন। এটি মাও. আহমদ শফি সাহেব কর্তৃক অনুমোদিত কি না তাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কেননা বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ এ বুজুর্গ ব্যক্তির পক্ষে এতবড় বক্তব্য সাজানো সম্ভবপর নয়। তাঁকে ব্যবহার করে এ সময়ে যারা ইসলামকে পুঁজি করে নানাবিধ ফায়দা হাসিল করছে- এ বক্তব্য তাদের মতো করেই সাজানো হয়েছে এবং কৌশলের অংশ হিসেবে তাঁরই সাহেবজাদাকে দিয়ে সেটি পাঠ করানো হয়েছে।
গণজাগরণ মঞ্চ যায়নি হেফাজতের মঞ্চ ভাংতে, কিন্তু হেফাজত সমর্থকেরা ঠিকই মহাখালীস্থ নির্মূল কমিটির একটি মঞ্চ ভেঙ্গে, আক্রমণ চালিয়ে নিজেদের বীরত্ব ও সাহসিকতার জানান দিয়েছে। সমাবেশ শেষে বীরদর্পে তারা শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের দিকে ছুটে আসেন। গণজাগরণ মঞ্চ আক্রমণ করে ‘গাজী’ খেতাব ধারণ করতে উদ্যত হন অনেকেই। জীবন বাজি রেখে একাত্তরের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন করেছেন এমন একজন বয়োবৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ইটের আঘাতে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে তারা বাঙালীর স্মৃতিপটে একাত্তরকেই আবারও ভাসিয়ে দিলেন। এসব অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই কি হেফাজত নেতৃবৃন্দ ইসলামের হেফাজত করতে চান?
ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিনলেখক : সহযোগী অধ্যাপকফারসী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।ই-মেইল : [email protected]
১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৫
তালপাতারসেপাই বলেছেন: সহমত
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩২
শাহেদ চট্রগ্রাম বলেছেন: ধিক্কার হেফাজত ইসলাম ওরফে হেফাজতে জামাতে ইসলাম কর্মীদের।