নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

জামায়াতের উত্থান যেভাবে

০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ সকাল ৯:১৫



জামায়াতে ইসলামী এশিয়ার একটি পুরনো রাজনৈতিক দল। ধর্মভিত্তিক এ দলটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী। ব্রিটিশ ভারত আমলে ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট লাহোরের ইসলামিয়া পার্কে দলটির জন্ম। ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির বিরোধিতা করার মধ্য দিয়ে শুরু তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে সমর্থন করেনি দলটি। ইসলামী দল হওয়া সত্ত্বেও ওই নির্বাচনে তারা চরম বিরোধিতা করে মুসলিম লীগের। এভাবেই শুরু মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম। ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর মওদুদী ভারত ছেড়ে পাকিস্তান চলে যান। সে সময় তার নেতৃত্বে ভারত ও পাকিস্তানে পৃথক রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী নতুন করে কর্মকাণ্ড শুরু করে। ১৯৫৯, ১৯৬৪ সালে কাদিয়ানি ও মুসলিম পাবিবারিক আইন ইস্যুতে দাঙ্গা-হাঙ্গামার জন্য দলটিকে দুই দফা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয় এর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীকে। যদিও পরবর্তীতে তা কার্যকর হয়নি। পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর অধীনে পূর্ব পাকিস্তানে তার নতুন শাখা গঠন করা হয়— যার নেতৃত্ব দেন বর্তমানে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছরের সাজা পাওয়া জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম। ‘পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মার্শাল ল’র বিরুদ্ধে ১৯৫৬ সালের অল পার্টি ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সে যোগ দেন গোলাম আযম। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক ছিলেন রাও ফরমান আলী। সেই সময় উপনির্বাচনে জামায়াতকে ৪৪টি আসন উপহার দেয়া হয়। তার বিনিময়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চরম বিরোধিতা করে জামায়াত। পাকবাহিনীকে সহযোগিতা করতে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের নেতা গোলামের আযমের নেতৃত্বে রাজাকার, আল শামস ও আলবদরসহ বিভিন্ন নামে একাধিক বাহিনী গঠন করা হয়। এসব বাহিনীর নেতৃত্বে পরে দেশের স্বাধীনতাকামী নারী-পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ধর্ষিত হয় অসংখ্য মা-বোন। সব সময় নিজ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে অবস্থানই ছিল জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে দেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে ফিরে এলে জামায়াতে ইসলামীসহ সব ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ হয়ে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরদিনের জন্য জামায়াতের প্রধান গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল ঘোষণা করেন। নাগরিকত্ব হারিয়ে গোলাম আযম চলে যান পাকিস্তান। তত্পরতা চালান পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যে। তার দলের অন্যরা দলীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান মধ্যপ্রাচ্যে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে জামায়াতের নেতারা দেশে ফেরার উদ্যোগ নেন। এক পর্যায়ে তত্কালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণের পর জামায়াত আবারও পুরোদমে সাংগঠনিক কাজ শুরু করে। ফিরে আসেন দলটির নেতা গোলাম আযমসহ অন্যরা। সেই সময় থেকে তাদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। তাদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে প্রগতিশীল সংগঠন ও সুশীল সমাজ। এই আন্দোলন আরও জোরাল হয় ১৯৯০ সালে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি তাদের বিরুদ্ধে দেশে গণআদালত বসানো হয়। এতে গোলাম আযমসহ তার দলের শীর্ষ নেতাদের প্রতীকী ফাঁসি দেয়া হয়। পরে গোলাম আযম ব াংলাদেশি নাগরিকত্বের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট আবেদন করলে উচ্চ আদালত তার পক্ষে রায় দেয়। সেই সঙ্গে তাকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা দেয়া হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৮ সালে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু করার পর এইচএম এরশাদ আমলে ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১০টি আসন জিতে নেন। এরপর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১৮টি আসনে জয়লাভ করে বিএনপির সঙ্গে সরকার গঠন করে। ক্ষমতা ছাড়ার পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে বিএনপির বিরুদ্ধে চলে যায় জামায়াত। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আদায় করে নেয়। ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনটি আসন পায় দলটি। আওয়ামী লীগের ঐকমত্যের সরকারের বিরুদ্ধে ৯৮-৯৯ সালে বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলে। ওই জোটের সঙ্গে আন্দোলন ও নির্বাচন করে ২০০১ সালে জামায়াত ১৮টি আসনে জয়লাভ করে বিএনপির সঙ্গে সরকার গঠন করে। সেই সরকারে তাদের বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রী হন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে তাদেরও ভরাডুবি ঘটে। সারাদেশে নির্বাচন করে জামায়াত মাত্র দুটি আসন পায়। সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এরপর থেকেই মূলত কোণঠাসা হতে শুরু করে জামায়াতে ইসলামী। এক বছরের মাথায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে গ্রেফতার হন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। পরে তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা করা হয়। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয় দলের অপরাপর শীর্ষ নেতাদের। নেতাদের মুক্তির আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোসহ সারাদেশে সহিংসতা চালিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে পড়ে। মামলা মোকদ্দমায় আত্মগোপনে চলে যায় তাদের প্রথম ও মধ্যমসারির নেতারা। অনেকটা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের মতই হয়ে যায় তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হয়ে শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতের ফাঁসির আদেশ এবং দল হিসেবে জামায়াত অভিযুক্ত হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পূর্বনাম ছিল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সূচিত এই সংগঠনটির মূল নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণীত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদীসহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলেন। অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের একজন। ওই বছর অক্টোবরেই আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। পরবর্তীতে দলটি আওয়ামী লীগ প্রদত্ত ছয় দফা এবং মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষিত ১১ দফার তারা তীব্র বিরোধিতা করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী পশ্চিম পাকিস্তানে চারটি আসন লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ডা. আবদুল মালিককে গভর্নর করে ১৭ সেপ্টেম্বর একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়। সে সরকারের মন্ত্রিসভায় পরবর্তীকালে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির আব্বাস আলী খান ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নিজেদের নিবন্ধন বাঁচাতে দলীয় গঠনতন্ত্রে ব্যাপক সংশোধন আনে। নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে দলটি গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল প্রদর্শিত ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে। কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের ২৫ জন সদস্য জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের হাইকোর্ট একটি রুল জারি করে। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলে আদালতের বেঞ্চ। পরে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট রুলের রায় ঘোষণা করে। এতে সংগঠনের নিবন্ধন অবৈধ এবং সংগঠনটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.