নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
বাজেটের উত্তাপ মনে হয় গেছে। এখন আলোচিত হচ্ছে চারটি সিটি নির্বাচনের ফলাফল। এই ফলাফলের ব্যাখা যে যেভাবেই দিন না কেন, আমার কাছে একটা জিনিস মনে হচ্ছে ‘উন্নয়ন’ ‘উন্নয়ন’ বলে যে আমরা চিৎকার করি সাধারণ ভোটারের কাছে এর মূল্য কম। কিছুদিন আগে বরিশাল শহরে গিয়েছিলাম। শহরটি আমার কাছে খুবই সুন্দর মনে হয়েছে। রাজশাহীতেও উন্নয়নমূলক কাজ অনেক হয়েছে। খুলনা ও সিলেটের কথা জানি না। উন্নয়নের মূল্য দিলে মানুষের ভোটের হিসাব ভিন্ন হতে পারত। কিন্তু স্পষ্টতই তা হয়নি। এমনকি মনে হচ্ছে দুর্নীতিও কোন ইস্যু নয়। তাহলেও ভিন্ন হিসাব হতে পারত। ১৯৯৬-২০০১ পর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের পারফর্মেন্স খুবই ভাল ছিল। উন্নয়ন ছিল, মূল্যস্ফীতিও ছিল সর্বনিম্ন। কিন্তু তবু নির্বাচনী ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষে যায়নি।
এসব দেখে কী মনে করতে হবে যে শুধুই উন্নয়নের কথা বলে বাংলাদেশে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে? অথচ আমাদের কিন্তু উন্নয়নের হিসাব আগে করার কথা। উন্নয়নের সঙ্গে অন্যান্য ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তাও হিসাবে নেয়া উচিত। যেমন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা করা যায়। গত সপ্তাহে খুবই প্রশংসাযোগ্য একটা খবর আমরা পেয়েছি। চরম দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশ আরও বিশটি দেশের সঙ্গে পুরস্কৃত হয়েছে। পুরস্কৃত করেছে জাতিসংঘের এফএও (ফাও)। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধীনে কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী (গউএ) টার্গেট দেয়া ছিল। বাংলাদেশও এর মধ্যে পড়ে। ২০১৫ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য আমাদের অর্ধেক করার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের বহু আগে ২০১২ সালেই বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে ফেলে। ১৯৯০-৯২ সালে চরম দারিদ্র্যপীড়িত লোকের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১২ সালে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। মোট সংখ্যার হিসাবে ১৯৯০-৯২ সালে চরম দরিদ্র ছিল ৩ কোটি ৭২ লাখ লোক। এই সংখ্যা ২০১২ সালে দাঁড়িয়েছে মাত্র দুই কোটি ৫৩ লাখে। কত বড় পারফর্মেন্স, ভাবা যায়! মানুষকে দুইবেলা ভাত দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এটা সম্ভব হয়েছে বিগত চার বছরে ৫০ লাখ টন অধিক খাদ্যশস্য উৎপাদন করায়। চার বছরে ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ানো একটা বিশাল কাজ। এই পারফর্মেন্সের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে ধন্যবাদ দিতে হয়। এটা তাদের প্রাপ্য। মহাজোট সরকারের উদার ভর্তুকি নীতি এবং অনুকূল কৃষিনীতির ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে আমাদের চরম দারিদ্র্য কিছুটা দূরীভূত হয়েছে। সার্বিকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে ১০ শতাংশ। মানুষ দুইবেলা ভাত পাচ্ছে। কেয়ারটেকার সরকারের আমলে মনে হয়েছিল ভাতের অভাবে মরতে হবে। দেশে চাল ছিল না। টাকা দিয়েও চাল পাওয়া যেত না। এই প্রেক্ষাপটে ৪ বছরে ৫০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে মানুষকে খাওয়ানো সত্যি একটা বড় অগ্রগতি। গুদামে এখন প্রায় ১৮-২০ লাখ টন চাল । খোলা বাজারে ‘ওএমএসের’ চাল এখন বিক্রি হয় না। অন্য জিনিসের দাম যাই হোক, চালের দাম এখন স্থিতিশীল। শহরের মানুষ কী, চার নগরীর মানুষ কী এই বিষয়টি বোঝেননি, না বোঝে ভোটে গিয়েছে? আমি এই বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাচ্ছি না। শহরের লোক যাই করুক আগামী নির্বাচনে গ্রামের মানুষ কী এই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দেবে? সারের দাম হ্রাস, কীটনাশকের দাম হ্রাস, সেচের জলের দাম হ্রাস ইত্যাদি ঘটনার মূল্যায়ন কী আগামী সংসদ নির্বাচনে হবে না? প্রশ্নটি করে রাখলাম। আরও প্রশ্ন আছে। নিচে এর উল্লেখ করছি।
পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে শত বাধাবিপত্তি, আন্তর্জাতিক অব্যাহত মন্দা, দেশীয় টালমাটাল অবস্থা, হরতাল হরতাল, অবরোধ সত্ত্বে মহাজোট সরকার অব্যাহতভাবে ৬ শতাংশের ওপর ‘জিডিপি’ প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গিয়েছিল; তা এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ, সর্বোচ্চ রেমিটেন্সের পরিমাণ। ডলারের বিপরীতে টাকার দাম বেড়েছে। সর্বোপরি দেখা যাচ্ছে, সরকার বিগত পাঁচ বছরে তার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার তিনগুণেরও বেশি করেছে। শুধু আকার বৃদ্ধি নয়; ‘এডিপি’ বাস্তবায়নের হার আগের তুলনায় বেশি। নিন্দুকেরা বলেছিল মুহিত সাহেব স্বাপ্নিক লোক। তিনি স্বপ্ন দেখেন। বড় বড় বাজেট দেন। প্রত্যেকবারই একই কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তথ্যে দেখা যাচ্ছে, তিনি তার প্রত্যেকটি বাজেট ৯০-৯৭ ভাগ বাস্তবায়ন করেছেন। বাজেট ঘাটতিকে ৫ শতাংশের নিচেই রেখেছেন যা প্রতিবেশী ভারতে ৭-৮ শতাংশেরও বেশি। ব্যাংক ঋণ, যা নিয়ে এত কথা তাও তিনি মোটামুটি লক্ষ্যমাত্রানুযায়ী করেছেন। ঢাকার রাস্তাঘাট, ওভারব্রিজ, ফ্লাইওভার, হাতিরঝিল, চট্টগ্রাম-ঢাকা ৪ লেন রাস্তা প্রত্যেকটিই একেকটি মাইল ফলক। এমনকি পদ্মা সেতুর কাজও এগিয়ে চলছে। এখন তা হবে নিজের টাকায়; এখানেও দেখা যাচ্ছে বিশ্বব্যাংকের বশংবদরা বিরোধিতা করছে। তারা বলছে নিজের টাকায় পদ্মাসেতু করলে খরচ বেশি পড়বে, বিশ্বব্যাংকের সুদ কম। নিজের টাকায় ব্রিজ করলে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, কৃষি খাত, বিদ্যুত, শিক্ষা খাতে টাকা পাবে না। দুর্জনের ছলের কমতি নেই। অথচ বিশ্বব্যাংক স্বয়ংই বলছে বাংলাদেশের পদ্মাব্রিজ করার মতো ক্ষমতা রয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলো বলছে বাংলাদেশ এখন ফিলিপিন্স, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার সমকক্ষ ঋণপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে । অথচ মায়ের চেয়ে মাসির দয়া বেশি দেখা যাচ্ছে দেশীয় ‘কনসালটেন্টদের’। এই যে এত পারফর্মেন্স, অগ্রগতি তার কী কোন মূল্যায়ন আগামী নির্বাচনে হবে না? বিদ্যুতের বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক। মহাজোট সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন শহরে লিফট চলে না, বাতি জ্বলে না, পানীয় জলের পাম্প দিয়ে জল তোলা যায় না। ভদ্রলোকদের ‘এসি’তো দূরের কথা। গ্রামে বিদ্যুত নেই। সেচের কলে বিদ্যুত নেই। চারদিকে অন্ধকার। এখনও কিছু কিছু লোডশেডিং হয়। কিন্তু একথা সত্য, এখন বিদ্যুত পাওয়া যায়। কৃষক চাষের জন্য, সেচের জন্য বিদ্যুত পায়। এসব কী সত্যি নয়? নিশ্চয় সত্য। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আগামী নির্বাচনে কী ভোটাররা এর কোন প্রতিদান দেবে? সঞ্চয়কারীদের প্রতি মহাজোট সরকার ৪ বছর অত্যাচার করেছে আমলাদের কুপরামর্শে। এবার শেষ বছরে তা সংশোধন করা হয়েছে। বিনিয়োগসীমা ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। বিনিয়োগের অঙ্ক হবে সর্বোচ্চ দেড় কোটি যা আগে ছিল এক কোটি। বিনিয়োগ রেয়াত ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। আগে মাসিক ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িভাড়া করমুক্ত ছিল। এখন তা ২০,০০০ টাকা। ভাল ভাল পদক্ষেপ। মধ্যবিত্ত ‘কালো টাকা, অপ্রদর্শিত টাকা’র কূটচালে ফ্লাট কিনতে পারছিল না। এবার একটা করের বিনিময়ে তারা ছোট একটা ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন। তাতে আবাসন শিল্পসংশ্লিষ্ট ২০-৩০ টি শিল্পঋণ পাবে। সর্বোপরি লাখ লাখ শ্রমিকের চাকরির সংস্থান হবে। এতসবের প্রতিদান কী আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে পাবে? আমি নিশ্চিত নই। আওয়ামী লীগের অর্থনৈতিক পারফর্মেন্স রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার কাছে হেরে যাচ্ছে। দলটির প্রচার কাজও দুর্বল। নির্বাচনের পর পর যারা কলাম লেখেন তাদের একবার ডাকা হয়েছিল। এরপর কী তা হয়েছে? হলেও এর খবর জানি না। কারা এসব করেন? পেশাজীবীদের কাজ আমলারা করলে এমনই হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কত স্টাফ জনসংযোগের জন্য! তারা মিডিয়ার সঙ্গে কী যোগাযোগ রাখেন? নাকি তারা শুধু নির্বাচিত লোকদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করেন? সামনে নির্বাচন। আত্মম্ভরিতা বাদ দিয়ে মাঠে নামুন। ইতিবাচক দিকগুলো মানুষকে বোঝানোর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুন। এবার মাঠে অনেক বেশি শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ। এটা বুঝে কাজ করা দরকার। নতুবা ঢাকা-আগরতলা সরাসরি বাসের সুযোগ নিতে হবে। আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিতে পারে, ‘জামায়াতের’ ‘ভাইয়েরা‘ ছাড়বে না।
ড. লেখক : আর. এম. দেবনাথ সাবেক প্রফেসর বিআইবিএম
২| ২২ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১১
আহমেদ জী এস বলেছেন: তালপাতারসেপাই,
ধন্যবাদ প্রফেসর আর. এম. দেবনাথ কে এবং একই সাথে আপনাকে । সুন্দর বিশ্লেষন । কিন্তু আমরা ভোটাররা এটা থোড়াই কেয়ার করি । দেশ গোল্লায় গেলো, না উন্নয়নের জোয়ারে ভাসলো এতে আমজনতার কিছু যায় আসেনা । কোন্ওদিনও যায় আসেনি । অথচ বুদ্ধিজীবিরা বলেন, মানুষ অনেক সচেতন । একথার সত্যাসত্য কোন্ও প্রমান পেয়েছেন ? পেয়েছেন - টিভি চ্যানেলগুলো যখোন জনতার মতামত জাতীয় প্রোগ্রাম তুলে ধরেন, তখোন । কিন্তু ভোটের বাক্সে এই কথাগুলো ঢোকেনা মোটেও । ঢুকেছে কি ? তাই "মানুষ সচেতন" এই কথাটি একটি অন্তসার শূণ্য কথা । যার কোন্ও মেরিট নেই ।
ভোট হলো একটা উৎসব বা মেলা । পাঁচ পাঁচটি বছর পরে যখোন এই মেলার দিনটি হাজির হয় তখোন উৎসবের বাজনা ( হা্ওয়ায় যা ভাসে ) যেদিকে বেশী বাজে আমজনতা সেদিক পানেই ধায় । আমজনতা ভোটবাক্সের ফাঁক গলে একখানা সীলমারা কাগজ ঢুকিয়ে যে তৃপ্তি পায় তার কাছে দেশ, দারিদ্রতা, উন্নয়ন, দূর্নীতি কোন কিছুই ধোঁপে টেকেনা ।
এটাই হলো আদত কালচার । অস্বীকার যদি কেউ করেন তবে নিজেকেই চোখ ঠাউরাবেন তারা । রাজনৈতিক দলগুলো বলে থাকে, জনগণ রায় দিয়েছে । জনগণের কোন্ও ঠেকা পড়েনি কাউকে রায় দেয়ার । আমজনতা একটা উৎসবের প্রসাদ খেতে গিয়েছিলো , খেয়েছে । তাতে তার পেট খারাপ হবে কিনা এসব নিয়ে ভাবতে গেলে মেলার পান-বিড়ি- সিগ্রেট খাবে কে ?
তো, এখোন এই কালচার থেকে মানুষ কে আসলেই কিভাবে সচেতন করা যায় সেটাই ভাবনার বিষয় । লিখে কোন্ও কাজ হয়না । মাঠে নেমে কাজে লেগে পড়তে হয় । কোথায় পাবেন তেমন লোক ? থিওরী আর প্রাকটিক্যালে আকাশ জমিন ফারাক ।
এটুকুতেই যা বোঝার বুঝে নেবেন ।
শুভেচ্ছান্তে ....
৩| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:১৯
কলাবাগান১ বলেছেন: "জনগণের কোন্ও ঠেকা পড়েনি কাউকে রায় দেয়ার । আমজনতা একটা উৎসবের প্রসাদ খেতে গিয়েছিলো , খেয়েছে । তাতে তার পেট খারাপ হবে কিনা এসব নিয়ে ভাবতে গেলে মেলার পান-বিড়ি- সিগ্রেট খাবে কে ? "
৪| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:২০
আরিফ আহমেদ বলেছেন: এখনো অনেক দেরী, আমরা সভ্য কবে হব।নিজের ভাল পাগলেও বোঝে কিন্তু বাঙ্গালী বোঝে না
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:২৪
কলাবাগান১ বলেছেন: রাজশাহীর নতুন মেয়র হেসে হেসে সাবেক মেয়র লিটনকে বলেন " উন্নয়ন করে তো ভোট পাওয়া গেল না। "
লিটন সাহেব কি রাজশাহীর উন্নয়ন করে ভুল করলেন??
তাহলে কি করলে ভোট পাওয়া যাবে????