নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
এবার দেশবাসীর দৃষ্টি কেড়েছে হেফাজতে ইসলাম। কেবল বড় আকারের সমাবেশ ও বিতর্কিত ১৩ দফা দাবির জন্যই নয়, তারা আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে কর্মীদের বেপরোয়া আচরণের কারণেও। মেয়েদের মাথায় কাপড় নেই কেন, মেয়েরা কেন সাংবাদিকতা করছে, কেনই-বা জিন্স পরছে ইত্যাদি কথাবার্তা বলে কয়েকজন নারী সংবাদকর্মীর ওপর চড়াও হয়েছে হেফাজতের কর্মীরা। তাদের হামলার শিকার ইটিভির সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে আক্রমণের চেষ্টাও তাদের বিতর্কিত করেছে।
দেশের সচেতন নর-নারীকে ক্ষুব্ধ করেছে হেফাজতিদের প্রতি ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী বড় দলগুলোর তোষণনীতি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সাদেক হোসেন খোকা সমাবেশ মঞ্চে গিয়ে তাদের সঙ্গে সংহতি ঘোষণা করেছেন। বিএনপির কর্মীরা তুলে দিয়েছেন খাবার। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভিস্তিওয়ালার দায়িত্ব পালনের ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন। তবে আগত হেফাজত কর্মীদের কেবল পানি নয়, খাবারও বিলিয়েছেন তারা। আর এরশাদের স্বৈরশাসনের সহযোগী এককালের বাম নেতা কাজী জাফর আহমদও সেখানে হাজির হয়েছেন। হেফাজতের আমির মাওলানা আহমদ শফীর অনুরক্ত বন ও পরিবেশমন্ত্রী রীতিমতো সরকারের হয়ে হেফাজতের সঙ্গে দূতিয়ালি করেছেন। দাবি মানার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর শান্তিপূর্ণ সমাবেশের জন্য হেফাজতিদের অভিনন্দন জানিয়ে দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, সরকার ব্লাসফেমি আইন করবে না। তারপর একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলে মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সাক্ষাৎকার শুনে মনে হয়েছে যে, তিনি ১৩ দফা বিবেচনার অঙ্গীকার থেকে কিছুটা সরে এসেছেন। সে যা-ই হোক, এটি সবার বোধগম্য যে, নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ক্ষেত্রে হেফাজতিদের সমর্থন লাভের আশায় বড় দলগুলো এমন আচরণ করছে। এখানে নেতা-নেত্রীরা কোনো নীতি-নৈতিকতার ধার ধারছেন না।
হেফাজতে ইসলাম কতটা শক্তিধর, কতদূর যেতে পারবে, ভোটের বাজারে কী ভূমিকা রাখবে_ সেই হিসাবের আগে খতিয়ে দেখতে চাই, সংগঠনটির ১৩ দফায় কী আছে? সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার স্থলে 'আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' সংযোজিত হয়েছিল, পঞ্চদশ সংশোধনীতে পুনরায় ধর্মনিরপেক্ষতা পুনঃস্থাপিত হয়েছে। ১নং দফায় তারা 'আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' স্থাপনের দাবি তুলেছেন। ২নং দফায় আল্লাহ, রাসূল (সা.) ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে মৃত্যুদণ্ডের বিধানের কথা বলা হয়েছে, যাকে বলা যায় ব্লাসফেমি আইন। ৩নং দফায় বলা হয়েছে, 'কথিত শাহবাগী' আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরদাত এবং প্রিয় নবীর (সা.) নামে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী কুলাঙ্গার ব্লগার ও ইসলামবিরোধীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ৪নং দফায় ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। ৫নং দফায় ইসলামবিরোধী নারীনীতি ও ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে। ৬নং দফায় কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করতে বলা হয়েছে। ৭নং দফায় আছে, দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করতে হবে। ১০নং দফায় আছে, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মান্তকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। ১৩ দফার মধ্যে উলি্লখিত এসব দাবি রাষ্ট্রের নীতি, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকার এবং বাংলার আবহমানকালের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
এ দাবিগুলো বাস্তবায়িত হলে সমাজ ও রাষ্ট্রের চরিত্র কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? রাষ্ট্র হবে কেবল ধর্মান্ধ মুসলমানদের রাষ্ট্র। সংখ্যালঘুদের জন্য দেশটি হবে বাসের অযোগ্য। নারীরা হবে আবার গৃহবন্দি। রাজনীতি, প্রশাসন, পুলিশ-সেনাবাহিনী থেকে নারীরা নির্বাসিত হবে। গার্মেন্ট কর্মীসহ কর্মজীবী নারীরা কাজ হারাবে। কারণ হেফাজতি প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী, পুরুষ ও নারী একই সঙ্গে কাজ করতে পারবে না।
মুক্তচিন্তা, যুক্তি ও বিজ্ঞানচর্চার পরিবেশ ধ্বংস হবে। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী কওমি মাদ্রাসার অনুকরণে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হলে কূপমণ্ডূক জনগোষ্ঠী গড়ে উঠবে। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানীসহ সৃজনশীল মানুষ তৈরি হবে না। হাজার বছরের গড়ে ওঠা বাংলার মানবসম্পদ ধ্বংস হবে।
মুক্তিযুদ্ধের গৌরবদীপ্ত ইতিহাসের স্মারক ভাস্কর্যগুলো ভেঙে ফেলার মধ্য দিয়ে একাত্তর ভুলিয়ে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ হবে একটি তালেবানি দেশ, যা একাত্তরের কাঙ্ক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত চিত্র।
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চেয়েছি_ যেখানে ধর্ম হবে যার যার, রাষ্ট্র হবে সবার। এখানে এক ধর্মের মানুষের ওপর অন্য ধর্মের অনুশাসন চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, কারও স্বাধীন চিন্তা ও বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ করা হবে না। এখানে কে মুসলিম, কে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান, কে আস্তিক আর কে নাস্তিক তা রাষ্ট্রের কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। তবে এটা ঠিক, কোনো ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে অবমাননাকর বক্তব্য-আচরণ অপরাধ। সেই অপরাধের শাস্তি আমরাও দাবি করি। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেই এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। আর ধর্মের প্রতি কেউ অবমাননাকর বক্তব্য দিলে তার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যেতে পারে, সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যেতে পারে; কিন্তু এ কারণে লংমার্চ, হরতাল দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা উচিত নয়। তা ইসলামের বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণও নয়।
কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক পথে অগ্রসর না হয়ে হেফাজতে ইসলাম ব্লগারদের 'নাস্তিক মুরতাদ' ঘোষণা করে লংমার্চ, সমাবেশ, হরতাল করেছে। আরও কর্মসূচি পালন করবে। হেফাজতিদের দাবির মুখে পূর্বাহ্নে সরকার চারজন ব্লগারকে গ্রেফতার করেছে। ব্লগারদের অপরাধ খতিয়ে দেখতে সরকার একটি কমিটিও করেছে, সেখানে আলেমদের প্রতিনিধিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ওই কমিটি ও পুলিশ এখনও তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তারা আপত্তিকর কিছু লিখে থাকলে তা তাদের ব্লগেই রয়েছে। তল্লাশি করলেই প্রমাণ মিলতে পারে। সংশ্লিষ্ট কমিটি বা কর্তৃপক্ষের সেটি খতিয়ে দেখার কথা। কিন্তু এর বাইরে কেন, কোন উদ্দেশ্যে দাগি আসামিদের মতো তাদের রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে, তা যে কোনো বোধসম্পন্ন মানুষের প্রশ্ন। এটি কারও না বোঝার ব্যাপার নয় যে, হেফাজতিদের প্রতি সরকারের তোষণনীতির কারণে আজ কতিপয় তরুণ নিগৃহীত হচ্ছে। উল্লেখ্য, ব্লগ কোনো গণমাধ্যম নয়, নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের মতবিনিময়ের ক্ষেত্র। সেখানে অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞায় মুক্তবুদ্ধি চর্চা বাধার সম্মুখীন হবে, যা সমাজের অগ্রগতির জন্য সহায়ক নয়।
হেফাজতে ইসলামের ৮, ৯, ১১, ১২ ও ১৩নং দফায় মসজিদে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে বাধাবিপত্তি, গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপির অবমাননা, আলেম-ওলামা-মাদ্রাসা শিক্ষকদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন, হুমকি-ধমকি, গুলিবর্ষণ, ধরপাকড়ের কথা বলা হয়েছে। এসব দাবির মধ্যে অতিকথন যে রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। আজ ইসলাম নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীরা হামলা ও নিগ্রহের শিকার। ইসলামে ধর্ম-জাতি নির্বিশেষ সব মানুষের অধিকার সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ ইসলাসের ধারক এসব আলেমা-ওলামা অন্য ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর-উপাসনালয়ে হামলার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি করছেন না। তারপরও আলেম-ওলামারা কোনোভাবে নিগৃহীত হলে তা খতিয়ে দেখা উচিত। তবে হেফাজতিরা বলেছে, ১৩ দফার সব দাবি না মানলে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না, যেতেও পারবেন না। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান যে, অরাজনৈতিক সংগঠনের দাবিদার হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে শক্তি সঞ্চয়ের চেষ্টা করছে।
হেফাজতের এই দাবিগুলো নতুন নয়। বহুদিন ধরেই ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলো এসব দাবি করে আসছে। তাত্তি্বকভাবে এটি পরিত্যক্ত পাকিস্তানি ভাবাদর্শের সঙ্গে তালেবানি ভাবাদর্শের সংমিশ্রণ। কৌশলী জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য এর চেয়ে পোশাকি। তবে মর্মবাণীতে মিল রয়েছে। যে কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কারণে বিপাকে পড়া জামায়াত এটিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। উল্লেখ্য, কট্টর জামায়াতবিরোধী অবস্থানের কারণে চরমোনাইর পীরের ভাই সৈয়দ ফয়জুল করীমকে ৬ এপ্রিলের সমাবেশে হেফাজতের মঞ্চে উঠতে দেওয়া হয়নি। হেফাজতের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এমন কিছু করা যাবে না। এ প্রসঙ্গে আজ থাক।
যেটি বলা দরকার, কোনো কোনো বুদ্ধিজীবী যারা এক সময় বাম রাজনীতিতে তালিম নিয়েছিলেন, তারা সংবাদপত্র ও টক শোতে এটিকে নতুন শক্তির আবির্ভাব, গ্রাম-শহরের বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও শ্রেণী-সংগ্রাম হিসেবেও দেখছেন। বাস্তব সত্য হচ্ছে, এ দাবিগুলো নতুন নয়, হেফাজতের চেহারা মোবারকও অপরিচিত নয়। ১৮ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর ইসলামী ঐক্যজোট, মাওলানা ইসহাকের খেলাফত মজলিশ, মুফতি ওয়াক্কাসের জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিবের নেজামে ইসলামী হেফাজতের ইসলামে আছে। এর বাইরে আছে মাওলানা আহমাদুল্লাহ আশরাফের খেলাফতে আন্দোলন, মাওলানা আজিজুল হকের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর নেজামে ইসলাম পার্টি (যিনি জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেলও খেটেছেন)। সেই সঙ্গে আছেন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র-পরিচালকবৃন্দ।
বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী দেশে ১৫ হাজার কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। ফোরকানিয়া, এবতেদায়ি, হাফেজিয়া, কারিয়ানা, জামিয়া ও বালিকা মাদ্রাসা মিলে ২০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে (বাস্তবে এর চেয়ে অধিক হতে পারে)। এই ১৫ হাজার মাদ্রাসার শতকরা ৮০ ভাগই হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে শামিল হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। আর এসব মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা মোহতামীম-শিক্ষকদের একান্ত বাধ্যগত। শিক্ষকরা যা বলবেন, ওই মাদ্রাসার ছাত্ররা তা-ই শুনবে। কোনো হেরফের হবে না। তাই বিভিন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রীয় বা স্থানীয়ভাবে এই শক্তিকে নিয়ে টানাটানি করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেনাবেচা যে হয়নি তা বলা যাবে না।
আজ হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে তারা সমবেত হওয়ায় ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর কাছে এটি ভোটব্যাংক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এর বেশি কিছু নয়। মানুষের জীবন-সংগ্রাম ও রাজনৈতিক-সামাজিক প্রবাহের বিপরীতে বহমান একাত্তরে পরিত্যক্ত ভাবাদর্শ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনো ফ্যাক্টর হওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ আফগানিস্তান বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ নয়। এটি সুফি-আউলিয়া-বৈষ্ণব-ভিক্ষু-সহজিয়া-বাউল প্রভাবিত বহুত্ববাদী সমাজ। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সত্য, কিন্তু দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও এটিকে কেবল মুসলমানের রাষ্ট্র বানাতে অনীহ। তাই দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এটি ধর্মনিরপেক্ষ অর্থাৎ সব ধর্মের, সব জাতির, সব মানুষের রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দীর্ঘকালের এই অর্জন কোনো হঠাৎ আস্ফালনে হারিয়ে যাওয়ার বিষয় নয়।
সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপার মনে হয়, যখন শুনি যে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যেহেতু দেশের হতদরিদ্র মানুষের সন্তান, তাই তাদের সংগ্রাম শ্রেণী-সংগ্রাম। আসলে গরিব বা শ্রমিকশ্রেণীর অংশগ্রহণই শ্রেণী-সংগ্রামের একমাত্র শর্ত নয়। সেখানে শ্রেণীর মুক্তির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষেত্রবিশেষ গরিব শ্রেণীর কোনো কোনো অংশ নিজ শ্রেণীস্বার্থের বিপরীতে ব্যবহৃত হতে পারে। যেমন শাসকশ্রেণীর স্বার্থে চালিত গরিবশ্রেণী থেকে আগত পুলিশ বা সেনাসদস্যরা শোষিতের সংগ্রাম দমনে ব্যবহৃত হয়। একাত্তরে গরিব মানুষের সন্তানদের প্রলোভন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে রাজাকার বাহিনীর সদস্য করে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে বিপরীতে ব্যবহার করা হয়েছিল।
মনে রাখা দরকার, হেফাজতের ১৩ দফা দাবি কোনো গরিব মানুষের মুক্তির দাবি নয়, এটি নয় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অধিকারের দাবি। কওমি মাদ্রাসা সবচেয়ে অবহেলিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরিবের সন্তানরা বিনাপয়সায় শিক্ষার জন্য এখানে ভর্তি হয়, কিন্তু যুগোপযোগী শিক্ষা পায় না। এখানে বিজ্ঞান, সাহিত্য, গণিত, ইংরেজি পড়ানো হয় না। বাংলা শিক্ষায়ও তেমন জোর দেওয়া হয় না। ফলে তারা পাস করে ভালো কাজ পায় না। পায় না উন্নত জীবন। তাই কওমি মাদ্রাসার বর্তমান কারিকুলাম পরিবর্তন করে এর সঙ্গে আধুনিক শিক্ষার সমন্বয় জরুরি হয়ে পড়েছে। মুক্তচিন্তার আলেমদের মধ্য থেকেও সে দাবি উঠেছে। কিন্তু সনাতনী নেতৃত্ব এখানে বাধা। এই বাধা পেরিয়ে মাদ্রাসার কারিকুলামের পরিবর্তন এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব গ্রহণের জন্য যদি মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র-আলেম-ওলামাদের ঢাকামুখী লংমার্চ বা ঢাকা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি নেওয়া হয়, তাহলে সেখানে আমিও থাকব। এতে নিশ্চয়ই যোগ দেবেন অনেক লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, নারীসহ সচেতন নাগরিক, যারা কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও উন্নত জীবনের কথা ভাবছেন।
সুত্র
১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১০:৪৭
তালপাতারসেপাই বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৪৩
আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: হেফাজতিরা যে দাবী গুলো দিয়েছে সেগুলো বেশীর ভাগই অয়ৌক্তিক।
কেন অযৌক্তিক? এই খানে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।