নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোলাম আযমের রায় ও কিছু প্রশ্ন

২২ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:৩৫



দীর্ঘ অপেক্ষার পর রক্তাক্ত ইতিহাসের খলনায়কের রায় এলো। এই রায় ছিল অপ্রত্যাশিত, তাই সবাই বিস্ময় ভরা চাহনি নিয়ে দেখছে, কেন এমনটা হলো ! খলনায়কের রায়ে আমরা কলঙ্কমুক্ত হলাম নাকি কলঙ্কিত রায় উপহার দিলাম জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। প্রথাগত চলচ্চিত্রের খলনায়করা শেষ দৃশ্যে পরাজয়ের মাধ্যমে সব চিন্তার অবসান ঘটান। কিন্তু আমাদের ইতিহাসের খলনায়ক শেষ দৃশ্যের পরিণতি চিন্তার অবসান না ঘটিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করল। এই খলনায়ক আমাদের মুক্তির সংগ্রামে ষড়যন্ত্র করেছিল ভীনদেশিদের স্বার্থে, আর আমরা এই ঘৃণ্য পাপীষ্ঠ খলনায়কের বিচারে বয়স বিবেচনা আনলাম কিসের স্বার্থে। এটি কি আমাদের স্বাধীনচেতা উদারতা নাকি রাজনীতির কুটিল খেলা।



পালের গোদা রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তার প্রত্যেকটা প্রমাণিত হয়েছে। সম্মানিত বিচারকরা পরিষ্কার করে বলেছেনÑ সর্বোচ্চ শাস্তিটিই তার প্রাপ্য ছিল, শুধু বয়সের কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে নব্বই বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৯০ বছরের কারাদণ্ডের রায় শুনে সরকারি দল ছাড়া অন্যরা কমবেশি অবাক ও বিস্মিত হয়েছেন। সরকারি দল রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে, প্রধান বিরোধী দল মন্তব্য দানে বিরত থেকে জোট ও ভোটের রাজনীতি করছে, শহীদ পরিবারের সদস্যরা, বাম প্রগতিশীল দলসমূহ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাম ধারার সুশীল সমাজ ও গণজাগরণ মঞ্চ এ রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ক্ষুব্ধ গণজাগরণ মঞ্চ হরতাল ডেকেছে এবং রায় পুনর্মূল্যায়নের জন্য আপিল করার ঘোষণা দিয়েছে। কমবেশি সবাই মনে করেন যুদ্ধাপরাধের শিরোমণির এ রায় গুরু পাপে লঘুদণ্ড। জামায়াত এতে খুশি হওয়ার কথা, কিন্তু জামায়াত উল্টো রায় প্রত্যাখ্যান করে হরতাল ডেকেছে, অনেকে জামায়াতের এ হরতালকে বাড়াবাড়ি বা আহ্লাদি আচরণ বলে মনে করছেন। আর বিএনপির নীরবতা সকল মুক্তিযোদ্ধা ও বিবেকবান নাগরিকদের আহত করেছে। বড় দুটি দল অন্ততঃপক্ষে জাতীয় বিষয়াবলীতে এক ও অভিন্ন অবস্থানে থাকবেÑ এটা জাতির প্রত্যাশা।



রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের রায়টি হাজারো প্রশ্নের ডালপালা ছড়িয়েছে। সাঈদী ও গোলাম আযমের রায়ের মধ্যে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থান পরিষ্কার ধরা পড়েছে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায়ে বলা হয়েছে আমরা বর্তমান আল্লামা সাইদীর বিচার করছি না। বিচার করছি বিয়াল্লিশ বছর আগের রাজাকার দেলোয়ার হোসেন শিকদারের। অথচ গোলাম আযমের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে শুধু বয়সের কারণে তাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে নব্বই বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। এ বিস্ময়কর কনট্রাডিকশন থেকে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে সরকারের সঙ্গে কোনো প্রকার বোঝাপড়া হয়েছে কি জামায়াতের! না হয় এমনটি ঘটলো কেন! এ যাবত পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে শাস্তি প্রাপ্ত কেউই বয়স বিবেচনা পাননি, সাতাশি বছরের আইসম্যানকে ইসরাইল ও নব্বই-ঊর্ধ্ব বয়সের দেমিয়ানিউক ও মার্শাল পেতাঁকে ফরাসি ফাঁসি দিয়েছে। অথচ আমরা যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের থিংক ট্যাংক, বর্বর ও লোমহর্ষক অপরাধের খলনায়ককে মানবতা দেখালাম, ইতিহাসের এ ঘৃণ্য পাপীষ্ঠ নরাধম গোলাম আযমের কর্মকাণ্ডে শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ কি রেহাই পেয়েছিলেন ! অথচ যুদ্ধ জয়ী হিসেবে আমরা পরাজিত বৃদ্ধ খলনায়ককে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে ঔদার্য্য বা মহানুভবতা দেখিয়েছি। ট্রাইব্যুনালের এ ঔদার্য্যতায় আমার সম্মান শ্রদ্ধা অটুট রেখে বলছি, সরকারের উচিত আপীল বিভাগে মৃত্যুদণ্ডের দাবি করা। কারণ আমার আশঙ্কা বা ভয়টা অন্য জায়গায়, আমরা অল্পতেই ভুলে যাই কিন্তু হিংস্র হায়েনাতুল্য ঘৃণ্য নরপশুরা শোধরায় না। যুদ্ধোত্তর সময়ে বঙ্গবন্ধু ওদের মধ্যে যারা ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিল না তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ওই রাজাকারগোষ্ঠী বদলায়নি, তা কমবেশি আমরা সবাই জানি, যার জন্য দেশ-জাতিকে চরমমূল্য দিতে হচ্ছে এখনও। এ নরপশুরা এখন পর্যন্ত বলেনি ’৭১-এ ভুল করেছি, এর জন্য ক্ষমা চাই। উপরন্তু রাজাকার শিরোমণি গাদ্দার গোলাম আযম অ্যারেস্ট পূর্ববর্তী সময় টিভি সাংবাদিকদের বলেছে ’৭১-এ ওদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।



প্রশ্ন উঠেছে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ঘৃণ্য অপরাধীদের শিরোমণি গোলাম আযম হাসপাতালের প্রিজন সেলে আয়েসী জীবন যাপন করছেন, প্রকৃত কারাভোগ করছেন না। অথচ স্বাধীনতার পক্ষের সাজাপ্রাপ্ত সাধারণ নাগরিকরা কষ্টকর কারাভোগ করছেন। তাই দাবি করছি এ ঘৃণ্য নরপশুদের জামাই আদরে নয়, সাধারণ কয়েদি অপেক্ষা নিুমানের সেলে রাখা উচিত। ভাবতে অবাক লাগে, দেশবিরোধী এ অপশক্তির সুঁতোর টান কতটা মজবুত, আমাদের দেশি ট্রাইব্যুনালের রায়কে তীর্যক সমালোচনা ও বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে গোলাম আযমের মুক্তির জন্য পাকিস্তানের করাচীতে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান।



গোলাম আযমের রায়টি সরকারকে রীতিমত সন্দেহে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি, বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী, একাত্তরে আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদের ফাঁসির রায় সরকারকে আপাত সন্দেহমুক্ত করেছে। গোলাম আযমের রায়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সংক্ষুব্ধ নাগরিকরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ফিরে এসেছে মুজাহিদের ফাঁসির রায়টি শুনে।



আমরা আমাদের রাষ্ট্র জšে§র বিরুদ্ধাচরণকারীদের যুদ্ধকালীন সময়ে সংগঠিত অপরাধের বিচার করিনি। উপরন্তু ঘাতক-দালালদের দিয়েছি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব, ওদের গাড়িতে দিয়েছি শহীদের রক্তরঞ্জিত লাল সবুজের পতাকা। এতে শহীদ পরিবার সদস্য ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের হƒদয়ে রক্ত ক্ষরণ ও অপমানবোধকে ভ্রƒক্ষেপ করিনি আমরা। শহীদের রক্তার্জিত পতাকার সঙ্গে এ ধরনের উপহাস ইতিহাসে অন্য কোনো দেশ-জাতি করেছে কিনা আমার জানা নেই।



নাগরিত্ব বাতিল হওয়া গোলাম আযমকে জামায়াতের সভাপতি ঘোষণার দম্ভ আস্ফালনও জামায়াতে ইসলামী দেখিয়েছিল। জামায়াতের এ আস্ফালনে ক্ষুব্ধ শহীদ জননী জাহানারা ইমাম রাজাকারদের বিচারের দাবিতে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করেন। পরবর্তীতে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গণআদালতের মাধ্যমে রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের প্রতীকী রায় মৃত্যুদণ্ড দান করেন এবং মৃত্যুদণ্ডটি কার্যকর করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন। কিন্তু সেদিনকার বিএনপি-জামায়াত সরকার উল্টো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় শহীদ জননীকে রাষ্ট্রীয় আদালতের মুখোমুখি করান। কি নির্মম বাস্তবতার শিকার হতে হলো শহীদ জননীকে, তাঁর সন্তানের জীবন দিয়ে অর্জিত রাষ্ট্রে, তাঁকেই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো সন্তান হত্যাকারী রাজাকার, আলবদর ও আলশামসদের শাস্তি দাবি করায়। আজকের ট্রাইব্যুনালের রায় প্রমাণ করল আমরা সর্বশ্রদ্ধেয়া শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্যায়-অবিচার করেছি। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা নিয়েই শহীদ জননীকে মৃত্যুবরণ করতে হলো। আজকে ট্রাইব্যুনালের রায় শহীদ জননী জাহানারা ইমামের গণআদালতের রায়ের যৌক্তিকতা ও পূর্ণতা দান করল। পরপার থেকে শহীদ জননীর আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে, আমরা তাঁর স্নেহের রুমীর ঘাতকদের বিচার করছি। মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য যারা সুদীর্ঘ ৪২ বছর অপেক্ষা করেও তাঁদের স্বজন হত্যাকারী রাজাকারদের বিচারিক রায় দেখে যেতে পারেননি, তাঁদের কাছে বাংলাদেশ লজ্জিত।

Click This Link

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:১৩

দৃঢ় মানুষ বলেছেন: ওর ফাসি দেয়া উচিত ছিল।

২| ২২ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৫২

তালপাতারসেপাই বলেছেন: সহমত!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.