নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

অস্ত্রসহ আটক বিএনপি নেতার তথ্য : পাঁচ মাসে ৪ চালানে ৪৮টি অস্ত্র আনা হয়েছে

২১ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৩১

অবৈধ অস্ত্রের অধিকাংশ ক্রেতাই রাজনৈতিক কর্মী। এমন ১২ রাজনীতিবিদকে শনাক্ত করা হয়েছে। যারা সম্প্রতি অবৈধ অস্ত্র কিনেছেন। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে চড়া দামে অস্ত্র বেচাকেনা হচ্ছে। শনাক্ত হওয়া ১২ রাজনৈতিক কর্মী চড়া দামেই অস্ত্র কিনেছেন। অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যেই দুই রাজনৈতিককর্মীর ঢাকার বাসায় কয়েক দফায় হানাও দিয়েছে গোয়েন্দারা। তারা পলাতক। গত প্রায় ৫ মাসে রাজধানীতে আসা ৪টি চালানে অন্তত ৪৮টি অস্ত্র আনা হয়েছে। এসব অস্ত্র সফলভাবে হাত বদলও হয়েছে। অস্ত্র হাত বদল হয় টাচ্ এ্যান্ড পাস সিস্টেমে। এসব অস্ত্র উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। চাকরির খোঁজে ঢাকায় এসে বড় মাপের অস্ত্র ব্যবসায়ী হয়ে উঠা বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম অপু ও তার ৬ সহযোগী গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় দুই নারীসহ ৭ অস্ত্র ব্যবসায়ীকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ২৮ রাউন্ড বুলেট ও ২শ’ পিস ইয়াবা। এদের মধ্যে দলনেতা ফখরুল ইসলাম অপুকে ৭ দিনের, মোবারক হোসেন ওরফে মাসুদ, শহিদুল ইসলাম খোকন, সুমন হোসেন ও কামরুজ্জামান ইমরানকে প্রত্যেককে ৩ দিনের এবং হালিমা আক্তার লিজা ও সুচন্দ্রা মান্না ওরফে রাবেয়াকে প্রত্যেককে ২ দিনের করে রিমান্ডে নিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতদের দলনেতা ফখরুল ইসলাম অপু। গ্রেফতারকৃতদের ভাষ্যমতে, অপু কুমিল্লার স্থানীয় বিএনপি নেতা। তার পিতা আতিকুল ইসলাম কুমিল্লা জেলা বিএনপির স্থানীয় নেতা। তিনি কুমিল্লা জেলা বারের নেতা ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর। রানারা দুই ভাই এক বোন। রানা এমবিএ পাস। ২০১০ সালের প্রথম দিকেই চাকরির সন্ধানে ঢাকায় আসেন। ওই বছরই চাকরি হয় গ্রামীণ ফোন কোম্পানিতে। বসবাস করতেন মিরপুর মনিপুরী স্কুল এ্যান্ড কলেজ এলাকায়। চাকরিতে তেমন সুবিধা করতে পারছিলেন না। তাই স্কুলের পাশেই বই, খাতা, কলমসহ শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান দেন। সেই দোকানে যাতায়াত আর আড্ডা দেয়ার সূত্র ধরেই পরিচয় হয় গ্রেফতার হওয়া অস্ত্র ব্যবসায়ী সুমন হোসেনের সঙ্গে। সুমনের হাত ধরে ২০১১ সালে ইয়াবা ব্যবসায় নেমে পড়েন। এরপর তার হাত ধরেই অস্ত্র ব্যবসায় নেমে পড়েন অপু। এক সময় অপুর বস হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। তার রাজনৈতিক পরিচয়কে সে অস্ত্র ব্যবসার সুবিধার জন্য কাজে লাগায়।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্র্ক জালের মতো বিস্তৃত। অপুর ঢাকার প্রায় সব অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তাদের দলের সেই পুরো অস্ত্র চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করে। তার বহু লোকজন আছে। তাদের প্রথম ও প্রধান কাজ অবৈধ অস্ত্র কিনতে আগ্রহীদের শনাক্ত করা। এরপর ক্রেতাদের সঙ্গে অপু সরাসরি কথা বলে। সেখানে অস্ত্রের ধরন, কোয়ালিটি, বুলেটের পরিমাণ, কোন দেশের অস্ত্র এবং দাম-দর পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়। এরপর সে অস্ত্র কিনতে সীমান্তে তার লোক পাঠায়।

গ্রেফতারকৃত কামরুজ্জামান ইমরানের প্রধান কাজ সীমান্তে অবস্থান করা। সীমান্তের ওপার থেকে সুযোগ মতো ১টি, ২টি বা সুযোগমতো বেশি বেশি করে অস্ত্রগোলাবারুদ এনে সীমান্তের নির্ধারিত জায়গায় জমা করা হয়। চাহিদার সমপরিমাণ অস্ত্র সংগ্রহ শেষ হলে তা ঢাকায় পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সীমান্তে অবস্থানকালেই গ্রেফতারকৃত দক্ষিণ কলকাতার কালীরহাটের বাসিন্দা সুচন্দ্রা মান্নার সঙ্গে ইমরানের প্রেম হয়। পরে তিনি ইমরানকে বিয়ে করেন।

ঢাকায় পাঠানো এবং ঢাকার মধ্যে অস্ত্র ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দেয়ার কাজটি মনিটরিং করে থাকে গ্রেফতারকৃত মোবারক হোসেন ওরফে মাসুদ। মাসুদ ইমরানের কাছ থেকে অস্ত্র গ্রহণ করে। এরপর যেসব ট্রাক মালামাল নিয়ে ঢাকায় যাবে সেসব ট্রাকের চালকের সঙ্গে চুক্তি করে। ট্রাক চালকরা যে সব মাল আনে তার মধ্যে অস্ত্র আনে। এজন্য মোটা টাকা দেয়া হয় ট্রাক চালককে। প্রতিটি অস্ত্র সীমান্ত থেকে ঢাকা পর্যন্ত আনতে ট্রাক চালকরা ন্যূনতম ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। অস্ত্র বহনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় সবজির ট্রাককে। বিশেষ করে মিষ্টি কুমড়া বা লাউয়ের মধ্যে অস্ত্র আনার প্রবণতা বেশি। মিষ্টি কুমড়া ও লাউ সুন্দর করে নিখুঁতভাবে কেটে এর ভেতরে পলিথিনে মুড়িয়ে অস্ত্রগোলাবারুদ ভরে দেয়া হয়। যেসব লাউ বা কুমড়ার ভেতরে অস্ত্র রাখা হয় সেটিকে একটি বিশেষ চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা হয়। যাতে চালক ব্যতীত কারও ধরার সাধ্য থাকে না। অস্ত্রসহ সবজিগুলোকে ট্রাকের নিচের দিকে বা কোণার দিকে রাখা হয়। যাতে ট্রাকের পুরো মাল না সরিয়ে এগুলো বের করা সম্ভব না হয়।

ট্রাকটি ঢাকায় কাছে পৌঁছলে গ্রেফতারৃকত মোবারক হোসেন ওরফে মাসুদের কাজ শেষ হয়। এরপর শুরু হয় শহিদুল ইসলাম খোকন ও সুমন হোসেনের কাজ। তাদের নেতৃত্বে অস্ত্রসহ আসা ট্রাকটিকে মোটরসাইকেল এস্কট দিয়ে বিশেষ গোডাউন বা বিশেষ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই অস্ত্র অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। অনেক সময় কৌশলে রাস্তায়ও অস্ত্রসহ সবজি তাদের পূর্ব নির্ধারিত লোকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তারা নিজেরা অস্ত্র বহন করে না। অস্ত্র বহন করার জন্য আগ থেকেই নির্ধারিত জায়গায় লোক রাখা হয়। এসব লোক তৎক্ষণাৎ অস্ত্রগুলো ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিয়ে থাকে। এমন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে ফখরুল ইসলাম অপু। অস্ত্র কোনক্রমেই অপু বা তার সহযোগীরা নিজেদের কাছে রাখেন না। অস্ত্র টাচ্ হওয়া মাত্রই তা দেয়া হয় ক্রেতার হাতে। কারণ অস্ত্র কাছে থাকলে রিস্ক থাকে। তাই তারা অস্ত্র পারতপক্ষে নিজেদের কাছে রাখেন না। তারপরও অনেক সময় নানা ঝামেলার কারণে স্বল্প সময়ের জন্য অস্ত্র রাখতে হয়। নিজেদের কাছে থাকা অস্ত্র গোলাবারুদ অন্যত্র সরাতে গ্রেফতারকৃত দলনেতা অপুর স্ত্রী লিজা ও ইমরানের স্ত্রী সুচন্দ্রাকে ব্যবহার করা হতো। মহিলারা অস্ত্র গোলাবারুদ বহনের কাজে বেশি কার্যকর। কারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধারণত তাদের সন্দেহ করে না।

প্রতিমাসে বা দুই মাসে সাধারণত ১টি করে অস্ত্রের চালান আনত অপুর দল। প্রতিটি চালানে সাধারণত ১০ থেকে ১২টি অস্ত্র আনা হতো। তবে চাহিদা বা অর্ডার বেশি থাকলে অনেক সময় বেশি অস্ত্রও আনা হতো। আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে দেশের অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। তাই চাহিদা বেশি থাকায় একটি সবজির ট্রাকে ২২টি মারাত্মক বিদেশী ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ বুলেট আনা হয়েছে। এরমধ্যে ৬টি অস্ত্র ও ২৮টি বুলেট ধরা পড়েছে। বাকি ১৬টি অস্ত্র ও বুলেট বিক্রি হয়ে গেছে। ২২টি অস্ত্র গোলাবারুদ বাবদ আগে টাকা গ্রহণ করেছে অপু। এবারের চালানটি আনা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্ত্রের বাজার চড়া। প্রতিটি অস্ত্র আগের তুলনায় অস্ত্রের ধরন ও মান অনুযায়ী ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে আরও চড়া দামেও বিক্রি হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র। বিক্রি হয়ে যাওয়া অস্ত্রের মধ্যে অন্তত ১২টিরই ক্রেতা রাজনীতিবিদ। বাকি ৪টির মধ্যে ২টি কিনেছে পেশাদার অপরাধী চক্র। আর বাকি ২টি কিনেছেন শৌখিন ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। এদের রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও ব্যবসায়ী পরিচয় রয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ছানোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে জানান, ১৬টি অবৈধ অস্ত্রের ক্রেতা শনাক্ত হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যেই ২ জনের বাসায় কয়েক দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তারা পলাতক। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। এ দু’জনের রাজনৈতিক পরিচয় আছে বলে জানা গেছে। তবে তারা কোন্ দলের বা কোন্ আদর্শের তা তদন্তের স্বার্থে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্রের চাহিদা ও দাম বেড়েছে বলেও তিনি জানান। নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন চাহিদা বাড়ছে বলে তথ্য রয়েছে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অপরাধ তথ্য বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।

Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.