নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
সাম্প্রতিক জিএসপি সুবিধার স্থগিতাদেশ নিয়ে চলছে পরস্পর দোষাদোষীর কলহ। দেশে কোনো ঘটনা ঘটলেই প্রধান দুই রাজনৈতিক দল একে অপরের গায়ে দোষ চাপান। অপলাপ আর প্রলাপ বকে প্রয়োজনের যথেচ্ছা মিথ্যাচার করে একদল অন্য দলকে দোষ দিয়ে রাজনীতি করে। আর এর খেসারত দেয় দেশের আপামর জনগণ। আশ্চর্যজনক বা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, আমাদের জাতীয় স্বার্থেও দুই দল একমত হতে পারে না। বরং রাজনৈতিক কৌশলগত জয়ের জন্য অনেক ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি গেলেও তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই! অথচ তারা কথায় কথায় বলেন দেশের জন্য আর দেশের মানুষের জন্য নাকি রাজনীতি করেন। যদি তাই হবে তবে জিএসপি সুবিধা বাতিল, টিপাইমুখ বাঁধ, ভারতকে করিডোর প্রদান বা অন্যান্য চুক্তি সুবিধা নিয়ে তারা কেন আলোচনা করে সমাধান করেন না।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী চাইলে নির্দলীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থেমে যাবে। আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী চাইলে যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুত কার্যকর হবে। আপনারা চাইলেই পারেন। এখনো দুটি দলের ক্ষমতা, জনসমর্থন অন্যসব দলগুলোর সঙ্গে তুলনার পর্যায়ে নেই। মহাজোট যদি জাতীয় পার্টি এরশাদকে ছাড়েন আর ১৮ দলীয় জোট যদি জামায়াতকে ছাড়েন তবেই শুরু হবে কঠিন পরীক্ষা। জনগণ বেছে নেবে নির্ভেজাল রাজনৈতিক নেতৃত্বকে। কিন্তু তারা কি সেটা করবেন? দুই দলের কলহ বন্ধ হলে বিদেশি শক্তি আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও বিষয়াদি নিয়ে নাক গলাতে পারত না। দেশের ভেতরের অপশক্তিগুলোও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারত না। শুধু রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে আর ক্ষমতার মোহে তারা জিইয়ে রাখছেন দ্বন্দ্ব-সংঘাতে সব ইস্যু।
দুই নেত্রীর কাছে অনুরোধÑ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী জাতিকে এ বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে বাঁচাতে আপনারা নমনীয় হোন। জাতির স্বার্থে আপনারা সংলাপে বসুন। আপনারাই দেশ চালিয়ে এসেছেন, আপনারাই চালাবেন। আপনাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হোক কে কত ভালোভাবে দেশ চালাতে পারেন। অর্থনৈতিক অগ্রগতি, শান্তি ও জনগণের নিরাপত্তা কে কত বেশি ভালো দিতে পারেন সেই প্রতিযোগিতা শুরু হোক। শতমত বিরোধিতা থাকলেও জাতীয় ক্ষতি, জাতীয় সঙ্কট, জাতীয় দুর্যোগে আপনারা একমত হোন। আর কোনো বিরোধিতা নয় এ দেশের সাধারণ ভোটাররা শান্তিতে থাকতে চায়, কাজ করে খেতে চায়। আপনাদের দম্ভ আর দ্বন্দ্বের কারণে অপশক্তি হানা দেয় বারবার। ধর্মান্ধতা উগ্র আগ্রাসনে মেতে ওঠে। অগণতান্ত্রিক অপশক্তি দুঃশাসনের সুযোগ নেয়। অথচ আপনারা দুজন চাইলেই পাল্টে যাবে এ দেশের ভাবমূর্তি।
প্রধান দুই দলের দুই নেত্রীর কাছে প্রশ্নÑ স্বাধীনতা অর্জনের ৪২ বছরে বাংলাদেশ কি ৫ মের মতো বিধ্বস্ত নগরীর বীভৎসতা দেখেছে? গত এক বছরের আন্দোলনে ধর্মের নামে রাজনৈতিক সহিংসতার বিবেক বিদ্বেষী যে রূপ জাতি দেখেছে এটা কি কোনো সভ্য দেশের গণতান্ত্রিক অধিকারের চরিত্র? ধর্ম রক্ষার নামে কেন এ আন্দোলন? দেশে এমন কী ঘটেছে যে ধর্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে? ধর্মকে বাঁচাতে হবে! ধর্মকে বাঁচানোর জন্য পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ্ই যথেষ্ট।
বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান, নিরীহ ও শান্তিপ্রিয়। পবিত্র কোরআন সুন্নাহ্র আলোকে যার যার মতো করে ধর্ম পালন করছে। এ দেশে ১০ থেকে ১৫ ভাগ মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম পালন করে আসছে। ৪২ বছরে আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা একে অপরের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শান্তিময় জীবনযাপন করছি। এ নিয়ে আপত্তি নেই, কোনো ক্রোধ বা বিদ্বেষ নেই। একটি অহিংস জাতি হিসেবে বাঙালির অবস্থান। হঠাৎ করেই কেন জানি সবকিছুতে গোলমাল!
৪২ বছরের কলঙ্ক থেকে জাতি দায়মুক্ত হতে চায়। এ বিচার হলে কার কী ক্ষতি? দেশের ভাবমূর্তি আরো ভালো হবে। গুটি কয়েক মানুষের জন্য কেন আমরা দেশটাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেব? এখন কি এসবের সময়? বিশ্ব ছুটছে উন্নয়ন প্রতিযোগিতার দৌড়ে। কোথায় দেশকে এগিয়ে নিতে সবাই মিলে এক হয়ে কাজ করবÑ তা না হয়ে ভাই ভাইয়ের বিরুদ্ধে লড়ছি অযথাই! আমরা যারা মুসলমান তারা নামাজ পড়ব, আল্লাহতায়ালার নির্দেশ পরিপালন করে চলার চেষ্টা করব। অন্যরা তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করবে। কোনো সমস্যা তো নেই। এই মারামারি, হানাহানি, কাটাকাটি, খুনোখুনি, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের কাজকে কোনো ধর্মেই প্রশ্রয় দেয়া হয়নি।
সবচেয়ে বড় কথা আমরা সবাই এক দেশের নাগরিক। এ দেশের আলো-বাতাসে বড় হচ্ছি আমরা। সশস্ত্র যুদ্ধে লাখো প্রাণের বিনিময়ে এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি আমরা। মায়ের মুখের ভাষা ছিনিয়ে এনেছি জীবন দিয়ে। আমরা সেই গর্বিত জাতি। এসব আমাদের মানায় না। শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছি আমরা। দারিদ্র্য মুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে আমাদের দেশ। পোশাকশিল্পের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে। প্রবাসী আয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। বিশ্বমন্দা ও জলবায়ুর পরিবর্তন সত্ত্বেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশ নজির সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববাসী এখন ঈর্ষা করে আমাদের। এখন আমাদের এসব করার সময় নয়। আমরা কি ভুল পথে হাঁটছি না?
আন্দোলন, দাবি আদায় সবার নাগরিক গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু এ জন্য মানুষ মারতে হবে কেন? গাছ কেটে সাবাড় করলে কার লাভ, কার ক্ষতি? গাড়ি পোড়ালে লাভ কী? রেল পোড়ালে ক্ষতি কার? এসব তো সরকারের ক্ষতি নয়! এসব দেশের ক্ষতি, দেশের জনগণের ক্ষতি? এই আমরা যারা জনগণÑ তাদের রক্ত-ঘামের পরিশ্রমের ফসল বাংলাদেশের সম্পদ পোড়ানোর কোনো অধিকার কারো নেই। এক সরকার আসে, আরেক সরকার যায়। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। সম্পদের ক্ষতি করলে এর দায়ভার তো আমাদেরই। এগুলো আবারো অনেক কষ্টে গড়ে তুলতে হবে কিন্তু আমাদেরই। তাহলে জেনে-বুঝে কী সর্বনাশ করছি আমরা?
আমার প্রশ্ন হলো, আমরা কেন এমন করব? ভাই ভাইকে মারছি। একে অপরের সম্পদ নষ্ট করছি। এ বিদ্বেষের আগুন ছড়াল কে? আগুনটি যে বা যারাই ছড়াক না কেন, আমাদের কি বিবেক-বুদ্ধি নেই? আমরা কি ভালো মন্দ বুঝি না? এখন তাহলে কী হবে? যারা হেফাজত করে তাদের কি আমরা এ দেশের ভাই-বান্ধব ভাবব না? অথবা যারা শাহবাগে আন্দোলন করছে তাদের কি আমরা ভাই-বন্ধু ভাবব না? আমরা নিজেরাই একে অপরের কাছে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করলে এর পরিণতি কি আমাদের ছাড় দেবে?
এই বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া আর শান্তিময় সহাবস্থানের কারণে অনেক দেশ সুযোগ খুঁজছে। এ শান্তি বিনষ্ট করার সুযোগ খুঁজছে। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার সুযোগ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। আমাদের ভূÑঅভ্যন্তরের সম্পদ গ্রাস করার ষড়যন্ত্র করছে বিদেশি শক্তি। আমরা কি ফাঁদে পড়ে তাদের এ সুযোগটি দেব? যা হচ্ছে এর কোনোটাই ঠিক হচ্ছে না। আমাদের নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা আর বিদ্বেষী মনোভাবের সুযোগ নেবে বিদেশি শক্তিগুলো। অথবা দেশ বিরোধী শক্তি।
সাভারে ভবন ধসের পর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী হরতালের কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেন। তারপর প্রধানমন্ত্রী যখন নিঃশর্ত সংলাপের আহ্বান জানালেন। বিরোধী দলের নেত্রীও চায়ের দাওয়াত করলেন। দেশবাসী প্রত্যাশার বুকে আশা নিয়ে ভেবেছিল এইবার হয়তো বা রাজনীতির উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু ঘটল তার বিপরীত! জনগণ এ সহিংসতা চায় না। রক্তপাত-সংঘাত চায় না। বৃষ্টির মতো গুলি করে মানুষ মারলে জনগণের বুক কাঁপে। কষ্ট লাগে। আবার দেশের সম্পদ আগুনে পোড়ালেও জনগণের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়। এসবের কোনোকিছুকেই জনগণ সমর্থন করে না। এ বিধ্বংসী বিদ্বেষী পথ আর নয়। আপনারা এক সঙ্গে বসুন। গণতন্ত্র ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে রক্ষা করুন। এ মহান দায়িত্ব আপনারাই জাতির কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছেন।
সহিংসতা কখনো সমাধানের পথ হতে পারে না। সহিংস পরিবেশ সৃষ্টি, সমর্থন এবং তা কঠোরভাবে দমন করাও সমাধানের সঠিক পথ নয়। সঙ্কট মোকাবেলা করতে হবে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সংযমী ভূমিকার মাধ্যমে। রাজনীতিবিদদের সংলাপবিমুখ মনোভাবই দেশকে সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছেÑ এতে আর কোনো সন্দেহ নেই। এই দায় সবচেয়ে বেশি বর্তাবে সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের ওপর। তারপর অন্যান্য দল, গোষ্ঠী এবং অন্য পেশাদারদের ওপরও বর্তাবে এর দায়ভার। দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে, ধর্মান্ধতা আর জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বার্থে দুই নেত্রী সংলাপে বসবেনÑ এই প্রত্যাশা ১৬ কোটি মানুষের। এই প্রত্যাশার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোও নেতাদের অবশ্য কর্তব্য।
আরো একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, মুসলিম বিশ্ব আজ গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত। প্রতিটি মুসলিম দেশকে ঘিরেই চলছে ষড়যন্ত্র। ধর্মীয় ইস্যুকে উসকে দিয়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশে প্রতিপক্ষ সৃষ্টি করে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দিচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা। এ বাস্তবতার শিকার ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে। বিশ্বলোভীদের কূটকৌশলে সম্ভাবনাময় মুসলিম দেশগুলো পরিণত হয়েছে একেকটি মৃত্যুপুরীতে। ধ্বংস হচ্ছে দেশের সম্পদ, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে জীবনমান উন্নয়নের গতিধারা আর সৃষ্টি হচ্ছে ভাইয়ে ভাইয়ে বিভেদ ও বিনষ্ট হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। এ গভীর ষড়যন্ত্রের কালো থাবা প্রসারিত হয়ে ক্রমেই এগিয়ে আসছে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনাকে গ্রাস করার লক্ষ্যে। এ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে এখনই সতর্ক না হলে জাতি হিসেবে আমরা তলিয়ে যাব ধ্বংসের অতল গহ্বরে। সাবধান হতে হবে এখনই। নিজেদের দ্বন্দ্বের কারণে অপশক্তিকে সুযোগ দেবেন না প্লিজ।
আমরা হাসতে চাই, আপনাদেরও হাসিমুখ দেখতে চাই
Click This Link
০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৫৮
তালপাতারসেপাই বলেছেন: সহমত
২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:২১
দায়িত্ববান নাগরিক বলেছেন: সহমত।
৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: হুম ।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৫৮
কলাবাগান১ বলেছেন: "আপনাদের দম্ভ আর দ্বন্দ্বের কারণে অপশক্তি হানা দেয় বারবার। ধর্মান্ধতা উগ্র আগ্রাসনে মেতে ওঠে। "