নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
ফার্স্ট রাউন্ডের খেলা এখন শেষ। দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা শুরু হলো মাত্র। আজকাল কোন একটি খেলা শেষ হলে, কম্পিউটার বিশ্লেষকরা ভিডিও দেখে প্রতিপক্ষের দুর্বল বা শক্তির জায়গাটা পরীক্ষা করেন। তারপর পরবর্তী খেলার কৌশল ঠিক করেন। এখন যে যত কথা বলুন, মেঠো বক্তৃতার দিন শেষ, দেশ দু’ভাগে বিভক্ত এবং পুরোটাই রাজনীতির অন্তর্গত। এক পক্ষে বিএনপি-জামায়াত এবং জামায়াতের নতুন সংগঠন হেফাজতে ইসলাম, যার নতুন নামকরণ করা হয়েছে হেফাজতে জামায়াত ইসলাম ও জাতীয় পার্টি। আর এদের ক্ষুদকুঁড়ো খেয়ে বেঁচে আছে যারা অর্থাৎ তাদের সমর্থনকারী ছোটখাটো দল। এ দলগুলো এখন থেকে হেফাজতের প্ল্যাটফর্মও ব্যবহার করবে। অন্যপক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমস্ত দল, গ্রুপ, মানুষ। দেশ বিভক্ত করার যে বিষবৃক্ষ জেনারেল জিয়া বপন করেছিলেন তা এখন মহীরুহ। তাঁর স্ত্রী খালেদা এতদিন সেই মহীরুহের ডালে বসে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সেই নিরাপদ ডালটি এখন জামায়াত-হেফাজত কাটার আয়োজন করেছে। জামায়াত অনেকটা মাফিয়া চক্রের মতো। একবার তার সংস্পর্শে এলে বেরোবার উপায় থাকে না। খালেদা চাইলেও এখন সেই চক্র থেকে বেরোতে পারবেন না। তাঁকে জামায়াতের নির্দেশ মেনে কাজ করতে হবে। মতিয়া চৌধুরী ঠাট্টা করে বললেও, অবাক হব না, বাস্তবে যদি বেগম জিয়াকে জামায়াতে বিএনপির আমীরান হিসেবে ভার গ্রহণ করতে হয়। হেফাজতকেও এখন থেকে জামায়াত বা পাকিস্তান থেকে যে নির্দেশ আসবে তা মানতে হবে। জনাব শফি এতদিন প্রত্যক্ষ রাজনীতি করেননি, তাই আমাদের রাজনীতির অন্তর্নিহিত নোংরামিটা বুঝতে পারেননি। এখন তিনি রাজনীতিতে এসেছেন, বিভিন্ন সাক্ষাতকার দিচ্ছেন এবং তাতে একটি লাভ হচ্ছে হেফাজতের রহস্য ঘুচে যাচ্ছে। স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে জামায়াতের মানি, বিএনপির বিরিয়ানি আর এরশাদের পানি ছাড়া তাঁর গত্যন্তর নেই। কিন্তু মজাটা হচ্ছে, হেফাজত বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংক নষ্ট করছে। বিএনপির পক্ষের ‘নিরপেক্ষ’ ভোটও নষ্ট হবে। হেফাজত যত কথা বলবে, রাজনীতি করবে ততই আওয়ামী লীগ লাভবান হবে। তবে আওয়ামী লীগ ঘরে ফসল তুলতে পারবে কি না সন্দেহ। এই দলে বিরোধী পক্ষের মৃদু সমর্থক একটি গ্রুপ আছে যারা পৃষ্ঠপোষকতার কারণে নেতা; যারা বিদ্যমান কাঠামো অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা করে থাকতে চায়Ñ কারণ, তাদের প্রতিপত্তি ও সম্পদ যাতে বিরোধী পক্ষ ক্ষমতায় এলে নষ্ট না হয়। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমে তাদের সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর ও বক্তব্য চৌদ্দ দল সম্পর্কে ঘোলাটে ধারণার সৃষ্টি করছে। এটি আবার চৌদ্দ দলের জন্য ক্ষতিকর। এঁরা বলেন, বাস্তব অবস্থা অত্যন্ত কঠিন যা তারা ছাড়া কেউ বুঝতে পারছেন না। হায়, বাকিরা সব অনভিজ্ঞ, নাদান, গজদন্ত মিনারে বাস করছেন! আমরা বরং বলব, বর্তমান পরিস্থিতিতে চৌদ্দ দলের যে কোন দোদুল্যমানতা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের শামিল।
অনেকে বলছেন, বিশেষ করে সরকারী দলের নেতারা যে, হেফাজত একটি সামাজিক সংগঠন। বৃহত্তর অর্থে সব দলই সামাজিক সংগঠন। হয়ত হেফাজত এক সময় তা-ই ছিল। কিন্তু এখন আর তারা সামাজিক সংগঠন নয়, বরং জামায়াতের মতো ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন। যদি তা না হতো, তাহলে তারা ১৩ দফা দাবি ওঠাত না, যার চরিত্র রাজনৈতিক। তারা জামায়াত, বিএনপি, জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি পরিবেষ্টিত হয়ে সরকারকে হুমকি-ধমকি দিত না। ৬ তারিখ নির্মূল কমিটি ও গণজাগরণ মঞ্চে এবং ৮ তারিখ বিভিন্ন জায়গায় সহিংস ঘটনা ঘটাত না। সুতরাং সরকার যেভাবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সহিংস ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করে, হেফাজতকেও সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
হেফাজত কিভাবে রাজনৈতিক দল তা একটু বিশ্লেষণ করা যাক। শুধু ধর্মীয় সংগঠন হলে হেফাজত মাও সে তুংয়ের অনুসরণে ‘লংমার্চ’ কর্মসূচী গ্রহণ করত না। কারণ হেফাজত কমিউনিজমের বিরুদ্ধে। কিন্তু কেউ যখন রাজনীতি করে শত্রুকেও তখন তারা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে। হেফাজত গত ৪০ বছর লংমার্চ কর্মসূচী দেয়নি, রাস্তায়ও নামেনি। কখন নামল? যখন জামায়াত-বিএনপি-জাতীয় পার্টি বিষোদ্গার শুরু করল শাহবাগের বিরুদ্ধে। এসব দলের নেতারা ক্রমেই অপাঙ্ক্তের হয়ে উঠছিল। আর তাদের নোংরা অতীত তো সবার জানা। তারা স্পেস ফিরে চাচ্ছিল। যুদ্ধাপরাধ বিচার বানচালে তারা সুবিধা করতে পারছিল না। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইসলামের নতুন ঠিকাদার মাহমুদুর রহমান মিথ্যা খবর ছাপা শুরু করলেন। সরকারে তার শক্তিশালী বান্ধব হয়ত আছে। না হলে মিথ্যা সংবাদ, মিথ্যা ব্লগিং ছাপার কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না, কিন্তু তিনজন তরুণ ব্লগার গ্রেফতার হয়। হয়ত তারা এমন কিছু লিখেছে যা রুচিবিরুদ্ধ। কিন্তু আমার দেশ ও নয়া দিগন্ত যা করেছে তা কি রুচিসম্মত? গ্রেফতারকৃত তিন ব্লগার যদি ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়ে যাকে তাহলে কাবার ছবি বিকৃত করে, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবীর ছবি বিকৃত করে ছেপে তো মাহমুদুর ও নয়া দিগন্ত শুধু ফেৎনা নয় গোমরাহ সৃষ্টি করেছে। জানি না তথ্যমন্ত্রী এত সদয় কেন তাদের ওপর! জামায়াত ও মাহমুদুর অনবরত একতরফা প্রচার করে শাহবাগের আন্দোলন নাস্তিকতার আন্দোলন হিসেবে তুলে ধরে। উল্লেখ্য, মিডিয়া তাদের টক শোতে এই প্রচারকে বিস্তৃত হতে আরও সাহায্য করে। আরও উল্লেখ্য, সাগর-রুনীর হত্যাকা-ের বিচার চেয়ে যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থকদের সঙ্গে দু’বছর ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সুযোগ্য নেতৃত্বে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন’ সাংবাদিকরা আন্দোলন করলেও, ধর্ম বিকৃতকারী, দাঙ্গায় উস্কানিদাতা, মিথ্যা ও বিকৃত রুচির সংবাদ পরিবেশন করা সত্ত্বেও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসম্পন্ন’ সাংবাদিকরা তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ পৃথিবীতে টাকা একমাত্র দলনিরপেক্ষÑ যাকে বলে নির্দলীয়। ওপর থেকে ছেড়ে দিলেই হলো, কেউ লুফে নিলে তো বলা যাবে না সে টাকা খেয়েছে। জামায়াত প্রচুর টাকা ছড়িয়েছে, পত্রপত্রিকায় এমনও খবর এসেছে যে, হেফাজতের অনেক নেতার ব্যাংক এ্যাকাউন্ট স্ফীত হয়ে উঠেছে।
টাকা হলো এনার্জি ড্রিঙ্কের মতো। হেফাজত নেতাদের হঠাৎ জামায়াত-বিএনপি-জাতীয় পার্টির মতো মনে হলো শাহবাগ নাস্তিকে ভরা, শেখ হাসিনা নাস্তিক; শুরু হলো তাদের ভাষায় ‘নাস্তিক’ ‘আস্তিকের’ লড়াইÑ ঠিক যেমনটি চেয়েছে জামায়াত। হেফাজত তখন চট্টগ্রামে তরুণদের জনসভা ভ-ুুল করে দেয় এবং জামায়াতের নির্দেশে লংমার্চ ও ১৩ দফার ঘোষণা দেয়।
যখন ধর্ম নিয়ে কেউ ব্যবসা শুরু করে তখনই তার বিচ্যুতি শুরু হয়। টাকা খাওয়ার রাজনীতিটা তাই গোলমেলে। তখন ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার বানাতে হয়। হেফাজতের সভায় কী হয়েছিল? বাংলাদেশের চিহ্নিত সব ব্যভিচারী ও দুর্নীতিবাজ নেতাদের মঞ্চে সাদরে ডেকে নিয়েছে, স্বাগত জানিয়েছে। অথচ চরমোনাইর পীরের প্রতিনিধিকে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে বা উঠতে দেয়া হয়নি। রাজনীতি না করলে বিএনপির সর্বোচ্চ সভার দু’জন সদস্য ও জাতীয় পার্টির একজনকে মঞ্চে নিয়ে বসাত না।
জামায়াত যেভাবে আচরণ করে হেফাজতও সেভাবে আচরণ করেছে। প্রথম দিন তারা লাঠিসোটা নিয়ে নির্দিষ্টভাবে নির্মূল কমিটির ও গণজাগরণ মঞ্চ আক্রমণ করেছে। পরের দিন ককটেল ফুটিয়েছে, গাড়ি ভেঙ্গেছে, রেললাইন অবরোধ করেছে, রেলগাড়ি আক্রমণ করেছে, সংবাদপত্র পুড়িয়েছে। দু’দিনই তারা সাংবাদিক ও তাদের গাড়ি আক্রমণ করেছে। শিবির রগ কাটে। হেফাজত পা কেটে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, জানা গেছে, মফস্বলে এক এলাকায় রিকশা থামিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ধর্ম পরিচয় জানতে চেয়েছে।
সবশেষে বলতে হয় লোক সমাগমের কথা। হেফাজত ৫০ লাখ লোক জড়ো করবে বলেছিল। দেড় লাখের বেশি লোক হয়নি। যদি স্কয়ার ফুট হিসাব করেন তাহলে লোক আরও কমবে। এক লাখ স্কয়ার ফুট জায়গা যদি ধরি (বেশি ধরলাম) তাহলে কত লোক হয়। দুই স্কয়ার ফুটে ২ থেকে ৩ জন লোক ধরে। এটি অঙ্কের ব্যাপার, ভাবালুতার কোন অবকাশ নেই। এর মধ্যে ফখরুল বলেছিলেন এক লাখ দেবেন। সেটি হয়ত পারেননি। তবে বিএনপি-জামায়াত-জাতীয় পার্টি ও ধর্মব্যবসায়ীদের অন্যান্য দল কমপক্ষে ঢাকা থেকে এক লাখ লোক সাপ্লাই করেছে। সে কারণে, মানি, পানি ও বিরিয়ানির বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। তাহলে হেফাজতের লংমার্চে ৫০ থেকে ৭০ হাজার হেফাজতী এসেছে। এটি হলো বাস্তবতা এবং এ কারণেই একজন ব্যক্তিÑ যিনি ‘স্বৈরাচারী’, কামরুল হাসান কথিত ‘বিশ্ববেহায়া’, পত্রপত্রিকায় উল্লেখিত ‘লম্পট’ হিসেবে খ্যাত তাকে, দুর্নীতির বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত চোর ছ্যাচ্চোড় হিসেবে দু’জন বিএনপি ও চিনিচোর হিসেবে খ্যাত একজন স্বঘোষিত কমিউনিস্টকে মঞ্চে বসাতে হয়েছে। প্রতিটি জিনিসের একটি দাম আছে। হেফাজতকে রাজনীতি করতে হয়েছে; সুতরাং তাকে একটি দাম দিতে হয়েছে। আরও কারণ আছে, অনেক আলেম-ওলামা অভিযোগ করেছেন, হেফাজতের নেতারা ১৯৭১ সালে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করেছিল। এ অভিযোগের তদন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এটি ঠিক হলে বোঝা আরও সহজ হবেÑ কেন তারা বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে পছন্দ করে।
পর্ব ১
॥ দুই ॥
জামায়াতের টাকা খেয়ে যখন আন্দোলন শুরু করছে হেফাজত এরকম অভিযোগ ওঠার পরই হেফাজত নেতারা বলতে শুরু করেন জামায়াতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। তাদের নেতা আল্লামা শফি পত্রিকায় দু’টি সাক্ষাৎকার দিয়ে জোরের সঙ্গে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কালের কণ্ঠে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, জামায়াতের সহযোগী বলার চেয়ে তাকে গুলি করা হোক। দৈনিক সমকালের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন “হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত কখনও কোনো রাজনৈতিক বা কোন দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যায়, এমন কোনো দাবি বা কর্মসূচি দিইনি আমরা। আমাদের এখনকার ১৩টি দাবিও ঈমান আকিদা ইসলাম ও নৈতিকতা সংশ্লিষ্ট। আসলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতেই একটি মহল হেফাজতে ইসলাম ও আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও জঙ্গীবাদের কল্পনাটক সাজিয়ে বিষোদগার করছে। জামায়াত থেকে টাকা নেয়ার কল্পকাহিনীও বলছে কিছু মিডিয়া। আসলে যত মিথ্যাচার ও অপপ্রচারই করা হোক না কেন, দেশের ইসলামপ্রিয় জনতা এতে মোটেও বিভ্রান্ত হবে না। তবু জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ দিলাম সরকারকে।”[৮-৪-২০১৩]
সমস্যা হলো ইউটিউবে একটি ফোনালাপ প্রচারের জন্য দেয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে জামায়াত নেতা বুলবুল হেফাজতের এক নেতাকে ৫৬ মিনিট ধরে পরামর্শ দিচ্ছেন কীভাবে লংমার্চ করতে হবে। কীভাবে মঞ্চ ব্যবহার করতে হবে, ফখরুলের সঙ্গে দেখা করে লোক সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সর্বশেষে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে হবে। আপনি বলতে পারেন, ফোনালাপ হয়েছে, নির্দেশ দিয়েছে তো কী হয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে তারা নেই। টাকা খাওয়া নিয়ে বলতে পারেন, টাকা খাইনি। প্রমাণ তো কেউ করতে পারবে না। হেফাজত ঘোষণা করেছিল ৩০ হাজার টাকা করে ১০০০ বাস তারা রিজার্ভের চিন্তা করেছিল। এখানেই লাগে ৩০ কোটি। ১০০০ বাসে ৫০ জন করে আনলে ৫০ হাজার লোক। তাদের থাকা খাওয়া বাবদ কত লাগে? এত বড় প্যান্ডেলের খরচ? হেফাজত করেন সাধারণ গরিব ঘরের মাদ্রাসার ছাত্ররা। তারা এত কোটি টাকা কী ভাবে যোগাড় করবেন? এখানে একটি প্রশ্ন করতে চাই। হেফাজতের নেতাদের কতজন আয়কর দেন? তাদের টিন নম্বর আছে কিনা? না থাকলে কেন নেই? এরা যদি আয়কর না দেন তাহলে আমরা কেন আয়কর দেব? আমার মনে হয়, তথ্য কমিশনে এ প্রশ্নটি করা উচিত।
জামায়াতে ইসলামের শত্রু বলে পরিচিত কওমী মাদ্রাসা। আল্লামা শফির হেফাজতকে সবাই তাই জানত। দুই কারণে তারা মওদুদী ইসলামের বিরুদ্ধে। এক মওদুদী ইসলামকে বিকৃত করেছেন। জামায়াত তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক গুরু হিসেবে মানে মওদুদীকে। বাংলাদেশে মওদুদীবাদ প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন মওলানা রহিম। জামায়াতের প্রথম আমির তিনিও। গোলাম আযমকে তিনিই রিক্রুট করেছিলেন। মওদুদীর বিভিন্ন রচনা বাংলায় অনুবাদ করতে করতে মওলানা রহিম তার ভুল বুঝতে পারেন এবং এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তখন গোলাম আযমের নেতৃত্বাধীন গ্রুপ তাকে দল থেকে বের করে দেয় এবং গোলাম আযম আমির হয়ে বসেন। মওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদকে মওলানা রহিম দুঃখ করে বলেছিলেন, ওরাতো আমাকে সুযোগ পেলে হত্যা করবে। মওদুদী ইসলাম কী ভাবে ফেতনা করে তার কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছে বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদ। আমি খানিকটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি-
মওদুদী জামায়াতের মতাদর্শগত ভ্রষ্টতা নিছক রাজনৈতিক নয় বরং ইসলামের মৌল আক্বিদাগত। অতীত ইতিহাস সাক্ষী এরাই উগ্র জঙ্গীবাদের স্রষ্টা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের লালনকারী। নিম্নে এদের ভ্রষ্টতার কতিপয় উদাহরণ মওদুদী রচিত গ্রন্থাদি পেশ করা হলো-
আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে কটূক্তি
ইসলামের সুস্পষ্ট আক্বীদা হলো আল্লাহ তা’আলা সব ধরনের জুলুমের ঊর্ধ্বে। অথচ মওদুদী সাহেব আল্লাহর আইন যিনা করার শাস্তি রজমকে নিঃসন্দেহে জুলুম বলে উল্লেখ করেছেন। [তাফহীমাত-২ : ২৮১]
কুরআন শরীফ সম্পর্কে কটূক্তি
আল-কুরআনুল কারীম সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার ঘোষণা হলো, এতে কোনরূপে বিকৃতি ও অস্পষ্টতা নেই। অথচ মওদুদী সাহেব বলেন, পবিত্র কুরআনুল কারীমের তিন চতুর্থাশেরও বেশি বরং এর মূল প্রাণটিই দৃষ্টির অন্তরাল হয়ে পড়েছে। [কুরআন কী চার বুনিয়াদী ইস্তেলাহে]
নিষ্পাপ নবী রাসূল সম্পর্কে মওদুদীর কটূক্তি
১.নবীগণ নিষ্পাপ নন, প্রত্যেক নবী গুণাহ করেছেন। [তাফহীমাত-২য় খ-, পৃষ্ঠা : ৪৩]
২.হযরত ইউনুস আ. নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন। [তাফহীমুল কুরআন-২য় খ-, পৃষ্ঠা-১৯]
৩.হযরত মুহাম্মদ (সা) রিসালতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করার কারণে আল্লাহ তা’আলা তাকে ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দেন। [তাফহীমুল কুরআন, সুরা নাসর]
হযরত ইউসুফ আ. সম্পর্কে কটূক্তি
মওদুদী সাহেব হযরত ইউসুফ আ. কে একজন স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তিনি শুধুমাত্র একজন ডিক্টেটরই ছিলেন না। তিনি ইতালির মুসোলিনীর মতো একজন ডিক্টেটর ছিলেন। [তাফহীমাত-২য় খ-]
ন্যায়পরায়ণ সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে কটূক্তি
১. সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নন এবং তারা অনুসরণ ও অনুকরণযোগ্য নয়। [দস্তুরে জামায়াতে ইসলামী, পৃষ্ঠা : ০৭]
২. হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. দুর্বলমনা ও খেলাফতের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ অযোগ্য ছিলেন। [তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন : পৃষ্ঠা : ২২]
৩. হযরত আলী রা. এমন কিছু কাজ করেছেন যাকে অন্যায় বলা ছাড়া উপায় নেই। খেলাফত ও মুলকিয়াত-১৪৩]
পীর-আউলিয়া এবং ওলামা-মাখায়েখ সম্পর্কে কটূক্তি
১. বর্তমানে যিনি তাজদীদে দ্বীন বা দ্বীনের সংস্কারের কাজ করতে চাইবেন, তাকে অবশ্যই সুফীদের ভাষা, পরিভাষা, রূপক উপমা, পীর-মুরিদী এমন জিনিস থেকে মুসলমানদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
২. বহুমূত্র রোগীকে যেমন চিনি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়, মুসলমানদেরকে অনুরূপভাবেই পীর-আউলিয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখা প্রয়োজন। [তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন, পৃষ্ঠা : ৯৩]
আল্লামা শফি দেওবন্দ তরিকার। এই তরিকার বিখ্যাত সাধক আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী (র। আল্লামা শফি তার ছাত্র। খুব সম্ভব মওলানা আশরাফ আলী থানভীর ছাত্রও তিনি। দেওবন্দের অনেকে জামায়াতের বিরোধিতা করেছেন। এমনকি শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, হাটহাজারী মাদ্রাসার মুফতি ফয়জুল্লাহ, পাকিস্তানের মুফতি মুহম্মদ শফি মওদুদীর ইসলাম সম্পর্কে নানা মন্তব্য করেছেন। কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছিÑ
১. মওদুদী জামায়াত পথভ্রষ্ট, তাদের আক্বীদা আহলেসুন্নাত ওয়াল জামা’আত ও কুরআন হাদিসের ্পরিপন্থী। তাদের দলে শরিক হওয়া, সাথে কাজ করা, সহযোগিতা করা জায়েজ হবে না। [আওলাদে রাসূল আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.]
২. মওদুদী নাপাক মিশ্রিত কথা বলে। [হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.]
৩. মওদুদী ইসলামী ফিকাহ [ইসলামী আইন শাস্ত্র] বাদ দিয়ে নিজের মনগড়া ফিকাহ তৈরি করেছেন। [আল্লামা ক্বারী তৈয়্যব রহ. দেওবন্দ, ভারত]
৪. মওদুদী জামায়াত কাদিয়ানী ফেতনা থেকেও মারাত্মক। [শায়খুল আদব মাওলানা ইজাজ আলী রহ.দেওবন্দ, ভারত]
৫. মওদুদী ফেতনা কাদিয়ানী ফেতনা থেকেও কম নয়। [ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহ.]
৬. জামায়াতে ইসলামী ও মওদুদীপন্থীদের ইমাম বানিয়ে নামাজ পড়া ঠিক জায়েজ হবে না। [মুফতি মুহাম্মদ শফী, পাকিস্তান]
৭. মওদুদী ধর্মভ্রষ্ট এবং ধর্মভ্রষ্ট মতবাদের প্রতি আহ্বানকারী। [ আল্লামা ইউসুফ-বিন-নূরী, পাকিস্তান]
৮. মওদুদী জামায়াতে যোগদান করা নাজায়েজ, তাদের পিছনে নামাজ পড়া মাকরুহে তাহরিমী। অবস্থাভেদে নাজায়েজেও বটে।-শর্ষিনা আলীয়া মাদরাসার ফতোয়া।
৯. মওদুদী আহলেসুন্নœাত ওয়াল জামা’আতের বিপরীত আক্বীদা পোষণ করেন। মওদুদী দলের সঙ্গে ওঠা বসা ও সংশ্রব রাখা মুসলমানদের জন্যজায়েজ নয়। [মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ, হাটহাজারী মাদরাসা, চট্টগ্রাম]
১০. স্বার্থান্ধদের পক্ষে সবকিছু করাই সম্ভব। শুধু দুনিয়ার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার হীন মানসে তারা ইসলামের মূল ভিত্তিতে কুঠারাঘাত করে নড়বড়ে করে দিয়েছে। দ্বীনের সৌধকে। পরিতাপ এই জন্য যে, এক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে তারা ইসলামকেই। নিঃসন্দেহে তারা সীমালঙ্ঘনকারী, তারা বাতিল। শুধরে নেবার যোগ্যতা তারা হারিয়ে ফেলেছে। মিথ্যার বেসাতী করতে গিয়ে তারা সম্পূর্ণই অসত্যের ওপর অবস্থান নিয়েছে। বাতিলের ওপর কি জঘন্য দৃঢ়তা। এ কুখ্যাত সংকলক মাওলানা মওদুদী এবং তার পদলেহীরা দলিল প্রমাণ, সমালোচনা-অনুরোধ কোনটিরও মূল্য দেয় না। [শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক; বোখারী শরীফ পরিশিষ্ট,পৃষ্ঠা: ২৪২।
সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই মওলানা শফি জামায়াতের বিরোধিতা করবেন। এমনকি তিনি এবং হেফাজতের সম্পাদক এক ফতোয়ায় বলেছেন, ইসলামী ব্যাংকে টাকা রাখাও নাজায়েজ। কারণ, তারা সুদের ব্যবসা করে।
যুদ্ধাপরাধ বিচারের সঙ্গে সঙ্গে জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। শাহবাগ থেকে সে দাবি সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু হেফাজত এই দাবিতে সুর না মিলিয়ে যারা সেই দাবিতে সোচ্চার তাদের নাস্তিক বলেছে। এর মাজেজাটি কী? তাদের ১৩ দফায় এ দাবি নেই। তা হলে কি আল্লামা মাদানী ও আল্লামা থানভীর শিক্ষা বা দেওবন্দ তরিকা থেকে চ্যুত হয়েছে হেফাজত। এই জবাবটা পাওয়া জরুরী। জরুরী আরও এই কারণে যে, ৬ তারিখ হেফাজতের সভা থেকে এক বক্তা বলেছেন, “আমাদের ধমনীতে মাদানীর রক্ত।” (দেখুন, ইউটিউব]
ধমনীতে আল্লামা মাদানীর রক্ত থাকলে, জামায়াতের কার্যাবলীর সঙ্গে তাদের এত মিল কেন? আমাদের মুরতাদ ঘোষণা করে শাহবাগ সম্পর্কে কটূক্তিতে ভরা বিজ্ঞাপন কেন শুধু নয়াদিগন্ত; সংগ্রাম আর দেশে ছাপা হলো প্রথমে।
আপনারা জানেন কিনা জানি না, শাহরিয়ার কবিরের একটি চলচ্চিত্রে মওদুদীর এক পুত্র বলেছেন, তার বাবা তাদের বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলাম থেকে দূরে থাকতে কারণ তা মতলবি ইসলাম। মওদুদী কোন পুত্রকে জামায়াতে আনেননি এমনকি মাদ্রাসায়ও পড়াননি। গোলাম আযমও পুত্রদের জামায়াতে আনেননি, মাদ্রাসায়ও পড়াননি, বরং নাছারাদের দেশে তাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন। কট্টর ইসলামী রাষ্ট্র সুদান বা সৌদিতেও নয়। হেফাজত কি শেষে এই মতলবি ইসলাম মেনে নিল?
কেন একথা বলছি? তারও একটি উদাহরণ দিই। হেফাজতের সভা থেকে আরেকজন বক্তা বলেছেন, আল্লাহ হযরত মুসাকে (আঃ) যেমন পাঠিয়েছিলেন ফেরাউনকে ধ্বংস করার জন্য। তেমনি আল্লামা শফিকে পাঠিয়েছেন শাহবাগীদের ধ্বংস করার জন্য [দেখুন, ইউটিউব] নাউজুবিল্লাহ্ যে ব্লাসফেমি আইনের আবদার করছে হেফাজতে জামায়াতী ইসলাম, সেই ব্লাসফেমি আইনে তো তারাই অভিযুক্ত হবেন। সাধারণ মানুষ কিন্তু, ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে না। নীরবে যার যার ধর্ম তারা পালন করেন। ধর্ম নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেই তখন মিথ্যা বলে, অর্ধ সত্য বলে, বিভ্রান্তিকর কথা বলে মানুষকে উত্তেজিত করতে হয়। শাপলা চত্বরে হেফাজত ও ১৮ দলের মানুষজন দেখেই তাদের মাথা পাগল পাগল লাগা শুরু হয়েছে। পাঁচ লাখ লোক দেখলে কী হবে? হযরত মুসা (আ আল্লাহ্র সবচেয়ে প্রিয় নবী, যিনি আল্লাহকে চেয়েছিলেন এবং আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করেন। রসুল (দঃ) আল্লাহ্র হাবিব। দুটোতে পার্থক্য আছে। সেই মূসা (আ এর সঙ্গে হাটহাজারির এক মাদ্রাসার মৌলানা শফির তুলনা! আল্লাহ আর কত গোমরাহ দেখতে হবে।
হেফাজতের সঙ্গে যে জামায়াতের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে তার প্রমাণ সিলেটের তালেবান নেতা হাবিবুর রহমানের মঞ্চে উপস্থিতি। ইনি আফগানিস্তানে ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি বাংলাদেশকেও তালেবান রাষ্ট্র বানানোর ইচ্ছায় ভক্ত অনুসারী নিয়ে কওমী মাদ্রাসাগুলোয় জঙ্গী প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেন। গত শনিবারের লংমার্চ পরবর্তী সমাবেশে মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, (শনিবারের) সমাবেশ থেকে এক ঘোষণাতেই নবুয়ত কায়েম হতে পারে।”
[আমাদের সময় ৮.৪.১৩] তালেবানদের সঙ্গে জামায়াতের গভীর সম্পর্ক। জঙ্গীদের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ। শাহরিয়ার কবিরের এক প্রামাণ্যচিত্রে দেখান হয়েছে, কওমী মাদ্রাসাগুলোতে বিশেষ করে হাটহাজারি মাদ্রাসায় কীভাবে জঙ্গী উৎপাদিত হচ্ছে। মওলানা শফির উল্লিখিত সাক্ষাৎকারে যা বলেছেন এবং আমি যে বিবরণ দিলাম তাতে কি মনে হয় না তিনি সত্য এড়িয়ে গেছেন?
পর্ব ২
॥ তিন ॥
হেফাজত হঠাৎ করে ১৩ দফা দাবি তুলেছে। এ দাবিগুলোর কিছু বিভিন্ন সময় জামায়াতী নেতারা তুলেছেন। দেশে এখন এই ১৩ দফা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে।
দাবিগুলো হচ্ছেÑ
১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল।
২. আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
৩. শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর নামে কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘেœ নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
৯. রেডিও. টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামী কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক সিনেমার নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিচয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত এনজিও এবং খ্রিস্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তরকরণসহ সব অপতৎপরতা বন্ধ করা।
১১. রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।
১২. সারাদেশের কওমী মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাঁদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।
১৩. অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। [কালের কণ্ঠ.৭-৪-১৩]
দাবিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এগুলোতে সারবস্তু তেমন নেই। যারা এ দাবি তৈরি করেছেন তারা যে এদেশে ও তার মানুষজন সম্বন্ধে খুব কম জানেন এটি তারই উদাহরণ। এখানে লক্ষণীয়, তাদের ভাষায় শাহবাগের যে ‘নাস্তিক’দের বিরুদ্ধে আন্দোলন সেটি নেমে এসেছে তিন নম্বরে। ১ নং দাবির বিরুদ্ধে সংবিধানে কিছু নেই। ২ নং দাবি সম্পর্কে বলা যায় ধর্ম অবমাননাকারীর জন্য শাস্তির বিধান রেখে আইন আছে। ৩ নং দাবি মানা হয়েছে। অর্থাৎ সরকার যাদের মনে করে ‘কুৎসা রটনাকারী তাদের ধরা হয়েছে। ৫ নং দাবির আংশিক ইতোমধ্যে মানা হয়েছে। আপনারা জানেন কিনাÑ কওমীদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য যে কারিকুলাম করা হয়েছে তাতে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা সব পর্যায়ে বাধ্যতামূলক। অথচ, কারিকুলামের প্রস্তাবনায় আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়িত করতে হবে। এই কারিকুলাম থেকে ইচ্ছা করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা সবসময় দাবি করে এসেছিলাম বাংলাদেশের (১৯৪৭-১৯৭০) ইতিহাস যেন সব পর্যায়ে সব শাখায় বাধ্যতামূলক করা হয়। আমি খুব আশ্চর্য হয়েছি, এই কারিকুলাম কমিটিতে আমাদের প্রিয় তিনজন সেক্যুলার ব্যক্তিত্ব আছেনÑ ড. খলীকুজ্জমান, ড. জাফর ইকবাল ও সচিব ড. কামাল চৌধুরী। যেদিন এটি অনুমোদিত হয় সেদিন তারা ছিলেন কিনা জানি না। না থাকলেও পরে তারা এর প্রতিবাদ করেননি। আপনারা কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন? নিজের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা ছাড়া তো উপায় দেখছি না। ধর্ম শিক্ষা দেয়া হোক তাতে আপত্তি নেই, কিন্তু জাতীয় ইতিহাস কেন পড়ানো হবে না? সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর হয়তো ইচ্ছা দেশে হেফাজতির সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাক।
৬নং দাবিটি প্রতিবছর জামায়াতীরা একবার করে। ৭নং দাবির ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। হেফাজতের একজন নেতা সিলেটের উল্লিখিত সেই জঙ্গী মওলানা হাবিবুর রহমান এ আন্দোলন করেছেন এবং করবেনও। ৮নং দাবির বিরুদ্ধে সরকার কিছু করেনি। বরং জামায়াত মসজিদে আগুন দিচ্ছে, মসজিদকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে। হেফাজত আগামী শুক্রবার যে কর্মসূচী দিয়েছে তাও জামায়াতের অনুরূপ।
৯ নং ও ১০ নং দাবি প্রায়ই উত্থাপন করা হয়। ৯ থেকে ১৩ নং দাবির কোন সারবত্তা নেই। সরকার এখন অনায়াসে বলতে পারে হেফাজতের দাবি মেনে নেয়া হচ্ছে, বাকিগুলোও বিবেচনা করা হবে।
হেফাজতের যে দাবি নিয়ে বিতর্ক চলছে তা হলো নারী সংক্রান্ত ও ব্লাসফেমি আইনের প্রবর্তন। প্রথমে বলে নেয়া ভাল এদের ২, ৪, ৫, ৬, ৭ দাবি মানতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। বর্তমান সরকারের পক্ষে তা সম্ভব হবে না। বিএনপি-জামায়াত জাতীয়পার্টি যদি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠ নিয়ে ক্ষমতায় আসে তা হলে হয়ত সংবিধান সংশোধন করে এ দাবিগুলো মেনে নেয়া হতে পারে।
হেফাজতের নারীনীতি আফগান তালেবানী সরকারের নীতির অনুরূপ। এ নীতি গ্রহণ করলে গ্রামীণ ব্যাংক, বাংলাদেশের সমস্ত গার্মেন্টস সেক্টর, তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেক্টর, প্রাথমিক শিক্ষা, বিভিন্ন পেশা বন্ধ করে দিতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সমস্ত প্রবৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যাবে। এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। লক্ষণীয়, এই দাবি মানলে বাংলাদেশের দরিদ্র পরিবারগুলো সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে বিএনপির নেতৃত্বের কিছু আসে যায় না। তারা যথেষ্ট সম্পদ পাচার করেছে, ছেলেমেয়েরা তাদের বিদেশে থাকে। এরশাদ তো নারী ছাড়া থাকতে পারেন না; এটি তার প্রাক্তন স্ত্রী বিদিশাই তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন। সেই এরশাদও এখন এই দাবি সমর্থন করেন। কারণ, টাকা দিয়েও এখন আর নারী- বেষ্টিত থাকা যাচ্ছে না। টাকার জন্য আজকাল লোলচর্ম বৃদ্ধ কেউ আর পছন্দ করে না। জামায়াতের নেতৃবৃন্দের ছেলেমেয়েরাও নাছারাদের দেশে থাকে। তারা চাচ্ছে ধর্মীয় উম্মাদনা জাগিয়ে তুলে সরকার পতন ও ক্ষমতা দখল। দেশে নারীদের, গরিবদের কী হলো তাতে কিছু আসে যায় না। দেশের সম্পদ লুট করার সুযোগ পাবে এবং তা পাচার করে চলে যাবে। দেশ তাদের কাছে বড় ব্যাপার নয়, নিজে এবং নিজের পরিবার বড় ব্যাপার। আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, হেফাজতের দাবি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রের বিরোধী।
হেফাজত ঘোষণা করেছে তাদের ১৩ দফা না মানলে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। থাকতেও পারবে না। ইতোমধ্যে হেফাজতের মধ্যে ক্ষমতার মদমত্ততা চলে এসেছে। এর একটি উদাহরণ দিই। একটি টেলিভিশন চ্যানেলে আলোচনাসভায় হেফাজতের এক নেতা-বাচ্চা এক মৌলানা সদম্ভে শোলাকিয়ার ইমাম প্রবীণ মুহাদ্দেস আল্লামা ফরিদউদ্দিন মাসউদকে বললেন, মৌলানা মসউদ হচ্ছেন তসলিমা নাসরিনের মতো, বিতর্কিত।
নারী নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্কে প্রশ্ন তোলা হয়েছিলÑ খালেদা জিয়ার স্থান কী হবে? হেফাজতের দাবি মানা হলে খালেদা কি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন? সেই বাচ্চা মৌলভী টেলিভিশনে বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন যে, খালেদার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করা হবে। তবে, বিএনপি জামায়াত ও আওয়ামীবিরোধী মহিলাদের ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া হবে না। ফ্যাশন প্যারেড করে ঘোরাফেরা বন্ধ। সিনেমা-ফ্যাশন তো বন্ধ হবেই। কিন্তু মূল কথা হলো, ক্ষমতায় যেতে হলে যদি ধর্মের ক্ষেত্রে খানিকটা ছাড় দিতে হয়, তা হলে দেয়া যাবে। জামায়াতও তাই মনে করে। তারা এও মনে করে, প্রয়োজনে মিথ্যা বলা জায়েজ।
ব্যতিক্রম আরো করা হচ্ছে। স্বঘোষিত নাস্তিক কবি ফরহাদ মাজহার যেহেতু জামায়াত-বিএনপি চিন্তা- আধারের [থিংক ট্যাংক] প্রধান সেহেতু জামায়াত-হেফাজত তার বিরুদ্ধে নিশ্চুপ। শুধু তাই নয় ইসলামের স্বঘোষিত ঠিকাদার মাহমুদুর রহমানের দৈনিক আমার দেশ ও যুদ্ধাপরাধী আলবদর মীর কাশেম আলীর নয়া দিগন্তে নিয়ত তার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। হেফাজত ও জামায়াতে ইসলামী কি ফন্দিবাজ ইসলাম মনে হচ্ছে না? কারণ, জামায়াত বিএনপি প্রতিদিন শাহবাগের তরুণদের নাস্তিক বলে উল্লেখ করছে। হেফাজত তাদের সভায় ‘শেখ হাসিনার গালে জুতা মার’ সেøাগান দিয়ে তাকে নাস্তিক ঘোষণা করছে, কিন্তু স্বঘোষিত নাস্তিক, লম্পট, চোর-ছ্যাচ্চড়দের বিরুদ্ধে তারা আশ্চর্যজনকভাবে নিশ্চুপ। না, এখানেই শেষ নয়। আল্লামা শফি সমকালের সেই সাক্ষাতকারে যা বলেছেন তা আরও বিভ্রান্তিকর, অনেকাংশে পুরো সত্য নয়। আমি খানিকটা উদ্ধৃত করছিÑ
আল্লামা শফি : হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপের জোরালো প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। সংবিধান থেকে আল্লাহ্র ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি তুলে দেয়া, নতুন প্রবর্তিত ধর্মহীন শিক্ষানীতি, হিজাব পালনে নারীদের বাধ্য করা যাবে না বলে হাইকোর্টের রায়, রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি প্রতিষ্ঠা, ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের রায়, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ বাদ দেয়ার চেষ্টা, ঢালাওভাবে আলেম-ওলামা ও কওমী মাদ্রাসার সঙ্গে জঙ্গীবাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অপপ্রচার, হাইকোর্টে কোরান সংশোধনের জন্য মামলা এবং ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধের চেষ্টার বিরুদ্ধে আগেও আন্দোলন করেছি আমরা। এখন আন্দোলন করছি আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা) অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে। খেয়াল করলে দেখবেন, হেফাজতের কোন আন্দোলনেই নেই রাজনীতির বীজ। হেফাজতে ইসলাম তার এই অরাজনৈতিক ভূমিকা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবে। [ঐ]
এবার বিশ্লেষণ করা যাক-
১. ‘সংবিধান থেকে আল্লাহর...’-এটি ঠিক নয়, বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম এখনও আছে।
২. ‘নতুন প্রবর্তিত ধর্মহীন শিক্ষানীতি’-এটি ঠিক নয়। নতুন শিক্ষানীতিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ধর্মকে।
৩. ‘হিজাব পালনে’... এই রায় সম্পর্কে জানা নেই। যদি রায় আদালতের হয় তা হলে সরকারের কিছু করার নেই।
৪. ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি’... এটি আংশিক সত্য। তবে, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল থাকায় এই নীতি কার্যকর নয়।
৫ ‘ফতোয়াবিরোধী হাইকোর্টের...’ এখানে সরকারের করার কিছু নেই। তাছাড়া মাদ্রাসায় যারা পড়বে তারাই ফতোয়া দিতে পারবে এমন ইসলামী আইন কোথাও নেই।
৬. ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও বিসমিল্লাহ বাদ দেয়া’ এটি ঠিক নয়।
৭. ‘ঢালাওভাবে কওমী...’ এটি অস্বীকার করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে কথাটা অসত্য নয়।
৮. ‘হাইকোর্টে কোরান সংশোধন...’ এটি সঠিক নয়।
৯. ‘ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ...’ এটি ঠিক নয়। জামায়াত নিষিদ্ধ মানেই ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধÑ এটি ভেবে নিলে অন্য কথা।
১০. ‘আন্দোলন করছি আল্লাহ...’ এটি বিভ্রান্তিকর উক্তি। এটি ঠিক হলে ব্যভিচারি, স্বঘোষিত কমিউনিস্ট, চোর হিসাবে খ্যাতদের মঞ্চে নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করা হতো না এবং ইসলামী চিন্তা ট্যাংকির প্রধান হিসাবে স্বঘোষিত নাস্তিকদের মেনে নেয়া হতো না। আগে ফরহাদ মজহার বা শফিক রেহমানকে নাস্তিক ঘোষণা করে যদি অন্যদের ঢালাওভাবে নাস্তিক বলা হয়, তা হলে তার না হয় একটা যৌক্তিকতা খোঁজার চেষ্টা করা যেতে পারে।
১১. ‘হেফাজতের কোন আন্দোলনেই নেই রাজনীতির...’ এটি ঠিক নয়। আল্লামা শফির সমস্ত বক্তব্যই রাজনৈতিক এবং জামায়াতধর্মী। লক্ষ্য করুন, মওলানা শফির সাক্ষাতকারে উল্লিখিত ১১টি পয়েন্টের মধ্যে ৮টি ঠিক নয়। বাকি তিনটি আংশিক সত্য। জামায়াত এসব ‘দাবি’ প্রায়ই তোলে। এই হচ্ছে জামায়াত। এই হচ্ছে হেফাজত। এরপরও যদি কেউ বলে বা বিশ্বাস করে জামায়াতের সঙ্গে হেফাজতের কোন সম্পর্ক নেই তাহলে সেই পুরনো প্রবচনটিই আবার উদ্ধৃত করতে হবে ‘হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ।’
পর্ব ৩
॥ শেষ পর্ব ॥
বর্তমান রাজনৈতিক আলোচনায় হেফাজত ও ভোটের সমীকরণের বিষয়টিও চলে এসেছে। খালেদা এরশাদ ও নিজামীর শিষ্যরা যে মানি পানি ও বিরিয়ানি নিয়ে হাজির হচ্ছে তার বড় কারণ ভোট। এদের সম্মিলিত ইচ্ছা, হেফাজতের ভোট যাতে আওয়ামী লীগে না যায়- সব ভোট যেন তাদের বাক্সে পড়ে। এতে কোন জটিলতা নেই। কিন্তু জটিলতা অচিরেই দেখা দেবে। প্রশ্ন, হেফাজত নারীদের যেভাবে শেকল পরাতে চায় বিএনপির ও জাতীয় পার্টির নারীরা তা মেনে নেবেন কিনা? গ্রামাঞ্চলের গরিব নারীরা মেনে নেবেন কিনা? এরশাদের তো লাজলজ্জা বলে কিছু নেই, কখনও ছিল না। হেফাজতের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণার পরও [যা বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গেও সংহতি প্রকাশ] কেন মন্ত্রিসভায় তার ভাইকে রেখে দিচ্ছেন তা বোঝা যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগও যথেষ্ট তোয়াজ করছে হেফাজতকে ভোটের জন্য। বারবার বলা হচ্ছে, হেফাজতে জামায়াত ও বিএনপি ঢুকে যাচ্ছে। তাতে কি? হরতালের দায়দায়িত্ব যদি বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ওপর বর্তায়, তাহলে হেফাজতের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের দায়িত্বও বর্তায় হেফাজতের নেতাদের ওপর। হেফাজতের সঙ্গে আলোচনা চলছে, তাতে আপত্তি নেই; সেই আলোচনা বিএনপির সঙ্গেও চলতে পারে। কোন কোন মন্ত্রী নিজেদের এলাকার কথা চিন্তা করে হেফাজতকে অতিমাত্রায় তোয়াজ করছেন যা দল, নেত্রী ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনেক কার্যকলাপ আমাদের পছন্দ নয়; কিন্তু তৃণমূলে মহিউদ্দিন নেতা, হাছান মাহমুদ নন। সেখানে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বাদ দেয়ার বিষয়টিও সবাই মনে করছে পৃষ্ঠপোষকতার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হিসেবে। আওয়ামী লীগও হেফাজতকে তোয়াজ করতে পারে, করেছেও। এবং এর ইতিবাচক ফলও পেয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে তারা ঢাকা ছেড়েছে খালেদা জিয়ার বুক ভেঙ্গে। কিন্তু তোয়াজ মানে নিজের জমি ছাড় দেয়া নয়। বেশি তোয়াজ বিপত্তি ঘটাবে যার লক্ষণ ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। হেফাজত নেতারা ঘোষণা করছেন, শাহবাগ মঞ্চ ভেঙ্গে তারা ইসলামী মঞ্চ করবেন এবং ব্লাসফেমি আইনের পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনার দেয়া বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। ধারণা হচ্ছিল, আওয়ামী লীগ জমি ছেড়ে দিচ্ছে; এতে তৃণমূলে অনেকে ক্ষুব্ধ হচ্ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার বিবিসির সাক্ষাতকার অনেক কিছু স্পষ্ট করেছে। অনেকে আশ্বস্ত হয়েছেন। আসলে মূল কথা হলো, শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের কোন নেতার ওপর তৃণমূলের আস্থা বা বিশ্বাস কোনটাই নেই। তাদের ধারণা নেতারা, বিশেষ করে পৃষ্ঠপোষকতায় যারা নেতা তারা যে কোন সময় দল ও নেত্রীকে বেচে দিতে পারে নির্দলীয় নিরপেক্ষ অর্থের বিনিময়ে।
ভোটের অন্য সমীকরণও আছে। কওমীরা দু’ভাগে বিভক্ত। আল্লামা শফিবিরোধী কওমী ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দল ও গ্রুপের এখন এলাকাভিত্তিক ও মহাসমাবেশ করে তাদের শক্তি প্রদর্শন করা উচিত। কারণ, ইসলামী দলগুলোর কেউ কোন বিষয়ে একমত নয়। সুতরাং তাদের সব দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যান্য ইসলামী দল জামায়াত ও হেফাজতকে ইসলামী দল মনে করে না। তারা যদি এরকম মহাসমাবেশ করে দাবি তোলে জামায়াত ও হেফাজত নিষিদ্ধ করতে হবে। হেফাজত নেতাদের ইনকাম ট্যাক্স পরীক্ষা করতে হবে এবং তাদের নেতারা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে যুক্ত কিনা তা তদন্ত করতে হবে,Ñ তা হলে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী হবে? কারণ হেফাজতের দাবি মানলে এদের ভোট পাওয়া যাবে না এবং সেটির পরিমাণ হেফাজত থেকে কম নয়।
সমীকরণ আরো আছে। বিএনপি-জামায়াত-জাতীয়পার্টি নারী, বিশেষ করে গরিব নারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। নারী সংগঠন ও উন্নয়ন কর্মীদের অঞ্চলভিত্তিক ও পরে মহাসমাবেশ করে ঘোষণা করা উচিত যারা হেফাজতকে সমর্থন করেছে তাদের ভোট দেয়া হবে না। কারণ তারা ক্ষমতায় এলে নারী পণ্যদ্রব্যে পরিণত হবে। এবং যারাই হেফাজত ও জামায়াতের দাবি মানবে তাদের ভোট দেয়া হবে না। কমপক্ষে মোট ভোটের ৪০ ভাগ নারীদের। খালেদা এরশাদ যেমন নিজ স্বার্থে নারীদের ত্যাগ করেছেন। সব নারী এককাট্টা হয়ে তাদের ত্যাগ করুন। সরকার হেফাজতকে তোয়াজ করলে তারাও ভোট পাবে না। দেখা যাক সরকার ও রাজনৈতিক দল ৪০ ভাগে আগ্রহী নাকি এক ভাগে আগ্রহী?
সমীকরণ আরো আছে। গতবার আওয়ামী লীগ, অনুমান করা হয় তরুণদের প্রায় দেড় কোটি ভোট পেয়েছিল। গত ৫ বছরে এর সঙ্গে আরও প্রায় কোটিখানেক তরুণ ভোট যোগ হয়েছে। এরা সব অবলোকন করছে। আওয়ামী লীগ যদি তাদের নাখোশ করে তাহলে তিন কোটি ভোট হারাবে। তরুণদেরও এখন বোঝা উচিত রাজনীতির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাদের বুঝতে হবে বিএনপি-জামায়াত, জাতীয় পার্টি ও হেফাজত তাদের বিরুদ্ধে। তাদের এখন মেঠো সেøাগান আর পতাকা মিছিল নয়, পরিষ্কার ভাষায় বলতে হবে, যারা তাদের বিরোধিতা করছে তরুণরা তাদের ভোট দেবে না। এখন সরাসরি পক্ষ নিতে হবে। এ দেশে নির্দলীয় নিরপেক্ষ বলে কিছু নেই। কেউ একথা বলার অর্থ যে, সে দোদুল্যমান। তরুণদের আন্দোলনে দোদুল্যমানতা ক্ষতিকর। তাদের পক্ষের ছাত্রনেতাদের নিয়ে তাদের অগ্রসর হতে হবে। না হলে তারুণ্যের জাগরণ নিছক কথার কথা থেকে যাবে; আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে। তরুণরা যদি এখন বলে, তরুণ চেতনাবিরোধী জামায়াত-বিএনপি-হেফাজত; জাতীয় পার্টিকে ভোট দেব না তখন দেখব এরা আর কটূক্তি করে কিনা। বা সরকার যদি জামায়াত বা হেফাজতকে ছাড় দেয় তাহলে ১৪ দলকে ভোট দেব না, তখন দেখা যাবে আওয়ামী লীগের অর্থশালী সমঝোতা গ্রুপের অবস্থান কী হয়।
সুতরাং ভোটের সমীকরণটা এত সোজা নয়। আমি বা আমাদের অনেকে ১৪ দলের সমর্থক। রাজনীতির স্বার্থে এক পা পিছিয়ে, দু’পা এগুলে কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু মৌলিক প্রশ্নে ছাড় দিলে আমরা তা মানব না। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ও তা মানবে না। সুতরাং আওয়ামী নেতৃত্বের সে বিষয়টিও মনে রাখা উচিত। তারা আজকাল প্রায়ই একটি কথা বলেন, আচ্ছা, এরা ভোট না দিয়ে যাবে কোথায়? তারাতো বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেবে না। না, তা দেবে না; তবে, না ভোট দেয়ার এবং ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার বিকল্প কিন্তু আছে।
শেষ পর্ব
২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:২৪
একাকী বাংলাদেশি বলেছেন: প্রতিবেদনটি পড়া শুরু করলাম কিন্তু পর্ব ১ ই দেখলাম মিথ্যা তথ্যর ছড়াছড়ি। এর পরে আর পড়তে পারলাম না।
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৪৫
তালপাতারসেপাই বলেছেন: খোকা মন দিয়ে পড়।
৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:২৬
নষ্ট ছেলে বলেছেন:
"হেফাজতের লংমার্চে ৫০ থেকে ৭০ হাজার হেফাজতী এসেছে।"
মুনতাসির মামুনরে একটু কম গাঞ্জা টানতে কন।
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৪৬
তালপাতারসেপাই বলেছেন: যোগাযোগ নাই। আপনে কম সাপ্লাই দেন ...
৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩
পূরান পাগল বলেছেন: পোস্টের শুরুতেই মিথ্যাচারের ছড়াছড়ি দেখে আর পড়ার আগ্রহ পেলাম না।আপনার সাথে কারো মতাদর্শের অমিল থাকতেই পারে তাই বলে এভাবে মিথ্যাচার করবেন ??!!!!!!!!!!
৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৪
মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেছেন: এতক্ষনে বুঝেলেন!শাহবাগীরা য়েমন আ:লীগের দালালী করছে তেমনী এরাও আরকি........
৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৭
মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেছেন: শাহবাগীদের জন্ম হয়েছে মিখ্যার মধ্যদিয়ে।
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৪৯
তালপাতারসেপাই বলেছেন: শাহবাগী বলে কোন প্রজাতি নেই। রাজাকারের বচ্চা নামের প্রজাতি আছে... যারা পুটুতে বাশ আর কেলা দিয়ে বসে বসে আল্লার নামে মিছা কয়!
৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৫
রনাঙ্গন71 বলেছেন: এত মিখ্যা লেখা ঠিক না।
৮| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৮
ডিজিটাল ২০২১ বলেছেন: আপনি কি শাহবাগ থেকে বলেছেন?
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৪১
তালপাতারসেপাই বলেছেন: yes BSMU
৯| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:০১
জামিনদার বলেছেন: জামায়াত যেভাবে আচরণ করে হেফাজতও সেভাবে আচরণ করেছে। প্রথম দিন তারা লাঠিসোটা নিয়ে নির্দিষ্টভাবে নির্মূল কমিটির ও গণজাগরণ মঞ্চ আক্রমণ করেছে। পরের দিন ককটেল ফুটিয়েছে, গাড়ি ভেঙ্গেছে, রেললাইন অবরোধ করেছে, রেলগাড়ি আক্রমণ করেছে, সংবাদপত্র পুড়িয়েছে। দু’দিনই তারা সাংবাদিক ও তাদের গাড়ি আক্রমণ করেছে। শিবির রগ কাটে। হেফাজত পা কেটে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, জানা গেছে, মফস্বলে এক এলাকায় রিকশা থামিয়ে স্বামী-স্ত্রীর ধর্ম পরিচয় জানতে চেয়েছে।
হাসতে হাসতে শেষরে আমি আমারে ধর.......
১০| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:০৭
জানপরী বলেছেন: বাংলাদেশের একজন মানুষও লেখকের এই লেখা বিশ্বাস করবেনা এমনকি লেখক নিজেও তার লেখা বিশ্বাস করে না শুধু দালালি করার জন্য লিখেছে।
পাগলরা আগে রাস্তায় ঘুরত এখন দেখি ব্লগেও ঘুরে
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৪২
তালপাতারসেপাই বলেছেন: কেমনে জানলেন?
১১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:০৮
কোবা সামসু বলেছেন:
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৪৩
তালপাতারসেপাই বলেছেন: পরিচিত হয়ে ভাল লাগল।
১২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১:০৯
ডিজিটাল ২০২১ বলেছেন: জানপরী বলেছেন:পাগলরা আগে রাস্তায় ঘুরত এখন দেখি ব্লগেও ঘুরে
১৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৪৪
তালপাতারসেপাই বলেছেন: বলেন কি? হুমমম কমেন্ট গুলা তাই প্রমান করে
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:২১
মদন বলেছেন: হেফাজতের সমাবেশে দেড় লক্ষ লোক হইছিলো?????????????